‌ম্যাজিকের অপেক্ষা

মতি‌ ‌নন্দী‌ ‌একদা‌ ‌আক্ষেপ‌ ‌করেছিলেন‌ ‌এই‌ ‌বলে‌ ‌যে,‌ ‌‌‘‌পশ্চিমবাংলায়‌ ‌প্রতি‌ ‌বৎসর‌ ‌বহু‌ ‌সংস্কৃতি‌ ‌মেলা‌ ‌হয়,‌ ‌সেখানে‌ ‌বহু‌ ‌বিষয়েই‌ ‌আলোচনা‌ ‌হয়,‌ ‌শুধু‌ ‌খেলার‌ ‌বিষয়টা‌ ‌ছাড়া।‌’‌‌ ‌একটা‌ ‌সময়কাল‌ ‌পর্যন্ত‌ ‌সত্যিই‌ ‌আমাদের‌ ‌মধ্যে‌ ‌খেলা‌ ‌নিয়ে‌ ‌যতুটুকু‌ ‌উত্তেজনা‌ ‌ছিল,‌ ‌সেই‌ ‌তুলনায়‌ ‌খেলার‌ ‌প্রতি‌ নিষ্ঠা‌ ‌আর‌ ‌ভালবাসা‌ ‌বোধহয়‌ ‌ছিল‌ ‌না।‌ ‌আর‌ ‌উত্তেজনাটুকুও‌ ‌ছিল‌ ‌মূলত‌ ‌ক্রিকেট‌ ‌আর‌ ‌ফুটবল‌ ‌ঘিরে।‌ ‌কলকাতায়‌ ‌ব্যায়ামের‌ ‌আখড়া‌ ‌ছিল,‌ ‌সাঁতার‌ ‌কাটার‌ ‌ক্লাব‌ ‌ছিল,‌ ‌এমনকী‌ ‌ছেলেপুলেরা‌ ‌মাঠ‌ ‌দাপিয়ে‌ ‌খেলে‌ ‌বেড়ালেও‌ ‌সেইভাবে‌ ‌বিকশিত‌ ‌হওয়ার‌ ‌কোনও‌ ‌সুযোগই‌ ছিল‌ ‌না‌ ‌তাদের।‌ ঠিকমতো‌ ‌চর্চা‌ ‌না‌ ‌থাকায়‌ ‌সেকালে‌ ‌দু‌’‌একজন‌ ‌তিরন্দাজ‌ ‌কি‌ ‌স্প্রিন্টার‌ ‌খুঁজে‌ ‌বের‌ ‌করা‌ ‌ছিল‌ ‌কলম্বাসের‌ ‌আমেরিকা-আবিষ্কারের‌ ‌মতন‌ ‌ঘটনারই‌ ‌সমান!‌

