
আত্মপ্রত্যয়ী, বিবেকী বন্ধু
‘একটা দেশ বা সমাজ যখন স্বার্থান্ধ আত্মাবমাননা-আত্মসমর্পণের গড্ডলিকা-প্রবাহে ক্রমশই পঙ্কে নিমজ্জিত হতে থাকে, তখন যেমন সেই ‘প্রতিক্ষণ’-এর জন্য নিষ্ফল বিলাপ করি, আর আত্মপ্রত্যয়ী বিবেকী বন্ধু স্বপ্নাকে শেষ নমস্কার জানাই।’

‘একটা দেশ বা সমাজ যখন স্বার্থান্ধ আত্মাবমাননা-আত্মসমর্পণের গড্ডলিকা-প্রবাহে ক্রমশই পঙ্কে নিমজ্জিত হতে থাকে, তখন যেমন সেই ‘প্রতিক্ষণ’-এর জন্য নিষ্ফল বিলাপ করি, আর আত্মপ্রত্যয়ী বিবেকী বন্ধু স্বপ্নাকে শেষ নমস্কার জানাই।’

‘প্রিয়ব্রত বাবু এবং স্বপ্না দেব সর্বময় কর্তা-কর্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও, একটা দুর্লভগুণের অধিকারী ছিলেন। যাঁর যা কাজ, সেখানে কখনও হস্তক্ষেপ করতেন না। লেখক কিংবা শিল্পীর কাজের ব্যাপারে নীরবই থাকতেন। বলা ভাল, শিল্পীকে স্বাধীনতা দিতেন।’

‘‘কাজের ক্ষেত্রে স্বপ্নাদি ছিলেন অত্যন্ত একনিষ্ঠ, যাকে বলে ‘সিরিয়াস’। মাঝে-মাঝেই চলে যেতেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বা বাংলাদেশে। কোনও একটি ঘটনা সামগ্রিকভাবে নিরীক্ষণ করে ফিরে এসে লিখতেন বিশ্লেষণাত্মক লেখা। সে-লেখার ধার ও ভার দুই-ই ছিল অবিস্মরণীয়।’’

‘আমরা যখন কারুর জীবনী পড়ি, তখন কি তা শুধু সেই মানুষটার জীবনকে চেনার বা জানার জন্য, না কি তাঁর জীবনকে ভিত্তি করে নিজের জীবনের ওঠাপড়ার গল্পগুলকেও খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি আমরা?’

‘গৃহ’ নামক প্রবন্ধে মেয়েদের বাড়ি বা নিজের স্পেস নিয়ে যাবতীয় দোটানার কথা তিনি লিখছেন, সেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের কাহিনি মিলে যায় ‘ডেলিসিয়া হত্যা’-র উপন্যাসের সঙ্গে। এই সাদৃশ্য plagiarism নয়, বরঞ্চ রোকেয়া ইঙ্গিত করছেন, যাকে আমরা এখন বলি, ‘ফেমিনিস্ট সিস্টারহুড’।

‘অদ্রীশ বর্ধনের অনুবাদের উপরে অভিযোগ এসেছে যে— বঙ্গীকরণ করতে গিয়ে তিনি বহু অংশ বাদ দিয়েছেন। অদ্রীশ যখন অনুবাদ করতেন, তখন বাঙালি পাঠকের কাছে ইংল্যান্ড-আমেরিকা গ্লোবালাইজেশনের দৌলতে এতটা কাছে চলে আসেনি। সাত ও আটের দশকের শিশু-কিশোররা এই অনুবাদগুলির মাধ্যমেই বিশ্বসাহিত্যের এবং পাশ্চত্যবিশ্বের স্পর্শ পেত।’

‘তাঁর জীবন ও লেখালেখিতে বাঙালির রেনেসাঁস প্রদীপের আলো ও তার তলার অন্ধকার— দুটোই বড্ড স্পষ্ট। প্যারীচাঁদের চরিত্রের যে-স্ববিরোধ, তা নিয়ে হুতোম ব্যঙ্গ করলেও আমরা সেটিকে তাঁর স্বভাবের বৈচিত্র্য হিসেবে দেখব;’

‘তোমারও ঘুমের রং কফির মতোই নীল কড়া ও কাফের/ যেমন নাটক ছিল পাড়ার মলিন স্টেজে ছোটকাকাদের/ তেমনই তোমার মন দুটো ছোট হাততালি জড়িয়ে ঘুমোয়/ বিরহ রাহুল দেব গুলজার হয়ে এসে পাশ ফিরে শোয়’

‘নবনীতা দেবসেন তার মায়ের গল্পগুলি পাঠ করতে গিয়ে বলেছেন যে, সবক্ষেত্রেই মেয়েরা এখানে পর্যুদস্ত, অবহেলিত এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার শিকার। তাদের ক্ষোভে ফেটে পড়তে বা প্রতিবাদ করতে দেখা যায়না, বরং কোনও এক গভীর আত্মত্যাগ ও সংযমে তারা আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায়।’

‘অরুণ মিত্র পার্টি-অনুশাসন মেনে কবিতা লেখার নিদানকে মানতে পারেননি। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের বামপন্থী কবিগোষ্ঠীর একজন ছিলেন তিনি। পরে ধীরে-ধীরে নিজেকে একান্ত জগতে গুটিয়ে নেন। যদিও বামপন্থীদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কোনও ইতিহাস নেই।’

‘অপু-কাহিনি বলতে-বলতে যার যেখানে প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়, বিভূতিভূষণ তাকে সরিয়ে নেন। একে-একে সকলেই অপুকে ছেড়ে যাবে, পথের দেবতা তাকে ঘর ছেড়ে পথেরই ডাক দিয়েছেন। ফলে ঘরের দিক থেকে যারা তাকে টানে বা টেনে রাখতে পারে, বিভূতিভূষণ তাদেরকে নিয়ে নেন।’

‘বইটির প্রচ্ছদে (শিল্পী: সেঁজুতি বন্দ্যোপাধ্যায়) ভারতের একটি মানচিত্রর মধ্যে একটি ভোগের হাঁড়ি দৃশ্যমান। অর্থাৎ, ভারতজুড়ে ভোগের একটি স্বতন্ত্র মানচিত্র খুঁজে বের করার একটা প্রয়াস এই বইয়ের মধ্যে রয়েছে, তার আভাস প্রচ্ছদপট থেকেই স্পষ্ট। সূচি-তে কয়েকটি ভাগ রয়েছে, ফলমিষ্টির ভোগ, ভোগরাগ, লোকদেবতার ভোগ, কুটোভোগ, সেবাভোগ ও রান্নাবান্না। প্রতিটি বিভাগই নানাবিধ বিস্ময়ে ভরা।’
This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.
©2025 Copyright: Vision3 Global Pvt. Ltd.