ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ১৭

    বিমল মিত্র (June 18, 2021)
     

    পর্ব ১৬

    মনে আছে একদিন সুযোগ পেয়ে কথাটা গুরুকে বলেছিলাম। গুরুর সঙ্গে একদিন তার লোনাভালার ফার্মে গিয়েছি। বিরাট ফার্ম। সে ফার্মের কথা আগেই বলেছি। নানা কথার মধ্যে হঠাৎ একবার গুরু বললে— দেখুন, আমি নিজে এই ক্ষেত-খামার করেছি, এই বাড়ি-বাগান তৈরি করেছি। গীতা যদি এসব দেখত খুব ভালো হত। আমার দেখবার কোনও লোক নেই—

    আমি বললাম— আপনি সব কাজ কেন গীতার কাছে আশা করেন?
    গুরু বললে— গীতার কাছে আশা করব না তো কার কাছে করব?
    বললাম— কিন্তু গীতারও তো নিজের কাজ-কর্ম আছে। তার কাজই বা কে দেখবে?

    গুরু আমার দিকে চাইল। বললে— কেন? তার আবার কী কাজ? 
    — কেন, আপনার ছেলে-মেয়ে সংসার ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তার?
    — কি কাজ?
    — কেন, গান গাওয়া?

    গুরু বললে— আমি তো বলেছি গান বন্ধ করতে। গান গায় কেন? 
    বললাম— বাঃ, আপনিই বা ছবি করেন কেন?

    গুরু চুপ করে গেল আমার কথা শুনে। বললে— আমার ছবি করার সঙ্গে ওর গান গাওয়ার তুলনা? আমি ছবি করা বন্ধ করলে আমার সংসার চলবে কেমন করে? অতগুলো লোকের সংসার চলবে কি করে, তা কখনও ভেবে দেখেছে গীতা?

    বললাম— আপনি স্বার্থপরের মতো কথা বলছেন। আপনার জন্যে সবাই সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে আপনার খোসামোদ করবে, এইটেই কি আপনি চান? গীতা যেমন আপনার সংসার দেখছে, তেমনি আপনি কি কখনও গীতার দিকটা দেখেছেন? কখনও কি ভেবেছেন গীতা কি নিয়ে থাকবে? 

    — কেন সংসারের কাজ কি কিছু কম?

    বললাম— চুলোয় যাক আপনার সংসার। কত লোকের সংসার তো ঝি-চাকরে দেখে, তাতে তো কিছু রসাতলে যায় না। আপনি কেন গীতাকে গান গাইতে বারণ করেন? গীতার গান ছাড়া আর কিই-বা শখ আছে?

    গুরু খানিকক্ষণ গুম হয়ে বসে রইল। তারপর বললে— গীতা আপনাকে এই সব কথা বলেছে নাকি?

    বললাম— আপনি আর ও নিয়ে কিছু বলবেন না যেন গীতাকে—

    সূত্রপাত হল ভুল বোঝাবুঝির। গীতাও বুঝতে পারল না গুরুকে। গুরু দিন-রাত বাইরে। ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছে দার্জিলিংয়ে। বাড়িটাকে মনে হয় যেন কারখানা। যে-বাড়িটা একদিন দুজনের কাছে স্বর্গের রাজ্য ছিল, সেই বাড়িটাই একদিন আবার পাথর হয়ে দুজনের বুকে চেপে বসল।

    গুরু অনেকক্ষণ কোনও কথা বললে না আর। সারা জীবন ধরে গুরু শিল্পের পেছনে দৌড়িয়েছে। খ্যাতির পেছনে দৌড়িয়েছে। জীবনকে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবার চেষ্টা করেছে। কখনও ভাবেনি একদিন তাকেও থামতে হবে। যখন বিয়ে করে সংসার পাতল, সন্তান হল, তখন একদিন হঠাৎ পেছন ফিরে দেখতে চাইল কতদূর এলাম। তখন দেখতে পেল সেই ছোটবেলা থেকে যে দৌড়তে শুরু করেছিল, তাতে এক পা-ও তার এগোনো হয়নি। যেখানে ছিল সে, সেখানেই আছে। তখন থেমে গিয়ে গীতাকে বললে— তুমি গান ছেড়ে দাও—

