শব্দ ডোবায়, শব্দ ভাসায়!
পটে আঁকা ছবির মতো শ্রীরামপুর গ্রাম। গোস্বামীদের প্রাসাদোপম ইমারত, ইতস্তত ছড়ানো ইট-গাথা মন্দির, দিনেমার বণিকদের কাছারি ও উপান্তে মিশনারিদের কুঠি। তাঁর পাশে কুলুকুলু বয়ে চলেছে পুণ্যতোয়া গঙ্গা। এমনিতে শান্ত, গাছগাছালি-ঘেরা বাঁধানো ঘাটে স্নান করতে আসা-যাওয়া মানুষের অল্প যাতায়াত ও মৃদু কথোপকথন। তরঙ্গময়ী জাহ্নবীতীরে এক নিস্তরঙ্গ জীবন। যদিও আজ সেখানে উত্তেজনা যথেষ্ট। কৃষ্ণ পাল আজ খ্রিস্টান হবে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মিশনারিরা অবশেষে আজ একজনকে ধর্মান্তরিত করবে। তিরতির করে বয়ে যাওয়া নদীর স্রোত তার দু’পাড়ের ভাঙা-গড়ার পটে অনেক ছবিই দেখেছে। সপ্তগ্রামের উত্থান-পতন, রোমীয় বাণিজ্যপোতের আনাগোনা, ধনপতির সিংহল যাত্রা, পোর্তুগিজদের আগমন ও মহাপ্রভুর নির্গমন। আজ এও দেখবে। দেখলও। শেষ ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে-কাঁপতে খ্রিস্টান হলেন কৃষ্ণ পাল। গঙ্গায় ডুব দিলেন। তারপর কেরি তাঁকে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে… কী করলেন? সেটাই হল কথা, আর সেই কথা নিয়েই যত বিপত্তি।
ওয়ার্ড প্রবল উৎসাহে লিখলেন, ‘Thus, the door of faith is open to the Hindoos, and who shall shut it?’ ব্যাপ্টিস্টদের কাছে ব্যাপ্টিজম যে খুব ‘সিরিয়াস’ ব্যাপার, সে আর আশ্চর্য কী! কিন্তু যা আশ্চর্য, তা হল, এই ঘটনার দেড়-দু’মাসের মাথায় যখন ‘নিউ টেস্টামেন্ট’ ছেপে এল, আর বাইবেল অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ মোটের উপরে সম্পন্ন হল, তখন দেখা গেল এই কেন্দ্রীয় খ্রিস্টিয় আচারটি বর্ণিত হয়েছে এইভাবে—
‘আমি দেখিলাম আত্মা নামিতেছে ঘুঘুর মতো তাহাও বসিল তাহার ওপরে এবং আমি তাঁহাকে চিনিলাম না কিন্তু তিনি পাঠাইলেন আমাকে ডুবাইতে জলে। তিনি বলিলেন আমাকে যাহার ওপর দেখিবা আত্মা নাকিয়া বসিল তিনি সে জল যাহা ডুবাইবেন পরমাত্মাতে। এবং আমি সাক্ষী দিলাম এই ঈশ্বরের পুত্র।’ (জোহান ১:৩২)

এখন হতদরিদ্র অসহায় কৃষ্ণ পালকে হুগলির জলে নিমজ্জন করা এক জিনিস, কিন্তু পরমাত্মাকে যেভাবে কেরি ডোবালেন, তাতে অনেকেই আঁতকে উঠেছিল। মনে রাখতে হবে যে, এই নিমজ্জনের মধ্যে দিয়ে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষার ব্যাপারটা ব্যাপ্টিস্টদের একটি জরুরি সাম্প্রদায়িক আচার হলেও, সবার কাছে নয়। অনেকেই জল ছিটিয়ে, অর্ধেক ডুবিয়ে বা আরও নানা উপায়ে এই আচারটি পালন করেন। তাঁরা অনেকেই এই অনুবাদে বিব্রত হয়ে পড়লেন। কিন্তু এটা যে একটা বিশাল আকার নেবে এবং শেষে শ্রীরামপুরের বাইবেল অনুবাদের বিপুল কাজটিকেই মোটামুটি তামাদি করে দেবে, এতটা আঁচ বোধহয় কেরি-মার্শম্যানের মতন অভিজ্ঞ, বিচক্ষণ মিশনারিরাও করেননি। বাইবেল অনুবাদের ইতিহাসে এটাকে ‘ব্যাপ্টিজো কন্ট্রোভার্সি’ বলা হয়। আর এই কন্ট্রোভার্সির দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন গুরু ও শিষ্য— দুই উইলিয়ম, কেরি এবং ইয়েটস।
