চল্লিশের দশক থেকেই শুরু করি। আরও পিছিয়ে গেলে নজরুল ইসলামকে আনতে হবে। আনা দরকার যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তকেও। সর্বাগ্রে রবীন্দ্রনাথ তো থাকবেনই। তিরিশের বিষ্ণু দে-ও অবশ্য প্রয়োজনীয়। বিষ্ণু দে-র কবিতায় প্রতিবাদের স্বরধ্বনি চিরদিনই সুস্পষ্ট। তাঁদের ছেড়ে রেখে আমি ‘পদাতিক’-এর কথাই বলি প্রথমে। মাত্র একুশ বছর বয়সে ১৯৪০ সালে যে-কবিতাগ্রন্থ লিখে তুমুল সাড়া জাগিয়েছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর আবির্ভাব-মুহূর্তেই। ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত সুভাষের কবিতার কাটিং বা কর্তিকা রবীন্দ্রনাথের কাছে ডাকযোগে পাঠালেন বুদ্ধদেব বসু। আশ্চর্য ছন্দে-মিলে ‘পদাতিক’-এর কবিতাগুলি বাঁধা। সেই কাব্য করণকৌশলে চমৎকারিত্বে যেমন মন টানল, তেমনই অবাক করল এর অন্তরবস্তু। একুশ বছরের যুবকের হাতে প্রেমের কবিতা পেলেন না পাঠক, পেলেন প্রতিবাদের কবিতা। শ্লেষে-ব্যঙ্গে ধারালো তির্যক কবিতার পর কবিতায় সুভাষ উন্মোচন করলেন তাঁর ক্রোধ ও সমবেদনা, অন্যায়কারী ও অসহায় নির্যাতিতের জন্য।
একইসঙ্গে লিখে চলেছেন তখন সুকান্ত ভট্টাচার্য। তাঁর এক-একটি বই অগ্নিখণ্ডের মতো জ্বলে উঠতে শুরু করেছে যখন, তখনই ঘটল তাঁর প্রয়াণ, সকলেই জানেন, মাত্র একুশ বছর বয়সে। চল্লিশের দশকে মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় লিখলেন তাঁর অবিস্মরণীয় কবিতা ‘জননী-যন্ত্রণা’। যার শেষ লাইন হল: ‘ক্ষুদিরামের মা আমার কানাইলালের মা/ জননী-যন্ত্রণা আমার জননী-যন্ত্রণা’। যে-কবিতা শুরু হয়েছিল এই কথা দিয়ে: ‘জন্মে মুখে কান্না দিলে, দিলে ভাসান ভেলা’। প্রকাশ মাত্রই বিখ্যাত হল সে-লেখা। পরে, এ-কবিতা আবৃত্তি করে রেকর্ড-বন্দি করবেন কাজী সব্যসাচী।
চল্লিশের অন্য এক কবি দিনেশ দাস লিখলেন তাঁর কবিতায় এই লাইনগুলি: ‘বাঁকানো চাঁদের সাদা ফালিটি/ তুমি বুঝি খুব ভালোবাসতে/ চাঁদের শতক আজ নহে তো/ এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে’। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল দিনেশ দাসের এ-কবিতা। তিরিশ দশকের এক প্রধান কাব্যস্তম্ভ বিষ্ণু দে লিখলেন তাঁর কবিতায় ‘এ যুগের চাঁদ কাস্তে’। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-ও কাস্তের সঙ্গে বাঁকা চাঁদের সাদৃশ্য দাখিল করলেন তাঁর কাব্যে। অগ্রজ দুই কবির হাতে অনুজ কবির চিত্রকল্প গুরুত্ব পেল দেখে উদ্দীপিত হয়ে উঠলেন তরুণ কবি দিনেশ দাস। আমাদের মনে পড়ছে এর অর্ধশতক সময় পার হওয়ার পর নব্বই দশকে কবীর সুমন লিখবেন তাঁর গানে: ‘…আস্তে আস্তে/ ধারালো হচ্ছে চাঁদের কাস্তে’।
চল্লিশের দশকেই ঘটল দেশভাগ আর দাঙ্গা। ঘটল পূর্ববঙ্গ থেকে দলে দলে সর্বহারা উদ্বাস্তুদের আগমন। বিষ্ণু দে-র কলম থেকে উৎসারিত হল তাঁর বিখ্যাত দীর্ঘ কবিতা: ‘জল দাও’। যে-লেখার শেষ লাইন: ‘জল দাও আমার শিকড়ে’। স্প্রিং রিদমের স্রষ্টা জেরার্ড মানলি হপকিনস্-এর কবিতা পঙ্ক্তি ‘সেন্ড মাই রুটস রেন’ থেকে একেবারে সরাসরি গৃহীত এই লাইন বিষ্ণু দে-র কবিতায় এসে এক অন্য মহিমা পেল। উত্তাল সেই চল্লিশের দশকেই কবি রাম বসু লিখলেন ‘পরানমাঝি হাঁক দিয়েছে’-র মতো কবিতা।
এসে পড়ল পঞ্চাশের দশক। মাত্র উনিশ বছরের সদ্য-তরুণ এক কবি লিখলেন ‘যমুনাবতী’ নামক কবিতা, পুলিশের গুলিতে নিহত এক কিশোরীকে মনে রেখে। কবির নাম শঙ্খ ঘোষ। ‘যমুনাবতী’ প্রকাশের ৩৬ বছর পরে ‘কবিতার মুহূর্ত’ বইয়ে এই কবিতার পটভূমি বিস্তৃতভাবে বলবেন এই লেখক। তাতে থাকবে এরকম কথা: ‘স্বাধীন দেশের স্বাধীন পুলিশের হাতে স্বাধীন এক কিশোরীর কত অনায়াস মৃত্যু!’ ‘পরিচয়’ পত্রিকার এক সংখ্যায় ‘যমুনাবতী’ প্রকাশের পর লেখক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়— যিনি পেশায় ছিলেন অধ্যাপক— ক্লাসে এসে একদিন ‘পরিচয়’ পত্রিকা থেকে তাঁর ছাত্রদের পড়ে শোনালেন ‘যমুনাবতী’ কবিতা। সেই ১৯৫১ সালে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্লাসের এক ছাত্রের নাম ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তার দু’বছর পরে, ১৯৫৩ সালে ‘কৃত্তিবাস’ নামক কবিতা পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় প্রথম লেখা হিসেবে ছাপা হল ততদিনে একুশ বছর বয়সে পৌঁছোনো ‘যমুনাবতী’ কবিতার লেখক শঙ্খ ঘোষের দীর্ঘকাব্য। পরে যে-কাব্য, ‘দিনগুলি রাতগুলি’ কিংবদন্তি হয়ে উঠবে। সেইসঙ্গে কিংবদন্তি হয়ে উঠবে, ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকাও।
এসে পড়ল ষাটের দশক। খাদ্য আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টির দু’ভাগ হয়ে যাওয়া, ১৯৬৭ সালে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের গঠন, সেই সরকার ভেঙে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্থাপন ১৯৬৯ সালে। দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারেরও পতন হতে দেরি হল না। ততদিনে শুরু হয়ে গেছে নকশালবাড়ি আন্দোলন— দলে-দলে যুবক ঝাঁপিয়ে পড়ছে সেই আন্দোলনে। দলে-দলে নিহত হচ্ছে। আর, সেই ভাঙা-গড়ার ইতিহাস ধরে রাখছেন চল্লিশের আরও এক কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের কবিতায়।
সরু-সরু কবিতা-পুস্তিকা বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ করে চলেছেন একের পর এক। সেসব লেখায় সেই আগ্নেয় সময়ের দলিল-চিত্র ধরা পড়ছে। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজেরই উদ্যোগে প্রকাশ করে চলেছিলেন পুস্তিকা আকারে তাঁর কবিতার অগ্নিখণ্ড-সমূহ। নিজের বই কাঁধের ঝোলায় নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন বঙ্গ-সংস্কৃতি সম্মেলনের মেলার মাঠে। নিজেই বিক্রি করতেন। তাঁকে ঘিরে থাকত তৎকালীন নবীন কবির দল।
এদিকে, চে গুয়েভারা-কে হত্যা করার সংবাদ এসে পৌঁছলো এদেশে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখলেন ‘চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে’। এর পরপরই ‘দেশ’ পত্রিকায় পূর্ণেন্দু পত্রীর অসাধারণ অলঙ্করণ নিয়ে দেখা দিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এক স্মরণীয় দীর্ঘকবিতা— যার নাম: ‘কবির মৃত্যু : লোরকা স্মরণে’। মনে রাখতে হবে কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা-কে স্বৈরাচারী শাসক জেনারেল ফ্র্যাংকো-র সৈন্যদল গুলি করে মারে তিরিশের দশকে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতাটি লিখলেন সত্তর দশকে পৌঁছে— যখন নকশালবাড়ি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত কবি দ্রোণাচার্য ঘোষ এবং কবি সরোজ দত্ত নিহত হচ্ছেন পুলিশের হাতে।