গত দু’সপ্তাহে প্রিমিয়ার লিগের প্রতিযোগিতার চেহারাটাই বদলে গেছে। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির জয়রথ এখনও গড়গড়িয়ে চলছে। তবে গত এক মাসের মধ্যে, ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে খেলাটায় পেপ গুয়ার্দিওলা সবচেয়ে বেগ পেয়েছিলেন। যেই দল ঘোষণা করা হল, বোঝা গেল, পেপ কী করতে চাইছেন এখন। ডি ব্রুইনের সঙ্গে আগুয়েরো শুরু করলেন সেদিন। এটা ফুটবলারদের বিশ্রাম দেওয়ার জন্য ভেবেচিন্তে নেওয়া একটা সিদ্ধান্ত, বলা যায়, একটা হিসেবি ঝুঁকি। যা প্রায় ব্যর্থ হতে বসেছিল। ওয়েস্ট হ্যাম এই মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত ভাল খেলছে। ক্লাবের ইতিহাসে এই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। এবং সেদিন তাদের হারাতে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে।
আগুয়েরো-ডি ব্রুইন শুরু করায় সিটি সমর্থকেরা দারুণ কিছু দেখার আশা করেছিলেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে তাদের যেরকম তেল খাওয়া মেশিনের মতো সাবলীল দেখাচ্ছিল, এই ম্যাচে সেরকম খেলেনি ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। যাতে এটাও মনে হল, ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে সের্জিও আগুয়েরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে। আগুয়েরোর চুক্তি ফুরোতে আর মাত্র ছ’মাস। উনি থাকলে দলটা তেমন ভাল খেলছেও না। সত্যি বলতে, সেদিন দ্বিতীয়ার্ধে, দলে পরিবর্তন ঘটিয়ে, তারপর খেলার রাশ হাতে নিয়েছিল ম্যান সিটি। তা সত্ত্বেও গোল শোধ করার একটা হাফ-চান্স পেয়ে গেছিল ওয়েস্ট হ্যাম। অতএব সিটির জয়রথ যতই দৌড়ক না কেন, এই ম্যাচে ওদের সত্যিকারের কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আবার পরের ম্যাচে তারা উলভসের মুখোমুখি হল। সেদিন বহুক্ষণ ম্যাচ ১-১ ছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সিটি যে একচেটিয়া প্রাধান্য বজায় রেখেছিল, সেটা ম্যাচের চূড়ান্ত ৪-১ স্কোরলাইনেই পরিষ্কার।
এই সপ্তাহের শেষে দুই ম্যাঞ্চেস্টার— ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ও ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড— পরস্পরের মুখোমুখি। এখন এমন একটা অবস্থা, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি যদি এই ম্যাচে হারেও, তাদের পক্ষে সেটা বিরাট ঝামেলা নয়। বরং একটা সময়ে পেপ-এর একটা ম্যাচ হারা দরকার, তাতে আবার দলটা টানা জিততে থাকে। কথাটা শুনতে খুব উদ্ভট লাগছে, কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এক মরশুমে চারটে ট্রফি জেতার উচ্চাশা সফল হবে কি না, তা নির্ভর করছে— ওরা ঠিক কতটা কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বিতা পাবে, তার ওপর। আর সেটার সবচেয়ে আসল মঞ্চ চলতি প্রিমিয়ার লিগ। ডার্বিটা নিশ্চয়ই দারুণ জমজমাট হবে।
ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ম্যাচে, স্মরণকালের ভেতর সবচেয়ে কঠিন ফুটবল খেলাটা হয়েছে। আমি তো ফ্যানদের সঙ্গে ঠাট্টা করছিলাম ‘প্লেয়ারদের চিনতে পারো কি না দ্যাখো’ বলে। কারণ এমনিতে খেলাটা খুব একটা আকর্ষণীয় হয়নি। সপ্তাহান্তে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ডার্বি জিতলে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেবে। এমনকী হয়তো ম্যান সিটিকে ছুঁয়ে ফেলার একটা অলীক আশাও তাদের মনে জাগতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ম্যান সিটির টানা ম্যাচ জেতার রেকর্ডটাকে তারা আটকে দিতে পারবে, আর তা নিয়ে গর্ব করতেও পারবে।
বার্নলে বনাম লেস্টার সিটি ম্যাচে দু’প্রান্তেই কী জমজমাট ফুটবল খেলাটাই না হল! দু’ দিকেই অনবদ্য গোলকিপিং হয়েছে। অনেকে অবশ্য এই ম্যাচকে লেস্টারের হোঁচট খাওয়া হিসেবে দেখবেন। বার্নলে কিন্তু এমন একটা দল, যারা অঘটন ঘটানোর ক্ষমতা ধরে।
চেলসি গতরাতে লিভারপুলের মুখোমুখি হওয়াতে এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, গোড়ার দিকে অপরাজিত থাকা চেলসি, টমাস টুখেলের কোচিং-এ কি সত্যিকারের একটা দল হিসেবে উন্নতি করেছে? উল্টো দিকে, লিভারপুল এই মুহূর্তে কোনও ভাল দলের নাম নয়। এবং ক্লাবের ইতিহাসে এই প্রথমবার টানা পাঁচটা হোম ম্যাচ হারল লিভারপুল। গত মরশুমে ওরা ইতিবাচক সব রেকর্ড করেছে। আর এই মরশুমে করেছে নেতিবাচক রেকর্ড। গতরাতে চেলসির গোলে লিভারপুলের প্রথম সঠিক টার্গেট শট ম্যাচের চুরাশি মিনিটে! এমন নয় যে লিভারপুল সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু ওদের ফিনিশিং ছিল জঘন্য।
চেলসির জয়ের কৃতিত্ব আসলে লিভারপুলের বিশ্রী পারফরম্যান্সেরই। যদিও খেলার শেষ দিকে চেলসির একটা ব্যাপার দেখে আমি প্রাক্তন লিভারপুল-খেলোয়াড় হিসেবে হতাশ হয়েছি, আবার প্রতিপক্ষ হিসেবে উল্লসিত হয়েছি। চেলসি মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে এমন কিছু নির্লজ্জ পাস খেলেছে, যেগুলোকে আমার বলতে ইচ্ছে করছে— অখেলোয়াড়োচিত। তবু আমার ভাল লেগেছে, ওই কাজ করার মতো আত্মবিশ্বাস ওদের ছিল। এবং টুখেলের দলের দিকে তাকিয়ে যখন একজন ভাববেন যে, লিভারপুলের মতো টিমকে যারা প্রায় একরকম হেনস্থাই করেছে, তখন মনে হবে চেলসি এই মুহূর্তে সত্যিই খুব ভাল অবস্থায় আছে।
কাগজ-কলমে চেলসি এমন একটা দল, যারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ টিমের টক্কর নিতে পারে। আর এই মুহূর্তে চেলসির সাফল্যের সম্ভাবনা প্রিমিয়ার লিগের বাকি অংশটুকুকে আরও জমিয়ে তুলবে।