গল্প

নীলোৎপল মজুমদার

অন্ধকার যেমন কালো হয়

‘পাড়ার লোকের জন্য ব্যাকুল মাসির এক অনবদ্য উপহার এই কুলগাছ। পুরো আকাশটাকেই যেন ঢেকে রেখেছে অগুন্তি শাখা-প্রশাখার নিখিল সংসার। বিস্তৃত ডালপালার বুননে এক সবুজ মৌচাক। চারিদিকে নেমে এসেছে শ্যামলীদির মতো খোলা বেণির আলুথালু চুলের জঞ্জাল। আরেকটু হলেই জানু ছোঁবে মাটি।’ নতুন গল্প।

সুভাষ কর্মকার

মজুত

‘বড়লোক, ছোটলোক সবাই একই জিনিসের জন্যে লাইনে দাঁড়িয়েছে। মদের দেবতার চোখে সবাই সমান। দোকান থেকে বেরোলেই শুরু হয় ছোট-বড়-মাঝারি! যদিও আজকে সবাই মজুতদার। যার পেটে যতটা সয়। আজকে কারখানার মালিককে কড়কে দিতে হবে। শালা, পাঁচশো টাকায় তিনটে পেট কী করে চলে!’ নতুন গল্প।

সাগুফতা শারমীন তানিয়া

ভবদীয়: পর্ব ৪

‘খ্রিস্টান মেয়েরা দিন-রাত এ-সময় হাত চালায়, তাদের হাতের ভেজা পিঠার মতোই ভক্তিরসে ফুলে উঠবে সকলের মন, এর কতটা ভক্তি আর কতটা আনন্দ কেউ তার তৌল করবে না। গির্জায় খড়ের কুঁড়েঘর গড়া হবে, তাতে মাটির পুত্তলি যিশু-মেরি-যোসেফ আর ব্যগ্র গরু-ভেড়ার দল, যিশুর জন্মস্থান সেই গোশালঘর যত্ন করে আলো দিয়ে সাজানো হবে।’ ক্রিসমাসের প্রস্তুতি।

প্রতীক

বেড়াল-স্মৃতি

‘তারা বলত ‘বড়দি আসলে ব্যাটাছেলে। মেয়েছেলের অত মেজাজ হয়?’ সব শুনে আমার মনে তৈরি হয়েছিল একজন দশাসই মহিলার ছবি। চোখে মোটা চশমা, নইলে তাকালেই আগুন বেরিয়ে এসে ছাত্রীদের পুড়িয়ে ছাই করে দিত। আমাদের বাড়ির দরজার সমান লম্বা আর জানলার সমান চওড়া।’ নতুন গল্প।

সুভাষ কর্মকার

দখল

‘একটা সময় লোকটা আমার গ্রামের বাড়ির জঙ্গল পরিষ্কার করত। লোকটার চোখদুটো যেন আমাকে দেখেও বারবার না দেখার ভান করে ঘুরে যাচ্ছে এদিক-সেদিক। একদিন একমাত্র জোয়ান ছেলেটা প্রেমঘটিত কারণে জমির বিষতেল খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে প্রায় বছর কুড়ি।’ নতুন গল্প।

প্রিতম মুখোপাধ্যায়

ব্যালকনি অথবা পশমিনার গল্প

‘অর্ণব ফিরল রাত ন’টার পর। কলেজ সেরে একটা সেমিনারে গিয়েছিল। বেশ ধীরে, শান্ত স্বরে হুমকির ঘটনাটা জানাল বৃন্দা। কালো হয়ে গেল অর্ণবের মুখ। একটা শীতল প্রবাহ খেলে গেল শিরদাঁড়ার মধ্যে। স্খলিতের মতো বসে পড়ল সোফায়।’ নতুন গল্প।

অরুণ কর

একটা নিখুঁত খুনের পরিকল্পনা

‘…লোকটার চেহারা এমন কিছু চোখে পড়ার মতো না, উচ্চতা মেরে-কেটে ফুট পাঁচেক, রোগাভোগা শরীর, ঘাড় পর্যন্ত বাবরি চুল, মুখে বসন্তের দাগ ভর্তি। তবে পোশাক-আশাক ধোপদুরস্ত, সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট, পায়ে নামী ব্র্যান্ডের জগিং শু, হাতে দামি ঘড়ি, প্রত্যেকটা আঙুলে আংটি, সব মিলিয়ে পরিপাটি ফুলবাবুটি।’ মারপ্যাঁচের গল্প।

উত্তীয় মুখার্জি

একটি অসমাপ্ত সুইসাইড নোট

‘…বিবিধ ভাবনার পাহাড় কেটে প্রগতি যখন নিজের সামনে রাখা সাদা খাতাটার দিকে তাকাল, তার চোখে পড়ল শুধু তিনটি লাইন, যা সারা রাত জুড়ে লিখতে চেষ্টা করা বাকি দশটা ছিঁড়ে দেওয়া লেখার মতোই এতটাই সাধারণ এবং মেলোড্রামাটিক যে, সেটা প্রগতি দত্তর মতো খ্যাতনামা লেখিকার সুইসাইড নোট হতেই পারে না।’ মৃত্যুর গল্প।

সাগুফতা শারমীন তানিয়া

সহগ

পাহাড়ের গায়ে প্রায় নিরালম্বভাবে ঝুলে থেকে যেসব কালো লেমুর খনিজ জল চেটে খায়, তাদের মতো করে এতদিন ঝুলে থেকেছি আমি। প্রেমে অত্যন্ত হ্যাংলা। সেসব ডাকপিয়ন হবার জন্য নয় নিশ্চয়ই। প্রেমের অপ্রাপ্তি।

স্বর্ণেন্দু সাহা

উদ্বাস্তু

‘সারাটা দিন সে ছাউনির ভিতর চুপচাপ শুয়ে কাটিয়ে দেয়। ঘুম এলে আবছা, ধোঁয়াটে একটা কুয়াশার স্তর ডানা মেলতে থাকে তার মস্তিষ্কে। সেই ডানার পরিসীমা অপরিসীম কোনও সমতলের মতো অসীম। স্বপ্ন আসে না। কিংবা হয়তো আসে, কিন্তু সেই স্বপ্নে স্রেফ আঁধার ঘুরে বেড়ায়।’ নতুন গল্প।

রাস্‌কিন বন্ড (Ruskin Bond)

শুভযাত্রা বন্ধু

‘যাত্রা শুভ হোক, বন্ধু!’পৃথিবীটা ভেঙে পড়ছে, কিন্তু আমরা, চিলেকোঠার ধর্মাবতার আর আমি, আমরা জীবন ভাল কাটিয়েছি। প্যাঁচা মহাশয় তাঁর বরাদ্দ ইঁদুর যথেচ্ছ ভক্ষণ করেছেন, আর আমি কোফতা কারি সহযোগে ভাত। বহু Friday The 13th এসেছে ও গেছে। প্যাঁচা ও কালো শুক্রবার।

মৌসুমী দেবঘোষ

আজনবি

‘দুপুরে একটু গড়িয়ে নেওয়া দত্তবাবুর বহু দিনের অভ্যাস। ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল, কোথা থেকে একটা গানের সুর ভেসে আসছে না? তাঁর বাড়িতে গান! টিভির আওয়াজ ছাড়া কিছু শোনা যায় না তাদের বাড়িতে, সেখানে গজল! গানটা ভেসে আসছে গিন্নির বন্ধ ঘর থেকেই।’ নতুন গল্প।