পাক-ম্যাচের মারপ্যাঁচ
এ বছরের টি-২০ বিশ্বকাপে যে ১২টি দল মূলপর্বে উঠেছে, তাদের খেলা শুরু হয়েছে শনিবার। কিন্তু ক্রিকেট-পাগল ভারতীয় ও পাকিস্তান ফ্যানেদের কাছে সত্যিকারের খেলা শুরু হবে রবিবার, যখন তাদের হিরোরা একে অপরের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে।
যে কোনও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে থাকে। আর এ বছর তো প্রায় শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় অপেক্ষা করছে সবাই, কারণ গত দু-বছরের ওপর এই দুই টিম মুখোমুখি হয়নি। আর এই ম্যাচটা দুটো টিমেরই এই বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ। তাই দুটো টিমই জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে, কারণ এই টি-২০ বিশ্বকাপের প্রতিযোগিতাটার ধরন আর খেলার ফর্ম্যাটটা এমনই যে, প্রত্যেক দলই চাইবে খুব দ্রুত নিজেদের জায়গা তৈরি করতে।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমি ও আমার টিমমেটটা প্রতিটি ম্যাচের জন্য একই রকম একাগ্রতা আর মনঃসংযোগ প্রয়োগ করে খেলার প্রস্তুতি নিতাম। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান হলে যে আলাদা বা অতিরিক্ত আবেগ কাজ করত, এমনটা নয়। তবে মনে হত পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা একটু বেশি উত্তেজিত থাকত, বোধহয় ওদের ওপর ভক্তদের প্রত্যাশার চাপটা অনেক বেশি।
ভারত বিশ্বকাপের আগের ওয়ার্ম-আপ ম্যাচগুলোয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খুব ভালভাবে জিতেছে আর বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা দুরন্ত ফর্মে আছে। আমার মনে হয় এই টুর্নামেন্টের ফলাফল নির্ভর করছে ব্যাটসম্যানদের সাফল্যের ওপর। ভারতের এক্ষেত্রে একটু বেশি সুবিধে আছে, কারণ দলের প্রত্যেকেই সম্প্রতি আইপিএল থেলেছে একই পরিবেশে, আর তাই সবারই স্পষ্ট ধারণা আছে, পিচগুলো সম্পর্কে।
রোহিত শর্মা আর কে এল রাহুল যেহেতু ওপেন করবে, বিরাট আসবে তিন নম্বরে। আমি চার নম্বরে দেখতে চাইব সূর্যকুমার যাদবকে। ও ইচ্ছে করলেই সব প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে খেলতে পারে, আর মাঝের ওভারগুলোতে অসামান্য দক্ষতায় ফিল্ডারদের ফাঁক দিয়ে বলটাকে ইচ্ছেমতো জায়গায় রাখতে পারে, ফিল্ডিং সাজানোটাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণও করতে পারে, যেগুলো খুব দরকার, যখন বলটা নরম হয়ে আসে আর বোলাররা বলের গতি কমিয়ে দেয়। সূর্যকুমার আর বিরাটের ওপর দায়িত্ব থাকবে একটা জমি তৈরি করে দেওয়া, যাতে ঋষভ পন্থ, হার্দিক পান্ডিয়া, জাদেজার মতো মারমুখী ফিনিশাররা তার ফসল তুলতে পারে।
বল করতে পারুক বা না-ই পারুক, আমি দলে হার্দিক পান্ডিয়াকে রাখার পক্ষে। ও যখন মারতে শুরু করে, তা বিপক্ষকে ধসিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আর ওর উপস্থিতি খানিকটা জীবনববিমার মতো, হার্দিক আছে জেনে প্রথম তিনজন ব্যাটসম্যান হাত খুলে খেলার স্বাধীনতা পায়। ওর বদলে একজন ছ-নম্বর বোলারকে নেওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা, কারণ শেষদিকের ব্যাটিংটা একটু দুর্বল হয়ে পড়বে, যেখানে কিনা পাকিস্তানের একটা দুর্দান্ত ও শক্তপোক্ত বোলিং লাইন-আপ রয়েছে।
পাকিস্তান একটা দুর্দান্ত টি-টোয়েন্টি দল যা পেস বোলিং-এ বিশেষ শক্তিশালী। আমি নিশ্চিত বিরাট, শাস্ত্রী এবং ধোনি , সে-সব ভেবেচিন্তেই দলটা তৈরি করবে। আমি হলে পেস বোলার হিসেবে দলে রাখতাম যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি এবং ভুবনেশ্বর কুমারকে, কারণ পাঁচজন বোলার খেলালে তার মধ্যে চারজনকে আক্রমণাত্মক হতে হয়। দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে আমার পছন্দ বরুণ চক্রবর্তী, অশ্বিন ওয়ার্ম-আপ খেলাগুলোতে দারুণ বল করা সত্ত্বেও আমি একথা বলছি। বরুণ আইপিএলে খুব ভাল খেলেছে, আর ওর বলের মধ্যে একটা রহস্য আছে যার মুখোমুখি পাকিস্তান এখনও হয়নি। শুধু এই কারণেই ওকে দলে নেওয়া উচিত, যদি ও একশো শতাংশ ফিট থাকে।