এই‌ ‌তো‌ ‌গেল‌ ‌বাংলার‌ ‌কথা,‌ ‌আর‌ ‌জাতীয়‌ ‌ক্ষেত্রে‌ ‌খেলাধুলোর‌ ‌প্রতি‌ ‌উদাসীনতার‌ ‌কথা‌ ‌যদি‌ ‌বলি?‌ ‌১৯৩২‌ ‌সালের‌ ‌লস‌ ‌অ্যাঞ্জেলেস‌ ‌অলিম্পিক্সে‌ ‌ভারতের‌ ‌হকি‌ ‌দলকে‌ ‌সেখানে‌ ‌পাঠানোর‌ ‌টাকা‌ ‌না‌ ‌থাকায়,‌ ‌স্থির‌ ‌করা‌ ‌হয়‌ ‌গান্ধীজির‌ ‌কাছে‌ ‌বিষয়টা‌ ‌জানানো‌ ‌হবে।‌ ‌তিনি‌ ‌দেশবাসীর‌ ‌কাছে‌ ‌আবেদন‌ ‌জানাবেন,‌ ‌ফেডারেশনের‌ ‌তহবিলে‌ ‌সামর্থ্য ‌অনুযায়ী‌ ‌দান‌ ‌করার‌ ‌জন্য।‌ ‌কিন্তু‌ ‌তাঁকে‌ ‌সব‌ ‌জানানো‌ ‌হলে,‌ ‌তাঁর‌ ‌পাল্টা‌ ‌প্রশ্ন‌ ‌ছিল,‌ ‌‌‘‌হকি‌ ‌জিনিসটা‌ ‌কী?‌’‌‌ ‌ভাবা‌ ‌যায়!‌ ‌এই‌ ‌ঘটনা‌ ‌একটা‌ ‌উদাহরণ‌ ‌মাত্র।‌ ‌বলার‌ ‌কথা‌ ‌এই,‌ ‌পরবর্তী‌ ‌অনেক‌ ‌বছর‌ ‌পর্যন্ত‌ ‌এইরকমই‌ ‌গা-ছাড়া‌ ‌মনোভাব‌ ‌ভারতীয়‌ ‌ক্রীড়াক্ষেত্রে‌ ‌দেখা‌ ‌গেছে।‌ ‌আর‌ ‌পরিকাঠামোর‌ ‌অভাবে‌ ‌হারিয়ে‌ ‌গেছে‌ ‌একাধিক‌ ‌প্রতিভা!‌ ‌যাই‌ ‌হোক,‌ ‌শেষপর্যন্ত‌ ‌অবশ্য ‌ব্যাঙ্ক‌ ‌থেকে‌ ‌ওভার‌‌ড্রাফট‌ ‌করে,‌ ‌সেই‌ ‌হকি‌ ‌দলকে‌ ‌অলিম্পিক্সে‌ ‌পাঠানো‌ ‌হয়েছিল‌ ‌এবং‌ ‌তারা‌ ‌স্বর্ণপদক‌ ‌নিয়ে‌ ‌ফিরেছিল।‌ ‌ফেরার‌ ‌পথে‌ ‌সেই‌ ‌আনন্দ‌ ‌তারা‌ ‌উদযাপন‌ ‌করেছিল‌ ‌ইউরোপে‌ ‌১৫‌ ‌দিনে‌ ‌ন‌’‌টি‌ ‌ম্যাচ‌ ‌খেলে।‌ ‌কেননা,‌ ‌এছাড়া‌ ‌ব্যাঙ্কের‌ ‌ঋণ‌ ‌শোধ‌ ‌করার‌ ‌আর‌ ‌কোনও‌ ‌উপায়‌ ‌তাদের‌ ‌জানা‌ ‌ছিল‌ ‌না!‌ 

‌তবে‌ ‌পরিস্থিতি‌ ‌আগের‌ ‌থেকে‌ ‌এখন‌ ‌অনেক‌ ‌অনেক‌ ‌বদলেছে।‌ ‌সরকারি‌ ‌ও‌ ‌বেসরকারি‌—‌ ‌এই‌ ‌দুই‌ ‌উদ্যোগেই‌ ‌খেলার‌ ‌জগতে‌ ‌উন্নতি‌ ‌হয়েছে।‌ ‌ক্রিকেট,‌ ‌ফুটবল‌ ‌কি‌ ‌টেনিস‌ ‌বাদে‌ ‌অন্যান্য খেলাতেও‌ ‌আধুনিক‌ ‌পরিকাঠামোর‌ ‌ফলে,‌ ‌ভারতের‌ ‌এই‌ ‌প্রজন্মের‌ ‌অ্যাথলিটরা‌ ‌প্রথম‌ ‌বিশ্বের‌ ‌অন্যান্য ‌দেশের‌ ‌তুলনায়‌ ‌কোনও‌ ‌অংশে‌ ‌পিছিয়ে‌ ‌নেই।‌ ‌আর‌ ‌সবচেয়ে‌ ‌আশার‌ ‌কথা‌ ‌এই‌ ‌যে,‌ ‌এখনকার‌ ‌ভারতীয়‌ ‌যুবসমাজ‌ ‌আগ্রহের‌ ‌সঙ্গে‌ ‌আরও‌ ‌বেশি‌ ‌করে‌ ‌নানান‌ ‌ধরনের‌ ‌খেলার‌ ‌দিকে‌ ‌ঝুঁকছে।‌‌

