শ্রদ্ধেয় প্রফেসর শঙ্কু মহাশয়,
প্রথমেই জানাই, জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আপনাকে চিঠিতে, আপনার নিকটজন— থুড়ি, সামারভিল, ক্রোল, সন্ডার্সের মতো বন্ধুরা, ‘প্ৰিয় শঙ্কু’ সম্বোধন করেই শুরু করেন। কিন্তু আমার সেই ধৃষ্টতা বা স্পর্ধা কোনওটাই নেই।
আপনার ডায়েরির পাতা উল্টে, কৈশোরটা কেটেছে। কিন্তু তখন একবারও আপনাকে চিঠি লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি। আজ করছি। জানি না, জন্মদিনে এই অধমের বার্তা আপনার কাছে পৌঁছবে কি না। এও জানি না যে, আজ আপনার জন্মদিন কি না! কারণ আপনার ডায়েরির শেষদিকের কিছু পাতা ওল্টালে, ড্রেক্সেল আইল্যান্ডের ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে আপনি অক্টোবরের ১৬ তারিখে, জীবনের ৭৫টা বসন্ত পূর্ণ করার অভিনন্দন বার্তা পেয়েছিলেন। যদিও জন ড্রেক্সেলের মৃত্যুরহস্যের কোনও কিনারা হয়নি। তাই ‘স্বর্ণপর্ণী’-র সূত্র ধরে, আজকের দিনটিই আপনাকে চিঠি লেখার ও জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠানোর উপযুক্ত মনে করছি।
আরও পড়ুন : গুপী-বাঘার খাবারের থালার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় সমাজচিত্র?
লিখছেন শান্তনু চক্রবর্তী…
এই চিঠি লেখার প্রয়োজন কিছুটা ব্যক্তিস্বার্থে। বা বলা ভাল, পৃথিবীর স্বার্থেই। আপনি এই মুহূর্তে কোথায় রয়েছেন জানি না। কিন্তু এটুকু জানি, এবং বিশ্বাস করি যে— আপনি টাফা গ্রহেই থাকুন বা ব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোনও প্রান্তে, পৃথিবীর খোঁজখবর নিশ্চয়ই রাখছেন। আশা করছি এও বুঝতে পারছেন, যে এই কমলালেবু সাইজের নীল গ্রহের অবস্থা খুব একটা সুবিধেজনক নয়।
পৃথিবীব্যাপী তাপমাত্রা এবং কার্বনের হার সমানুপাতিক গতিতে বাড়ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে, সারা বিশ্বে, ৫৬টিরও বেশি যুদ্ধ হয়েছে। এছাড়াও ৯২টিরও বেশি দেশের সীমান্তে ঝামেলা ক্রমবর্ধমান হারে বিদ্যমান। ঠিক এই মুহূর্তে, ইরান, ইজরায়েলের হামলার প্রত্যাঘাত করেছে। এক অসম্ভব অস্থিরতার দিকে এগোচ্ছে তৃতীয় বিশ্ব, গোটা মানবসভ্যতার অস্তিত্বই যেখানে অনিশ্চিত।
এশিয়াব্যাপী মানুষের আয়ুষ্কাল তুলনামূলক বাড়লেও, রোগের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্তম, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা সূচক তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৩ সাল পর্যন্ত তা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। বাড়ছে দারিদ্র, বাড়ছে শরণার্থী, বাড়ছে মানুষের চোখের জল। এহেন পরিস্থিতিতে, আপনি এবং আপনার আবিষ্কারসমূহ— এই পোড়া ভূখণ্ডে, বিশেষ গুরুত্ব রাখতে পারে বলে মনে করি।

প্রথমে বাঙালি এবং বঙ্গবাসীর প্রসঙ্গেই আসি। জানি আপনার জন্ম গিরিডিতে। তবু, উস্রি নদীর জল হাওয়ায়— শান্ত পরিবেশে কাটানো আপনার নির্ঝঞ্ঝাট শৈশব, এই মিছিলমুখর কোলাহলপূর্ণ কিঞ্চিৎ তপ্ত কলকাতার প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করবে, এ আমি মনে করি না। সর্বোপরি আপনি যতটা না অধুনা ঝাড়খন্ডের, তার চেয়ে, অনেক-অনেক বেশি বাঙালির।
কিন্তু এই শহর ইদানীং খানিক বদলে গিয়েছে। এতটাই, যে আশা করি, ডন ক্রিস্টোবাল্ডিও এর ভবিষ্যৎবাণী করতে অক্ষম ছিলেন। আচ্ছা স্যর, বাগদাদ, বার্লিন, আমাজন, পেরু ইত্যাদি নানা প্রান্ত ঘুরে, ‘ধর্ম’ বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেছেন? তিব্বতে, ‘ওঁ মণিপদ্মে হুম’ লেখাগুলো দেখে কি একবারও অবিনাশবাবুর মতো শ্রদ্ধায় কপালে হাত ঠেকিয়েছিলেন? বা ইজিপ্টে যখন সামারটনের সঙ্গে দেখা করে ফিরে, ঈজিপ্সীয় সভ্যতার, প্রাচীন ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কি না, সে-নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে তর্কে জড়ালেন, একবারও ধর্মীয় কট্টরপন্থার বিষয়টা নিয়ে ভেবেছিলেন?
আপনি ভাবছেন, এ-ধরনের প্রশ্ন কেন করছি! আদতে আমরা এই দু’য়ের মাঝখানে পড়ে আছি স্যর। একদল মনে করছেন, ‘সেকুলার’ মানে, আমরা তাঁদের ধর্মের প্রতি আদৌ নিষ্ঠাবান না। আর-একদল প্রশ্ন তুলছেন, ‘ক’ বিষয়ের বেলায় চুপ থেকে, ‘খ’ নিয়ে এত বক্তব্য কীসের।
আদতে এই দু’য়ের মাঝে পড়ে, আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
ও হ্যাঁ, গণতন্ত্র প্রসঙ্গে আসে চতুর্থ স্তম্ভের কথাও। সংবাদমাধ্যম। প্রেস ইনডেক্সে ক্রমাগত তলিয়ে যাওয়া একটা দেশ, বেলাগাম উস্কানি দিচ্ছে দাঙ্গায়। ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্বেষ। অবশ্য, আপনিও যে এ-নিয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, সে-কথা অজানা নয়। সেই পরলোকচর্চার সময়ে, আপনি স্পষ্ট বলেছিলেন, সাংবাদিক জাতটার প্রতি আপনি বীতশ্রদ্ধ।
স্যর, আমার আরও ধারণা— আপনার বানানো অ্যানাইহিলিন পিস্তলটি বেহাত হয়েছে। বা আপনার শত্রু গ্রোপিয়াস আবার তার খল নৃশংস বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে, ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারে নেমেছে। তার তো ক্ষমতা আছে নিশ্চিহ্নস্ত্র তৈরির। আপনি জানেন, ওয়েস্ট ব্যাংক গাজার মাইলের পর মাইল জায়গা— জাস্ট নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ৫০,০০০-এরও বেশি প্রাণ। কত শিশু জাস্ট উবে গিয়েছে প্যালেস্টাইন থেকে! নাবালক মৃত্যুর সংখ্যা ১৫,০০০ ছাড়িয়েছে।
ইদে যখন কান্নাভেজা গলায় স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন মৌলবী, তখন কি অন্তরালে থেকে আপনারও চোখের কোণটা সামান্য চিকচিক করে উঠেছিল? তাহলে অক্ষয় থাকুক আপনার ‘দেশদ্রোহী’ তকমা।
স্যর, বিধুশেখর কি আপনার বিপদে-আপদে এখনও সমান একাগ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুনেছি, ও নাকি আপনার নির্দেশ ছাড়াই, কাজ করতে সক্ষম! তাহলে কি বিধুশেখর এআই জেনারেটেড? সে যাগ্গে, আপনার এই অত্যাধুনিক রোবট কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে যাবতীয় ড্রোন, মিসাইল, বোমারু বিমান নিষ্ক্রিয় করতে পারবে?