উইলিয়াম ইয়েটসের জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা অনেকটা অন্যান্য ব্যাপ্টিস্ট মিশনারিদেরই মতো। সাধারণ শ্রমজীবী পরিবারে, শিশুকাল থেকে শিক্ষানুরাগী, ভক্তিবান প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ভাষাজ্ঞানে উৎসাহী। তরুণ বয়স থেকেই ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইংল্যান্ডে তাঁর পড়াশোনার ভার নেয় এবং প্রচারক হিসেবে তাঁকে লালন করে। প্রাথমিকভাবে তিনি ইথিওপিয়া যেতে চেয়েছিলেন, আমহারিক শিখেছিলেন, কিন্তু কেরি তাঁকে ভারতে, এবং বিশেষভাবে শ্রীরামপুরে নিয়ে যান। তিনি উইলিয়াম কেরির প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। প্রথমে ইয়েটস খুব যে অনুবাদে আগ্রহী ছিলেন তা নয়, তাঁর ভাষাশিক্ষার মূল প্রেরণা ছিল— ধর্মপ্রচারের কারণে বক্তৃতা ও কথোপকথন। কিন্তু কেরির সঙ্গে থেকে তাঁর অনুবাদের আগ্রহ জন্মায়। ১৮১৮ সালে তিনি একটি চিঠিতে প্রথমবার পরিষ্কারভাবে তাঁর অনুবাদক হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। ইতোমধ্যে তিনি সংস্কৃতশিক্ষা করেন এবং কমবেশি চারশো পাতার একটি সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থও প্রণয়ন করেন।

অনুবাদ বিষয়ে কেরির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হত। কেরির পদ্ধতির সঙ্গে তিনি সম্যকভাবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে আমরা কেরির অনুবাদদর্শন সম্পর্কে জানতে পারি যে— তিনি ‘translation’-এ বিশ্বাসী ছিলেন, ‘transference’-এ নয়। কেরি পারতপক্ষে কোনও বিদেশি শব্দ রাখতেই অরাজি ছিলেন। নামের ক্ষেত্রে এবং কিছু নামবাচক বিশেষ্যের ক্ষেত্রে যেমন ফুল, খাদ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে তিনি অনেক সময়ে হিব্রু, পারসিক থেকে নিকটবর্তী শব্দ নিতেন। কিন্তু ইউরোপীয় ও বিশেষ করে ইংরেজি শব্দ একেবারেই ব্যবহার করতে চাইতেন না। ভাষায় আড়ষ্টতা ছিল। তার কারণ, সে-সময়ে তেমন কোনও মডেল ছিল না। তবে আমার মনে হয়, তিনি এটাও চাইতেন যে, বাইবেলের বা খ্রিস্টিয় সাহিত্যের একটা ভাষা-ঘরানা তৈরি হোক, যাতে দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল ধর্মসাহিত্যের ভিড়ে বাইবেল ‘আরেকটি’ হয়ে থেকে না যায়। প্রথমদিকে একটু তাড়াও ছিল। যদিও