ইউরো‌ ‌কাপ,‌ ‌কোপা‌ ‌আমেরিকা‌ ‌এবং‌ ‌উইম্বলডন‌ ‌ফাইনাল‌ ‌মিটে‌ ‌যাওয়ার‌ ‌পরে‌ ভারতবাসীর‌ ‌সামনে‌ ‌এখন‌ ‌অপেক্ষা‌ ‌করছে‌ ‌টোকিও‌ ‌অলিম্পিক্স,‌ ‌যা‌ ‌শুরু‌ ‌হতে‌ ‌চলেছে‌ ‌এই‌ ‌মাসেরই‌ ‌২৩‌ ‌তারিখ।‌ ‌হাতে‌ ‌সাত‌ ‌দিনেরও‌ ‌কম‌ ‌সময়‌ ‌বাকি।‌ ‌অনেকেই‌ ‌অনুমান‌ ‌করছেন,‌ ‌অন্যান্য ‌বছরের‌ ‌তুলনায়‌ ‌এ-বছরে‌ ‌ভারতের‌ ‌পদকপ্রাপ্তি‌ ‌কিছুটা‌ ‌হলেও‌ ‌বাড়বে।‌ ‌মেরি‌ ‌কম‌ ‌(বক্সিং),‌ ‌পি‌ ‌ভি‌ ‌সিন্ধু‌ ‌(ব্যাডমিন্টন),‌ ‌দীপিকা‌ ‌কুমারী‌ ‌(তিরন্দাজি),‌ ‌প্রণতি‌ ‌নায়েক‌ ‌(জিমন্যাস্টিক্স),‌ ‌সজন‌ ‌প্রকাশ‌ ‌(সাঁতার) সহ‌ ‌অন্যান্য ‌অ্যাথলিটদের‌ ‌নিয়ে‌ ‌স্বপ্ন‌ ‌দেখতে‌ ‌শুরু‌ ‌করে‌ ‌দিয়েছেন‌ ‌অনেকেই।‌ ‌কিন্তু‌ ‌অন্য ‌বছরের‌ ‌তুলনায়‌ ‌এবছরের‌ ‌অলিম্পিক্স‌ ‌একেবারেই‌ ‌আলাদা।‌ ‌একে‌ ‌তো‌ ‌তা‌ ‌এক‌ ‌বছর‌ ‌পিছিয়ে‌ ‌অনুষ্ঠিত‌ ‌হচ্ছে,‌ ‌পাশাপাশি‌ ‌অতিমারীর‌ ‌কারণে‌ ‌তা‌ ‌হবে‌ ‌দর্শকশূন্য ‌স্টেডিয়ামে।‌টোকিওর‌ ‌এই‌ ব্যতিক্রমী‌ ‌অলিম্পিক্সকে‌ ‌কেন্দ্র ‌করেই‌ ‌১১‌ ‌জুলাই‌ ‌(রবিবার)‌ ‌টাটা‌ ‌স্টিল‌ ‌কলকাতা‌ ‌লিটারারি‌ ‌মিট‌ ‌ও‌ ‌ক্যালকাটা‌ ‌ক্রিকেট‌ ‌অ্যান্ড‌ ‌ফুটবল‌ ‌ক্লাবের‌ ‌যৌথ‌ ‌উদ্যোগে‌ ‌আয়োজিত‌ ‌হয়‌ ‌একটি‌ ‌অনলাইন‌ ‌অনুষ্ঠান।‌ ‌আলোচনায়‌ ‌অংশগ্রহণ‌ ‌করেছিলেন,‌ ‌অলিম্পিক্সে‌ ‌স্বর্ণপদক‌ ‌জয়ী‌ ‌ভারতীয়‌ ‌শুটার‌ ‌অভিনব‌ ‌বিন্দ্রা‌ ‌ও‌ ‌প্রখ্যাত‌ ‌ক্রীড়া-সাংবাদিক‌ ‌রোহিত‌ ‌ব্রিজনাথ।‌ ‌অনুষ্ঠানটি‌ ‌সঞ্চালনা‌ ‌করেন‌ ‌গেমপ্ল্যান‌ ‌ক্রীড়া-বিপণন‌ ‌সংস্থার‌ ‌কর্ণধার‌ ‌জিৎ‌ ‌ব্যানার্জি।‌‌

আলোচনার একদম শুরুতে এ-বছরের টোকিও অলিম্পিক্সের প্রাসঙ্গিকতা জানতে চাওয়া হলে অভিনব বলেন, ‘অলিম্পিক্স আসলে তো শুধু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, তার চেয়েও বড় কিছু। অলিম্পিক্স গোটা পৃথিবীকে এক জায়গায় করে। এই যে ২০৬টি দেশের অ্যাথলিটরা অলিম্পিক ভিলেজে জড়ো হবে, আনন্দ করে সময় কাটাবে কয়েকটা দিন— বিচ্ছিন্নতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া পৃথিবীর কাছে এই ঐক্যের তাৎপর্য অন্যান্য বছরের চেয়ে একেবারেই আলাদা।’

