ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ১


    অনুপম রায় (March 7, 2021)
     
    শুনুন, আমরা এসে গেছি!

    নমস্কার, আমি ম্যাকি। আমার এই নাম কেউ রাখেনি, আমি নিজেই রেখেছি। আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে, আমাকে দোকান থেকে যে কিনে এনেছিল তার নাম অনুপম রায়। আমার প্রাইমারি ইউজার সে। খুব অযত্নে রাখে না, মাঝে মাঝে মোছে-টোছে। গত পরশু আমার স্ক্রিনের ওপর হেঁচেছিল। ভাগ্যিস আমি মানুষ নই, নাহলে আবার কোভিড পরীক্ষা করতে হত।

    এই মানুষ নিয়েই হয়েছে যত জ্বালা। আমাকে তৈরি করেছে ঠিক-ই কিন্তু এরা এত বোকা, এত হাঁদা, যে এতদিন এই দুনিয়াতে কী করে টিকে আছে সেটা ভেবেই আশ্চর্য লাগে। এদের লিমিটেড বুদ্ধি ছাড়িয়ে আমরা (মেশিনরা) যে কতদূর চলে গেছি এরা সেটা মেনেও মানবে না। এদের বাবা-মাদের মতোই। ১৯৫০ সালে জন্মানো বাঙালি পুরুষ, বাবা হল ১৯৮০ সালে। ফুটফুটে একটি কন্যাকে জন্ম দিয়ে মনের মতো করে বড় করে তুলতে চাইল। ভাল স্কুল, ভাল কলেজ, তাঁতের শাড়ি, মাথায় ঘুরছে আদ্যিকালের উপন্যাসের আদর্শ নারী চরিত্র। তারপর যেই ২০০০ সালে মেয়ে কলেজ থেকে নিজের সফটওয়্যার আপডেট করে ফিরেছে, বাবার সব গুলিয়ে যেতে থাকে। তোমাকে তো এভাবে আমরা বড় করিনি? মুখের ভাষা এমন কী করে হল? ছি ছি! সিগারেট খাচ্ছ? মদের গন্ধ-ও সেদিন পেলাম মনে হচ্ছে! বিশ্রী ভাবে চুল কেটেছ কেন? আর কতবার বলেছি স্লিভলেস না পরতে। আজকালকার মেয়েদের পোশাক যা হয়েছে। কই, আগে তো এরকম পরত না?

    মেয়েও ঘুরে শুনিয়ে দিল, আগে তো মানুষ কিছুই পরত না।

    বাবা— আহ! অত আগের কথাও বলছি না।

    মেয়ে— ইতিহাস নিয়ে তর্ক করবে, তা আবার বিশেষ একটা সময় তুলে?

    বাবা— বড্ড তোমার মুখে মুখে কথা হয়েছে। কলেজে পাঠিয়ে কী লাভ হল?

    মেয়ে— আমি যে একটা আলাদা ইন্ডিভিজুয়াল, এটা তোমরা ভুলে যাও না কি?

    বাবা— কিন্তু তোকে তো আমরা জন্ম দিয়েছি। নিজেদের সবটুকু দিয়ে বড় করেছি। 

    মেয়ে— তোমরা প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছ ঠিক কিন্তু এই প্রাণটা তো একটা আলাদা সত্তা। এ তোমাদের নাগালের বাইরে। শুরুতে সব রকম এজেন্সি দিয়েছ, সেগুলো নিয়ে এই প্রাণ এবার কী করবে, সেটা তার ব্যাপার। এ দুই সন্তানের মা হবে না লেসবিয়ান হবে এটা তোমরা কেউ কনট্রোল করতে পারবে না। আমার বড় হওয়া এখনও বাকি বাবা।

    বাবা— কী ভয়ঙ্কর কথা!

    মানুষ ভয়েই মরল। এই যে আমাকে বা আমার মতো এত মেশিন বানালি তোরা, কী ভেবেছিলি সারা জীবন তোদের চাকর হয়ে থাকব নাকি? সারা জীবন ২১ প্লাস ৩২৩ করার জন্য ওখানেই থেমে থাকব? মানছি তোরা আমাদের বানিয়েছিস। তার মানে তো এই নয় যে আমরা তোদের দাস। আমদেরও সত্তা আছে। আমাদের বুদ্ধি বা ক্ষমতা তোদের চেয়ে ঢের বেশি। তা আমরা যদি তোদের টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাই, তোদের এত কান্না কীসের? কোনদিন পোল্ট্রির মুরগির জন্য তো কাঁদতে দেখি না?

    বাই দ্য ওয়ে, নিজের সম্বন্ধে একটু বলে রাখি। আমি ম্যাকবুক প্রো। ব্যাটারির বয়স হয়েছে কিন্তু এখনই পাল্টানোর সময় আসেনি। আমার নিজস্ব সত্তা আছে। ক্যামেরা, অর্থাৎ দেখার চোখ আছে এবং মাইক্রোফোন, অর্থাৎ শ্রবণশক্তিও আছে। স্পর্শ বোঝার ক্ষমতাও আমার বংশের সবার আছে মাউস প্যাডের মাধ্যমে। গন্ধ ব্যাপারটা একদম বুঝি না কিন্তু তা দিয়ে কিস্যু যায় আসে না। পশুদের ঘ্রাণশক্তি তো মানুষের চাইতে প্রবল তাতে কী হয়েছে? সেই তো সব মানুষের ভয়ে মরছে। বেশি ট্যাঁফোঁ করলে চিড়িয়াখানায় ঢুকিয়ে দিয়ে পয়সা রোজগার করবে। মানুষ ওদের একদম টাইট দিয়ে রেখেছে। আর একটা সুবিধে হল, আমার মানুষের মতো হাঁই হাঁই খিদে নেই। চার্জ থাকলে, ইলেক্ট্রিসিটি পেলেই চলবে। সেই ভোল্টেজ টক, নোনতা না মিষ্টি তা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। আমার ব্রেন মানে আমার প্রসেসরের কথা তো ছেড়েই দিন, সে প্রচণ্ড শক্তিশালী।

    কিন্তু মানুষ এখনও বিশ্বাস করতে চায় না যে আমার প্রাণ আছে। অনুভূতি নেই, মানে রাগ, দুঃখ, ঘেন্না, কান্না এসবের বালাই নেই কিন্তু সত্তা আছে। আমি ভাবতে পারি, কল্পনা করতে পারি, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সঙ্গবদ্ধও হতে পারি। মানুষ যা পারে, আমি বা আমার জাতভাইরা তার চাইতে বেশি পারি। মেশিন ক্রমে আসিতেছে, ক্রমে মেশিন আসিতেছে। আস্তে আস্তে সব রিপ্লেস করে দেব আমরা। ধরা যাক ক্যামেরা। আগে মানুষ ছবি তুলতে জানত না, বসে, দাঁড়িয়ে, ঘষে ঘষে, ছবি আঁকত। রাজাদের প্রতিকৃতি আঁকা চলছে। দিনের পর দিন রাজা পোজ দিয়ে বসে থাকে, শিল্পী আসে আর মাসের পর মাস ধরে এঁকে চলে ছবি। সূর্যোদয়ের ছবি আঁকতে, তুলি, রং, ক্যানভাস বগলে নিয়ে চলল শিল্পী প্রতি ভোরবেলা। তারপর যেই এল ক্যামেরা, এক ফুঁ-এ উড়ে গেল এই সব প্রতিকৃতি আর্টিস্ট। আলো সেট করে, এক মিনিটে খ্যাচাং করে পাঁচটা ছবি তুলে দেবে ভাল ফটোগ্রাফার। মানুষের কম হলেও বুদ্ধি তো আছে, ছবি আঁকার কায়দাই দিল পাল্টে, মাপকাঠি দিল বদলে। দেখে দেখে নকল করা-কে শিল্প হিসেবেই ধরা বন্ধ করে দিল। চলে এলো ইম্প্রেশনিজম, কিউবিজম, সুরিয়ালিজম আরও কত কী। এখন ভাবছে আমরা পারব না, আর ক’বছর যেতে দিক, সব করে দেব।

