তাহাদের রায়/Ray@100

সুপ্রিয় রায়

কোথায় পাব তারে

বিদেশে হলে হয়তো তাঁর পড়া বই, বইয়ে দেওয়া দাগ, মার্জিনের নোট এবং সবাইকে লেখা চিঠিপত্রও ইতিমধ্যে দেখতে পাওয়ার সুযোগ হত। এদেশে তিনি শুধুই ভারতরত্ন, শুধুই শতবর্ষীয়ান, শুধুই অতীত— আজকের চিত্রনাট্যকার ন্যূনতম সুযোগেই তাঁর ছবির জনপ্রিয় দৃশ্য বা সংলাপগুলিকে যত্রতত্র ট্রিবিউট দেবেন, এই তো প্রাপ্তি। সত্যজিতের কাজ করার পদ্ধতি।

পূর্ণিমা দত্ত

ভিড়ের মধ্যে একক

বার্লিনে দেখেছি, পৃথিবীখ্যাত সব ফিল্ম ডিরেক্টর এবং ফিল্ম-ব্যক্তিত্বরা মানিকদাকে কী অসম্ভব শ্রদ্ধা করেন। প্রত্যেকে এসে কথা বলছেন, হাত মেলাচ্ছেন, গল্প করছেন। যেন মানিকদার সঙ্গে কথা বলা, দেখা করাটা অবশ্যকর্তব্য। আর মানিকদার টাওয়ারিং পার্সোনালিটি!

অভিজিৎ দাশগুপ্ত

ফ্রেন্ড ফিলজফার গাইড

মানিকদার কাছ থেকে সাজেশন পাওয়ার ব্যাপারটা খুব দুর্লভ ছিল। কাউকে উনি কিন্তু কোনওদিন কিছু শেখাননি। আমিও বলতে পারব না, মানিকদা আমায় এটা শিখিয়েছেন বা ওটা শিখিয়েছেন। তবে হ্যাঁ, আমাকে উনি ভীষণভাবে গাইড করেছেন। মানিকদার এই সাজেশন দেওয়ার মধ্যে এমন একটা ব্যাপারটা ছিল যে, যার একটু ঝোঁক আছে, সে ওই সাজেশন থেকেই শিখে ফেলতে পারবে।

সারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

সত্যজিতের গা ছমছম-হাতছানি

জার্মান ভাষায় ‘উনহাইমলিখ’ শব্দটির মানে হল, আনক্যানি বা বিদঘুটে। তা বাসা বাঁধে অতি সাধারণ পরিস্থিতির বুকেই। যা কিছু মামুলি, তা নিজেকে পালটে হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক। আর আমাদের মনের মধ্যে তৈরি হয় গা-ছমছম করা একটা অনুভূতি। সত্যজিৎ রায়ের গল্প পড়লে যা ফিরে-ফিরে আসে।

সারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

Ray and His Uncanny Universe

‘The term unheimlich was first used by German psychiatrist Ernst Jentsch in his essay ‘On the Psychology of the Uncanny’. ‘Unheimlich’, which literally means ‘un-homely’, is the German word for uncanny. Unheimlich suggests that the uncanny builds its nest in the most normal circumstances, such as the home, and at some point, something that feels recognisable becomes completely alien.’ The mundane extraordinary in Satyajit Ray’s short stories.

নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী

পুরনো বই, নতুন সম্পর্ক

‘উনি যে বইগুলো আমাকে দিতেন, আমি বাঁধানোর সময়ে সেগুলোতে বিশেষ ‘উইন্ডো পকেট’ করে দিতাম। মানে, নতুন বাঁধানো বইটায় সফ্ট কভার থাকত; আবার সেটাকে, উপরের হার্ড কভারে ‘জেল’ করে তার ভিতরে ঢোকানো হত। এই ‘উইন্ডো পকেট’ থাকলে বই নাড়াচাড়া করতে ও পড়তে খুব সুবিধে হয়। বইয়ের মধ্যে একটা অন্য রকমের কোয়ালিটি দেখা দেয়, বাইন্ডিংও আকর্ষণীয় হয়।’ বই-এর সত্যজিৎ।

