ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • জন্মস্থান কলকাতা: নর্ম্যান প্রিচার্ড

    জয় ভট্টাচার্য (Joy Bhattacharjya) (July 17, 2021)
     

    অমিতাভ বচ্চন আর এক ভারতীয় কিংবদন্তি অলিম্পিয়ানের মধ্যে যোগসূত্র কী? কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সঙ্গে বলিউডের নির্বাক সিনেমা-যুগের সম্পর্ক কী? দুটোরই উত্তর— ভারতীয় খেলার জগতের এক আশ্চর্য আকর্ষণীয় চরিত্র— নর্ম্যান প্রিচার্ড।

    নর্ম্যান জন্মেছিলেন ১৮৭৫ সালের ২৩ জুন, কলকাতার আলিপুরে। বাবা জর্জ পিটারসেন প্রিচার্ড ছিলেন সফল অ্যাকাউন্ট্যান্ট, আর মা হেলেন মেনার্ড, গৃহবধূ। বয়ঃসন্ধির শুরু থেকেই নর্ম্যান ছিলেন খেলার জগতের বিস্ময়। যেমন ভাল ছিলেন ফুটবল, রাগবিতে, তেমনই ভাল ছিলেন অ্যাথলেটিক্সে। নর্ম্যান ছিলেন দুর্দান্ত দৌড়বীরও। বাংলার স্প্রিন্ট চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন টানা সাতবার। আবার ১৮৯৭ সালে সেন্ট জেভিয়ার্সের হয়ে, বিখ্যাত দল শোভাবাজারের বিপক্ষে, হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

    কীভাবে এই বিস্ময়কর প্রতিভা ভারতের প্রথম অলিম্পিক পদকজয়ী হলেন? পরপর কিছু ঘটনা ঘটে যায়, যার ফলে এই ২৫ বছরের তরুণ অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্যারিসে পৌঁছন, এবং তাঁর পাওয়া পদকগুলি রেকর্ডবুকে ভারতের পদক-তালিকায় স্থান পায়। ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ট্রায়ালের সময় প্রিচার্ড ইংল্যান্ডে ছিলেন। তিনি একটু চেষ্টাচরিত্র করলেন, যাতে অভিজাত ‘লন্ডন অ্যাথলেটিক ক্লাব’-এর সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন। হয়েও গেলেন।

    ১৯০০ সালের ২০ জুন, প্রিচার্ড অংশ নিলেন ‘অ্যামেচার অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন অফ ইংল্যান্ড’ আয়োজিত প্রতিযোগিতায়। সেটা ছিল নর্ম্যানের জীবনে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, যেখানে তিনি তাবড় মার্কিন খেলোয়াড়ের মুখোমুখি হলেন, যাঁরা প্যারিস অলিম্পিক্স-এ যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। নর্ম্যান এই প্রতিযোগিতায় বেশ ভালই ফল করলেন, তিনি নির্বাচিত হলেন পাঁচটি ইভেন্টে: ৬০ মিটার, ১০০ মিটার, ২০০ মিটার দৌড়, ১১০ মিটার হার্ডলস এবং ২০০ মিটার হার্ডলস।

    বয়ঃসন্ধির শুরু থেকেই নর্ম্যান ছিলেন খেলার জগতের বিস্ময়। যেমন ভাল ছিলেন ফুটবল, রাগবিতে, তেমনই ভাল ছিলেন অ্যাথলেটিক্সে। নর্ম্যান ছিলেন দুর্দান্ত দৌড়বীরও। বাংলার স্প্রিন্ট চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন টানা সাতবার। আবার ১৮৯৭ সালে সেন্ট জেভিয়ার্সের হয়ে, বিখ্যাত দল শোভাবাজারের বিপক্ষে, হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

    প্যারিস অলিম্পিক্সে তিনি দুটি রুপোর পদক পান— ২০০ মিটার দৌড়-এ (সোনা পেয়েছিলেন আমেরিকার ওয়াল্টার টুক্সবারি), আর ২০০ মিটার হার্ডলস-এ (সোনা পান ইভেন্ট-ফেভারিট আমেরিকার অ্যালভিন ক্রেনজেলিন)। ১১০ মিটারের হার্ডলসেও মেডেল জিততে পারতেন, অনেকটা এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু হোঁচট খেয়ে যান। এতগুলো অসামান্য  কৃতিত্বের জন্য তিনি পান ‘অ্যামেচার অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন অফ ইংল্যান্ড’-এর কাছ থেকে একটা রুপোর মেডেল, এবং ‘ফ্রেঞ্চ অলিম্পিক কমিটি’-র তরফ থেকে একটা পকেট-ছুরি, যার মূল্য মাত্রই কয়েক ফ্রাঁ! প্রিচার্ডের মেডেলগুলো ভারতীয় ভাণ্ডারে এল, কারণ ভারত তখনও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন, আর নর্ম্যান তাঁর ‘হোম ক্লাব’ হিসেবে নাম দিয়েছিলেন ‘বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি অ্যাথলেটিক ক্লাব’-এর। অলিম্পিক কমিটি তাই নর্ম্যানের পদকগুলো ভারতের নামে যুক্ত করেছিল।  

    প্রিচার্ড এরপর চাকরি করেছিলেন কলকাতার ‘বার্ড অ্যান্ড কোম্পানি’-তে। এই সংস্থাতেই অমিতাভ বচ্চন তাঁর কর্পোরেট কেরিয়ার শুরু করেন। নর্ম্যান ‘ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারিও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

    প্রিচার্ডের খেলোয়াড়-জীবনের এখানেই ইতি। এরপর শুরু হয় অন্য এক অধ্যায়। কিছু বছর পর নর্ম্যান ইংল্যান্ডে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানে পাটের ব্যবসা করেন। ব্যবসা সফল হলেও, নর্ম্যান ঠিক করেন এবার তিনি অভিনেতা হবেন, হলিউডে নিজের ভাগ্যপরীক্ষা করবেন। প্রিচার্ড বোধহয় প্রথম ক্রীড়াজগতের তারকা, যিনি ব্রডওয়ে নাটক আর হলিউডের সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মনে রাখতে হবে, এসব ঘটছে জনি ওয়েজমুলার বা সোনিয়া হেনি অভিনয়-জগতে আসার আগেই। নর্ম্যান প্রিচার্ড পর্দার জন্য নতুন একটা নাম নিলেন—  নর্ম্যান ট্রেভর। আর ২৮টা হলিউড ফিল্মে অভিনয় করলেন, অনেকগুলোতেই আবার প্রধান চরিত্রে। পি সি রেন লিখিত বিখ্যাত গল্প ‘বো জেস্ত’-এর চিত্ররূপ দেওয়া হয় যখন, নর্ম্যান অভিনয় করেন বোজোলে-র মেজরের ভূমিকায়, আর ১৯২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জেন আয়ার’-এ তিনি হয়েছিলেন মিস্টার রচেস্টার।

    হলিউড সিনেমার একটি দৃশ্যে অভিনেতা নর্ম্যান প্রিচার্ড (ডান দিকে)

    কলকাতায় থাকার ফলে এবং ভারতীয়দের সঙ্গে মেশার জন্যই বোধহয়, নর্ম্যানের মধ্যে একটা জোরালো সামাজিক ন্যায়ের ধারণা তৈরি হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, জন ব্যারিমোর এবং অন্যান্য অনেক তারকার সঙ্গে মিলে, নর্ম্যানও দাবি জানান, মার্কিন সেনাবাহিনীতে কালো সৈনিকদের অধিকারের জন্য। 

    এমন একজন বহুমুখী বিস্ময়কর প্রতিভার শেষ জীবনটা কেটেছে বড় কষ্টে। তাঁর ব্রেনে টিউমার ধরা পড়ে এবং তিনি মারা যান কপর্দকশূন্য অবস্থায়, সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায়, ১৯২৯ সালের অক্টোবর মাসে। ফুটবলারও হতে পারতেন, দৌড়বীরও, আবার অভিনেতাও— তাঁর আসলে এতগুলো বিষয়ে ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা ছিল, প্রতিটির প্রতি সুবিচার করা সম্ভব ছিল না। তবে ভারতীয় অলিম্পিকের ইতিহাসের সূচনাবিন্দুতে, তাঁর নামটাই খোদাই করা থাকবে।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook