
বোবার বিষণ্ণ প্রেতভূমি
‘ঘুমিয়ে পড়বার পর সে স্বপ্নে দেখেছে/ একদল কুকুর এসে তার/ নিষ্প্রাণ শরীর/ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খায়।/ ঘুম ভেঙে সে প্রতিদিন ভাবে/ কেন একটুও রক্ত পড়ে না মাটিতে!’ নতুন কবিতা।

‘ঘুমিয়ে পড়বার পর সে স্বপ্নে দেখেছে/ একদল কুকুর এসে তার/ নিষ্প্রাণ শরীর/ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খায়।/ ঘুম ভেঙে সে প্রতিদিন ভাবে/ কেন একটুও রক্ত পড়ে না মাটিতে!’ নতুন কবিতা।

‘মায়ের সাথে বাবার অনেকটা তফাত। মননে, ভাবনায়, বিশ্বাসে। ঘরের মধ্যে আটকা পড়লে বাবার চোখে-মুখে ডিপ্রেশন পিঁপড়ের সারির মতো ছড়াতে থাকে। ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’-এ যেমন মেঘগুলো-তারাগুলো ডাইনামিক হয়ে ফুটে থাকে, বাবার চোখে-মুখে ডিপ্রেশনও তেমন। অপ্রকাশিত, অথচ যেন ফেটে পড়ছে। আর মা ঠিক উলটো। ঘরের মধ্যে কী প্রাণবন্ত! এই জামা ভাঁজ করছে, চাদর টানটান করছে, কাপড় মেলছে, পনিরের তরকারি ফ্রিজের মধ্যে ঢোকাচ্ছে।’ নতুন গল্প।

‘সাহিত্যিক হিসেবে ব্যর্থতাকে আমি ভয় পাই না। আমি ভয় পাই মানুষ হিসেবে ব্যর্থতাকে। আরও পাঁচ বছর পর চাকরি না করার জন্য আমার নিশ্চয়ই আফশোস হবে। দশ বছর পর আফশোস হবে একজন আদর্শ বাবা না হয়ে ওঠার জন্য, আদর্শ স্বামী না হয়ে ওঠার জন্য। এই সংসারে তখন আমার গুরুত্ব কমে যাবে কি?’ মানসিক টানাপড়েন।

‘মনে হয় বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেল গুরু। বড় অসময়ে। একটু ধৈর্য রাখতে পারল না। মাত্র উনচল্লিশ বছরে চলে যাওয়া— বেঁচে থাকলে আরও কত মহান কীর্তি করে যেতে পারত সে। খুব আফশোশ হয়। তারাভরা রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে জীবন-দেবতার উদ্দেশে বলি— ‘হে ঈশ্বর, গুরুকে একটু শান্তি দিও তুমি, ওর চোখে একটু ঘুম দিও, ও বহুদিন ‘বিনিদ্র’, বড় জ্বালায় জ্বলছে সে।’ গুরুর অকাল প্রয়াণ।

গুরুর মনের খবর বোধহয় ভগবান ছাড়া কারুর পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। এর দুদিন পরেই আমি কলকাতায় ফিরে আসি। কথা হয়েছিল পুজোর পরে গুরু আবার আমায় বোম্বেতে ডাকবে। কিন্তু হায়, তখন বুঝিনি এই আমাদের শেষ দেখা, এরপরে আমাদের আর জীবনে কোনোদিন দেখা হবে না।
‘রফিকের হাত থেকে চিঠি নিয়ে ও চালান করে দিচ্ছে বুকের ভিতরে ব্লাউজের ফাঁকে। চিঠি দেওয়া-নেওয়ার মধ্যে রফিকের আঙুল ছুঁয়ে দিচ্ছে ওর আঙুলগুলো। রফিক হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নিচ্ছে ওর হাতের তালু। ‘এ কী! একদম বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে তোর হাতটা! পাগলি মেয়ে একটা। ভয় পেয়েছিস?’’ সম্পর্কের উত্তেজনা।
‘নয়নতারা আগে ডায়েরি লিখতেন নিয়মিত। এখন আর লেখেন না। শুধু ভাবেন। মনের মধ্যে ব্রেক কষে-কষে হাঁটতে থাকেন পিছন দিকে। স্মৃতি রোমন্থন করেন। জীবনে অনেকগুলো বছর নাকে-মুখে গুঁজে স্কুলে ছুটতেন। মধ্য কলকাতার স্কুলে চাকরি পেয়ে গেছিলেন এমএ-র পরই। স্কুলে চাকরির পর পরই বিয়ের সম্বন্ধটা এনেছিলেন তাঁর সম্পর্কে এক পিসি, যিনি আবার অমলজ্যোতির মাসিমা হতেন।’ নতুন গল্প।

‘আমার কান বদলে গেছে অপরূপ যোনিতে।/ তোমার সমস্ত কথা পুরুষাঙ্গ হয়ে প্রবেশ করছে ভিতরে।/ ধীরে ধীরে রাঙা মেঘের ভিতর দিয়ে উঁকি দিল সন্ধ্যাতারা,/ উড়োজাহাজ চলে যাওয়ার চিহ্ন আকাশে।/ ভিতরে ভিতরে রমণ চলেছে আমাদের,/
আর খুলে খুলে যাচ্ছে মেরুদণ্ডে লুকানো গুপ্ত-সন্ধ্যা’ নতুন কবিতা।

‘লোকে বলে গুরু দত্তর জীবনে সব চেয়ে বড় অভিশাপ তার গীতার সঙ্গে বিয়েটা! কিন্তু সেটা যে কত বড় ভুল, তা আমি কেমন করে বোঝাব। আসলে ওয়াহিদা রেহমান কেবল একটা উপলক্ষ্য। গীতা যদি আর একটু হিসেবী হত, আর একটু কড়া হাতে গুরুর জীবনের রাশ টেনে ধরত, তাহলে হয়তো আর আমাকে এই রাত জেগে ‘বিনিদ্র’ লিখতে হত না।’ ছন্নছাড়া জীবন।

‘অসুখের মধ্যে কেমন একটা অসহায়তা আছে। সেই অসহায়তা অন্যের সামনে লজ্জা পায়। বিশেষ করে সুস্থ লোকের সামনে। অথচ সেই সুস্থ লোকের সাহায্যও দরকার। কিন্তু তখন মনে হয় আমার দুর্বলতা যেন কারো নজরে না পড়ে। আমি যে অসমর্থ, এটা যেন কেউ জানতে না পারে।’ অসুস্থ গুরু।

‘বড় অবাক হয়ে গেলাম, গুরু এতে এত বিচলিত হল কেন? গুরু তো এমন ছিল না।
মনে আছে, পরদিনই সকালে মহাবলীপুরম্-এর টুরিস্ট-হাউসে চলে গেলাম। মদ্রাজ-স্টুডিওর কথা আবার ভুলে গেল গুরু। অত যে মন খারাপ তা এক নিমেষেই গুরু ভুলে গেল। তার মনে আর কোনও দাগ লেগে রইল না দেখে আমার খুব ভালো লাগল। পরের দিন থেকে গুরু আবার সহজ-স্বাভাবিক হয়ে উঠল।’ মাদ্রাজে শুটিং-বিভ্রাট।

‘পাহাড়ি ঘাসের ঢালে বসে, পাইন গাছের ডালে খেলে বেড়ানো মৃদুমন্দ বাতাসের আমেজে একটা কবিতা লেখা– এ যেন শুধু লেখা নয়, কবিতাটার মধ্যে বাঁচা। আজকে, এত বছর পরে ফিরে দেখলেও আমি যেন ওই বাতাসের ছোঁয়া অনুভব করতে পারি, আর গোটা জঙ্গলের গানটা যেন শুনতে পাই, আর সেটাই আমার প্রতিদিনের, আমার জীবনের কবিতা। ‘ নতুন গল্প।
This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.
©2025 Copyright: Vision3 Global Pvt. Ltd.