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কলমও তখন সমান সক্রিয়। সুভাষ লিখছেন: ‘বাঁধা রাস্তায় পেটো চমকাতে চমকাতে আমরা হাঁক দিই/ আমাদের আওয়াজে বাসুকি নড়ে উঠুক’। ১৯৭২ সালে বেরোল সুভাষের বই ‘ছেলে গেছে বনে’। যার ভেতরে ধরা রইল নকশাল যুবকদের প্রতি তাঁর স্নেহ, শোক, শ্রদ্ধা, আশঙ্কা, ও সমবেদনা। হাহাকার রইল বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পুস্তিকাগুলিতেও। ক্রুদ্ধ হাহাকার।
ইতিমধ্যে এসে গেছেন কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্য। ‘রাজহাঁস’ নামক স্নিগ্ধ-গীতল কবিতাগুচ্ছ হাতে নিয়ে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু নকশাল আন্দোলন শুরু হওয়ার পর, সত্তর দশকে প্রকাশ পেল এক কাব্যগ্রন্থে তাঁর গর্জনশীল কবিতাগুচ্ছের সমাহার। সে-বইয়ের নাম: ‘গান্ধীনগরে রাত্রি’। রাগ, তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ ও নির্মম সমাজচিত্র অকুণ্ঠভাবে দেখা দিল তাঁর সেই বইয়ে।
এই সময় এসে পড়লেন দাবানল-সদৃশ কবিতার বই হাতে এক তরুণ কবি। সত্তরের কবি তিনি। তাঁর বইয়ের নাম: ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’। কবির নাম নবারুণ ভট্টাচার্য। নবারুণের নিজেরও যথেষ্ট সংযোগ ছিল নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে কথাসাহিত্যকে আশ্রয় করেও তিনি প্রতিবাদের সাহিত্যে নতুন রূপ সংযোজন করেন।
ঘোষিত হল জরুরি অবস্থা। তার বিরুদ্ধে কবিতা লিখে চললেন শঙ্খ ঘোষ একের পর এক। সেসব কবিতা পাওয়া যাবে শঙ্খ ঘোষের ‘বাবরের প্রার্থনা’ ও ‘বন্ধুরা মাতি তরজায়’— বই দুটির ভিতর।
এল আশির দশক। ভারতবর্ষের গ্রামে গ্রামে দেখা দিল জমিদার-পোষিত রণবীর সেনার দল। দরিদ্র কৃষকদের ওপর চলল তাদের সশস্ত্র আক্রমণ। যার ফল হল অসহায় কৃষিজীবীদের মৃত্যু। শঙ্খ ঘোষ লিখলেন ‘অন্ধবিলাপ’ নামে তাঁর বিখ্যাত দীর্ঘকবিতা, যা স্থান পেল লেখকের ‘ধুম লেগেছে হৃৎকমলে’ বইয়ে। আরওয়াল নামক গ্রামে গণহত্যার পর একই সময়ে শঙ্খ ঘোষ লিখেলেন: ‘এ মাটি আমার মাটি, এ দেশ আমার দেশকাল/ জালিয়ানওয়ালাবাগ এখন হয়েছে আরওয়াল’। নব্বই দশকে পৌঁছে, শাসকতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরণের মতো প্রকাশ পেল শঙ্খ ঘোষের কাব্যগ্রন্থ ‘লাইনেই ছিলাম বাবা’। যেখানে আমরা পেলাম এইরকম লাইন: ‘পুলিশ কখনো কোনো অন্যায় করে না তারা যতক্ষণ আমার পুলিশ’।
ইতিমধ্যে আশির দশকে পৌঁছে আমরা পেয়ে গেছি সুবোধ সরকার, জয়দেব বসু ও মল্লিকা সেনগুপ্ত-র মতো কবিকে। তাঁদের কবিতাও ঝলসে উঠেছে বিভিন্ন অনাচারের বিরুদ্ধে জ্বলন্ত হাতিয়ার হিসেবে। মল্লিকা সেনগুপ্ত বহু শতক ধরে নারীদের ওপর ঘটে চলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচল রাখলেন তাঁর কলম। এমনকী কাল মার্কস-এর প্রতিও তিনি সরাসরি প্রশ্ন রাখলেন তাঁর কবিতায়: ‘মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী হবে?’ এখানে বলা দরকার, মেয়েদের ওপর অনাচারের প্রতিবাদ-স্বরূপ এই কবিতা-স্রোতের জোরালো সূচনা হয়েছিল পঞ্চাশের কবি কবিতা সিংহের হাতে। কবিতা সিংহ ১৯৭৩ সালে একটি কবিতায় লিখেছিলেন এমন দুটি লাইন: ‘সহাবস্থানে থাকে অশ্রু এবং মূত্র তোমার শরীরে/ বিভিন্ন পাইপে যায় চক্ষু আর শিশ্ন অভিমুখে’। মল্লিকা সেনগুপ্ত কবিতা সিংহের সেই জোরালো স্রোতধারার এক গৌরবোজ্জ্বল উত্তরসূরি।
জয়দেব বসু লিখলেন ‘জনগণতান্ত্রিক কবিতার ইস্তাহার ও অন্যান্য’ নামক কবিতার বই। লিখলেন ‘ভারত এক খোঁজ’-এর মতো ক্রোধে উদ্যত কবিতা। সুবোধ সরকারের হাতে আমরা পেলাম ‘আড়াই হাত মানুষ’ ও ‘রাজনীতি করবেন না’ শীর্ষক দুটি দৃপ্ত-উজ্জ্বল কাব্যগ্রন্থ।
আমাদের দুঃখ এই, জয়দেব বসু ও মল্লিকা সেনগুপ্ত-র মতো প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর অকালে থেমে গেল। মৃত্যুর দেশে চলে গেলেন তাঁরা। নইলে আরও অনেক মূল্যবান কবিতা আমরা পেতে পারতাম। বাংলা কবিতা থেকে প্রতিবাদের স্বর হারিয়ে যায়নি। প্রতিরোধ-মূলক কাব্য এখনও লিখে চলেছেন সুবোধ সরকার। মৌলবাদী গো-রক্ষকদের প্রসঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক রচনা ‘গরু’, সে-প্রতিবাদের এক বিশিষ্ট দৃষ্টান্ত।
সময় থেমে রইল না। এসে পড়ল নব্বই দশক। মন্দাক্রান্তা সেন লিখলেন তাঁর প্রতিবাদী কবিতা: ‘বর্ষাফলকে গাঁথা হাড়’। ইতিমধ্যে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশের গুলিতে ১৪জন কৃষক প্রাণ হারালেন নন্দীগ্রামে। নিজ নিজ কৃষিজমি রক্ষার্থে একত্র হয়েছিলেন তাঁরা। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত নন্দীগ্রামের গণহত্যার পর লিখলেন তাঁর কবিতা-পুস্তিকা ‘গোলাপ এখন রাজনৈতিক’— যার মধ্যে রইল এরকম কবিতার লাইন: ‘খুন করাটাই শিল্প এখন’।
আমরা প্রবেশ করলাম একবিংশ শতকের প্রথম দশকে। প্রতিবেশী বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার ব্লগ-লেখক অভিজিৎ রায় খুন হলেন মৌলবাদীদের হাতে। মুক্তচিন্তার মানুষদের খুনের ঘটনা ঘটতে থাকল আরও। এপার বাংলায় বসে কবি শ্রীজাত লিখে চললেন তাঁর প্রতিরোধী কবিতা ‘অন্ধকার লেখাগুচ্ছ’। অন্যদিকে শ্রীজাত-র কবিতা এমনই মারাত্মক আঘাত করল উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিকগোষ্ঠীকে যে, শ্রীজাতকে শিলচরে কবিতা পড়তে দেওয়া হল না। একদল যুবক তাঁর হাত থেকে মাইক কেড়ে নিল। কবিতাপাঠের অনুষ্ঠান বাতিল হল। তারা ভাঙচুর করল প্রেক্ষাগৃহ। শ্রীজাতকে দৈহিক আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন হল বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনীর। এমনকী কলকাতায় নিজগৃহে তিনি ফিরে আসার পরেও রাজ্য সরকার থেকে তাঁর বাড়িতে বিশেষ পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা বহাল রইল। কবিতায় লিখিত শব্দ যে কী ক্ষমতা ধরে, সাম্প্রতিক কালে শ্রীজাত-র লেখা তা প্রমাণ করে দিল আবার।
বাংলা কবিতায় প্রতিবাদী রচনার প্রবাহ কবিরা দশকের পর দশক ধরে চলমান রেখেছেন। আমি প্রায় পাখির চোখে সেই ধারার কয়েকটি চিহ্নমাত্র স্পর্শ করবার চেষ্টা করলাম এই লেখায়। বাংলা কবিতায় প্রবাদের ইতিহাস জানার জন্য পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ প্রণয়নের দরকার বলে মনে করি— যা অন্তত আমার সামর্থ্যে ধরা দেবে না। এ-কথা স্বীকার করি।