ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ১৪

    বিমল মিত্র (May 28, 2021)
     

    পর্ব ১৩

    মনে আছে সেদিন ১লা জানুয়ারি, ১৯৬১ সাল। সেদিন স্টুডিওর মধ্যে সবাই ব্যস্ত। প্রথম আরম্ভের দিন। সকালবেলাই পুজো হয়ে গেছে। যাকে বলে ‘মহরৎ’। একজন অ্যাসিস্টেন্ট আমাকে পুজোর প্রসাদ এনে দিলে। যে-গল্প ১৯৪০ সাল থেকে আমি লিখতে শুরু করেছিলাম, যে-গল্প চৌদ্দ বছর ধরে লিখে-লিখে ১৯৫৩ সালে বই হয়ে বেরিয়েছে, যে-গল্পের বাংলা সিনেমা হয়ে গেছে, যে-গল্প বাংলা-ভাষী আর হিন্দি-ভাষীদের ঘরে-ঘরে ছড়িয়ে গেছে তারই শুভ মহরৎ। আর সেই গল্পেরই নায়ক ভূতনাথ আমার চোখের সামনে স্বমূর্তি নিয়ে হাজির হয়েছে, এ যেন বিশ্বাসের বাইরে। আজও মনে পড়ে কী অকথ্য নিন্দা আর কী অভাবনীয় প্রশংসা আমাকে অর্জন করতে হয়েছে এই উপন্যাসের জন্য।

    কিন্তু সে-কথা থাক, গুরু দত্তের দিকে আমি তখন হাঁ করে চেয়ে দেখছিলাম একদৃষ্টে। বাংলা ছবি হবার সময়ে আমি স্টুডিওতে যাইনি। গুরু দত্তের মতো এমন করে যাবার জিন্যে পীড়াপীড়িও করেনি কেউ। কিন্তু এবার ঘটনাচক্রে বোম্বাইতে এসে গিয়েছি, এবং গুরু দত্ত জোর-জবরদস্তি করে স্টুডিওতে টেনে নিয়ে এসেছে। এ-এক নতুন জগৎ আমার কাছে। বিরাট একটা হলঘরের মতো জায়গা। ভেতরে লোকজনের ভিড়। একটা চেয়ারে আমাকে বসতে বললে। আমি বসলাম। সুবিনয়বাবুর বাড়ির দৃশ্য তোলা হচ্ছে। বৃদ্ধ সুবিনয়বাবু আছেন, ভূতনাথ আছে, ব্রজরাখাল আছে, আর আছে জবা। জবার ভূমিকায় ওয়াহিদা রেহমান।

    ওয়াহিদা বাঙালি মেয়ের মতো শাড়ি-ব্লাউজ পরেছে। একেবারে নিখুঁত শাড়ি পরা। মাঝখানে দুপুরবেলা ছুটি হল। লাঞ্চ খাওয়ার ছুটি। গুরু দত্তের নিজের মেক-আপ রুমের পাশে খাওয়ার ঘর। সেখানেই খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। খেতে বসেছি গুরু, গীতা, ওয়াহিদা আর আমি। গীতাকে দেখে একটু অবাক হয়ে গেলাম। স্টুডিওতে তো কখনও দেখিনি গীতাকে।

    বললাম— একি, আপনি? আপনাকে তো কখনও স্টুডিওতে দেখিনি?

    গীতা বললে— আজকে ছবিটা প্রথম আরম্ভ হচ্ছে, তাই এলাম—

    আমার মনে পড়তে লাগল কয়েক মাস আগের কথা। এই ওয়াহিদা রেহমানকে ‘জবা’র ভূমিকা যাতে না দেওয়া হয় তারই জন্য গীতা অনুরোধ করেছিল আমাকে! আমারও কেমন অস্বস্তি ছিল। শেষকালে এই নিয়ে না কোনও গণ্ডগোল হয়!

    গুরু খেতে-খেতে বললে— না, আমিই গীতাকে ডেকে এনেছি। ওয়াহিদা বাঙালি স্টাইলে শাড়ি পরতে  পারে না, তাই ওয়াহিদাকে শাড়ি পরিয়ে দেবার জন্যে ডেকে এনেছি—

    ওয়াহিদা জিজ্ঞেস করলেন— কেমন দেখাচ্ছে আমাকে?

