অটিজম স্পেকট্রামে আটকে থাকা এক অসামান্য আইনজীবী, ছাত্রজীবনের গুন্ডামি আর শিশুকালের খেলার ভেতর লুকিয়ে থাকা মরণফাঁদ— এগুলোর মধ্যে মিল কোথায়?
ওপরের এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে চারটি ওয়েব সিরিজ। প্রত্যেকটিই ‘নেটফ্লিক্স’-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেখা, ইংরেজি নয়, এমন ১০টি সিরিজের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে নিজ গুণে। চারটি ড্রামার ভাষাই কিন্তু কোরিয়ান।
নয়াদিল্লির ৬৭ বছর বয়সি সিএস মণিকে দেখে কেউ স্বপ্নেও ভাববেন না যে, তিনি কোরিয়ান ড্রামার ভক্ত হয়ে উঠতে পারেন। অথচ নেটফ্লিক্সের কে-ড্রামা ‘Crash Landing on You’-র শেষ পর্ব দেখার সময় তিনি কিছুতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। কোরিয়ান বা কে-ড্রামার রোমান্টিসিজমে বিভোর, ছলছল চোখে মণি বলেন, ‘আমার স্ত্রী ভাবে আমি উন্মাদ।’ তাই কি? না, মণি একেবারেই উন্মাদ নন। শিকার যেভাবে মনোরম ফাঁদে ধরা পড়ে, তিনিও ধরা দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ান ওয়েভ— ‘Hallyu’ নামের ব্যাপক এক সাংস্কৃতিক ঝড়ে।

আরও পড়ুন : চাঁদে নামার মহড়া ছিল অ্যাপোলো-১০-এর অভিযান!
লিখছেন সম্পৎ মুখার্জি…
বিনোদনের দুনিয়ায় দেশের অধিকাংশ যুবক-যুবতী ইদানীং কোরিয়ান সংস্কৃতির এই ঢেউয়ে উথালপাথাল। আমেদাবাদ, পুনে, দেরাদুন, গুন্টুর, নাগপুর, পাটনার মতো শহরেও গড়ে উঠেছে কে-ড্রামা আর কে-পপ ফ্যান ক্লাব। মুম্বইয়ের মুলুন্ড এলাকায় কিছু BTS-ভক্ত চাঁদা তুলে বাসস্টপে সেই ব্যান্ডের সদস্য জংকুকের পোস্টার লাগিয়ে তাঁর জন্মদিনও পালন করেছে উল্লাসে। শহরের টিনএজার থেকে শুরু করে ৩০ বছরের আশপাশের, বিশেষত যুবতীদের মধ্যে, এমন কাউকে পাওয়া আজকাল খুব মুশকিল— যে BTS বা অন্তত একটি কে-ড্রামা এখনও পর্যন্ত দেখেনি।

প্রশ্ন ওঠে, ভারতে কোরিয়ান ড্রামার ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ কী? প্রথমেই বলতে হয়, জীবনের ক্লান্তি, একঘেয়েমি, বিপন্ন দৈনন্দিনতার থেকে একরকম মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতায় এই কে-ড্রামাগুলি অতুলনীয়। সেখানে মূল চরিত্রের চেহারা, কথা বলার ভঙ্গি, ভাষা— সব কিছু আলাদা হয়েও তারা যে সব আবেগ, সংকট আর সাফল্যের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে, তা আমাদের চারপাশের বাস্তবতায় আক্রান্ত মানুষগুলির সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যায়। চরিত্রগুলোর আবেগঘন ওঠানামা দর্শকের মনে গভীর সাড়া ফেলে। তাদের মধ্যে গড়ে তোলে এক আন্তরিক সংযোগ, সহানুভূতির জায়গা। ফেক নিউজ-অধ্যুষিত বিভ্রান্তিকর ভারতীয় বাস্তবে যেহেতু এই প্রত্যাশিত মানবিক জায়গাগুলির বড়ই অভাব, তাই টিভির পর্দায় কাল্পনিক চরিত্রের মধ্যে হলেও সেখানেই অগত্যা ঢুকে পড়ে আজকের কিশোর-কিশোরীরা। দীর্ঘদিনের এই আবেগজড়ানো সম্পর্ক থেকেই তৈরি হয় একধরনের আসক্তি। বাবা-মা, স্কুলশিক্ষক, অনলাইন অফলাইন বন্ধুদের সঙ্গে মনের মতো যোগাযোগ তৈরি করতে না পেরে কে-ড্রামার স্বচ্ছ, নির্মল, চকচকে ত্বকের শিশুমুখগুলির কাছেই তারা বারবার ফিরে আসতে বাধ্য হয়। সেখানেই তারা নিজেদের খুঁজে পায়।
