শুধু কবিতার জন্য : পর্ব ৩১

কাহিনি

বারোঘর সংসারে বেড়ালের ছায়া
কাঁটা পেলে লেগে থাকে। আদুরে, বেহায়া।
তোলা উনুনের আঁচে রাঁধা যে-কাহিনি
নুন কিছু কম, তবু তাকে আমি চিনি।

তোমাকে দেখেছি আমি সপাট, সংযত
গীতা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার মতো।

পায়েস

তাকে দেওয়া মন ছিল পায়েসের মতো।
ঘন ও সফেদ। কিছু বাদামের ক্ষত
ভেসেছিল, নুড়ি যেন, চামচপিয়াসী।
চিরকালই দারিদ্র ও দুঃখ ভাগচাষি।

বয়স মাটির পাত্র। আনাচে কানাচে
না-চেখে দেখাটি তার, সর হয়ে আছে।

ঘ্রাণ

কত মাস পরে এল বাগানের দিন,
তাকানো সহজ বড়। দেখাই কঠিন।
উপহার দিয়েছিলে অচেনা কুঁড়িটি
বড় হল। যেরকম শব্দ থেকে চিঠি।

সুগন্ধ বিদেশি, তবু ঘ্রাণ দেশওয়ালি…
ফুলকে ভালই বোঝে দৃষ্টিহীন মালি।

নিকট

এ-বয়সে এসে বুঝি, চেনাই অচেনা।
দূরত্বের চেয়ে বেশি নিকট হবে না।
অনুপস্থিতির রং ফিকে হয় পাছে—
তুমি নেই, সারাক্ষণ এ-ভাবনা আছে।

লিখেছি অনেক চিঠি, নিরুত্তর দিয়ে।
তোমাকে বানাই আমি। না-থাকা জমিয়ে।

বাড়ি

যে-প্রেম মরেছে, তার ধার ঘেঁষে বাড়ি
তুলে দিল প্রোমোটার। স্মৃতিবারোয়ারি।
নিপুণ টালিতে ঢাকা অগভীর ভিত—
বয়সের বিনিময়ে বোজানো অতীত।

যে-তুমি বাসিন্দা হবে এই বহুতলে,
দেখো, বাড়ি ঘুমোয় না। রাতে কথা বলে।

সমাস

পুরনো শরিকি ছাদ, ছায়া ভাগ হলে
কোথায় শুকোবে খুশি, দুঃখের বদলে
এই ভেবে সারা হও। বেলা প’ড়ে আসে—
তোমারও মনখারাপ ভাঙে না সমাসে।

ধরে রাখে জল, তুমি কেঁদে ওঠো পাছে—
বর্ষার মেঘেরও কিছু রাজনীতি আছে।

অনুবাদ

মলিনতা ফিরে আসে। যেন-বা দেজাভু।
যেরকম লিখেছেন শ্রীশরৎবাবু,
তেমন অতীত পেলে ভালবাসা হত
সহজিয়া, অনাবিল, বাঁধুনিতে ছোট।

অথচ ভেতরে কেউ কথা বলে। কাঁদে।
নিজেকে পড়েছি আমি ভুল অনুবাদে।