স্যর, আমার আরও ধারণা— আপনার বানানো অ্যানাইহিলিন পিস্তলটি বেহাত হয়েছে। বা আপনার শত্রু গ্রোপিয়াস আবার তার খল নৃশংস বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে, ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারে নেমেছে। তার তো ক্ষমতা আছে নিশ্চিহ্নস্ত্র তৈরির। আপনি জানেন, ওয়েস্ট ব্যাংক গাজার মাইলের পর মাইল জায়গা— জাস্ট নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ৫০,০০০-এরও বেশি প্রাণ। কত শিশু জাস্ট উবে গিয়েছে প্যালেস্টাইন থেকে! নাবালক মৃত্যুর সংখ্যা
১৫,০০০ ছাড়িয়েছে।
কিছুদিন আগে, প্যালেস্টাইনে সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্না হোক কী আজ ইরানের হামলায় ইজরায়েলে শিশুদের প্রাণপণ দৌড়, দৃশ্যগুলো অদ্ভুত পীড়াদায়ক। অনেকেই বলছে, পক্ষ নিতে। হয় ইজরায়েল, কিংবা ইরান। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই যুদ্ধবিরোধীদের পক্ষে, স্যর? আপনার এই অত্যাধুনিক রোবট কি পক্ষ বেছে নিতে সাহায্যের হাত বাড়াবে, যেমন আপনাকে বাড়িয়েছিল। আপনি যখন রকেট বানাতে একুইয়স্ ভেলোসিলিকার জায়গায় ট্যানট্রাম বোরোপ্যাক্সিনেট ব্যবহার করছিলেন, জোরে-জোরে মাথা নাড়িয়ে বারণ করেছিল। আপনি তার নির্দেশে সফল হয়েছিলেন। আজ আমাদের সাহায্যে কি সে এগিয়ে আসবে, না সেও যুদ্ধবিরোধীদের দলে?

বা আপনার আর-এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি, রোবু। অত্যাধুনিক সর্বজ্ঞ রোবট। কিন্তু আজ ক্রমাগত মানুষের মধ্যে বাড়তে থাকা আমিত্ব, ও গুলে খাওয়া অ্যালগরিদমের যুগে, আপনার তিনশো তেত্রিশ টাকা সাড়ে সাত আনার জিনিসের কোনও মূল্য নেই। আজ আমরা অ্যালগরিদমকে নয়, অ্যালগরিদম আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। যাবতীয় কন্ট্রোল নিয়েছে গটফ্রীড বোর্গেল্টের অত্যাধুনিক ভয়ংকর রোবট। কাঁধে হাত রাখা প্ৰিয়জনের চেয়েও, মানুষকে বেশি চিনতে সক্ষম তাদের স্মার্টফোন। প্রযুক্তি গিলে খাচ্ছে আমাদের। এর থেকে মুক্তির পথ বাতলাতে পারবে আপনার রোবু?
স্যর, গোটা দেশ নিশ্চিন্তে থাকলেও, আবারও দ্রোহের আগুন জ্বলছে উত্তর-পূর্বে। এর আগেও টানা ১০০ দিন ধরে জ্বলেছিল। আর কিছু না-হোক, রাষ্ট্রনেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। না কি ম্যাজিশিয়ান চী-চিংয়ের কোনও ভয়ংকর সম্মোহনী শক্তি কাজ করছে? নির্ঘাত রাষ্ট্রনেতারা চী-চিংয়ের দীক্ষায় দীক্ষিত। অদ্ভুত তাঁদের সম্মোহনী শক্তির মায়াজাল। প্রশ্নহীন বিশ্বাসে, মানুষ মেনে চলে সবটুকু। অশান্ত মণিপুর জমা পড়ে ব্রাত্যর তালিকায়। আঁধার পেরিয়ে কোনও ল্যুমিনিম্যাক্সই আলো জ্বালাতে ব্যর্থ উত্তর-পূর্বে।
প্রশ্ন জাগে, শিশুর জন্য আদৌ বাসযোগ্য এই পৃথিবী? এ-দুঃস্বপ্নের অভিঘাত যে মহাভারতের জৃম্ভণাস্ত্রের চেয়েও বেশি জোরালো। এর কোনও অ্যান্টিডোট কি আপনি তৈরি করেছেন? যাতে প্রতিটা শিশু শান্তিতে ঘুমোতে পারে। প্রতিটা সকাল যাতে হয়ে ওঠে রঙিন। কোনও শিশুকে যেন ক্ষুধা-তৃষ্ণানাশক বটিকা-ইন্ডিকা খেতে না হয়। মাথায় ছাদ, পেটে ভাত আর ব্যাগে পাঠ্য বইটুকুই বেঁচে থাক গোলাপের পাপড়ি হয়ে।

হ্যাঁ, কী বলছেন? আমরা আপনার তৈরি জৃম্ভণাস্ত্রের অ্যান্টিডোট পেলাম কোথায়? আমিও স্বপ্ন দেখছি? হাসছেন? তাচ্ছিল্য করছেন? স্যর, এই স্বপ্নটুকু আঁকড়েই তো বাঁচি। ওই যে আপনার বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর সেই অমোঘ শিক্ষাটুকু—
‘সারাজীবন যারা, দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, বা যারা দৈব দুর্বিপাকে উপার্জনে অক্ষম তাদের দুঃখ যদি কিছুটা লাঘব করতে পারিস, তার চেয়ে বড় সার্থকতা, তার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছুতে নেই।’
অগত্যা বাস্তবে না হোক, স্বপ্নেই সই।
আপনি তো অনেক দেশ ঘুরেছেন। আদতে কি সব রাষ্ট্রনেতারা এমনটাই হয় স্যর? প্রশ্নহীন আনুগত্য, নিঃশর্ত সমর্পণ আর অনক্ষ গোলামিই এক ও শুধুমাত্র বিকল্প! বিশ্বজুড়েই তেলের বাজারদর উর্ধ্বমুখী, রাষ্ট্র সাহায্যে অক্ষম। প্রচণ্ড বিপর্যয়কে সাক্ষী রেখেও তারা ছবি তোলে। প্রচার অব্যাহত রাখে। আমাদের মতো সাধারণ, ছাপোষা মধ্যবিত্ত নাগরিকদের নাভিশ্বাস— তাদের কানে বড় একটা পৌঁছয় না। আর তাছাড়া, তারা মাইক্রোসোনোগ্রাফও ব্যবহার করে না যে। তাই এই আকালে আপনার আবিষ্কৃত টার্বোলিনের খুব প্রয়োজন। পেট্রোল-ডিজেলের বিষবাষ্পর চেয়ে টার্বোলিনের চন্দন কাঠের গন্ধ ঢের সুখকর।
স্যর, আপনার সমসাময়িক পৃথিবী জুড়ে কি ন্যারেটিভের দেশাচার প্রচলিত ছিল? আজ একবিংশ শতাব্দীতে রাষ্ট্রনেতারা, নিজেদের প্রয়োজনে ন্যারেটিভ তৈরি করছে। পুরে দিচ্ছে নাগরিক, থুড়ি এক-একটি ভোটারের ব্রেনে। মগজধোলাই চলে ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে, এক্স হ্যান্ডেলে। কিন্তু যারা আপনার মতো বদলে দিতে চান। হান্স রেডেলের ব্রেনে পুড়ে দেওয়া সেই ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন-শঙ্কু থিওরি। জার্মানকে উগ্র নাৎসিবাদের হাত থেকে দ্বিতীয়বার বাঁচিয়ে দেওয়া ঐতিহাসিক অস্ত্রোপচার। হিটলারপন্থী দল আবারও নিশ্চিহ্ন জার্মানির বুকে। এইসময়ে পচে যাওয়া সমাজের শরীরে, মগজে, শিরদাঁড়ায় এই অস্ত্রোপচারের খুব প্রয়োজন ছিল স্যর। বাংলা তথা বিশ্বের প্রয়োজন ছিল।
শুধু উইন্ডো সিটের গোল কাচটায়, ছোট হতে থাকবে, সবটুকু খোয়ানো নিঃস্ব শহরটা? এই সবকিছু থেকে বাঁচতে চাই স্যর। দমবন্ধ হয়ে আসছে। মিরাকিউরলের একটা ডোজ। শ্যাঙ্কোপ্লেন উড়ে যাক মেঘের আড়ালে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামুক। মনখারাপ ধুয়ে যাক ঝাপসা শহরে। সব কিছু ঠিক হয়ে যাক এক লহমায়। আমার বিশ্বাস, আপনি পারবেন স্যর। আপনিই পারবেন…
ইতি,
আপনার ফেলে যাওয়া ডায়েরির, এক একনিষ্ঠ পাঠক ও হতভাগ্য সহনাগরিক