ইয়েটসের সঙ্গে আলোচনায় তিনি— পরিমাণের ওপর গুণমানকে রাখার কথা বলতেন বলে ইয়েটসের জীবনীকাররা বলেন। কিন্তু এসবের মধ্যেই ব্যাপ্টিস্ট সোসাইটি ভাগ হয়ে যায় এবং ইয়েটসও শারীরিক ও মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকা চলে যান। সেখান থেকে আমেরিকা যাত্রা করে বিশ্বের তাবড় ব্যাপ্টিস্ট নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আলোচনা করে ১৯২৯-এ ভারতে ফেরেন— অনুবাদক হওয়ার উগ্র বাসনা নিয়ে। আর তখনই সমস্যাটি সামনে আসে।

ছবি: জন জ্যাকসন
ডব্লিউ এস পিয়ার্সকে নিয়ে তিনি নতুন অনুবাদে হাত দেন। রাজা রামমোহন রায় তাঁকে প্রাথমিকভাবে সাহায্য করেছিলেন নিশ্চিতভাবে। দু’জনে একটা সময়ে কাছাকাছি এসেছিলেন। ইয়েটসের আগ্রহ ছিল বেশি। কারণ তিনি শুধু যে রাজার প্রজ্ঞা ও বহুভাষিক জ্ঞানে মুগ্ধ হয়েছিলেন তা নয়, তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, রাজা অচিরেই ধর্ম পরিবর্তন করবেন। তিনি তাঁর সহায়ক হতে চেয়েছিলেন। যখন দেখা গেল যে— রামমোহনই উলটে তাঁর মধ্যে ‘ডেইস্ট’ ধারণার প্রভাব বাড়াচ্ছেন, তখন তিনি নিজের থেকেই খানিকটা তফাতে সরে আসেন। তবে এই সম্পর্ক যে বাইবেলের ভাষাটিকে স্বাদু করেছিল, এ-ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।
বাইবেল তো লেখা শেষ হল, দেখা গেল এর খরচ বিপুল। বাইবেল সোসাইটি ছাড়া উপায় নেই। তারাও অনাগ্রহী নয়। তবে অনুবাদ তাদের মনমতো হতে হবে। আর এখানেই বাধল গোল। ইয়েটস একটি কথোপকথনে পরে ঘটনাক্রমটি নিপুণভাবে বলেছেন। ১৮৩০-এর সময় থেকে কলকাতার ব্যাপ্টিস্ট মিশনের প্রেস ব্যস্ত ও বিরাট আকার ধারণ করে। টাকার বেশির ভাগটাই দেয় বাইবেল সোসাইটি। ১৯২৯ সালে ওয়েঙ্গার ইংল্যান্ড গিয়ে ব্যাপ্টিস্টদের থেকে ভালই অনুদান আনতে সক্ষম হয়। ব্যাপ্টিস্টদের ইতিহাস শুধু কলকাতা ও তার প্রেসের আখ্যান। নানান ভাষার ফন্ট তৈরি করা, বেশ কিছু ভাষায় অনুবাদ ও বিপুল পরিমাণে বাইবেল প্রকাশ সেই প্রেসের উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। প্রায় শ্রীরামপুর প্রেসের মাত্রায় ক্যালকাটা ব্যাপ্টিস্টদের প্রেস তৈরি হয়। যদিও কেরির একটি চিঠিতে দেখি, শ্রীরামপুরও সক্রিয়, কিন্তু স্পষ্টতই ইতিহাসের ঢল এখন ক্যালকাটা ব্যাপ্টিস্টদের দিকে হেলে। কলকাতার পরিস্থিতিও এমন যে— তাকে কেন্দ্র করেই সবাই কাজ করতে আগ্রহী। তাই বাইবেল সোসাইটিকে ক্যালকাটা মিশন থেকে অনূদিত বাইবেলের বারোটা কপি পাঠানো হয়। তখনই প্রথম ওই ‘ডোবানো’ শব্দটিকে নিয়ে আপত্তি ওঠে। বাইবেল সোসাইটি নানান মতের খ্রিস্টানদের নিয়ে তৈরি সংগঠন, যাকে বলে একুনেমিকাল। তাঁরা এক-একজন এক-এক রকম ব্যাপ্টিজমে বিশ্বাসী। তাই কোনও একটি মত চাপিয়ে দিলে, তা অন্যদের জন্য আপত্তির কারণ হতে পারে। এখানে ‘ব্যাপ্টিজম’ শব্দটিকেই রাখা হোক। এছাড়া তাদের এই অনুবাদ নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। তাঁরা খুশি।

তবে বাধ সাধে ব্যাপ্টিস্টরা। আর হাজার হোক, ইয়েটসও ব্যাপ্টিস্ট। তিনি বিষয়টা তাঁর ভাষাচর্চা ও অনুবাদের গুরু কেরির কাছে নিয়ে যান। কিন্তু ব্যাপ্টিস্টরা অনড়। তাঁরা ন’পয়েন্টের একটি চিঠি দেন এটা জানিয়ে, কেন এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। তারপর প্রায় পাঁচ বছর ধরে দড়ি টানাটানি চলে। এদিকে অনুবাদ প্রস্তুত হয়ে পড়ে আছে। ইয়েটসের জবানিতে পাই, কেরিও কোনও শব্দঋণের বিপক্ষে ছিলেন। এই শব্দটি তাঁর পাঠকদের কাছে কোনওভাবেই অর্থবহ হবে না। তাঁরা এই শব্দটিকে চেনেনই না। বরং নদীতে নিমজ্জন একটি ধর্মীয় শুদ্ধিকরণের কাজ করে, এমন ধারণা হিন্দুদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান। ফলে এর আচারিক গুরুত্বটি তাঁদের কাছে সহজে পৌঁছবে। ইয়েটস এও বলেন যে, বাংলা ছাড়া অন্যান্য ভাষায় যাঁরা অনুবাদের কাজ করছিলেন, যেমন হেনরি মার্টিন, তাঁরা সকলেই পার্সি বা হিন্দুস্তানিতে শব্দটি ভাষান্তর করেছেন, সরাসরি ব্যবহার করেননি, একজন ছাড়া, যিনি ইয়েটসের ভাষায় – ‘হিব্রু বা গ্রীক কোনওটাই জানতেন না।’ এই একজন অবশ্য জন এলার্টন। তাঁর করা ১৯১১ সালের সুসমাচারের অনুবাদে আমরা শব্দটিকে পাই এভাবে—
‘আমি তোমারদিগের মন ফিরাণের প্রতি জলেতে বাপটাইজ করিতেছি বটে কিন্তু যিনি আমার পশ্চাতে আসিতেছেন তিনি আমা হইতে মহৎ আছেন তাঁহার জুতা ভিতে আমি যোগ্য নহি তিনি তোমারদিগের ধর্ম্মাত্মাতে ও অগ্নিতে বাপটাইজ করিবেন।’

ইয়েটস বলেছেন, কেরি কোনওদিন তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি। কোনওদিনও নয়। প্রথম থেক শেষ সংস্করণ অবধি তিনি একই শব্দ ব্যবহার করেন। এদিকে বাইবেল সোসাইটি অনড়। তারা বলে, বৃহত্তর কমিটির কথা ভেবে তারা এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হল যে, যদি শব্দটির পরিবর্তন না করা হয়, তাহলে আর্থিক সহায়তায় তারা অপারগ। ইয়েটস ও ওয়েঙ্গার নিজেদের এই বিতর্ক থেকে সরিয়ে নেন। তাঁরা এটা একেবারেই সোসাইটির পরিচালন সমিতির হাতে ছেড়ে দেন। এবং সমিতি সেটা মেনেও নেয়। তারা বলে, যদিও তারা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয়, তবে শান্তি ও অনুবাদের বৃহত্তর প্রয়োজনের কথা ভেবে এটা মেনে নেওয়া হল। লক্ষণীয়, ব্যাপ্টিস্টরা এর মধ্যে দিয়ে শ্রীরামপুরের সঙ্গে সংস্রব একরকম চুকিয়ে ফেললেন। এর পর ১৯৪০ থেকে ক্যালকাটা ব্যাপ্টিস্ট সোসাইটি, বাইবেল-অনুবাদ প্রকাশ করতে শুরু করে, আর তার অনেকটাই বাইবেল সোসাইটির আর্থিক সহায়তায় এবং তাদের ক্রমবর্ধমান বিপণন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে। এখন বাইবেল সোসাইটি দু’টি সম্পূর্ণ বাংলা বাইবেল প্রকাশ করে। পুরাতন বাইবেল আর ১৯৮০-তে প্রকাশিত চলিত ভাষায় বাইবেল। নানা কারণে পুরাতনটাই জনপ্রিয় বেশি। যদিও কেউ-কেউ এটিকে কেরির অনুবাদ মনে করেন (এবং বলেনও) এটি আসলে উইলিয়ম ইয়েটসেরই অনুবাদ, তবে বানান ও ব্যাকরণের আধুনিকীকরণ সময়ে-সময়ে চলতে থাকে। কেরির সঙ্গে এর পার্থক্য স্পষ্ট—
‘আমি আত্মাকে কপোতের ন্যায় স্বর্গ হইতে নামিয়া উহার উপরে অবস্থিত করিতে দেখিলাম। আর আমি উহাকে চিনিতাম না, কিন্তু যিনি জলে বাপ্তাইজ করিতে আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তিনিই আমাকে কহিয়াছিলেন, যাহার উপরে আত্মাকে নামিয়া অবস্থিতি করিতে দেখিবা, তিনিই পবিত্র আত্মাতে বাপ্তাইজ করিবেন। আর আমি তাহা দেখিয়াছি, এবং উনি যে ঈশ্বরের পুত্র, ইহার সাক্ষ্য দিয়াছি।’
ভারতের স্বাধীনতার পরে উপনিবেশের বজ্রআঁটুনি সরে গেলে, ভারতীয়রা তাঁদের মতন করে বাইবেলকে সাজিয়েছেন। নানান সোসাইটি, সংঘ, মণ্ডলীর এবং কখনও-কখনও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাইবেল অনুবাদ হয়েছে। সামগ্রিকভাবে অথবা ছোট-ছোট অংশে। ছোটদের জন্য, রোজকার প্রার্থনার জন্য, বাংলার মধ্যে নানা উপভাষায়, আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল এখন লভ্য। কিন্তু ব্যাপ্টিজম নিয়ে অনিশ্চয়তা যায়নি। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এখনও ‘বাপ্তিসম’ শব্দটিই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করে। তবে ভারতীয় অনুবাদকরা নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। যেমন অরবিন্দ দে, বাংলা বাইবেলে একবারে দ্বিধাহীনভাবে ‘দীক্ষা’ শব্দটিকে নিয়ে এসেছেন তাই-ই নয়, এর পাদটীকায় রূপ-প্রত্যয়-সহ শব্দটির সংস্কৃত উৎস উদ্ধৃত করে, সেটিকে একেবারে ভারতীয় আধ্যাত্মচর্চার মূলস্রোতে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখনও বাইবেল সোসাইটির অনুবাদটিই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। গিডিয়নরাও এই অনুবাদটিই ব্যবহার করেন। ‘ব্যাপ্টিজম’ শব্দটিও বাংলা ভাষায় মিশে গেছে একেবারে। যদিও এর আড়ালে রয়ে গেছে সম্প্রদায়, সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক পুঁজির পারস্পরিক সম্পর্কের প্রায় অজানা এক অধ্যায়। বাংলা বাইবেল আর পুঁজির সম্পর্ক অতি চমকপ্রদ। আমরা এর আরেকটি দিক নিয়ে পরের অংশে আলোচনা করব।

