ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • মিহি মন্তাজ: পর্ব ৪


    শুভময় মিত্র (July 2, 2021)
     

    ফেরারি 

    আমাদের প্রচারগাড়ি ধীরে ধীরে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে’— কথাটা কদিন ধরেই কানে আসছে। আওয়াজটা ঘুরছে পাড়াতে। দুপুরে। ওই সময় কোথায় আর বেরোব? রাতে ঘুমের মধ্যেও কথাটা ফিরে ফিরে আসছে। কিছুতেই তাড়ানো যাচ্ছে না। অনেক গানের লাইনও এমন বিরক্ত করতে থাকে কিছুদিন ধরে। আবার গলেও যায় অন্য সুরের ঢেউ এসে গেলে। প্রচারগাড়ির রেকর্ড করা ঘোষণাটা আজ আবার আসছে। কী বিক্কিরি করছে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে আমার ডিম ফুরিয়ে গেছে। আনতে দৌড়লাম। ফোন ক্রুঙ করেছে, সন্ধ্যাকাশের ব্যাকড্রপে একলা মানুষের ছবি পাঠিয়েছে একজন, আবার। এখন সিলুয়েট পর্ব চলছে ওর। রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাইপ করে ফেললাম ‘কোন দূরের মানুষ যেন এল আজ কাছে, তিমির আড়ালে হাঙর দাঁড়ায়ে আছে, আমার ডিম ফুরোল ব্যাকুল সরিষা ঝাঁঝে…’ দেগে দিলাম, হনহন করে চললাম আবার। আওয়াজটার দিকেই এগোচ্ছিলাম মনে হল, এখন থেমে গেছে। হয়তো মাইক খারাপ হয়ে গেছে। বা নিজের ঘ্যানঘ্যান ঘোষণা নিজেই শুনতে আর তার ভাল্লাগছে না। এখন সে মিশে গেছে বাকি সব নিস্তব্ধ ফেরিওয়ালাদের ভিড়ে। তবে একটু দূরেই আমার দিকে যে হেঁটে আসছে তাকে আমি বিলক্ষণ চিনি। চিনতাম।