    বললাম— খুব ভালো—

    — ঠিক বাঙালি মেয়ের মতো হয়েছে?

    বললাম— একেবারে নিখুঁত—

    আমার মনে পড়তে লাগল কয়েক মাস আগের কথা। এই ওয়াহিদা রেহমানকে ‘জবা’র ভূমিকা যাতে না দেওয়া হয় তারই জন্য গীতা অনুরোধ করেছিল আমাকে! আমারও কেমন অস্বস্তি ছিল। শেষকালে এই নিয়ে না কোনও গণ্ডগোল হয়!

    কিন্তু গীতার মুখের চেহারা দেখে খুব ভালো লাগল। বড় ভালো লাগল ওয়াহিদা রেহমান আর গীতাকে টেবিলে একসঙ্গে দেখে। দেখলাম দুজনের মধ্যে খুব সম্প্রীতি। ওয়াহিদা রেহমান গীতাকে ‘গীতাজী’ বলে ডাকছে, গীতাও ওয়াহিদাকে ‘ওয়াহিদাজী’ বলে ডাকছে। সেদিন দুজনকে গল্প করতে দেখে আমার মনে হল যেন একই পরিবারের দুই বোন।

    গীতাও আমাকে বলেছে— জানেন, আমি ওয়াহিদাকে খুবই বিশ্বাস করেছিলাম—

    জীবনে স্ত্রী-চরিত্র নিয়ে অনেক গল্প-উপন্যাস নিজেও লিখেছি। এবং স্ত্রী-চরিত্র নিয়ে বেশি লেখার জন্যে আমার একটা বদনামও আছে যে আমি নাকি বহু স্ত্রী-চরিত্রের সংসর্গে এসেছি। কিন্তু আসল কথাটা তা নয়। আসলে আমি মানুষ-চরিত্রের সংসর্গ পেলেই আনন্দ পাই। সে স্ত্রীলোকই হোক আর পুরুষই হোক, মানুষ মাত্রই আমাকে আকর্ষণ করে। সমুদ্র, পাহাড়, নদী যেমন অনেককে আকর্ষণ করে, তেমনি আমাকে আকর্ষণ করে মানুষ। মানুষ যত বিচিত্র হবে, আমি ততো আনন্দ পাব। সেই মানুষের মতো মানুষের সঙ্গে মিশলে আমার আর ঘড়ির কাঁটার দিকে মন থাকে না। তখন আমি সব ভুলে যাই। সে-মানুষ হয়তো গরিব, চোর, লম্পট, মিথ্যেবাদী। আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই বিচার করি। মানুষের দোষ, ত্রুটি, গুণ, মহত্ত্ব, নীচত্ব, সবটাই আমার দরকার! সবটা নিয়েই আমার আনন্দ!

    খাওয়ার পর আবার শুটিং হওয়ার ঘণ্টা পড়ল। গুরু আর ওয়াহিদা চলে গেছে স্টুডিওতে। আমি আর গীতা রইলাম। বললাম— কেমন লাগছে আপনার শুটিং?

    গীতা বললে— ভালো— জানেন, আমিই একদিন ওকে বারণ করেছিলাম এই ছবি করতে—

    — কেন?

    গীতা বললে— ‘সাহেব বিবি গোলাম’ আমাদের জীবনেরই গল্প।

    আমি চমকে উঠলাম। বললাম— বলছেন কি?

    গীতা বললে— আমি ওকেও তাই বলেছি। বলেছি, আপনি এ ছবি কেন করছেন? শুধু আমি নয়, অনেকেই ওকে বারণ করেছে এই ছবি করতে!

    আমি স্তম্ভিত হয়ে গীতার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। এ-কথা আজ প্রথম শুনছি না। সকলের মুখ থেকেই প্রায় শুনেছি। বহু সম্ভ্রান্ত ঘরের মহিলা আমাকে বলেছেন— এ গল্প তাঁর জীবনেরই গল্প।

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত
     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook