গল্প / কবিতা

জগন্নাথদেব মণ্ডল

নির্জন চৈত্রের লেখা

‘আমার কান বদলে গেছে অপরূপ যোনিতে।/ তোমার সমস্ত কথা পুরুষাঙ্গ হয়ে প্রবেশ করছে ভিতরে।/ ধীরে ধীরে রাঙা মেঘের ভিতর দিয়ে উঁকি দিল সন্ধ্যাতারা,/ উড়োজাহাজ চলে যাওয়ার চিহ্ন আকাশে।/ ভিতরে ভিতরে রমণ চলেছে আমাদের,/
আর খুলে খুলে যাচ্ছে মেরুদণ্ডে লুকানো গুপ্ত-সন্ধ্যা’ নতুন কবিতা।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৫৪

‘লোকে বলে গুরু দত্তর জীবনে সব চেয়ে বড় অভিশাপ তার গীতার সঙ্গে বিয়েটা! কিন্তু সেটা যে কত বড় ভুল, তা আমি কেমন করে বোঝাব। আসলে ওয়াহিদা রেহমান কেবল একটা উপলক্ষ্য। গীতা যদি আর একটু হিসেবী হত, আর একটু কড়া হাতে গুরুর জীবনের রাশ টেনে ধরত, তাহলে হয়তো আর আমাকে এই রাত জেগে ‘বিনিদ্র’ লিখতে হত না।’ ছন্নছাড়া জীবন।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৫৩

‘অসুখের মধ্যে কেমন একটা অসহায়তা আছে। সেই অসহায়তা অন্যের সামনে লজ্জা পায়। বিশেষ করে সুস্থ লোকের সামনে। অথচ সেই সুস্থ লোকের সাহায্যও দরকার। কিন্তু তখন মনে হয় আমার দুর্বলতা যেন কারো নজরে না পড়ে। আমি যে অসমর্থ, এটা যেন কেউ জানতে না পারে।’ অসুস্থ গুরু।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৫২

‘বড় অবাক হয়ে গেলাম, গুরু এতে এত বিচলিত হল কেন? গুরু তো এমন ছিল না।
মনে আছে, পরদিনই সকালে মহাবলীপুরম্-এর টুরিস্ট-হাউসে চলে গেলাম। মদ্রাজ-স্টুডিওর কথা আবার ভুলে গেল গুরু। অত যে মন খারাপ তা এক নিমেষেই গুরু ভুলে গেল। তার মনে আর কোনও দাগ লেগে রইল না দেখে আমার খুব ভালো লাগল। পরের দিন থেকে গুরু আবার সহজ-স্বাভাবিক হয়ে উঠল।’ মাদ্রাজে শুটিং-বিভ্রাট।

রাস্‌কিন বন্ড (Ruskin Bond)

ছোট্ট জোনাকি

‘পাহাড়ি ঘাসের ঢালে বসে, পাইন গাছের ডালে খেলে বেড়ানো মৃদুমন্দ বাতাসের আমেজে একটা কবিতা লেখা– এ যেন শুধু লেখা নয়, কবিতাটার মধ্যে বাঁচা। আজকে, এত বছর পরে ফিরে দেখলেও আমি যেন ওই বাতাসের ছোঁয়া অনুভব করতে পারি, আর গোটা জঙ্গলের গানটা যেন শুনতে পাই, আর সেটাই আমার প্রতিদিনের, আমার জীবনের কবিতা। ‘ নতুন গল্প।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৫১

‘একদিন কে যেন বলেছিলেন— বলছ কি হে? বখে যাওয়া কি অত সহজ? সংসারে বুদ্ধদেবের মতো রাজ্য ছেড়ে অরণ্যে যাওয়াও যেমন শক্ত, লজ্জা-সঙ্কোচ ট্যাগ করে বখে যাওয়াও ঠিক তেমনি শক্ত। কিন্তু সংসারে বাস করে পুরোপুরি নিরাসক্ত হওয়াও সহজ নয়, তাই মাঝে মাঝে ইনকামট্যাক্স নিয়ে, উকিল-অ্যাটর্নি নিয়ে বিব্রতও হত খুব।’ সংসার সীমান্তে গুরু দত্ত।

আবুল বাশার

ব্যান্ডিকুট কিংবা ধেড়ে ইঁদুরের গল্প

‘দরদর করে নিঃশব্দে অশ্রু নামছে চোখ থেকে গাল বেয়ে। সে আনন্দে লাফাচ্ছে এবং জাতি-অপমানে কাঁদছে; চাঁদের রোশনি ঈশ্বর-কৃপায় টলটল করছে চারিদিকে; চারটি রাতচরা বক আকাশের সারা তল্লাটে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার অক-অক ডাক; কাঁসি বাজছে আহ্লাদে। নাচছে বাবুলাল।’ নতুন গল্প।

তৃণাঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়

এলেভূত

‘ম্যাপ যে কী দেখাচ্ছে! অঙ্কুরের নিজের ফোনেও দেখেছে, পুরো ভুলভাল। কানেক্টিভিটি তো পুরো, সব ক’টা বার আছে, কিন্তু কোথায় যাচ্ছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অ্যাপের ওপর ভরসা আছে? খেয়াল না করলেই আরেক জায়গায় এনে ফেলবে। এ তো হল এলেভূত, ভেবে আবার হেসে ফেলল সে।’ নতুন গল্প।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৫০

‘কে একজন সেই ফাঁকে বারান্দার একমাত্র আলোটা নিভিয়ে দিলে। আর সঙ্গে সঙ্গে নিবিড় নীলিমায় অলংকৃত হয়ে উঠল বাইরের আর মনের আকাশ। মনে হল আমরা যে আর মহাবলীপুরম্-এ নেই। আমরা সুদূর কোন্ দ্বীপের ভেতরে চলে গিয়েছি। সেখানে শুধু হাসি, শুধু গল্প আর শুধু আনন্দ। তখন সামনে পেছনে পাশে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। শুধু কথা শুনছি। শুধু সিগারেটের আগুনে বিন্দুগুলো দেখতে পাচ্ছি। আর পুরুষ-নারী সব একাকার হয়ে গেছে।’ মহাবলীপুরম্‌-এ গুরুর পার্টি।

দীপশেখর দালাল

কয়েকটি কবিতা

‘বন্যাত্রাণে আমি পাঠিয়েছি বেশ কিছু কলার মান্দাস/ আর কিছু চাতকপাখির দল/ তারা মেঘকে গালাগালি দিয়ে পাঁজরে ফিরবে আমার/ তোমার তাতেও রাগ?/ কেন? আমি কি সমস্ত ডুবন্ত মানুষকে আগুন শেখাব?/ সেইটেই হবে আমার শাস্তি?’

আদিদেব মুখোপাধ্যায়

নবম সিম্ফনি, চতুর্থ মুভমেন্ট

‘সে, ক্ষুরটা, সরাসরি নিজের পেটে ঢুকিয়ে দেয়। ধুপ করে শব্দ হয়। একটু গুঙিয়ে পেটার পড়ে যায়। আমি আবার সেই মিষ্টি সুরটা শুনতে পাই। খুব আস্তে, চরাচর জুড়ে বেজে উঠছে। কে বাজাচ্ছে, এখন, এই চায়ের কেবিনে? সবাই স্থির ও চুপ। সবাই মেঝেয় লুটিয়ে পড়ে থাকা পেটারকে দেখছে।’ নতুন গল্প।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৪৯

‘আসলে ওই রান্নাটা ছিল উপলক্ষ। গুরু সব সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখে সমস্ত কিছু ভুলে থাকতে চাইত। ভুলতে চাইত সংসারকে, ভুলতে চাইত গীতাকে, ভুলতে চাইত ছেলে-মেয়ে সকলকে। সকলকে ভুলেই সে ভোলানাথ হবার আশায় কখনও রান্না করত, কখনও বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে আড্ডা দিত, কখনও বা হুইস্কির বোতলে আকন্ঠ ডুব দিত!’ একাকী শিল্পী।