    অনেকদিন পর দেখছি, নামটা এখন মনে আসছে না। প্রথমে ভাবলাম, ভুল হচ্ছে কোথাও। কারণ যেজন্য ওকে আর দেখা যায়নি, সেটা গোলমেলে ব্যাপার। অনেক বছর আগের ঘটনা, আমি তখন স্কুলে, হাফপ্যান্ট। সেই হিসেবে ওর চেহারায় এখন বয়েসের ছাপ পড়েছে। খদ্দরের পাঞ্জাবি, ঢোলা পাজামা, কাপড়ের ঝোলাব্যাগ সেই আগের মতোই। আসল ব্যাপার হল, এক পা একটু টেনে হাঁটা, যেন একটা পাথর রয়েছে, তাকে টপকে যাচ্ছে। কাছাকাছি এসে গেছি, চোখাচোখি হয়েছে। সন্দেহের দোলাচলে আছি। ও কিন্তু আমাকে দেখে খুব স্বাভাবিক ভাবে, যেন গতকালও কথা হয়েছে, বলল, ‘ও তুই!’ আর ভুল হবার সুযোগ নেই, চেনা গলা। বারীনদা। নাকি নামটা গুলোচ্ছি! ‘আমি তো ভাবলাম কে আবার কী বলবে, তাও এলাম। সবাই তো চলে গেছে। আমিও চলে যাব।’ সেই টিপিক্যাল শূন্য দৃষ্টিতে কথা বলা, চোখের দিকে না তাকিয়ে। আমার মনে আছে, ও সারাক্ষণ রাস্তায় ঘুরত। কারুর না কারুর সঙ্গে কথা বলত। প্রথমে বড়দের সঙ্গে। কিছুদিন পর সেটা বন্ধ করে দিল। বড়রা নাকি ওকে কীসব আজেবাজে কথা বলত। আমি এগুলো নিজে দেখিনি বিশেষ, পাড়ার দু’একজন দাদা, একজন দিদির কাছে শুনেছি। ও নাকি কিছু করে না। খালি কবিতা লেখে। কবিতা লেখা কি দোষের নাকি? কারুর ক্ষতি করে না, খারাপ কথা বলে না। আমি কিছুতেই বুঝতে পারতাম না, মুশকিলটা আসলে কোথায়। একজন, বদ একটু, ফুটবল খেলত, বাবরি চুল, আমাকে বলেছিল, ‘যা, গিয়ে বল, দেবতার ঘাস-টা দু’লাইন শোনাও দিকি।’ ওসব আমি কিছুই করিনি। এরপর ও একটু ছোটদের সঙ্গে মিশত, আমার সঙ্গেও। আমাদের পার্কে গল্পকাকুর আসরে ও নিজেই বসত, আমরা শুনতাম। গল্প ঠিকই, কিন্তু কীসের বুঝতে পারতাম না। অথচ ভাল লাগত। একদিন যেমন, দুম করে বলল, ‘পাগলদের নাকি পাগল বলা অসভ্যতা। মানসিক ভারসাম্যহীন বললে তার রোগ সেরে যাবে? পাগল কথাটার মধ্যে যে উথালপাথাল ব্যাপারটা আছে সেটার কী হবে? তাছাড়া ওর মনের কথা কেউ জানে নাকি? কতখানি ভার বইতে হচ্ছে ওকে, তার খবর রাখে কেউ? এই অসাম্য মেনে নেওয়া যায় না।’ এরপর বেশিরভাগ ছোটরাই ফুটবল খেলতে চলে যেত, আর আসত না। আমি খেলতে পারতাম না, তাই বসে থাকতাম। যা বলে যেত, শুনতাম। ব্যাগ থেকে ছোট ছোট বই বের করে পড়ত একটু। আবার রেখে দিত। ওরকম কবিতা আমাদের স্কুলে হত না। একদিন দেখলাম বসে আছে তো আছেই। বিড়বিড় করে একবার বলল, ‘উত্তম না। সৌমিত্র তো নয়ই। শুভেন্দু। শুভেন্দু।’ ও আসলে কারুর সঙ্গেই কথা বলত না, সবটাই নিজেকে। 

    অনেক বছর আগের ঘটনা, আমি তখন স্কুলে, হাফপ্যান্ট। সেই হিসেবে ওর চেহারায় এখন বয়েসের ছাপ পড়েছে। খদ্দরের পাঞ্জাবি, ঢোলা পাজামা, কাপড়ের ঝোলাব্যাগ সেই আগের মতোই। আসল ব্যাপার হল, এক পা একটু টেনে হাঁটা, যেন একটা পাথর রয়েছে, তাকে টপকে যাচ্ছে। কাছাকাছি এসে গেছি, চোখাচোখি হয়েছে। সন্দেহের দোলাচলে আছি। ও কিন্তু আমাকে দেখে খুব স্বাভাবিক ভাবে, যেন গতকালও কথা হয়েছে, বলল, ‘ও তুই!’ আর ভুল হবার সুযোগ নেই, চেনা গলা। বারীনদা

    কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মাথার মধ্যে দিয়ে কত কী বয়ে গেল। কোনও ছোট স্টেশনে ঝড়ের মতো রাজধানী পেরিয়ে গেলে যেমন হয়। একটা ঝমঝমে আওয়াজ আর বেসামাল স্মৃতির পাতাগুলো কিছুক্ষণ উড়তে থাকে রেললাইনের ওপর। দপদপানো লাল আলোটা একসময় মিলিয়ে যায় মাইগ্রেনের মতো। ‘তুমি চললে কোথায়?’ জিজ্ঞেস করায় বলল, ‘খুঁজছি’। আমাকে যে এখন ডিম আনতে হবে, সেটা ওকে বলতে পারলাম না। দাঁড়িয়েই রইলাম। ‘কাবেরী তোর মাসি ছিল না?’ আমি বললাম, ‘ও তো করবী’, শুনল। তারপর, যেন আমি নেই, নিজের মতো হাঁটতে শুরু করল। আমিও সঙ্গে সঙ্গে, বারণ করেনি যখন। ছোটবেলার অভ্যাস। ‘ওর সঙ্গে মিশবি না’, মা একদিন বারণ করেছিল। কেন জিজ্ঞেস করায় বাবা বলেছিল, ‘পরে বুঝিয়ে বলব।’ একজন বেশ বড় লোকের ছোট ছোট ছেলেদের সঙ্গে বেশি মেশাটা কেন খারাপ হতে পারে সেটা বুঝতে আমার অনেকদিন পেরিয়ে গিয়েছিল। এখন, এই বয়েসে সেই মুগ্ধতা আর নেই, দাঁড়িয়ে পড়লাম। ও চলে গেল। অনেক দূরে প্রচারগাড়ির ডাকটা আবার শুনলাম। আমার আর ডিম কিনতে ইচ্ছে করছিল না, বাড়িতে কিছু একটা বলে দেব। এখন আমার যা, তখন আমার মাসির ওইরকমই বয়স ছিল। একদিন কাউকে বলছিল, ‘ও এবার শেষ।’ কাছেই আমার মামারবাড়ি। ওই সময় ওখানে একতলার ঘরে খুব জোর আড্ডা হত। পাড়ার অনেকে আসত-যেত। রবিবার সকালে তবলা-হারমোনিয়াম নিয়ে হেমন্ত-মান্না উড়ত একের পর এক। বড় কেটলিতে চা আসত, ছোট ছোট কাপ। আমি একটু একটু বুঝতাম যে, গানটান ছাড়াও, ওই আসা-যাওয়ার মধ্যে যাদের কাউকে একটু বেশি ভাল লাগত, তাদের সঙ্গে গল্প করা একটা ব্যাপার, সেটাও ছিল। মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে খুল্লমখুল্লা দেখিয়ে কিছু করার রেওয়াজ ছিল না তখন। বারীনদাও আসত, কিছুদিন পর আর নয়। 

    একসময় লুকিয়ে সিগারেট খেতাম। এখন লুকোনোর লোকগুলো আর কেউ নেই। একজন আছে, অনেক বয়েস, সারাদিন রকে বসে থাকে। এমনিতে কথা হয় না, ডাকল আমাকে। ‘তরুণের সঙ্গে তোমার চেনা ছিল না কি, গতকাল কথা বলছিলে দেখলাম। অ্যাদ্দিন পর ও কোত্থেকে এল? কীসব হয়েছিল না, তুমি কিছু জানো?’ এই রে, অন্য নাম তো। আমি ভুল চিনলাম? সুইসাইড তো বারীনদা করেছিল, এরকমই তো শুনেছিলাম। তাহলে এই তরুণদা কে? আর সেটা সত্যি হলে একদম একই রকম দেখতে মানুষটা এখানে কী করছে? আমাকেও তো চেনে দেখলাম। পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতেই পারে কেউ, ওই ভয়ঙ্কর রেফারেন্সটা তার মানে মনগড়া। আমি ধাঁ করে, ‘কে তরুণ?’ বলে উত্তর না দিয়ে চলে গেলাম। এই বুড়োগুলো অনেক খবর রাখে। আবার ফিরে এসে, ‘ঠিক কী হয়েছিল যেন?’ জিজ্ঞেস করলে হয় না? না থাক। এসব মাথা থেকে একদম আউট। সাদা তিল কিনে না আনলে আজ বাড়ি মাথায় উঠবে। 