    গীতা অবাক হয়ে বললে— কেন?
    — তুমি গান গেয়ে বেড়াবে আর আমি ছবি করে বেড়াব বাইরে-বাইরে, তাহলে আমাদের সংসার দেখবার কেউ থাকে না—
    — কিন্তু বাইরে বেরোলে কি সংসার দেখা যায় না?

    গুরু বললে— না। ঘরের ফার্নিচার পুরোনো হয়ে গেছে, ঠাকুর-চাকর সবাই চুরি করছে। বাগানে ফুলের গাছগুলো মরে যাচ্ছে, এসব দেখবে কে? 

    এসব অনেক দিন আগের কথা। এই নিয়েই সূত্রপাত হল ভুল বোঝাবুঝির। গীতাও বুঝতে পারল না গুরুকে। গুরু দিন-রাত বাইরে। ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছে দার্জিলিংয়ে। বাড়িটাকে মনে হয় যেন কারখানা। যে-বাড়িটা একদিন দুজনের কাছে স্বর্গের রাজ্য ছিল, সেই বাড়িটাই একদিন আবার পাথর হয়ে দুজনের বুকে চেপে বসল।

    এই অবস্থার মধ্যেই আমার কাটল সাতদিন। সাতদিন ধরেই শুটিং চলল। যে লোকের মনের মধ্যে অশান্তির আগুন জ্বলছে দিনরাত তার পক্ষে চব্বিশ ঘণ্টা কাজের মধ্যে ডুবে থাকা ছাড়া উপায়ই বা কি ছিল। শুটিং-এর পর আমরা দুজন পালি হিলের বাড়িতে ফিরে আসতাম একই গাড়িতে। বাড়িতে এসেও গুরু আমার কাছে এসে বসত। আমি একটু সঙ্কোচ বোধ করতাম। সারাদিন পরিশ্রম করে এসে তখন স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে গুরু সময় কাটাক, এইটেই চাইতাম। কিন্তু না, গুরু আমার ঘরে এসে আলোচনা করত। অনেক রাত পর্যন্ত আমার সঙ্গেই গল্প করে কাটাত।

    আমি একটু দ্বিধা করে বলতাম— আপনি একটু বিশ্রাম নিলেন না—

    গুরু বলত— না, ঠিক আছে—

    সাতদিন পরে আমার যাওয়ার দিন এল। আবার কলকাতায় ফিরে যেতে হবে। আবার সেই কলকাতার জীবন। সেই সকাল থেকে লেখার ভাবনা। সেই যন্ত্রণার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া। আবার সেই ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’-এর মধ্যে ডুবে থাকা।

    বোম্বাই ভি.টি স্টেশনে পৌঁছে আবার দেখা হল সাগরময় ঘোষের সঙ্গে। দেখা হল রমাপদ চৌধুরীর সঙ্গে। আরো অনেকের সঙ্গেই দেখা হল। যাদের সঙ্গে দু-তিন দিন এক হোটেলে কাটিয়েছি, তাদের সকলের সঙ্গেই। জসীমউদ্দীন সাহেব পাকিস্তানের ডেলিগেট হয়ে এসেছিল, তার সঙ্গেও দেখা হল। জসীমসাহেব আমার বহুদিনের পুরনো বন্ধু। সেই ইউনিভার্সিটির আমল থেকে। আবার দেখা প্রমথনাথ বিশী মশাইয়ের সঙ্গে।

    আবার কলকাতা। দুদিন ট্রেনে কাটিয়ে আবার সেই নিজের কোটরে ঢুকলাম! আবার কড়ি দিয়ে কেনা-বেচার কথা লিখতে লাগলাম।

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত
     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook