সমালোচনা

সুজান মুখার্জি

মহাভারতের রাক্ষসী, শেক্সপিয়রের ডাইনি

‘অথ হিড়িম্বা কথা’য় ভীমের সংলাপে, পাণ্ডবদের হাস্যকর আচার-আচরণে, এমন কি কিছু মেটা-থিয়্যাট্রিকাল কথাবার্তায় হাসি পায় ঠিকই, কিন্তু সে হাসি অত্যন্ত অস্বস্তিকর। নাটকের সম্পাদক, তিতাস দত্তের মতে এই প্রয়োগকৌশলের অনুপ্রেরণা ইতালীয় ‘সোশ্যাল গ্রোটেস্ক’, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পিরান্দেলো প্রমুখ নাট্যকারের কাজে দেখা যায়। এই অস্বস্তিকর হাসির উৎসে রয়েছে দুটি অসম শক্তিশালী সমাজের মধ্যে সংঘর্ষ, যার ফলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ব্রাহ্মণবাদ ও আর্য সভ্যতার কতগুলো ভয়ানক দ্বিচারিতা।’

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

শূন্য থেকে শুরু

বইয়ের পাতায় পাতায় আমরা বুঝতে পারি আমরা সাধারণ মানুষরাও কত বিপন্ন। আমাদের ফেসবুক, আমাদের ইমেল আমাদের সত্তা কতটা বিপন্ন। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকি। কিন্তু যে কোনও দিন সাইবার হ্য়াকিং-এর খপ্পড়ে পড়ে আমার আইপি ঠিকানা দ্বারা সাধিত হতে পারে বড় ধরনের অপরাধ। ‘জিরো ডে’ বইয়ের সমালোচনা।

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী

সচেতন সহজ রূপকথা

এমন একটি সময় পরিচালক ও লেখিকা সায়ান হেডার অত্যন্ত সুচতুর ভাবে রূপকথাকে অ্যানিমেশনের খোপ থেকে বের করে একটি আপাত-সরল আমেরিকান মফস্‌সলের গপ্পে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এমন একটি সময় এই কাজটা করেছেন, যখন দীর্ঘ অতিমারীর ক্লান্তি ও হতাশায় মানুষ দীর্ণ। এমনকী যুদ্ধেও পক্ষ নির্বাচন করতে গিয়ে হাজার দ্বিধা ও প্রতিযুক্তি অতিক্রম করা দুরূহ হয়ে ওঠে। বিশ্বব্যাপী স্বৈরাচার ও বৃহৎ বাজারের ট্যাংগোর উল্টোদিকে সাধারণ মানুষের যৌথতার স্বপ্ন মিউমিউ করে বাথরুমে একা গান গায়।

পার্থ দাশগুপ্ত

ধূসর মুখাবয়বের আলো

‘রামানন্দের ছবির আর এক চরিত্র হল আলো। ছবিতে অন্ধকার নেই। আলোয় ঝলমলে প্রেক্ষাপট অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। রাতের পটভূমিতে যে নীল ব্যবহার করেছেন, তা-ও বড় স্নিগ্ধ। আঁধারকে আলো দেখাচ্ছে যেন।’ দেবভাষায় রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প প্রদর্শনী।

অংশুমান ভৌমিক

আলকাজি-পদমসি খানদানের হাঁড়ির খবর

‘‘সেদিন রাতে আমরাই ছিলাম পৃথিবীর সবচাইতে নিঃসঙ্গ ছেলেমেয়ে। পাশের ঘরেই যে আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ চলছে তা আমরা জানতুম। এও জানতুম যে তাতে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। শুধু জানতুম যে, আমাদের জীবন আর আগের মতো রইল না।’ বিবাহবিচ্ছেদের এত সহজ অথচ এত সংবেদনশীল বিবরণ আমরা পড়িনি। এর পরেও তিরিশ বছর ধরে ইব্রাহিমের সব নাটকের পরিচ্ছদ পরিকল্পনা করেছেন রোশন।’ অনন্যসাধারণ নাট্য-পরিবারের কথা।

অর্ক দাশ (Arka Das)

এক নায়কের খোঁজে

সায়নদেব চৌধুরীর প্রথম বই ‘Uttam Kumar: A Life In Cinema’। প্রায় দেড় দশকের চিন্তা, এবং ছয় বছরের কিছু বেশি গবেষণায় ঋদ্ধ এই লেখা। এই বইয়ে বাংলা সিনেমার প্রথম এবং শেষ মহাতারকার এমন এক চলচ্চিত্র-জীবন প্রকাশিত হয়েছে, যা এর আগে সম্ভবত কখনও এ ভাবে দেখা হয়নি, বিশ্লেষণ করা হয়নি ইতিহাসের পটভূমিকায়। কথোপকথনে সায়নদেব।

মালবিকা ব্যানার্জি (Malavika Banerjee)

ভারতের সমান্তরাল সিনেমা

‘মূলধারার সিনেমা নিয়ে অনেক কিছু লেখা হয়েছে, ৭০ মিলিমিটারের হিট ছবির নিতান্ত পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতাদেরও স্মৃতিকথা ছাপতে প্রকাশকদের লাইন পড়েছে। কিন্তু স্বাধীন ভারতে আর্ট ফিল্ম আন্দোলন নিয়ে খুবই কম বই লেখা হয়েছে। রোচনা মজুমদারের ‘Art Cinema and India’s Forgotten Future: Film and History In The Post Colony’ বইটি এই শূন্যস্থান ভরাট করার এক দুরন্ত প্রয়াস।’

সিদ্ধার্থ দে

মিশে গেছে আঁধার আলোয়

পাঁচটি পৃথক অংশে বিভক্ত এই বইটিকে প্রবন্ধোপন্যাস বলা যায়। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘essayistic novel’। ওলগা তোকারজুক বা জুলিয়ান বার্নস এই ধরনের উপন্যাস লিখেছেন। কিন্তু এই বই আরও কিছুটা আলাদা। এর আখ্যানশৈলী বরং খানিকটা docu-feature গোত্রের।

পৃথ্বী বসু

তোমারে বধিবে যে

‘… সুজিত দেখাতে চেয়েছেন, একজন দেশপ্রেমিকের আত্মত্যাগ, তাঁর লড়াই, তাঁর অসহায়তা এবং তাঁর ভেতরে যে প্রতিশোধের আগুন ছিল, সেই আগুনটুকু। এই ছবিতে এটাই মুখ্য, বাকি সব গৌণ।’ সুজিত সরকারের ‘সর্দার উধম’।

রেশম মজুমদার (Reshom Majumdar)

লন্ডনে বাঙালির ‘চৌরঙ্গি’

পরের কয়েক ঘন্টা স্রেফ খাবারের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা। পালং শাকের ভাজাটি সবারই প্রিয় হয়ে উঠল। বাঙালিদের কোনও খাবার ভাল লাগলেই তারা শিগগিরি যে যার নিজের রান্নাঘরে তার রহস্যভেদ করে ফেলে। লন্ডনের ‘চৌরঙ্গি’ রেস্তোরাঁর সমালোচনা।

অর্ক দাশ (Arka Das)

লোভের নীতিগল্প

‘…‘স্কুইড গেম’-এর প্রথম পর্বের কুড়ি মিনিটের মধ্যেই বাচ্চাদের খেলার সঙ্গে ভয়াবহ, নৃশংস মৃত্যুর যোগাযোগ দর্শকদের মনে বিঁধে যায়; একটা ঠাসবুনোট মরণবাঁচনের গল্পের ভিত্তি তৈরি করে দেয় উত্তাপহীন, অনুশোচনাহীন সন্ত্রাস।’ ‘স্কুইড গেম’-এর অসাধারণ আবেদন।

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

দলিত! তোমার মূলস্রোত নাই?

২০০ হাল্লা হো, কোনও রাজনৈতিক থ্রিলার নয়। এই সিনেমা সাময়িক সমাধান দেখালেও হাজার হাজার প্রশ্ন তুলে দিয়ে যায়। কেবল আইনি প্রশ্ন নয়, সাংবিধানিক এবং সামাজিক প্রশ্ন। ভারতের বাস্তবতাকে তুলে ধরাই এই ছবির কাজ। দলিত কেবল রাজনীতিযোগ্য, অধিকার-যোগ্য নয়।