    পরের দিন আবার দেখা। আগে লোক থাকতে দেখেছি, বহুদিনই পোড়ো, এত ছোট যে প্রোমোটার নজর দেয়নি, বাড়িটা আজও আছে। বারীনদা তার সামনে দাঁড়িয়ে দোতলার ভাঙা বারান্দা দেখছে। অনেকদিন ধরে আসতে-যেতে আমিও দেখি এই বাড়িটাকে। ছাদের কিছুটা সঙ্গে নিয়ে বাইরের দেওয়াল ভেঙে পড়ার পর ভেতরের ঘরটা এখন উদোম। সেখানে একসময় হলুদ রং ছিল। এখন নীল বেরিয়ে আসছে। আগের দিন ঠিক যেখানে সুইচ অফ করে চলে গিয়েছিল, প্রায় সেই জায়গাতে আবার অন করে বলল, ‘চারদিকে এত নীল কেন রে?’ এইরকম মানে নেই কোনও, ভাসানো কথা ও বলত সারাক্ষণ। তখন কিছুই বুঝতাম না, আজও বুঝলাম না। ওর ওপর অনেকের খাপ্পা হওয়ার এটাও একটা কারণ। আমার কিন্তু রাগ হল না। খেয়াল হল, নতুন সরকার এসে গেছে অনেকদিন। নীল রং হয়েছে অনেক জায়গায়। সেটাই কি অবাক করেছে ওকে? ও কি জানে না? ও কি এতদিন মঙ্গোলিয়ার দুর্গম মরুভূমিতে চরছিল? আমি উত্তর না দিয়ে বললাম, ‘এতদিন ছিলে কোথায়?’ ওর সম্পর্কে রটনাটা যে ভুল, সে তো দেখতেই পাচ্ছি। বুড়ো ভুল করে অন্য নাম বলেছিল, হতেই পারে। মনে পড়ল, আজ বুঝলাম, পাড়ার মেয়েরা, আমার চেয়ে বয়েসে বড় সবাই, মাসির বন্ধু কেউ কেউ, আমার উপস্থিতিতেই অনেক বড়দের কথা বলাবলি করত। আমি ছোট বলেই, মাথা দিত না। বারীনদাকে তারা পছন্দ না করলেও, নজরে রাখত। একজন বলেছিল, ‘ও নিজেকে যা ভাবে তা তো নয়, নিজেও জানে, আজ এ, কাল ও। ন্যাকা বজ্জাত একটা।’ আর একজন, খুব হাসত সারাক্ষণ, বলেছিল, ‘বারীন ক্যাশমেমোর মতো কবিতা কাটে।’ 

    মনে পড়ল, আজ বুঝলাম, পাড়ার মেয়েরা, আমার চেয়ে বয়েসে বড় সবাই, মাসির বন্ধু কেউ কেউ, আমার উপস্থিতিতেই অনেক বড়দের কথা বলাবলি করত। আমি ছোট বলেই, মাথা দিত না। বারীনদাকে তারা পছন্দ না করলেও, নজরে রাখত। একজন বলেছিল, ‘ও নিজেকে যা ভাবে তা তো নয়, নিজেও জানে, আজ এ, কাল ও। ন্যাকা বজ্জাত একটা।’ আর একজন, খুব হাসত সারাক্ষণ, বলেছিল, ‘বারীন ক্যাশমেমোর মতো কবিতা কাটে।’ 

    উপেক্ষা করা, উত্তর না দেওয়াটাই ওর সিগনেচার স্টাইল। আমাদের বয়সের রিলেটিভ তফাত এখন জিরো। অসম্পূর্ণ ধোঁয়াটে কথা ছুড়ে দিয়ে ও নিজেকে সাংঘাতিক কিছু প্রমাণ করতে পারবে না এখন। যে কথাটা বাবার কাছে আর শোনা হয়ে ওঠেনি, পরে এমনিই বুঝেছিলাম, ওই লাইনে আজ শর্ট সার্কিটের মতলবে থাকলে ওর কপালে দুঃখ আছে। সময়ের স্রোতে ফের নিজেকে ভাসিয়ে এনেছে, কেন কে জানে! কোনও কাজ নেই আমার, টাইমপাস হচ্ছে। হোক না। আমার মেজাজ গরম হলেই সুইচ অফ করে চলে যাব নির্বিকার ঔদাসীন্য নিয়ে। ওর কাছেই শেখা। আসলে স্বেচ্ছামৃত্যুর চরিত্র, সত্যি না হলেও, চোখের সামনে দেখে একটু আগ্রহ হচ্ছিল বইকি। বারীনদা বলল, ‘এত লাল আমার আর ভাল লাগছিল না।’ ফট করে মনে হল, আমাদের ছোটবেলায় পরপর অনেকেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে এই ধরনের লোকরা। তাহলে ও কি সেরকমই? যা আমি বুঝিনি, কিন্তু বড়রা বুঝত? যারা আর ফেরেনি, তারা কিন্তু কোনওদিনই ফিরে আসেনি। ও এসেছে, বলছে চলে যাবে। আমার একটা রাগ হচ্ছে ভেতরে ভেতরে, তেমন কোনও কারণ নেই যদিও। একটু অন্যমনস্ক হতেই, দেখি ও নেই। 