অলিম্পিক্সের জন্য সেজে উঠছে টোকিওর স্টেডিয়াম

তবে দর্শকের উপস্থিতি না থাকায়, টোকিও অলিম্পিক্স অনেকটাই তার গুরুত্ব হারাবে— এমনটাই মনে করছেন রোহিত ব্রিজনাথ। কেননা কিছু নির্দিষ্ট খেলার ক্ষেত্রে (লং জাম্প, সাঁতার, ১০০ মিটার দৌড় ইত্যাদি), দর্শকের উপস্থিতি অ্যাথলিটদের অনেকটাই অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে অসুবিধেয় পড়বে জাপানিরা। কেননা নিজের দেশে অলিম্পিক্স হলে, সেটা অ্যাথলিটদের কাছে একটা বড় অ্যাডভান্টেজ। যেমন সিওল অলিম্পিক্সে (১৯৮৮) স্পেন পেয়েছিল একটা সোনার পদক, কিন্তু চার বছর পর তা যখন বার্সেলোনায় (১৯৯২) হয়, স্পেন পায় ১৩টা সোনার পদক। আর এটাও ঠিক, অ্যাথলিটরা তাদের ক্রীড়া-দক্ষতা, প্রতিপক্ষের পাশাপাশি দর্শকদেরও দেখাতে পছন্দ করে। আর দর্শকদের হাততালিই একজন অ্যাথলিটকে মনে করায়, সে অসামান্য কিছু করেছে।’

এর পরে জিৎ প্রশ্ন করেন, অলিম্পিক্সকে পাখির চোখ করেই যেখানে বহু অ্যাথলিটের প্রস্তুতি চলে চার বছর ধরে, সেখানে এই আচমকা এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা তাঁরা কীভাবে দেখছেন? কেননা অনেকের কাছে হয়তো এটাই শেষ অলিম্পিক্স! এই প্রশ্নের উত্তরে অভিনব বলেন, ‘অ্যাথলিটদের মধ্যে আশ্চর্য সহনশীলতা এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে। শেষ বছরে অতিমারীর মধ্যেই যতগুলো প্রতিযোগিতা হয়েছে, দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। আর টোকিও অলিম্পিক্সে অ্যাথলিটদের একটা বড় অংশই প্রথমবারের জন্য অংশগ্রহণ করছে। মনে হয় না, খুব একটা পার্থক্য তৈরি করবে। তবে এটা ঠিকই যে, তরুণদের থেকে তুলনায় বয়স্কদের কাছে এই পরিস্থিতি একটু বেশিই চ্যালেঞ্জিং।’ 

এই কথার সূত্র ধরেই রোহিত বলেন, ‘এর একটা ভাল দিক হচ্ছে, এই এক-দেড় বছরে অ্যাথলিটদের অনেকটা বিশ্রামও তো হয়েছে, তাই তাঁরা বেশ কিছুটা এনার্জি সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। যে-কারণে ইদানীং নতুন রেকর্ড তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পর পর টুর্নামেন্ট খেলতে খেলতে তাঁরা ঠিকমতো বিশ্রাম পান না। এবং সময়ের অভাবে আগে অ্যাথলিটরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদেরকে খেলার মধ্যে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারতেন না। এখন সেই সময়টা পাওয়া গেছে, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ 

কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে দুজন তারকা অ্যাথলিটের নাম, যাঁরা দু’দশক ধরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন। সমস্ত আলোচনা পাক খেত ওঁদেরই সাফল্য-ব্যর্থতাকে ঘিরে। এই প্রথম গোটা দুনিয়া অলিম্পিক্স-এ তাঁদের পাবে না। একজন হলেন মাইকেল ফেলপ্‌স, অন্যজন উসেইন বোল্ট। তাঁদের ছাড়া এই অলিম্পিক্স কতটা উত্তেজনাপূর্ণ? নতুন কোনও উঠতি তারকার কি খোঁজ পাওয়া গেছে, যাঁদের নিয়ে নতুন করে আগ্রহ জন্মাচ্ছে?

উসেইন বোল্ট

অভিনব মনে করেন, একটা যুগ শেষ হয়েছে মানেই আর একটা নতুন যুগ শুরু হবে। আর এঁদের অনুপস্থিতিই নতুন করে খুঁজতে বা অনুমান করতে সাহায্য করবে, আগামী দিনের তারকা কে হবেন। রোহিতও তেমনটাই মনে করেন, তবে তিনি যোগ করেন, ‘যে-সমস্ত খেলার কথা আমরা সারা বছর ভুলে থাকি, অলিম্পিক্স এলে সেইসব খেলার চ্যাম্পিয়নদের চিনতে পারি, জানতে পারি। বুঝি, দুনিয়া পরিপূর্ণ এইসব আশ্চর্য প্রতিভায়।’ এই প্রসঙ্গেই তিনি উল্লেখ করেন সিমোন বাইলস (জিমন্যাস্টিকস), এলিউড কিপশোগা (দূরপাল্লার দৌড়), কেটি লেডেকি (সাঁতার), শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস(স্প্রিন্ট)-এর মতো শক্তিশালী অ্যাথলিটদের নাম, যাঁদের কৃতিত্ব দেখার জন্য এবারে মুখিয়ে রয়েছেন তিনি!

অলিম্পিক্সে স্বর্ণপদক জয়ী আমেরিকান সাঁতারু কেটি লেডেকি

১৯২০ সালে ভারত থেকে প্রথম একটা ছ’জনের দল অলিম্পিক্সে যায় স্যার দোরাবজি টাটার টাকায়। সেদিক থেকে দেখলে এই অলিম্পিক গেমস, ভারতের অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করার শতবর্ষ। ভারত এই ১০০ বছরে নানান ওঠা-নামার মধ্যে দিয়ে গেছে। বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার অনুদান পাওয়ার ফলে পরিকাঠামো আগেকার চেয়ে অনেকটাই উন্নত হয়েছে। অ্যাথলিটরাও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারি উদ্যোগও আগের চেয়ে প্রশংসনীয়। কিন্তু যা হয়েছে বা হচ্ছে, তা কি সত্যিই পর্যাপ্ত? না কি আরও কিছুর প্রয়োজন আছে?

বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে অভিনব বলেন, ‘আশ্চর্য উন্নতি হয়েছে, শেষ কয়েক বছরে। শুটিং-দলের কথাই যদি ধরি, দেখা যাবে সমস্ত সুযোগ-সুবিধাই শুটাররা পাচ্ছেন। এবং আশ্চর্যের কথা হল এই, চার-পাঁচ বছর ধরে যে-অর্থ ব্যয় হয়েছে তার ১% বেসরকারি হলে, ৯৯% সরকারি। মানে সাধারণের টাকা। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার— তাদের প্রশংসা করতেই হয়। আর এটা সম্ভব হয়েছে, এখনকার যুবসমাজের জন্য। তারা নিজেরা খেলতে আর খেলা দেখতে— দুই-ই পছন্দ করে। সরকারি ভাবে খেলাকে প্রাধান্য দেওয়ার এটা একটা বড় কারণ। আর যদি পরিকাঠামোর কথাই বলতে হয়, তাহলেও দেখা যাবে আশ্চর্য উন্নতি হয়েছে। ২০ বছর আগে আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন প্র্যাকটিস করতাম আমগাছের নীচে। কিন্তু এখন শুরু থেকেই সবাই বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা পায়। এবং আরও যেটা উল্লেখযোগ্য হল, সারা বিশ্বের খেলার খবরাখবর সবসময় হাতের কাছে পাওয়া। ইন্টারনেট এই সুবিধাটা করে দিয়েছে। এটা বিরাট পরিবর্তন। আর যেটা করা জরুরি বলে মনে হয়, আগামী দিনে একজন অ্যাথলিটের পারিপার্শ্বিক পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করে তোলা। এবং এটাও দেখা দরকার যে, যে-সমস্ত খেলায় অর্থের জোগান নেই, সেখানে যাতে তার সুবন্দোবস্ত হয়।’

টোকিও অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় শুটিং-দল

জিৎ জানতে চান, এই অলিম্পিক্সের বিভিন্ন বিভাগে ভারতের পদক জয়ের সম্ভাবনা ঠিক কতটা? আগের চেয়ে কি এবারের ফল আরও ভাল হবে? এ-বিষয়ে অভিনব বিন্দ্রা অবশ্য যথেষ্ট আশাবাদী। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বলতে থাকেন, ‘ভারত যে এবারে আরও ভাল ফল করবে, এ নিয়ে আমার কোনও সংশয় নেই। শুটিং-এর কথাই ধরা যাক— যে ১৫জনের দল এবারে সেখানে যাবে, এরকম দল কোনদিনই বা আমরা পেয়েছি? যেখানে ১৫জনের মধ্যে অন্তত আটজন বিশ্বের প্রথম কি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন! এখন এই আটজনের মধ্যে চারজনও যদি তাঁদের সেরাটা দিতে পারেন, তাহলেই তো চারটে সোনা বাঁধা! এছাড়া অন্যান্য খেলাতেও যাঁরা ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তাঁরাও যথেষ্ট শক্তিশালী। এবং এই কয়েক বছরে তাঁরা যথেষ্ট পরিশ্রমও করেছেন। আশ্চর্যের এটাও যে, ভারতের হয়ে এই প্রথমবার কোনও মহিলা অলিম্পিক্সে ফেন্সিং করবেন। হয়তো এঁরা প্রত্যেকেই জিতবেন না, কিন্তু এঁদের নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত।’ 

অলিম্পিক্সে দাবা খেলার অন্তর্ভুক্তি উচিত কি না, সে-বিষয়ে বলতে গিয়ে রোহিত বলেন, ‘যে-খেলাগুলোর সর্বোচ্চ সম্মান অলিম্পিক্সে স্বর্ণপদক জেতা নয়, সেই খেলাগুলোয় অ্যাথলিটরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেবেন কি না, তা নিয়ে একটু সন্দেহ হয়। যেমন টেনিস-এর ক্ষেত্রে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট হল চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম, অলিম্পিক্স নয়। আবার গল্ফ যদি কোনওদিন অলিম্পিক্সে ঢোকে, গল্ফাররা কি মেজরের চেয়ে অলিম্পিক্সে বেশি মন দেবেন? এই তো এই অলিম্পিক্সেই অনেক টেনিস খেলোয়াড় নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এই অনীহা কোনওদিনই কোনও ভারোত্তোলক বা জ্যাভলিন-থ্রোয়ারের মধ্যে কল্পনা করা সম্ভব নয়।’ জিৎ মনে করিয়ে দেন, দাবারও নিজস্ব অলিম্পিয়াড আছে, যেখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই দাবাড়ুর পক্ষে সবচেয়ে গৌরবের।  

চার বছরের অপেক্ষার পর যখন অলিম্পিক গেমস একেবারে সামনে চলে আসে, ১০-১২ দিন পড়ে থাকে হাতে, একজন অ্যাথলিটের সেই মুহূর্তে ঠিক কী করা উচিত বলে মনে হয়? অলিম্পিক্সের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সূত্রে অভিনব বিন্দ্রার কাছে জানতে চান রোহিত। অভিনব বলেন, ‘একবার ওখানে পৌঁছে যাওয়ার পর, শান্ত থাকা ছাড়া একজন অ্যাথলিটের আর কিছুই করার থাকে না। তখন পুরোটাই মনোঃসংযোগের ব্যাপার। আমি অ্যাথলিটদের বলব, শারীরিক শক্তি সংরক্ষণের বিষয়টা নিয়ে ভাবা উচিত। কেননা টোকিও এয়ারপোর্টে নেমে কোভিড-টেস্ট ইত্যাদি করে অলিম্পিক্স ভিলেজ পৌঁছতে পৌঁছতেই সাত-আট ঘণ্টা লেগে যাবে। ফলে ক্লান্তি একটা থাকবেই। আর সবচেয়ে যেটা জরুরি, নিজেদেরকে স্মার্ট রাখা এবং সহজ রাখা। কেননা অনেক এমন অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত আসতে পারে, যেটার জন্য হয়তো পূর্ব-প্রস্তুতি ছিল না। একজন অ্যাথলিটের কাছে সেসব মানিয়ে নেওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’

একঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে অলিম্পিক্সের আরও কয়েকটা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। পুরো আলোচনাটা যাঁরা শুনতে চান, তাঁদের জন্য নীচে লিঙ্ক দেওয়া রইল:

টোকিও অলিম্পিক্সে অপ্রত্যাশিত নানান ম্যাজিক দেখার আশায়, আমরাও এখন অ্যাথলিটদের মতোই দিন গোনা শুরু করেছি!