প্রকৃতির আদিম নিয়মে জন্মসূত্রে প্রত্যেক মানুষই সামাজিক, মনে-প্রাণে সকলেই আন্তর্জাতিক। তাই এই সহজ স্বাভাবিকতার জোরেই সীমান্ততত্ত্ব, যুদ্ধ আর ঘৃণার টনিক বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়ায় নিরন্তর হজম করার পরেও মানুষ তীব্রভাবে চায় যোগাযোগ ঘটুক বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর, হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের। ভালবাসার মতোই মানবমনও সর্বজনীন বলেই মানুষ আঁকড়ে ধরতে চায় এমন কিছু, যার আবেদন সর্বজনীন। অন্যান্য আরও অনেক দেশের মতোই ভারতীয় কিশোর মন, যারা এতদিন মূলত হরর, থ্রিলার, সাই-ফাই, ফ্যান্টাসি ইত্যাদি প্রচলিত ধারার টেলিভিশন কনটেন্ট দেখে অভ্যস্ত ছিল— তারা এই কোরিয়ান কাহিনিগুলোর মধ্যেই খুঁজে পেয়েছে এক সতেজ সর্বজনীন আবেদন। এখানে ভক্তরা প্রায়ই কে-পপ ও কে-ড্রামার জগৎকে কল্পনা করেন এমন এক জায়গা হিসেবে, যেখানে তারা নিজেদের বাস্তব জীবনের চাপ, ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তা থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও পালাতে পারে। সে-কথা মাথায় রেখেই মানবিক অনুভূতি, সম্পর্ক আর মনস্তত্ত্বের নানা স্তরকে ছুঁয়ে কাহিনিগুলোর চরিত্রকে গড়ে তোলা হয় গভীরতা, সরলতা ও জটিলতা দিয়ে। এই বহুস্তরীয় চরিত্রচিত্রণ ভারতীয় যুবসমাজের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করে, কারণ তাদের ডিএনএ-তে গেঁথে থাকা সেই সহজ, স্বাভাবিক নিয়মের জোরেই তারা আসলে এমন সূক্ষ্ম মানব-প্রতিচ্ছবি দেখতেই ভালবাসেন। সহজ-সরল, অথচ দৃঢ় এই চরিত্রগুলোর লড়াই, বদলে যাওয়া, মানসিক দোলাচল আর তিলে তিলে বেড়ে ওঠা— এই সবকিছুই দর্শকদের কাছে হয়ে ওঠে নিজেদের উদ্বুদ্ধ করার প্রধান উৎস। ফলত, গড়ে ওঠে অনলাইন আলোচনা, ফ্যান থিওরি, আর সেইসঙ্গে আরও গভীর হয় ‘কে-ক্রেজ’। কোরিয়ান ঢেউয়ের প্রতি নাছোড় এক আসক্তি।

যেমন, ‘Squid Game’ নির্মম এক সমাজবাস্তবতার মুখোমুখি আমাদেরকে দাঁড় করায়। অর্থনৈতিক বৈষম্য, অভাবে জর্জরিত মানুষদের মধ্যে সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা, স্বপ্নপূরণের লড়াই, বর্ণ ও লিঙ্গভিত্তিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, এগুলি তো শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার নয়, বরং সারা বিশ্বেরই বাস্তবতা। ২০২০ সালে অস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার জেতা প্রথম অ-ইংরেজি ছবি ‘Parasite’-এর গল্পও এই একই বৈষম্য, দারিদ্র্য আর শ্রেণিসংগ্রামের প্রশ্নকে মাঝখানে রেখে ঘুরপাক খায়। ‘Extraordinary Attorney Woo’, অটিজম স্পেকট্রামে থাকা এক তরুণ নারী আইনজীবীর গল্প। সে সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ায় যুঝে উঠতে না পারলেও, নিজের পেশায় তার মনের গতিবিধি অসাধারণ, ব্যতিক্রমী এবং আকর্ষণীয়। তার সরল আবেগজাত মানবিক বুদ্ধিমত্তার জায়গাটিতে গোটা বিশ্বের কিশোর মন আঁকড়ে ধরতে চায়।
আবারও প্রশ্ন আসে, কোরিয়ান ড্রামাতে যা দেখানো হচ্ছে— তা কি অভূতপূর্ব?
না, একেবারেই নয়। দেশজ, ধ্রুপদী শিশুসাহিত্য, ছোটদের জন্য তৈরি হওয়া ছবি থেকে আন্তর্জাতিক চিত্র-পরিচালক বাহমান গোবাদি, ইরানের মজিদ মাজিদির ছবিতে যা কয়েক দশক আগেও দেখানো হয়েছে, প্রকৃত উপলব্ধিতে তার রেশ থেকে যায় আমরণ। কিন্তু তথ্য বলছে, সেসব থেকে অনেক দূরেই চলাচল স্মার্টফোনের খুব কাছাকাছি থাকা গ্রন্থবিমুখ আজকের জেন-Z-এর।
সমীকরণটি সহজ।
তৃষ্ণার্তের কাছে জল একটি প্রত্যাশিত উপাদান। কিন্তু যে অঞ্চলের জলের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে, যে কোনও দামে ঘোলাটে জল খেতেও মানুষ প্রস্তুত, তেমন এক সময়ে সুদর্শন বোতলে বিশুদ্ধ পানীয় জল সাধ্যমতো দাম দিয়ে কিনে পান করার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে না।
ধর্ম যদি অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয় হয় তাহলে কে-ড্রামার এই জগৎও ভারতীয় কিশোর-কিশোরীদের কাছে হয়ে ওঠে অপরিহার্য এক আশ্রয়, বিকল্প এক বাস্তবতা, যেখানে আবেগ, সম্পর্ক আর সৌন্দর্য একসঙ্গে মিলে গড়ে তোলে এক স্বপ্নময় অথচ আত্মিক পরিবেশ।
ধর্ম হোক বা কে-ক্রেজ, দু-ক্ষেত্রেই কিন্তু কাজ করে এমন এক অসহায়তা, যা সহজে চোখে দেখা যায় না। আর যা দৃশ্যমান নয়, তাকে চোখের আড়ালে রাখতেই দু-জায়গাতেই গড়ে তোলা হয় এমন এক আসক্তি— যার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়ে দাঁড়ায় অপরাধেরই শামিল।
এই আসক্তির নির্মাণ কিন্তু কোনও অতিলৌকিক প্রক্রিয়ায় ঘটেনি।
কোভিড-১৯-এর কারণে দেশজুড়ে তখন লকডাউন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কঠোর আদেশ সমাজের হর্তাকর্তাদের তরফ থেকে। ভয়, কঠিন নিঃসঙ্গতা আর অনিশ্চয়তার সেই সময়ে, অনেকেই ভরসা খুঁজে পেলেন অনলাইন বিনোদনে। আস্তে আস্তে জন্ম নিল কে-ড্রামার প্রতি ভালবাসা। ভালবাসা থেকে আসক্তি। সময় গড়িয়ে কেবলমাত্র এই বিনোদনের প্রতি অনুরাগ ছাড়িয়ে শুরু হল কোরিয়ান খাবার, পোশাক, গান, ভাষা, এমনকী, কোরিয়ার বিউটি প্রোডাক্টের প্রতি আগ্রহ। কাহিনির চরিত্রগুলি যা খাচ্ছে, পরছে, যেভাবে কথা বলছে— সব কিছুই যেন নরম কূটনীতির সস্তা হাতিয়ার হিসেবে এক নতুন কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল।

যে দেশের পতাকায় বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের মানুষ পার্সনিফায়েড হয়, সেই দেশ কাঁটাতার পেরিয়ে অপর এক দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে তখনই গ্রাহ্যতা দেয়— সেই বিনিময়ের মাধ্যমে ক্ষমতাবান যখন আরও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে।
সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এই চর্চার বিপুল প্রসারে ভারতীয় কিশোর মন আজ কোরিয়ান ফ্যাশনের ধারাও নকল করছে। মিনিমালিজম, হালকা প্যাস্টেল রঙ, এবং স্ট্রিটওয়্যার ও হাই ফ্যাশনের সংমিশ্রণ তো রয়েছেই, সঙ্গে ত্বকচর্চার ক্ষেত্রেও কোরিয়ান প্রভাব স্পষ্ট। শিট মাস্ক, বিউটি বাম (BB ক্রিম) ছাড়াও কোরিয়ান স্কিনকেয়ার পণ্যগুলির জনপ্রিয়তা এখন আকাশছোঁয়া।
প্রশংসিত কে-পপ তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনে পৌঁছনো সম্ভব না হলেও, তাঁদের ব্যবহৃত পণ্য কিনে কিংবা তাঁদের মতো সাজগোজ করে অনুরাগীরা মনে করেন, তাঁরা যেন প্রিয় তারকাদের আরও কাছাকাছি চলে যাচ্ছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে কোরিয়ান নুডল ব্র্যান্ড ‘Nongshim’ একাই ভারতে ১০ লাখ ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। ২০২১ সালে ভারতীয়দের মধ্যে ‘Ramyun’ খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ।
আমাজন ইন্ডিয়া বলছে, কোরিয়ান বিউটি পণ্যের বিক্রি দেশে ৩.৫ গুণ বেড়েছে। না, কোনও আলাদা বিপণন নয়, এই চাহিদার কারণ শুধুই কে-ড্রামা আর কে-পপের জনপ্রিয়তা। ২০২০ সালেই নেটফ্লিক্সে কোরিয়ান কনটেন্ট দেখার প্রবণতা প্রায় ৩৭০ শতাংশ বেড়ে যায়। সংগত, নানা অজানা কারণেই কোরিয়ার সরকার ভারতের এই উৎসাহকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
‘Crash Landing on You’ সিরিজে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার এক উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে প্যারাগ্লাইডিং করতে গিয়ে আচমকা ঝড়ের মধ্যে পড়ে পৌঁছে যান উত্তর কোরিয়ায়। সেখানে তাঁকে উদ্ধার করেন এক সৎ, দেখতে সুন্দর সেনা-কর্মকর্তা। ফিরিয়ে দেওয়ার সেই যাত্রাপথে জড়িয়ে যায় প্রেম, প্রতিবন্ধকতা, কিছু মজার প্রতিবেশী, খলনায়ক আর দুই দেশের দ্বন্দ্ব। আর সেই সঙ্গে কাহিনির ফাঁকে ফাঁকে আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় কোরিয়ার খাবার, ফ্যাশন, Samsung ফোন ইত্যাদি পণ্য।
সহজেই এই কাহিনিকে ভারত-পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে কল্পনা করাই যায়। হয়তো সে-কারণেই এই গল্প এতটা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। কে-ড্রামার প্রেমে বুঁদ হয়ে মণি যখন কেঁদে ওঠেন, ঠিক তখনই বিপুল সংখ্যার মানুষ Innisfree, Etude, Sulwhasoo-র মতো বিউটি ব্র্যান্ডের শিট মাস্ক, স্নেইল সিরাম কিনে ফেলেন সানন্দে।