এব্রাহাম মজুমদার

শিল্পসত্তায় পরিশীলিত রুচির পরিচয়

‘সত্যজিৎ একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে বেঠোফেন ওঁর প্রথম ‘মিউজিকাল হিরো’ ছিলেন, কিন্তু আমি ওঁর সঙ্গীতরচনায়, বিশেষত আবহসঙ্গীতে, চাইকভস্কির প্রভাব দেখতে পাই। বেঠোফেনকে উনি নিশ্চয়ই খুবই পছন্দ করতেন, কিন্তু ওঁর সঙ্গীতে, ‘শাখা প্রশাখা’-র একটি দৃশ্য ব্যতিরেকে, বেঠোফেনকে উনি কখনই ব্যবহার করেননি।’ সত্যজিতের চলচ্চিত্র এবং পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয়সঙ্গীত।

শান্তনু চক্রবর্তী

থালা-বাটি-সমাজ

‘‌পথের পাঁচালী’ থেকে ‘‌আগন্তুক’‌ অবধি সত্যজিতের লম্বা সিনে-সফরে খিদে, খাবার আর খাবারের রাজনীতিটা নানা ভাবে এ-কোণ সে-কোণ দিয়ে বারবারই ঢুকে পড়েছে। ‌সত্যজিৎ জানতেন, রান্নার ধরন, কী রান্না হচ্ছে, সেই রান্না করা খাবার কীভাবে পরিবেশন হচ্ছে, এবং বিভিন্ন চরিত্র সে খাবার কীভাবে খাচ্ছে, এ-ব্যাপারগুলো একটা গোটা অঞ্চল, সেই অঞ্চলের জীবন-যাপন-সংস্কৃতির পরিষ্কার ছবি তুলে ধরে।’ সত্যজিতের ছবিতে খাদ্য রাজনীতি ও সমাজ।

সর্বজিৎ মিত্র

ছবির ভেতরে ছবি

‘সত্যজিৎ আউটডোরে পাড়ি দেওয়ার ঠিক আগে, ১৯৭৭-এর ৪ এপ্রিল ভিক্টোরিয়াতে শুটিং করেন। উনি মূলত চলচ্চিত্রে ব্যবহারের জন্যে বেশ কয়েকটা চিত্রের ছবি তুলেছিলেন ভিক্টোরিয়াতে। শেষপর্যন্ত অবশ্য চলচ্চিত্রে দুটো ছবি দেখানো হয়েছিল। এই ছবিগুলো দেখানো হয়েছিল চলচ্চিত্রের একদম গোড়াতে।’ ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ও কয়েকটা ছবি।

শ্রীজাত

গন্তব্যে পৌঁছয় গল্পের শুরু

যখন হাত দিলেন ছোটগল্পে, তখন কল্পনার জগতকে সরিয়ে রেখে, নেহাতই বাস্তব পারিপার্শ্বিককে বেছে নিলেন গল্প শোনাবার পটভূমি হিসেবে।কাহিনির আকৃতিকে তিনি বেঁধে রাখলেন নির্দিষ্ট একটি সীমায়।জোর দিলেন কাহিনির বুননে। সত্যজিতের ছোটগল্প হয়ে উঠল অনন্য।

লেভন আরোনিয়ান (Levon Aronian)

ভারতের আত্মার চিত্রকর

‘বিদেশিরা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা দেখে মুগ্ধ হন একদম অন্য কারণে, বা, সাহস করে বলি, অনেক শক্তিশালী কারণে। আজকের ভারতে দাঁড়িয়ে, সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার ভারতকে যদি তুলনা করি, তাহলে এত বেশি মানুষ, এত শিল্প, এত ঝাঁ-চকচকে জীবন দেখে বোঝা যায়, মাঝের দশকগুলোয় কী পরিমাণ পরিবর্তন হয়ে গেছে।’ সত্যজিৎ এবং ভারতবর্ষ।

লেভন আরোনিয়ান (Levon Aronian)

Storyteller of His People

‘For foreigners, Ray’s films are fascinating in an entirely different, dare I say, more powerful way. For me, seeing today’s India with so many people and comparing it to Ray’s films and the lack of industry and urbanisation, you realise the changes in the intervening decades.’ The magic of Ray.