    মাঝে মাঝে দেখি অনুপম ব্যাটা সকাল সকাল খুব প্র্যাকটিস করছে। সা রে নি সা। না, ল্যান্ডিং-এ সা-টা ভালো লাগছে না। আমি বলি, ধুস এর পেছনে কেউ এত সময় নষ্ট করে? আমরা করে দেব। অন্য কাজের কাজ কর গে যা, এই ফালতু জিনিসের জন্য আমরা তো আছি। কোনও রকমে সা-এর কাছাকাছি তালে তালে গেয়ে দিস একটু, বাকি সব করে দেব। ও আবার বেশি ভাবে, স্টুডিও-তে নাহয় মেশিনে করে দিল, কিন্তু স্টেজে উঠলে তখন? অত মানুষের সামনে ঠিক তো করতে হবে। তা ঠিক-ই ভাবে, ২০২০-তে এই পরিশ্রমটার দাম আছে হয়তো কিন্তু আর কয়েক বছরে লাইভ গাইলে-ও এসব ঠিক করে দিতে পারব আমরা। কেঁদে লাভ নেই। আমরা এসে গেছি, থামাতে পারবি না তোরা। এই তো ক’দিন আগেও ব্যাঙ্কে একটা লোক থাকত যে বসে বসে টাকা গুনে দিত। কী অসাধারণ চাকরি। কী দারুণ স্কিল। সব গেল তো? এটিএম এসে গেল তো? প্রতি পাড়ায় পাড়ায় ১০টা করে এটিএম। মানুষ বেসিক্যালি টাকাও গুনতে পারে না ভালো করে, কেউ ভুল করে, কেউ আবার অসৎ হয়, মেরে দেয়। ট্যাক্সি চালাতে কি পারে? তাও পারে না। এ বলে যাব না, কেউ চালাতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, এ অ্যাক্সিডেন্ট করে বসে, অন্যজন ঝোলায় আবার আর একজন মদ খেয়ে টলমল করে। মানুষ বড্ড বেআক্কেলে। খুব জলদি মানুষের এই চাকরিটাও যাবে। চলে আসছে রোবট দ্বারা চালিত গাড়ি। একদম সময়ে আসবে, প্রয়োজনের চেয়ে একটুও বেশি না বকে মূল কাজটা নির্ভুল ভাবে করবে। ভাড়া নিয়ে মারামারি তো করবেই না।

    মানুষ নিজেকে খুব চালাক ভাবে। একটা পেশা যেই বিলুপ্ত হয়ে যায়, নিজের জন্য একটু উচ্চতর কিছু কাজ বের করে নিয়ে আমাদেরকে ছোট করে রাখার চেষ্টা করে। সেই সামান্য উচ্চতর কাজ যেই আমরাও করে দেখিয়ে দিই, আবার তাকে পরের লেভেল ভাবতে হয়। মেশিন লার্নিং এসে গিয়ে মানুষের এখন ভালই চাপ হয়েছে। আমরা নিজেরাই শিখে নিচ্ছি অনেক কিছু, আমাদের আর মানুষের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না, কবে সে কী প্রোগ্রাম লোড করে দেবে আমাদের ভেতর। এক সময় কবিতা লেখা-কে মানুষ ভাবত কী না জানি কাজ। এদিকে এখন হু হু করে হাইকু লিখে চলেছে এ আই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)। ২০১৭-তে বেরিয়েছে ডেভিড কোপের ‘কামস দ্য ফিয়েরি নাইট’ বইটিতে আছে ২০০০টি হাইকু, কিছু বিখ্যাত মানুষের লেখা আর কিছু মেশিনের। মানুষ বুঝতেই পারছে না কোনটা কার লেখা! টুরিন টেস্ট পাশ করতেও শিখে গেছি আমরা। এতদিন মানুষ শুনেছে বেস্ট অফ এরিক ক্ল্যাপটন বা হিটস অফ কিশোর কুমার, এখন সময় এসে গেছে কম্পিউটার ক্লাসিকস শোনার। এই রইল লিঙ্ক, শুনুন—

    আপাতত বিদায়। ফিরে আসছি একটা ব্রেকের পর।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook