সমালোচনা

বোড়ে দিয়ে কিস্তিমাত

‘নিজেকে জাহির না করে নিজের প্রগাঢ় নাট্যপ্রেম আর পাক-ধরতে-শুরু-করা চলচ্চিত্রবোধ দিয়ে ঘুঁটি সাজাতে পারলে রাজা-উজির নয়, বোড়ে দিয়েও যে কিস্তিমাত করা যায়, ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ তার বিজ্ঞাপন হয়ে থাকল। ফের মনে করিয়ে দিল যে বাংলা থিয়েটারের কাছে বাংলা সিনেমার ঋণ কখনই চুকবার নয়।’

ভিসুয়াল ন্যারেটিভের নতুন দিগন্ত

সাম্প্রতিককালে এই বাংলাতেই নিজ-নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত চারজনের একটি দল ইচ্ছেমতো কমিক্সকে ঢেলে সাজাতে নানা রকম উদ্যোগ নিতে শুরু করে। তারই এক উজ্জ্বল নিদর্শন পেঙ্গুইন বুক্‌স থেকে প্রকাশিত সম্পূর্ণ মুক্তমনা কমিক্সের একটি সংকলন ‘লংফর্ম ২০২২’।

মীরা মুখোপাধ্যায়ের সন্ধানে

‘মীরা মুখোপাধ্যায়ের কাজের অপূর্ব স্পর্শানুভূতি থেকে আন্দাজ করা যায় কী সাংঘাতিক শ্রমসাধ্য পদ্ধতিতে, কত যত্নে তা নির্মিত। অরুণ গাঙ্গুলির ছবি এবং কিউরেটরদের লেখায় শুধু যে কার্যধারার বিভিন্ন ধাপ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে তাই নয়, শিল্পকর্মের শ্রমের বাস্তবতা, ঘাম-মাটি-ঘুঁটের গন্ধ, ঢালাইয়ের আগুনের তাপ আর বন্ধুত্বের উষ্ণতা উপলব্ধি করা যায়।’

শুভময় মিত্র

রাষ্ট্র বনাম ক্যামেরা

‘ফোটোগ্রাফি-শিল্পের বিনোদনের চেনা সংজ্ঞাগুলো ধুলোয় লুটচ্ছে। কনটেন্ট ও স্টাইলের পাশাপাশি পলিটিক্স ও এস্থেটিক্স চলছে তার সমান্তরাল দৌড়ে। পশ্চিমে যা দেখার দেখে-বুঝে শহিদুলের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন। সে-সময়ের বাংলাদেশের পরিস্থিতি শিল্পীকে গদিমোড়া সোফায় নিশ্চিন্তে বসে থাকতে দেয়নি। মাথা থেকে শরীর যখন ক্রমাগত দগ্ধ হয়ে চলেছে, রোম্যান্স-আর্ট বিলাস কীভাবে অগ্রাধিকার পাবে? এই প্রদর্শনীতে তারই কর্ড প্রগ্রেশন।’

সুরক্ষিত বায়োপিক

‘বাংলা ছবির নিরিখে যে বাঁধভাঙা উল্লাস অনীকের ছবিটির সমাদরকে চিহ্নিত করেছে, তা অবশ্যই নজরকাড়া। তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে এক্ষেত্রে ছবির নিজস্ব গুণ আর পারিপার্শিক এক হয়ে বাংলা ছবির সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটা মাইলস্টোন রেখে গেল? অনীকের ছবিতেই যেমন দেখানো হয়েছে যে ‘পথের পদাবলী’ সাধারণ মানুষ হলে গিয়ে টিকেট কেটে দেখবে কিনা সে ব্যাপারে অপরাজিত রায় বেশ চিন্তিত। অপরাজিত রায়ের ‘চিন্তা’র খেই ধরেই তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, অনীকের বায়োপিক এর মধ্যেই কি এমন কিছু আছে যা জনগণের স্বীকৃতির জন্যে মরিয়া?’

পৃথ্বী বসু

অভিজ্ঞতাই যেখানে জ্ঞান

‘অনেক ঘটনাই আমাদের জানা হয়তো, তবু হাজারও তথ্যের ভিড়ে পর পর প্রয়োজনীয় ঘটনাগুলোকে সাজানো এবং তার ভিত্তিতে কোনো চরিত্রলক্ষণকে চিহ্নিত করা চাট্টিখানি কথা নয়! বরুণবাবু সেই আশ্চর্য ডুবুরি, যিনি সত্যজিৎ-সমুদ্রে ডুব দিয়ে এমন সব রত্নরাজি তুলে এনেছেন, যার মূল্য চিরস্থায়ী!’ সত্যজিৎচর্চায় নতুন সংযোজন।

স্মৃতির কথকতা

‘স্বপনের ছোটবেলা কেটেছে বনগাঁতে, বহুদিন অবধি মাটির বাড়িতে। সেই মাটি পুড়িয়ে শক্ত ইটের বাড়িও এসেছে সময়ের নিয়ম ধরে। সেই সোঁদা মাঠ-ঘাট, গাছ-পাতালির মিতালি আজও আছে। মাঝবয়সের স্বপন এখন ঘর বেঁধেছেন আর এক গাঁয়ে। বীরভূমে। ফিরে পেয়েছেন ছেলেবেলার সেট। চলচ্চিত্র নির্মাণে বাধা থাকেনি। সেটি রয়ে গেছে মনের ভিতরে। দরকার পড়েনি অভিনেতার। স্মৃতির কথকতায় ছবিটা সাইলেন্ট হয়েও হয়নি।’

ব্যাটম্যান: ১৯৮৭ থেকে ২০২২

‘‘দ্য ব্যাটম্যান’ (২০২২) দেখে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। ঠিক যেন কমিক্সের পাতা থেকে উঠে এসেছে এই রুকি ব্যাটম্যান। সে এখনও গথামকে পুরোপুরি চেনেনি, শহরটাকে নিজের আয়ত্তে আনতে পারেনি। গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে ভুল করেছে অনেক, আর তার জন্যে মাশুলও দিতে হয়েছে তাকে।’ ব্যাটম্যানের বিবর্তন।

মহাভারতের রাক্ষসী, শেক্সপিয়রের ডাইনি

‘অথ হিড়িম্বা কথা’য় ভীমের সংলাপে, পাণ্ডবদের হাস্যকর আচার-আচরণে, এমন কি কিছু মেটা-থিয়্যাট্রিকাল কথাবার্তায় হাসি পায় ঠিকই, কিন্তু সে হাসি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। নাটকের সম্পাদক, তিতাস দত্তের মতে এই প্রয়োগকৌশলের অনুপ্রেরণা ইতালীয় ‘সোশ্যাল গ্রোটেস্ক’, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পিরান্দেলো প্রমুখ নাট্যকারের কাজে দেখা যায়। এই অস্বস্তিকর হাসির উৎসে রয়েছে দুটি অসম শক্তিশালী সমাজের মধ্যে সংঘর্ষ, যার ফলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ব্রাহ্মণবাদ ও আর্য সভ্যতার কতগুলো ভয়ানক দ্বিচারিতা।’

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

শূন্য থেকে শুরু

বইয়ের পাতায় পাতায় আমরা বুঝতে পারি আমরা সাধারণ মানুষরাও কত বিপন্ন। আমাদের ফেসবুক, আমাদের ইমেল আমাদের সত্তা কতটা বিপন্ন। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকি। কিন্তু যে কোনও দিন সাইবার হ্য়াকিং-এর খপ্পড়ে পড়ে আমার আইপি ঠিকানা দ্বারা সাধিত হতে পারে বড় ধরনের অপরাধ। ‘জিরো ডে’ বইয়ের সমালোচনা।

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী

সচেতন সহজ রূপকথা

এমন একটি সময় পরিচালক ও লেখিকা সায়ান হেডার অত্যন্ত সুচতুর ভাবে রূপকথাকে অ্যানিমেশনের খোপ থেকে বের করে একটি আপাত-সরল আমেরিকান মফস্‌সলের গপ্পে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এমন একটি সময় এই কাজটা করেছেন, যখন দীর্ঘ অতিমারীর ক্লান্তি ও হতাশায় মানুষ দীর্ণ। এমনকী যুদ্ধেও পক্ষ নির্বাচন করতে গিয়ে হাজার দ্বিধা ও প্রতিযুক্তি অতিক্রম করা দুরূহ হয়ে ওঠে। বিশ্বব্যাপী স্বৈরাচার ও বৃহৎ বাজারের ট্যাংগোর উল্টোদিকে সাধারণ মানুষের যৌথতার স্বপ্ন মিউমিউ করে বাথরুমে একা গান গায়।

ধূসর মুখাবয়বের আলো

‘রামানন্দের ছবির আর এক চরিত্র হল আলো। ছবিতে অন্ধকার নেই। আলোয় ঝলমলে প্রেক্ষাপট অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। রাতের পটভূমিতে যে নীল ব্যবহার করেছেন, তা-ও বড় স্নিগ্ধ। আঁধারকে আলো দেখাচ্ছে যেন।’ দেবভাষায় রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প প্রদর্শনী।