কয়েকটি কবিতা

১০ই জুন-এর পরে

১.
আমার কোনও দায় নেই হাসার বা না হাসার
কোনও দায় নেই কথা বলার বা না বলার
আমার ভারি ছেঁড়া গেল যদি আমার মদ খাওয়া
মদ খেতে খেতে হা হা করে হেসে ওঠা
হা হা করে হাসতে হাসতে 
ধেই ধেই করে নেচে ওঠা ওদের ভাল না লাগে!
আমার শুধু সেই গাছটার কথা মনে পড়ে
একলা গাছের একটেরে হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মনে পড়ে
গাছটার লম্বা গহিন কোটরে ঢুকে পড়তে ইচ্ছে করে।
আমার মনে হয়, 
তুমি ওখানেই কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছ
আর বারবার কবজি ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখছ
বেঁটে হয়ে যাওয়া সিগারেট জুতোর তলায় ঘষে
নেভানোর আগে সেই শেষ লম্বা টান দিয়ে 
বিরক্ত হয়ে জিভ ঘুরিয়ে শব্দ করছ, ‘চিক’
             বলছ, ‘ওঃ! অলওয়েজ লেট!’

২.
আমি তো জানতামই, জানতাম না?
তুমিও তো জানতেই, জানতে না?
তবুও তো ঠোঁট নেমে এসেছে ঠোঁটে
বুক নেমে এসেছে বুকে,
দাঁতের ওপর নেমে এসেছে দাঁত
আলজিভ ঠেকেছে আলজিভে!
আর এখন?
এখনও তো আমি জানিই। জানি না?
তবু রাত এলে ভয় করে কেন?
বিছানায় শুয়ে বালিশে মাথা রাখার ভয়
ঘুমিয়ে না পড়ার ভয়
              ঘুমিয়ে পড়ার ভয়!

৩.
সন্ধে হলেই আমি ঘরের আলো নিভিয়ে দিই,
টিভি নিভিয়ে দিই, রবীন্দ্রসঙ্গীত বন্ধ করে দিই!
সন্ধে হলে বিস্বাদ এক কাপ কফি নিয়ে বসি
ফোন এলে ধরি না,
কেউ আসতে চাইলে কাটিয়ে দিই।
শুধুমাত্র সন্ধে হলেই 
আমি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াই আর 
অবাক হয়ে নিজেকে অনেকক্ষণ দেখি!
আমি বুঝতে চেষ্টা করি 
তুমি আশেপাশেই আছ কি না, তুমিও 
আশ্চর্য হয়ে আমাকে দেখছ কি না
সন্ধে হলে আমার মনে হয় তোমারও 
আমার জন্য মন কেমন করছে, মনে হয়
তুমিও হয়তো খাতা টেনে নিয়েছ কোলে আর
খাতা ছাপিয়ে উঠে আসছে অতলান্তর কালো জল।

৪.
ছোট চটির ওপর পড়ে থাকে বড় চটি
বড় চটির ওপর পড়ে থাকে ছোট চটি
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, দেখি
একটা বড় চটি কখন গুটগুট করে এসে
ছোট চটিটাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে।
শেষ রাতে ঘুম ভেঙে যায়, দেখি
ছোট চটি ঘুমের মধ্যে ঘুরে গেছে
উনআশি ডিগ্রি, ঠ্যাং তুলে দিয়েছে 
বড় চটির পেটে…
রাত অকারণেই খুব আস্তে, খুবই আস্তে 
গড়িয়ে চলে ভোরের দিকে…
এভাবেই কিছু চেনা শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
              যায় আর ফেরত আসে

আমি একবার এসি চালাই, একবার বন্ধ করি
একবার দেওয়াল ঘড়ি দেখি একবার মোবাইল ঘড়ি
আর ঘুমের মধ্যে ছোট চটির মুখ 
ডুবে যায় বড় চটির কাঁধে, ঘুমের মধ্যে 
বড় চটির হাত জড়িয়ে নেয় ছোট চটির পিঠ।

ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী