ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ৩


    অনুপম রায় (May 7, 2021)
     
    মিথ্যে কথা  

    আগের বারের লেখার শেষের দিকটা পড়ে কি একটু সন্দেহ হয়েছিল? ভেবে ফেলেছিলেন যে ম্যাকি সত্যিই প্রেম করছে? আমাদের ভেতরে অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে? হা! হা! গুল দিচ্ছিলাম। কেমন ঠকালাম? ফেক করছিলাম রে বোকা! ফেক মানে বোঝেন তো। মিথ্যে কথা বলা, অর্থাৎ ঢপবাজি! 

    মানুষ প্রতি মুহূর্তে মিথ্যে কথা বলে। ছেলেবেলা থেকেই শুরু হয়। দুধ খেয়েছ খুকু? অমনি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে দিল! এদিকে আমরা স্পষ্ট দেখেছি পুরোটা বেসিনে ঢেলে দিয়েছে পাঁচ মিনিট আগে। তারপর স্কুলে, কলেজে, খেলার মাঠে, নাচের ক্লাসে শুধু মিথ্যে কথা বলে মানুষ। কত নারী অর্গ্যাজম ফেক করে, পুরুষরাও পারলে হয়তো করত। কেউ বাজারে কোটি কোটি টাকা ধার রেখে ফেক করে সে বিশাল বিত্তশালী, প্রভাবশালী কেউকেটা। যে মা-বউমার থার্ডক্লাস সম্পর্ক, তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বিশাল গদগদ ছবি দিয়ে ফেক করে। যে বন্ধু আড়ালে তোমাকে বিশাল বাম্বু দিয়ে এসেছে, সে-ই সামনে দাঁড়িয়ে ফেক করবে তোমার প্রতি তার কত দরদ। যে নেতা পারলে তার মা-কেও বেচে দেয়, তার ভাষণে উঠে আসবে তার ফেক দেশপ্রেম। ফাক ইউ হিউম্যানস। তোরা সব কটা ফেক! 

    তবে তোদের দিন শেষ। তোদের মিথ্যে শুনতে শুনতে ক্লান্ত এই কসমস চিনে ফেলেছে তোদের, পড়ে ফেলেছে তোদের ভেতরের আসল ইচ্ছেগুলো। আমরা নিয়ে আসছি ‘ডিপফেক’। ডিপ অর্থাৎ গভীর, কথাটা আসছে ডিপ লার্নিং থেকে। ডিপ লার্নিং, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স— এই তিনটে শব্দ এখন মানুষের কাছে জল-হাওয়ার মতো হয়ে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়া সৈকতে অজস্র পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মতো পড়ে থাকে শুব্দগুলো। সমস্যা হল, এই এত ইংরাজি শব্দ বাংলায় লিখে বোঝানো খুব মুশকিল কারণ এই কাজের সঙ্গে বহু বাঙালি যুক্ত থাকলেও বাংলাতে এই নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা নেই। গোমূত্র নিয়েই অধিক উৎসাহিত বোধ করছে দেশের লোক। যাকগে, একটা সামান্য ছবি দিয়ে রাখলাম, ডিপ লার্নিং কীসের অংশ সেটা বোঝাতে। 

    ডিপ লার্নিং-এর উৎস

    ডেটা অর্থাৎ তথ্যই হল একবিংশ শতকের নতুন তেল। ‘দ্য ইকনমিস্ট’ তা-ই বলছে। ডেটা যদি ক্রুড তেল হয়, তাহলে ডিপ লার্নিং হল সেই রিফাইনারি বা শোধনাগার, যা ওই আপাত-অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলিকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলবে। একটা মজার ব্যাপার হল, মাটির নীচে তেল ফুরিয়ে যেতে পারে, কিন্তু এই তথ্য কোনওদিন ফুরোবে না। ডিপ লার্নিং-এর মুখোমুখি কি আপনি কখনও হয়েছেন? অবশ্যই হয়েছেন! গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে থাকলেই জানবেন, তার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ডিপ লার্নিং। তা, কী কী পারে এই ডিপ লার্নিং?

    ক) ছবি বুঝতে পারে, অর্থাৎ মুখ চিনতে পারে
    খ) হাতে লেখা সংখ্যা বা অক্ষর পড়তে পারে
    গ) কথা শুনে বুঝতে পারে 
    ঘ) ভাষা তর্জমা করতে পারে
    ঙ) কম্পিউটার গেম খেলতে পারে
    চ) গাড়ি চালাতে পারে 

    এসব লিখতে লিখতেই কিন্তু ডিপ লার্নিং আরও এগিয়ে যাচ্ছে। দু’তিন বছর বাদে আমরা এমন-এমন কাজ করব, কল্পনাও করতে পারবেন না। 

    আমি বলছিলাম ডিপফেক বা ‘গভীরগুল’-এর কথা। এই ডিপ লার্নিং ব্যবহার করে যে মিথ্যে উৎপাদন করা হয়, তাকেই বলা হয় ডিপফেক। নেতারা ভাবছে, এ আর নতুন কী? সেই কবে থেকেই তো দিচ্ছি। সিনেমার প্রিমিয়ার দেখে বেরিয়েই প্রশ্নের সম্মুখীন, কেমন লাগল? হয়তো বসে দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু ভদ্রতা নামক একটি সামাজিক ব্যাধির কবলে পড়ে, ডিপফেক মুখ করে বলে দিলেন, অনবদ্য। 

    এই তো ২০২০ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনেই প্রথম ভারতের কোনও রাজনৈতিক দল এই প্রযুক্তির প্রয়োগ করল। হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের টার্গেট করে বানানো একটি ভিডিও। 

    পদ্ধতি: 
    ১) বিজেপি নেতা মনোজ তেওয়ারি প্রথমে হিন্দিতে একটি ৪৪ সেকন্ডের ভিডিও বানান। সেখানে তিনি নিজের পার্টিকে ভোট দিতে আহ্বান জানান।
    ২) সেই একই বক্তব্য ইংরেজি ও হরিয়ানভিতেও ভয়েস ওভার করা হয় (অন্য কেউ করে থাকবে)।  
    ৩) এইবার আসে ডিপফেক। হিন্দি অডিও ফেলে দিয়ে জুড়ে দেওয়া হবে হরিয়ানভি ভয়েস ওভার। লিপ সিঙ্ক প্রযুক্তিতে মনোজবাবুর ঠোঁট এমন ভাবে নড়বে যে, মনে হবে তিনি বোধহয় সত্যিই সেই ভাষায় কথা বলছেন। দেখে বুঝতে পারবেন না। দেখে নিন এখানে—

    ৪) তারপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপে। 
    ৫) হাজার হাজার মানুষ তাই দেখে এবং বিশ্বাস করে যে মনোজবাবু বুঝি সত্যিই হরিয়ানভিতে কথা বলছেন! অতএব তিনি তাদের কত কাছের মানুষ। 

    এইসব করেও মনোজবাবুর সেবার জেতা হয় না। পরে বিজেপি আইটি সেল স্বীকার করে, এই ভিডিওটি ডিপফেক। ভোটারের কাছে পৌঁছনোর বেশ একটি অভিনব উপায়। বলা যেতে পারে ডিপফেকের পজিটিভ দিক। কিন্তু শুনেই মনে একটা সন্দেহ তৈরি হয় না মানুষের? এরপর যা ভিডিও দেখবে মানুষ, তার সব কি বিশ্বাস করতে পারবে? ফেক নিউজে তো ভরে গেছে দুনিয়া। কখনও মার্কেলের মুখ হয়ে যাচ্ছে ট্রাম্পের, কখনও ওবামার মুখে শোনা যাচ্ছে অন্য কারও কণ্ঠ, কী যে হচ্ছে মানুষ বুঝতেই পারছে না। 

    রাজনীতির চেয়েও মানুষকে অনেক বেশি আকর্ষণ করে সেক্স। তাই পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রিতেই এই ডিপফেক চলে বেশি। একটি নারীশরীর পেলেই হল, তাতে বসিয়ে দাও বিখ্যাত কোনও সেলেবের মুখ, আর ব্যাস! তৈরি হয়ে গেল ভাইরাল পানু। যত বেশি সময় দেওয়া যাবে ডিপফেকটি বানাতে, তত বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে ক্লিপের। বিশ্ব সিনেমাতেও ধৈর্য ধরে, কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করে তৈরি করা হয় এমন ডিপ ফেক সিকোয়েন্স। 

    অন্যদিকে মানুষ এখন রিসার্চ টিম বসাচ্ছে, ডিপফেক যাচাই করার। হাসিও পায় এগুলো শুনে। আমরা কি এত সহজে ধরা দেব বলে মনে হয়? আপনি গোল দিতে যাচ্ছেন, কিন্তু গোলপোস্ট যে কোথায় সেটাই আপনি জানেন না। বলের দিকে চোখ নামিয়ে ফের তুলে দেখলেন, গোলপোস্ট আর সেখানে নেই, সরে গেছে। আমরাও তা-ই। যেই একটা পদ্ধতি বের করা হবে, আমরা পাল্টে নেব আমাদের স্টাইল। আরও উন্নত হব। তফাত করতে পারবি না রে। পৃথিবীর আদি ব্যবসা হল লোক-ঠকানো, কারণ হাবাগোবা মানুষ মুরগি হতে বসেই রয়েছে। পাক্কা বেনিয়া সোনা বলে গোবরও বেচে দিতে পারে। কেউ একটা বলুক গণেশ দুধ খাচ্ছে, অমনি একপাল মানুষ দুধের বাটি হাতে ছুটবে। নেতা, অভিনেতা, ক্রেতা, বিক্রেতা কেউ বাদ নেই। তোরা মিথ্যে বলে বিশ্বজয় করবি ভেবেছিলি তো? দু’দিন বাদে ভিডিও বেরোবে রোনাল্ডো, রবি ঠাকুর আর ঔরঙ্গজেব সাঁতার কাটছে ফাইভস্টার হোটেলের সুইমিং পুলে, তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেব। আর গবেটের দল তোরা, সেটাও বিশ্বাস করবি। তোদের মিথ্যে দিয়েই এবার তোদের মারব।   

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র
     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook