গল্প

নীলোৎপল মজুমদার

কমরেড, পরশু নাকি আমাদের পার্টি ভাগ হয়ে গেছে

‘বুলবুলি জানিয়ে দিল বস্তাপচা ধারণা নিয়ে থাকা এইসব সনাতনী ফিউডালদের বিরুদ্ধে ওরাও প্রতিবাদে সামিল হবে, পিছিয়ে যাবার কোনও চান্স নেই। লাল পতাকার নীচে এরা এক-একটা ভাড়। আমাদের পতাকা বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

পাটকেল

‘বিয়েটা প্রায় পাকা হয়ে এসেছিল। কথাবার্তা ঠিক, দেনাপাওনা নিয়ে সামান্য দর কষাকষি চলছে, ঠিক এমন সময়ে একটা উড়ো খবরে সবকিছু থমকে গিয়েছিল। এতদিনে বুঝেছে, সুন্দরী মেয়ের নামে অমন দু’একটা কথা রটতেই পারে।’

তাগিদ

‘একটু পরেই দরজা ঠেলে স্লিপিং স্যুটের মতো সুতির ঢোলা পাজামা আর শার্ট পরা একটি রোগা মেয়ে ঘরে ঢুকেছিল। তার বয়কাট চুল কিন্তু কানে ঝোলা দুল বা গলায় মালা ছিল না। ফোলা-ফোলা লাল চোখ। ও কি কাঁদছিল!’

সিঁড়ি

‘সে জন্যেই হয়তো শ্রাবণ প্রতিরাতে শূন্যতার সঙ্গে যুদ্ধ করে। তাকে ভাঙে। কুচি কুচি করে কাটে। তারপর ঘুমিয়ে পড়ে। ভাবে কোনও দিন জাগিবে না আর। পরদিন ঘুম ভাঙে। এজবাস্টনে পূজারা ব্যাটিং করেন। মনে হয় রাহুল দ্রাবিড়। নির্মাণ। বিনির্মাণ। একই ছায়ায়। একই মনে।’

পরশমণি : পর্ব ৩

‘পিসেমশাই বলেছিল, ‘ধরে নাও এইবার দেশে ফিরলে, আর ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না!’ শিরোমণি ও-কথায় মাধ্যমিক-ফেল ছাত্রের মতো চেয়ে ছিল। জন্মে ইস্তক ঘর বলতে সে চেনে ষোলআনিতে তার সামান্য ভিটেমাটি, একটিমাত্র সদর, একটিই খিড়কি।’

পরশমণি : পর্ব ২

‘শিরোমণি অবাক হয়ে দেখে, মিছে কথা অবলীলায় বলা যায়, তার বউ বলে, সেও বলে আজকাল। বুড়ি ঠাকুরমার শলা শুনেই রাঁধে ওরা জামাই-বৌয়ে, কিন্তু ঠাকুরমাকে কে পোঁছে! শিরোমণি ওসব নিজের রেছিপি বলেই চালায়।’

পরশমণি : পর্ব ১

‘বছর ঘুরতে একটা মেয়ে হল তাদের। পরের বছর আরেকটা। নিত্যদিনের দারিদ্র সইতে সইতে সকাল-সন্ধ্যার ষোলআনি মাত করে একে অন্যকে বাপান্ত করতে শুরু করল তারা, শিরোমণির মুখ তত চলে না, পলারাণি কলহ পটু মেয়েলোক।’

লাল বল

‘একটা পুঁটলির মতো ছেলেকে কোলের ওপর রাখে। আয়নায় দেখা যায়— ছেলে চোখ বড় বড় করে দেখছে চারদিক। পিছনে হাড় বের করা মুখের একপাশ। কী ক্লান্তি চোখের তলায়। বাঁচার ইচ্ছেটাকে যেন কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে।’

গৌতম সেনগুপ্ত

তুই, আমি, ববিদা আর বোর্হেস

‘তখন কৃষ্ণা নায়ার, মানে যে-ছিপলিটা ট্র্যাপিজের খেলা দেখাত, তার সঙ্গে ববিদার তুমুল প্রেম! তার বাপ, সার্কাস ম্যানেজার, দেড় ব্যাটারি নায়ারকে ট্রাম গুমটির গলিতে ঝেড়ে দিল ববিদা। কী করবে? ট্রু লাভের মধ্যে অত হিচখিচাং হলে মার্ডার তো হবেই?’

কৌশিক গুড়িয়া

শরীরগন্ধা

‘ততক্ষণে আমার দু’হাতের মধ্যে থেকে নিজের হাত ফিরিয়ে নিতে চাইছে সে। আমি বেশ বুঝতে পারছি সে-চাওয়া কপট। তেমন অছিলায় তার দুই তর্জনীর নখ বিহত করছে আমাকে। বেশ বুঝতে পারছি সেই ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্যে সততা নেই এতটুকুও।’

পম্পা বিশ্বাস

জেম্মা

‘হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ির নীচে তেইশের এক প্রেম-তরুণীকে দাঁড় করিয়ে রেখে সটকে পড়েছে জলজ্যান্ত প্রেমিকটি। আর, অধীর আগ্রহে, অকথ্য বিশ্বাসে ভর করে সেই তরুণী সময় গোনে। গুনেই চলে। কেউ আসে না।’

অনুপম রায়

অসুখ : পর্ব ২

‘এই ফ্ল্যাটের প্রতিটা জিনিস কীভাবে ওরা কিনেছে, সাজিয়েছে— সব মনে পড়ে যায়। এক মুহূর্তে সব বৃথা হয়ে যাবে? কোনও কি উপায় নেই? উপায় নেই বলেই তো আজকের এই দিনটা, তাই না?’