    এরপর বেশ ক’দিন বেপাত্তা। প্রচারগাড়ির ডাকটা শোনা যাচ্ছিল, তবে কম। ওটা একটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, না শুনতে পেলে ফাঁকা ফাঁকা লাগত। দৌড়ে বেরিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করলাম একবার। একদিনও দেখতে পাইনি। বারীনদাকেও খুঁজতে শুরু করলাম সকাল-বিকেল। ও কোথায় থাকত তখন, জানিও না। মনে হল, আগের মতোই, হয়তো চলেই গেছে, তাহলে খুঁজে আর লাভ নেই। কেন খুঁজছিলাম বলতে পারব না। এমন নয় যে আমার বিশেষ কোনও প্রশ্নের উত্তর ওর কাছে প্রাপ্য। ‘অ্যাই, তুমি নাকি সুইসাইড করেছিলে?’ এটা বলা যায় নাকি? আগ্রহটা কিন্তু মিইয়ে গেল একটু একটু করে। একদিন, ঘড়ির ব্যাটারি বদলাতে গিয়েছিলাম, দুম করে আবার দেখতে পেলাম। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দু’হাত কিছুটা ছড়িয়ে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে। আলো প্রায় নেই ওখানে। আমি এগিয়ে গিয়ে একগাল হেসে বললাম, ‘ফায়ারিং স্কোয়াডের ডিউটি শেষ, আজ আর হবে না, ওরা চলে গেছে, তুমি চলে এসো এবারে।’ বারীনদা খুব নিচু গলায় কী একটা বলল। মাথাটা যে বরাবরই খারাপ সেটা তো জানিই। যা কিছু অস্বাভাবিক, তা নিয়ে আজ আর মাথা ঘামানোর কিছুই নেই। কী একটা যেন মজা করতে গেলাম। কিন্তু তার আগেই ও বলল, ‘এবারে সত্যি চলে যাচ্ছি রে। একজন, তোকে বলেই যাই, আমাদের গল্পটা না, বড্ড বড় হয়ে যাচ্ছিল। কিছুই বাদ দেওয়া সম্ভব ছিল না আর। ভাবলাম ক’টা প্যারাগ্রাফে ভেঙে দিই বরং। দিতেই, পাতা যে ফুরিয়ে যাবে, শেষ লাইনটা বেরিয়ে গিয়ে আর ফেরার জায়গা খুঁজে পাবে না, তারপর একটা টাইম আউট, ওকে ততক্ষণে শুষে নিয়েছে এই ভীষণ আকাশটা। এমন হবে, বুঝতে পারিনি রে।’ এই মুহূর্তে ওর মাথাটা ক্লান্ত জিসাসের মতো সামনে ঝুঁকে আছে, হাত দুটো ওপরে উঠে যাচ্ছে। যেন পেরেক দিয়ে আটকে দেওয়া হবে কোথাও। জিগস’ পাজলের কয়েকটা টুকরো আমার হাতে। জুড়তে অসুবিধে হল না। বারীনদা আমাকে বলল, ‘এবারে আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছিলাম। তুই কি জানিস, কাবেরীরা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেল?’

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook