ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • পাকিস্তানে হিংলাজ মাতা

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (March 12, 2021)
     

    আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, পাকিস্তান দেশটার কট্টর মুসলমান রাষ্ট্রীয় পরিচিতি সত্ত্বেও, এবং ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার বিরুদ্ধে ও মূর্তিপুজোর বিরুদ্ধে সেখানে আইন থাকা সত্ত্বেও, সেই দেশে আজও বহু হিন্দু মন্দির রয়েছে। আজ থেকে এক হাজার বছর আগে আমাদের উপমহাদেশে ইসলামের আগমনের আগে থেকেই রয়েছে এই মন্দিরগুলো। পাঞ্জাব, সিন্ধ ও বালুচিস্তানে এসব মন্দির আজও সমৃদ্ধি পাচ্ছে, অনেক সময়ে মুসলমান সেবায়েতদের তত্ত্বাবধানেই। ইংরেজ ঔপনিবেশিক যুগে ধর্মে-ধর্মে ভেদাভেদের সংস্কৃতি এদেশে আসার আগে যে ধর্মনিরপেক্ষ আচার-ব্যবহার আমাদের ছিল, এঁরা সেই আচার মেনে মন্দিরগুলোর সেবা করে চলেছেন। এমনটাই দেখতে পাওয়া যায় বালুচিস্তানের হিংলাজ মাতার দেবীমন্দিরে।  

    একটি উপত্যকা এবং এক প্রাচীন আগ্নেয়গিরিকে কেন্দ্র করে এই মন্দির, যে জায়গাগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দেবীর উপাখ্যান। আদতে এটি একটি শক্তিপীঠ— ধর্মানুসারে যে পবিত্র স্থানে সতীর কোনও দেহাংশ ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখানে নাকি এসে পড়ে সতীর মাথাটি, এবং সেই পতনের সময়ে বিপুল পরিমাণে উত্তাপ ও শক্তির উৎপাদনে এই উপত্যকার সৃষ্টি হয়। বলা হয়, নিকটবর্তী আগ্নেয়গিরিটি আসলে স্থানীয় ভৈরব হয়ে সতীর মাথাটি আগলে রেখেছেন। এর নাম বাবা চন্দ্রগুপ্ত।

    প্রতিবেশী এলাকা থেকে তীর্থযাত্রীরা এখানে আসেন। হিংলাজ মাতাকে নিয়ে দুটি গল্প শোনা যায়। প্রথমটি পরশুরামকে নিয়ে। বলা হয়, পরশুরাম যখন পৃথিবী জুড়ে সমস্ত ক্ষত্রিয় বধ করছিলেন, তখন তাদের মধ্যে একটি দল এসে আশ্রয় নেয় হিংলাজ মাতার মন্দিরে। দেবী তাদের আশ্রয় দেন, এবং পরশুরাম ঠিক করেন তাদের প্রাণে মারবেন না। এই ক্ষত্রিয়দের তিনি বেদশিক্ষা দেন, তারাও অস্ত্রের ব্যবহার ত্যাগ করে। পরবর্তী যুগে এই ক্ষত্রিয়রা একাধিক তাঁতি সম্প্রদায়ের রূপে ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতবর্ষে। শিল্পজাত বিপ্লবের আগে যে কাপড়ের জন্য ভারতের সুখ্যাতি ছিল, তা এদেরই কীর্তি।

    দ্বিতীয় গল্পটি রামকে নিয়ে। রাবণকে বধ করায় রামের যে ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়েছিল (রাবণ ব্রাহ্মণ ছিলেন), রাম ঠিক করেন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হিংলাজ মাতার তীর্থে যাবেন। রাম গিয়েছিলেন রাজার সাজে, সৈন্যসামন্ত পাত্রমিত্র নিয়ে। কিন্তু সাধারণ তীর্থযাত্রীর বেশে না আসায়, দেবীর ভৈরববাহিনী তাঁর যাত্রাপথে বাধা দেয়। তখন রাম তাঁর সেনাবাহিনী এবং অমাত্যদের রেখে, কেবল স্ত্রী, ভাই, এবং হনুমানকে নিয়ে অগ্রসর হন। বড় দীর্ঘ এবং কষ্টকর যাত্রাপথ, বহুবার পানীয় জল শেষ হয়ে যায়। লক্ষ্মণ তিরের আঘাতে মাটি ফুঁড়ে জলের সন্ধান করেন, হনুমান চেষ্টা করেন লাথি মেরে মাটি ভেঙে জল আনতে, কিন্তু কিছুতেই কোনও লাভ হয় না। অবশেষে সীতা ভূমি স্পর্শ করে হিংলাজ মাতার কাছে প্রার্থনা করেন, বদ্ধ জল যেন মুক্তি পায়। এভাবেই সেখানে বিভিন্ন দীঘি ও কুয়োর উৎপত্তি হয়, ওঁরা তিনজনও মরুপথে দীর্ঘ যাত্রার পরে হিংলাজ মাতার গুহায় গিয়ে পৌঁছতে সক্ষম হন।

    তাঁর এই যাত্রার স্মারক হিসেবে রাম, দেবীর মন্দিরের চারপাশের গুহার দেয়ালে চন্দ্র ও সূর্যের ছবি খোদাই করে রাখেন। তাঁর সৈন্যদল তাঁর সঙ্গে মন্দিরে যেতে না পেরে দুঃখ পেলে তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে অন্য জন্মে তারা তীর্থযাত্রী হয়ে আবার ফিরে আসবে, এবং দেবী তাঁদের চিরকাল আশীর্বাদ করবেন।

    এখনও পাকিস্তানে এই পীঠস্থান রয়েছে, এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আজও পেয়ে চলেছে যোগ্য সম্মান।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook