ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ১৫

    বিমল মিত্র (June 4, 2021)
     

    পর্ব ১৪

    ওদিকে এতক্ষণে শুটিং করবার সময় ওয়াহিদার যে-চেহারা দেখেছি, সে ছিল আমার জবা। সে বাঙালি মেয়ে। আর এখন যার কথা শুনছি সে হল ওয়াহিদা রেহমান। অবাঙালি মুসলমান মহিলা। কিন্তু আমার মনে হল ছবির বাইরেও এ যেন সেই বাঙালি মহিলাই একজন। সেই সেট-এ যে-শাড়ি পরা ছিল সেই শাড়িই পরা রয়েছে। মুখের কথা হিন্দি ভাষা হলেও আসলে মানুষটা যেন চিরকালের নারী।

    আমি দেখেছিলাম দুজনকেই। গুরু অনেকদিন অনেক কথা বলেছে আমাকে ওয়াহিদা সম্বন্ধে। গুরু কেমন করে তাকে অভিনয় শিখিয়েছে, কেমন করে তাকে কত কষ্ট করে সিনেমায় নামিয়েছে। তখন কে-ই বা চিনত ওয়াহিদাকে, কে-ই বা নাম জানত! একদিন হায়দ্রাবাদে গিয়ে নজরে পড়ে যায় গুরুর, আর তারপরেই সিনেমা-জগতে এসে প্রতিষ্ঠা-প্রতিপত্তির শিখরে উঠে বসে।

    আর শুধু প্রতিষ্ঠার শিখরে ওঠাই নয়, গুরুর পারিবারিক জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে একেবারে। যখন ছবি হয় না তখনও স্টুডিওতে আসে, যখন ছবি হয় তখন তো আসেই, আসতেই হয় তাকে। কোম্পানির বাঁধা আর্টিস্ট, ছবির প্রয়োজনে তার প্রয়োজন অপরিহার্য, কোম্পানিও তাকে নিয়ে লাভবান হয়েছে, ওয়াহিদাও কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে লাভবান। দু’পক্ষের পারস্পরিক প্রয়োজনে দুজন। তারপরে একসঙ্গে বহু মেলা-মেশার সুযোগে সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়েছে উভয়পক্ষই। কোম্পানির যত ছবি হয়েছে সব ছবিতেই ওয়াহিদা নায়িকা হয়েছে। তাতে কোম্পানিরও সুনাম বৃদ্ধি হয়েছে, ওয়াহিদারও। কিন্তু সবার অগোচরে এক অশান্তির বীজ কখন পোঁতা হয়ে গেছে গুরু দত্তের পারিবারিক জীবনে তা কেউ টের পায়নি। যখন টের পাওয়া গেল তখন বীজ থেকে অঙ্কুর গজিয়েছে। সে শেকড় একেবারে জীবনের গভীরে গিয়ে স্পর্শ করেছে সকলের অলক্ষ্যে!

    এমনি যখন অবস্থা ঠিক সেই সময়ে ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবি শুরু হয়েছে। গুরু দত্তের জীবনে কোথায় যেন ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এর অন্তর্নিহিত ট্র্যাজেডিটা কাজ করছিল গোপনে-গোপনে। তারপর হাতে এল বইখানা। কলকাতা থেকে উপন্যাসটা কিনিয়ে আনালে। নিয়ে এসে পড়তে লাগল। বাংলা বই পড়তে শিখেছিল ছোট বয়সেই। বড় ভালো লাগল। আবার পড়ল। আবার ভালো লাগল। এমনি করে বার পাঁচেক পড়া হয়ে গেল। শেষকালে আমাকে ডেকে পাঠাল বোম্বেতে।

    কোম্পানির যত ছবি হয়েছে সব ছবিতেই ওয়াহিদা নায়িকা হয়েছে। তাতে কোম্পানিরও সুনাম বৃদ্ধি হয়েছে, ওয়াহিদারও। কিন্তু সবার অগোচরে এক অশান্তির বীজ কখন পোঁতা হয়ে গেছে গুরু দত্তের পারিবারিক জীবনে তা কেউ টের পায়নি। যখন টের পাওয়া গেল তখন বীজ থেকে অঙ্কুর গজিয়েছে।

    সেই অনেক বছর আগেকার ঘটনা। কিন্তু তারপর কতবার দ্বিধা-সঙ্কোচ এসেছে। কত লোককে গল্পটা শুনিয়েছে, বইটা পড়িয়েছে। কেউ বলেছে খুব ভালো বই, কেউ বলেছে— না, এ-বই ছবি করবেন না—

    গুরু একবার ভেবেছে— না, করবে না এ ছবি। কিন্তু আবার কেমন করে পারিবারিক ট্র্যাজেডিটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। অশান্তিতে রাত্রের ঘুম চলে গেছে। ঝগড়া হয়েছে স্বামী-স্ত্রীতে। যেমন সব সংসারে হয়। দাম্পত্য-কলহ। গীতা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে। ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছে দার্জিলিং-এর স্কুলে। পালি হিল-এর অমন চমৎকার বাড়ি দাম্পত্য-কলহে শ্মশান হয়ে উঠেছে কয়েকদিনের জন্যে! তখন সেই বাগান-ঘেরা বাড়ির মধ্যে গুরুর আবার মনে পড়েছে ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এর কথা। নিজের জীবনের অশান্তির মূল উপড়ে ফেলতে গিয়ে ‘সাহেব বিবি গোলাম’টাকেই আঁকড়ে ধরেছে।

    সারাদিন স্টুডিওর মধ্যে একলা কাটিয়ে রাত্রে বাড়ির ভেতরে একক শয্যায় ছটফট করে করে মনটা আকুল হয়ে উঠত। তখন মনে পড়ত ওই ছবিটা করলে হয়। ওই ‘সাহেব বিবি গোলাম’টার মধ্যে দিয়েই গুরু যেন নিজের মনের কথা বাইরের লোকের সামনে তুলে ধরতে পারবে। নিজেকে প্রকাশ করতে পারবে। তার মনের ভার হালকা হয়ে আসবে।

    তাই দেখেছি আমি বোম্বাইতে গেলেই গুরু খুব খুশি হত। আমার সঙ্গে কথা বলে আরাম পেত। অর্থাৎ আমার গল্পের মধ্যে দিয়ে সে মুক্তির সন্ধান পেত। বুঝতাম তার মনের ভেতরে তার পারিবারিক অশান্তির আগুন জ্বলছে। আমার সঙ্গে কথা বলে তা নেভাতে চাইছে। কেমন করে সে এ থেকে নিষ্কৃতি পাবে?

    তারপর হঠাৎ ‘চৌধবী-কা-চাঁদ’ ছবিতে প্রচুর অর্থ উপার্জন হয়ে গেল। অর্থের প্রয়োজন মিটে গেল। এখন শুরু করো ‘সাহেব বিবি গোলাম’। ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবি করে যদি আমার লোকসানও হয় তাতেও কোনও ক্ষতি নেই। করো ‘সাহেব বিবি গোলাম’।

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত
     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook