ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • চোরে-চোরে ফ্রান্সতুতো ভাই


    উৎসব মুখার্জি (May 14, 2021)
     
    সমালোচনা— ওয়েব সিরিজ: ‘ল্যুপাঁ’
    মুখ্য চরিত্রে— ওমার সাই, ক্লোটিল্ডে হেসমি, সুফিয়ান গ্যুয়েরাব, ভিন্সেন্ট গ্যারঙ্গার
    পরিচালক— জর্জ কে, ফ্রাঁসোয়া উসান

    হাইস্ট ফিল্ম’, ক্রাইম-ড্রামা ফিল্মের একটা উপ-গোত্র, যা সারা পৃথিবীতে খুব জনপ্রিয়। হাইস্ট ছবিতে মূলত কোনও একজন ব্যক্তি বা একদল লোক, সুচারু পরিকল্পনার মাধ্যমে একটা কিছু চুরি করে। সে চুরি অনেক টাকা হতে পারে, কোনও গোপন মূল্যবান কাগজপত্র হতে পারে, বা দুর্মূল্য শিল্পসামগ্রী বা বস্তুও (যেমন অলংকার ইত্যাদি) হতে পারে। এই গোত্রের ছবির আদিযুগে, একজন ব্যক্তি বা একদল লোক এই চুরি করতে ব্যর্থ হত— কিন্তু সময়, মানসিকতা ও দর্শক-পছন্দের সঙ্গে সঙ্গে এর আঙ্গিক পালটে গিয়ে চুরির সাফল্য ও চোরের ধরা না-পড়ার আখ্যানই মূল হয়ে উঠেছে। রূপকার্থে দেখতে গেলে, এই চুরির সাফল্য হল এক রকমের অ্যান্টি-এস্ট্যাবলিশমেন্ট মনোভাবের প্রকাশ। এখানে সিস্টেম বা এস্ট্যাবলিশমেন্টকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে, প্রচলিত শাসন-কাঠামোকে লঙ্ঘন ও অমান্য করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। 

    বিংশ শতকের গোড়ার দিকে ফরাসি সাহিত্যিক মরিস লোব্লঁ সৃষ্ট চরিত্র আর্সেন ল্যুপাঁ একজন ‘সুশীল তস্কর’ বা ‘Gentleman Thief’ হিসেবে ধারাবাহিক সাফল্য লাভ করে। 

    ‘ল্যুপাঁ’ ওয়েব সিরিজটির গল্পের কাঠামো, সমসাময়িক ফ্রান্সের প্রেক্ষাপটে একজন বাস্তব চরিত্র অ্যাসেন ডিওপ-এর জীবনযাপনের সঙ্গে কাল্পনিক চরিত্র আর্সেন ল্যুপাঁর আখ্যানের ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য ও যোগসাজশের মাধ্যমে তৈরি হয়।    

    অ্যাসেন ডিওপ-এর চরিত্রে ফরাসি তারকা ওমার সাই

    ল্যুভ মিউজিয়ামে এক বর্ণাঢ্য নিলাম অনুষ্ঠানের আসরে, অষ্টাদশ শতকের ফরাসি রানি মাঁরি আঁতোয়ানেতের একটি দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য কণ্ঠহার চুরি হয়ে যায়। এই হারটি ফরাসি ধনকুবের পেলেগ্রিনি পরিবারের সম্পত্তি ছিল, যেটা পরিবারের কন্যা জুলিয়েট নিলামে নিয়ে এসেছিল। হারটি চুরি করে সিরিজের নায়ক অ্যাসেন ডিওপ। ডিওপ আফ্রিকার সেনেগাল দেশের বংশোদ্ভূত, অধুনা ফ্রান্সের নাগরিক। তার ফরাসি স্ত্রী ক্লেয়ার, একমাত্র পুত্র রাউলকে নিয়ে আলাদা থাকে। প্রায় ২৫ বছর আগে, অ্যাসেনের বাবা বাবাকর ডিওপ, ফরাসি ধনী ব্যবসায়ী হুবার্ট পেলেগ্রিনির পরিবারে গাড়ির চালকের চাকরি করতেন। ঘটনাচক্রে মাঁরি আঁতোয়ানেতের নেকলেসটি এই পেলেগ্রিনি পরিবারের সম্পত্তি, এবং সেই সময়ে হারটি চুরি হয়ে যায় এবং সেই চুরির দায় এসে বর্তায় বাবাকর ডিওপ-এর ওপর। বিচারে তার জেল হয় এবং মাতৃহীন অ্যাসেনকে সম্পূর্ণ একা করে দিয়ে বাবাকর চরম অপমান, গ্লানি ও অপরাধবোধের দংশনে জেলের ভেতরেই আত্মহত্যা করে। দুর্ভাগা অ্যাসেনের একাকী জীবনে স্কুলের বন্ধু ক্লেয়ার ছাড়া আপন বলতে কেউ থাকে না। অ্যাসেন ক্রমশ বুঝতে থাকে যে তার বাবা কোনও অপরাধ করেনি বরং একটা জঘন্য চক্রান্তে পেলেগ্রিনি পরিবারের কর্তা হুবার্টই তাকে ফাঁসিয়েছে।

