ক্রিকেটের রাজা টেস্টম্যাচ
এই মুহূর্তে জিম্বাবোয়েতে আছি । টেস্টেম্যাচ চলছে। খুব উপভোগ করছি। এখানে এখন বেশ ঠান্ডা। আবহাওয়াটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেই কিন্তু সেরা খেলাটা সবার বেরিয়ে আসে। এখনও অবধি বাংলাদেশ বেশ ভাল জায়গাতেই তো আছে। তবে কোভিড নিয়ে চিন্তা বেশ হচ্ছে। এ দেশের পরিস্তিতিও ভাল না। যদিও আমরা বায়ো-বাবল-এর মধ্যে রয়েছি, তাই হয়তো একটু কম চিন্তা, কিন্তু সে তো আইপিএল-এর সময়েও ছিলাম, কিন্তু শেষ রক্ষা তো হল না। কেবল এই দেশ নয়, আমাদের বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিও বেশ খারাপ। তবে আমার অবশ্য এই সব চিন্তা থেকে মুক্তির একটাই উপায়—আমার খেলা। আমার ক্রিকেট।
এখন যেন টেস্টম্যাচ খেলতে আরও উৎসাহিত বোধ করছি। তার একটাই কারণ, বিশ্ব টেস্ট-চ্যাম্পিয়ন শুরু হওয়া। এই চ্যাম্পিয়নশিপ যেহেতু একটি দলকে বিজয়ী করবে টেস্ট ম্যাচেও, এতে সবার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছে। এত দিন টেস্ট-ম্যাচে ফলাফল হতেই হবে এমন ব্যাপারটা ছিল না। বহু বহু ম্যাচ ড্র হত। কিন্তু এখন সবাই একটা নির্দিষ্ট ফলাফল অর্থাৎ হার-জিৎ চায়। আর তাই টেস্ট খেলার মানসিকতাটা বদলে গেছে। আগে এমন কিছু শট ছিল যা কেবল টেস্ট-ক্রিকেটে খেলা হত বা এমন কিছু শট ছিল যা টেস্ট-ক্রিকেটে খেলা হলে তাকে উচ্চ মানের খেলোয়াড় ধরা হত না। কিন্তু এখন টেস্ট ক্রিকেটে টি-২০’র শটও প্রচুর খেলা হয়। তার একটা কারণ নিশ্চয়ই ফলাফল, আর একটা কারণ হল, এখন টেস্ট-ম্যাচের চেয়ে অনেক বেশি টি-২০ বা পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ হয় এবং সেখানে জেতার জন্য সবাই মরিয়া হয়ে ওঠে, আর তাই ক্লাসিকাল ক্রিকেটীয় শট খেলার চেয়ে মারের দিকে বেশি নজর থাকে। তবে সীমিত ওভারের খেলাতেও কিন্তু প্রচুর ক্লাসিকাল শটও খেলা হয়। কিন্তু লোকের এখন ছক্কা দেখার দিকে মন চলে গেছে বেশি।
আমার যদিও তিনটি ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলতেই ভাল লাগে এবং আমি চাই লোকে আমাকে তিনটি ফরম্যাটের ভাল প্লেয়ার হিসেবে মনে রাখুক, তবে ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি টেস্ট-ম্যাচ হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট। এবং টেস্টম্যাচে নিজের কীর্তি রেখে যাওয়াটা একটা পরম প্রাপ্তি। টেস্ট-ম্যাচ এমন একটা ফরম্যাট যেখানে এক জন খেলোয়াড়কে তার কেবল সেরা খেলাটাই নয়, তার ফিটনেস, তার মনঃসংযোগ, তার মানসিক দৃঢ়তা— সব কিছুর টেস্ট দিতে হয়। পাঁচ দিন নিজেকে সর্বতো ভাবে নিয়োগ করতে হয় একটা ম্যাচে। এবং তার পরেও ড্র হলে বা হেরে গেলে নিজেকে স্থির রাখতে হয় পরবর্তী ম্যাচের জন্য। আবার টেস্ট ম্যাচের একটা বড় সুবিধে হল, টেস্টম্যাচ নিজের ত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার একটা সুযোগ দেয়। যদি পাঁচ দিন খেলা হয়, সেখানে কপি-বুক ক্রিকেট খেলার একটা সুযোগ থাকে। টি-২০ বা পঞ্চাশ ওভারের ম্য়াচে সেই সুযোগটা থাকে না। নিজেকে প্রয়োগের সুযোগ থাকে না। কিন্তু টেস্ট ম্যাচে নিজেকে বার বার প্রয়োগ করার সুযোগ থাকে। সেখানে প্রতি বলে উইকেট নেওয়ার বা প্রতি শটে চার-ছয় মারার চাপ থাকে না। সেই জন্যই টেস্ট-ক্রিকেটের সম্মান সব সময় সব কিছুর ওপরে থাকবে।
এ বছর টেস্ট-চ্যাম্পিয়নশিপ প্রথম বার শুরু হলে বলে হয়তো ততটা মাতামাতি হয়নি। এবং কোভিড পরিস্থিতি অবশ্যই সেটার জন্য অনেকটাই দায়ী। কিন্তু কোভিড কেটে গেলে এবং টেস্ট-চ্যাম্পিয়নশিপ প্রচারের আলোয় এলে দর্শকের মধ্যে আবার টেস্ট-ক্রিকেট দেখার আবার উৎসাহ বাড়বে। চটজলদির জমানায় সেটা কিন্তু একটা বড় প্রাপ্তি।