আমাজন ইন্ডিয়া বলছে, কোরিয়ান বিউটি পণ্যের বিক্রি দেশে ৩.৫ গুণ বেড়েছে। না, কোনও আলাদা বিপণন নয়, এই চাহিদার কারণ শুধুই কে-ড্রামা আর কে-পপের জনপ্রিয়তা। ২০২০ সালেই নেটফ্লিক্সে কোরিয়ান কনটেন্ট দেখার প্রবণতা প্রায় ৩৭০ শতাংশ বেড়ে যায়। সংগত, নানা অজানা কারণেই কোরিয়ার সরকার ভারতের এই উৎসাহকে গুরুত্ব দিচ্ছে। অতএব, আগামী দিনে কে-ফুড, বিউটি প্রোডাক্ট ইত্যাদি আরও অনেক কোরিয়ান পণ্যের চাহিদা যে বাড়বে— সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। ২০২০ সালে, বিনা চিকিৎসায় যখন বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন, কোরিয়ার সাংস্কৃতিক রপ্তানিতে সেই সময় আয় হয়েছে প্রায় ১০.৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে কোরিয়ান বিনোদনের নেপথ্যে কসমেটিক ক্যাপিটালের এই দেদার লেনদেনের খুঁটিনাটি জেনে নেওয়াতে স্মার্ট ফোন-ফ্রেন্ডলি জেন-Z-র যুবক-যুবতীদের কোনও আগ্রহ দেখা যায় না। অপ্রিয় সত্য হলেও বলতেই হয়, হালের ভারতীয় সামাজিক ব্যবস্থার অন্তর্গত রক্তের সম্পর্কের মানুষদের স্নেহের থেকেও তাদের কাছে কে-ড্রামার ইকোচেম্বার অনেক বেশি সুখের। অথচ, স্মার্টফোনটিকে সুইচ অফ করিয়ে একটু খেয়াল করালেই হয়তো তারা পথেঘাটেই দেখতে পেত এমন কিছু মন ভাল করা ঘটনা, যা এই আকালের দিনে আজও ঘটে। সেখানে মানুষগুলির চেহারায় কোরিয়ান সৌন্দর্য বা সেই ঘটনায় রকমারি খাবার আর কাটিং এজ হাই ফ্যাশনের জৌলুস না থাকলেও কাল্পনিক কোরিয়ান কাহিনির সর্বজনীন আবেদনের সমস্তটাই সেখানে কিন্তু বাস্তব হয়েই ধরা দেয়। তবে মানুষের মধ্যে থেকে প্রকৃত মানুষ খোঁজার এই অনুশীলনের থেকে স্মার্ট ফোনে কে-ড্রামায় মেতে ওঠা অনেক বেশি সহজ। বর্তমান সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীদের অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না। বরং নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কৈশোরে পা দেওয়ার অনেক আগে আশপাশের মানুষ, প্রত্যেকদিন ঘটে চলা নানা ঘটনার মধ্যে সহজ-সরল ব্যাপারগুলো নিশ্চয়ই তারা তুমুল খুঁজেছিল।
তাই এখনও যারা কিশোর নয়, কে-ড্রামা যেসব খুদে ছেলে-মেয়েদের থেকে অনেকটাই দূরে, স্মার্টফোন যাদের শৈশবে এখনও থাবা বসায়নি, সকাল-বিকেলের সবুজ মাঠ, বন্ধুদের সঙ্গে সহজ দুষ্টুমি এখনও যাদের কাছে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ, গভীর মনোযোগে কান পেতে থাকতে হবে ঠিক তাদের দিকেই। তা না করলে আমরা জানতেই পারব না, কখন যে তারা হঠাৎ বলে ওঠে— এই, আমাকে খেলতে নিবি।