অন্য পুরাণ

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

হিন্দু থালায় কি দলিত খাবারের জায়গা আছে?

‘খাওয়া-দাওয়া নিয়ে এই সব সম্প্রদায়ের যে সব গান রয়েছে, তা মূল ধারার সাহিত্যে পাওয়া যায় না। সেসব গান প্রাণীদের আলজিভ, শ্বাসনালী, বা মেদচ্ছ্বদের (ওমেন্টাম) কথা বলে, যে সব শরীরের অংশ ‘উঁচু’ জাতের লোকেরা খায় না।’ খাদ্যাভ্যাসের উঁচু-নিচু।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

শিবলিঙ্গ

শিবলিঙ্গ প্রকৃতপক্ষে কী, এই নিয়ে নানারকম ব্যখ্যা রয়েছে। যার যেটা পছন্দ বেছে নেওয়া যায়। বর্তমানে অবশ্য রাজনীতিবিদ আর তাদের বিপুলকায় ট্রোল বাহিনীর পছন্দের ব্যাখ্যা হল– শিবলিঙ্গই প্রমাণ করে যে মোগলদের বহু আগে থেকেই সারা ভারতের অবিসংবাদী চিরন্তন বিশ্বাস ছিল হিন্দুধর্মে।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

প্রাচীন ধর্মযুদ্ধের নতুন অবতার

খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বিরোধিতার শুরু একেবারে আদিতে। ইসমাইল ও আব্রাহামের জন্মের সময় থেকে। সেই ধারা ক্রুসেড হয়ে এখনকার বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ ও তা দমনের লড়াই অবধি একই কারণে গ্রথিত। ফলে এ লড়াইকে অনেকেই বলছেন পুরনো ক্রুসেডের নতুন রূপ।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

কৃষ্ণচরিত্র

ভারতের এক-এক প্রান্তে এক-এক রূপে কৃষ্ণের দেখা মেলে। উত্তরের রূপবৈচিত্র্য দক্ষিণের চেয়ে একেবারে আলাদা। কাজেই ভারতের ইতিহাসের যে গোড়ার কথা, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য, তার প্রকাশ কিন্তু পৌরাণিক চরিত্রের মধ্যে দিয়েও হয়েছে বারংবার। বহুরূপে কৃষ্ণ।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

ইসলাম ধর্মে দেবদূত

‘ইসলাম লোককথায় অলৌকিক শক্তির অধিকারী প্রাণ, অর্থাৎ ফেরেস্তা ও জিনের অস্তিত্বর ধারণা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ধরাধামের প্রত‌্যেকটা মানুষই এমন শক্তির জন্য কামনা করে, যা তাদের জীবন এবং মৃত্যুর ভয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।’

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

স্বর্গ হারানো এবং পুনরুদ্ধারের ধারণা

বাইবেল অনুমান করে যে ঈশ্বর, সমস্ত প্রাণী এবং গাছপালা এবং মানুষ সহ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি আশা করেছিলেন মানুষ কিছু নিয়ম মেনে বাঁচবে। কিন্তু, মানুষ সেই নিয়ম ভেঙেছে। ফলস্বরূপ, মানুষকে স্বর্গ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। মানব ইতিহাস তখন আদি স্বর্গ বা স্বর্গে ফিরে যাওয়ার এই অনুসন্ধানে পরিণত হয়।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

দক্ষিণা, দান, ভিক্ষা

‘পুরাণে, আমরা কর্ণের গল্প শুনি, যাকে দানবীর বলা হয়। আমরা ভাবি এত দানশীল হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁর জীবন এত করুণ। আমরা ভিক্ষাকে দানের সাথে গুলিয়ে ফেলি; দান করার বিনিময়ে কিছুই আশা করা হয় না। তাই কর্ণ দানশীল হয়েও কোনো উপকার পান না।’ দানের বিভাগ।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

মিথকে উপেক্ষা করা যায় না

মিথকে যুক্তিযুক্তভাবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। সর্বদাই এমন প্রশ্ন থাকে যা ভাগ্য, স্বাধীন ইচ্ছা এবং ঈশ্বরের কর্মকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। সমস্ত সংস্কৃতিতে, তাই, মিথ বাস্তবতা এবং যৌক্তিকতা থেকে অনেক দূরে: তিনটি মাথা সহ দেবতা, আটটি বাহু বিশিষ্ট দানব, কুমারী জন্ম, সমুদ্রের দু-ভাগ হওয়া, প্রতিশ্রুত ভূমি, আগুনের পবিত্রতা এবং রক্তের চুক্তি। যুক্তির প্রতি এই উদাসীনতা নিশ্চিত করে যে মিথকে যুক্তিযুক্ত করা হয় না, তবে বিশ্বাসের আধারে নিঃশর্তভাবে গৃহীত হয়।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

উপকথার কীট-পতঙ্গরা

হিন্দু পুরাণে কীটপতঙ্গের অস্তিত্ব খুব প্রচলিত বা জনপ্রিয় নয়। কিন্তু পুরাণের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন লোককথা বা উপকথায় কীটপতঙ্গের উল্লেখ রয়েছে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে সমস্ত কীটপতঙ্গের মধ্যে, যেটি প্রাধান্য পায় তা হল মৌমাছি কারণ মৌমাছিরা ফুলের কাছে গিয়ে মধু তৈরি করতে পারে। আমরা প্রেমের দেবতার সাথে মধুমক্ষিকার একটি সংযোগ পাওয়া যায়। পুরাণে কীটপতঙ্গের গপ্পোসপ্পো।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

রাধাতন্ত্র

‘এখানে বর্ণিত আছে কীভাবে বিষ্ণু একদিন শিবের কাছে আসে এবং একটি মহামন্ত্রের সন্ধান করে। বিষ্ণু সেই মহামন্ত্র পেয়ে কাশীতে জপ করতে শুরু করেন, কিন্তু কাজ হয় না। তাই, তিনি কৈলাসে ফিরে যান। শিব অনুপস্থিত থাকায় এই সময় দেবীই তাঁর সামনে আবির্ভূত হন।’ ‘রাধাতন্ত্র’-এর বর্ণনা।

দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik)

পৃথিবীর সেরা দশটি পৌরাণিক কাহিনি: পর্ব ৩

‘নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেডনার বাবা মেয়েকে সমুদ্রে ফেলে দিলেন, যাতে তুষ্ট হয়ে পাখিরা তাঁকে ছেড়ে দেয়। সেডনা আবার নৌকায় উঠতে চেষ্টা করায় বাবা তার আঙুলগুলো কেটে দিলেন। রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন হাতেই সে আবার সে ওঠার চেষ্টা করায় এবার বাবা কেটে দিলেন তার হাত দুটোই, এবং মেয়েকে তার ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমেত আবার ফেলে দিলেন জলে। সেডনা যখন সমুদ্রের অতলে ডুবে গেলো, তখন তার কাটা হাত থেকেই জন্ম নিলো মাছ, সীল, তিমি…’

সুজান মুখার্জি

মহাভারতের রাক্ষসী, শেক্সপিয়রের ডাইনি

‘অথ হিড়িম্বা কথা’য় ভীমের সংলাপে, পাণ্ডবদের হাস্যকর আচার-আচরণে, এমন কি কিছু মেটা-থিয়্যাট্রিকাল কথাবার্তায় হাসি পায় ঠিকই, কিন্তু সে হাসি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। নাটকের সম্পাদক, তিতাস দত্তের মতে এই প্রয়োগকৌশলের অনুপ্রেরণা ইতালীয় ‘সোশ্যাল গ্রোটেস্ক’, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পিরান্দেলো প্রমুখ নাট্যকারের কাজে দেখা যায়। এই অস্বস্তিকর হাসির উৎসে রয়েছে দুটি অসম শক্তিশালী সমাজের মধ্যে সংঘর্ষ, যার ফলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ব্রাহ্মণবাদ ও আর্য সভ্যতার কতগুলো ভয়ানক দ্বিচারিতা।’