    জুলিয়েট পেলেগ্রিনির ভূমিকায় ক্লোটিল্ডে হেসমি

    অ্যাসেন বড় হয় প্রতিশোধের আগুন বুকে নিয়ে। সুচারু পরিকল্পনার মাধ্যমে সে নিলামের আসর থেকে হারটা চুরিও করে নেয়। এবার শুরু হয় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তার পালিয়ে বেড়ানো। আর এখানেই ‘ল্যুপাঁ’র অনন্যতা। অ্যাসেনের কার্যকলাপ চলতে থাকে আর্সেন ল্যুপাঁর বিভিন্ন আখ্যানের আদলে। মুহুর্মুহু বেশভূষা ও আত্মপরিচয় বদল করে করে অ্যাসেন বারবার পুলিশের চোখে, রাষ্ট্রের চোখে, সিস্টেমের চোখে ধুলো দিতে থাকে, যেমনটা করত আর্সেন ল্যুপাঁ তার জনপ্রিয় কাহিনিতে। অ্যাসেন তার ছদ্মনামও রাখে এমন ভাবে, যা আর্সেন ল্যুপাঁর অ্যানাগ্রাম হয়, অর্থাৎ আর্সেন ল্যুপাঁ নামের অক্ষরগুলোকে অন্যভাবে সাজালে এই ছদ্মনামটি পাওয়া যায়— যেমন পল সার্নিন। ARSENE LUPIN- PAUL SERNINE। ফ্রান্সের যে পুলিশ-দল এই চুরির তদন্ত করছিল, সেই দলের অন্যতম সদস্য ইউসেফ গেদিরা এই অ্যানাগ্রাম বুঝতে পারে এবং অ্যাসেনের গতিবিধির সঙ্গে আর্সেন ল্যুপাঁর কাহিনির ঘটনাপ্রবাহের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ খুঁজে পায়। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের উচ্চতর কর্তৃপক্ষ ইউসেফের এই বিশ্লেষণকে অবাস্তব ও অবান্তর মনে করে নস্যাৎ করে দেয়। অ্যাসেন পাখির চোখ করে হুবার্ট পেলেগ্রিনির চরম শাস্তি। হুবার্টের বিবিধ অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজের তথ্যসূত্রে অ্যাসেনের যোগাযোগ হয় এক বয়স্ক মহিলা সাংবাদিক ফ্যাবিয়েন বেরিও-র সঙ্গে। অনেক বছর আগে ফ্যাবিয়েন, হুবার্ট পেলেগ্রিনির কীর্তিকলাপ, আইন ও জনতার দরবারে প্রায় প্রকাশ করে ফেলেছিলেন কিন্তু হুবার্ট তার প্রতিপত্তি খাটিয়ে তার থেকে রক্ষা পায়। ফ্যাবিয়েন, অনেক আলোচনা ও মতান্তরের পরে অ্যাসেনকে সাহায্য করতে রাজি হয়। তাদের তদন্ত যখন একটা পরিণতির দিকে যাচ্ছে, এমন সময় ফ্যাবিয়েন খুন হয়ে যায়। হুবার্ট পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তার সর্বশক্তি, পরিচিতি ও প্রভাব খাটিয়ে অ্যাসেনের বিরূদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে। অ্যাসেন কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবে? তার বাবার প্রতি ঘটা ২৫ বছরের পুরনো অবিচারের প্রতিশোধ কি সে নিতে পারবে? ‘ল্যুপাঁ’-র প্রথম সিজনে পাঁচটা এপিসোড আছে কিন্তু গল্প এখানে শেষ হয় না… নেটফ্লিক্স ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে এই বছরের মাঝামাঝি এই সিরিজের পরের সিজন আসছে। 

    পুলিশ লিউটেনান্ট গ্যাব্রিয়েল দুমঁ-এর ভূমিকায় ভিন্সেন্ট গ্যারঙ্গার

    রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজের একটা জনপ্রিয় আঙ্গিক হল ‘হু ডান ইট’ অর্থাৎ গল্পের বিন্যাসের মাধ্যমে আবিষ্কার করা যে, কে কাণ্ডটা ঘটাল। কিন্তু ‘ল্যুপাঁ’ একেবারেই ‘হু ডান ইট’ নয়, বরং এই সিরিজকে ‘হাউ ডান ইট’ ও ‘হোয়াই ডান ইট’ বলা চলে, অর্থাৎ মূল ঘটনা কেন ঘটল বা কেমন করে ঘটল। এক কথায় বললে, ‘ল্যুপাঁ’ অনেকটাই রহস্য-কৌতুকের আধারে ফরাসি ক্লাসিক চরিত্র আর্সেন ল্যুপাঁর প্রতি সমসাময়িক শ্রদ্ধাঞ্জলি। একই সঙ্গে এই সিরিজ, ফরাসি সামাজিক-রাজনৈতিক স্তরে ‘কালো মানুষ’দের শোষণ, বৈষম্য, অবদমন, বঞ্চনা ও জীবনসংগ্রামের বহুস্তরীয় ইতিহাসের অন্বেষণ ও সেই বিষয়ে রাজনৈতিক বিবৃতি। কাহিনিটি সম্পূর্ণ ভাবে অ্যাসেন ডিওপ-এর ‘হিরোইকস’-এর প্রদর্শনী হওয়ার ফলে, ‘ল্যুপাঁ’ কখনওই গল্পনির্ভর নাটকীয়তা থেকে বেরিয়ে চরিত্রের বিশদ ব্যাখ্যা বা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী হতে পারে না। অ্যাসেনের চরিত্রে ওমর সাই অসাধারণ হলেও, ‘ল্যুপাঁ’ কিছুটা সরলীকৃত, কাকতালীয়, অতিবাস্তব নাটকীয়তায় ভরপুর একটি আখ্যান; যদিও সবকিছু মিলিয়ে ‘ল্যুপাঁ’ হয়ে ওঠে এক সমসাময়িক রূপকথা।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook