বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক লুই আলথুজার বউকে বেশ কিছুক্ষণ মাসাজ করে দিচ্ছিলেন, চমকে তাকিয়ে দেখেন, সিলিং-এর দিকে বউয়ের চোখদুটো স্থির, দৃষ্টি অস্বচ্ছ। বুঝতে পারেন, কখন আনমনে বউকে গলা টিপে মেরে ফেলেছেন। নিজেই পুলিশ ডাকেন, হইহই পড়ে যায়। একদল বলে, লোকটা খুনি, এর লেখা বইটই সব পড়ানো বন্ধ করা হোক। একদল বলে, খুনি খুনের শাস্তি পাক, কিন্তু তার ভাবনা বিচার দর্শন এতে মূল্যহীন হয়ে যাবে কেন? এই তর্ক শুধু আলথুজারকে নিয়ে নয়, হাজারটা লোককে নিয়ে পৃথিবীময়। পিকাসো সাংঘাতিক খারাপ লোক ছিলেন, মেয়েদের পাপোশের মতো ব্যবহার করতেন, সেজন্য তাঁর আঁকা ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব? তাহলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পের রস থেকে নিজেই তো বঞ্চিত হলাম। সে পলিটিকাল কারেক্টনেসের গুঁতোয় বিশ্ব লাভবান হল, না ক্ষতিগ্রস্ত? জীবনানন্দের ‘মাল্যবান’ পড়ে যদি মনে হয় লোকটা নারীবিদ্বেষী, তাহলে সেই উপন্যাসটার রচনাগুণ তক্ষুনি মাইনাস ছয় হয়ে যাবে? তাঁর কবিতাগুলোও অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাবে ঠিকতা-মাপা মেশিনে? একদল বলছে, আলবাত তা হবে, কারণ লোকটা শয়তান (বা অন্তত অপ-মূল্যবোধের ধারক), আমি যদি তাঁর লেখা পড়ে বা তাঁর সুর দেওয়া গান শুনে শুধু সেগুলোর শিল্পমূল্য নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করি, তাহলে কোথাও একটা শয়তানিকে মাপ করে দেওয়া হয়, এমনকী স্বীকৃতি দেওয়া হয় (‘আহা, হতেই পারে মানুষটা ব্যক্তিগত জীবনে যাচ্ছেতাই, কিন্তু কীর্তিটা দ্যাখো, কী বিস্ফোরক!’— এর মধ্যে সেঁধিয়ে রয়েছে এই বার্তা— জিনিয়াস যদি মোলেস্ট করেন তা নিয়ে অত খরখরে প্রতিবাদ করতে নেই, কারণ তাঁর কাছে বিশ্বের প্রাপ্তি এতটা বেশি, উল্টো দাঁড়িপাল্লায় লোকসানের পরিমাণ নিতান্ত নস্যি। এবং এও— হয়তো এই স্তরের প্রতিভাকে লালন ও পুষ্টি-সাপ্লাইয়ের জন্য কিছু মানুষকে বেদীর তলায় পিষে দেওয়া জরুরি, যেমন মানুষের হাড়ের সারে গোলাপ বাড়ে)। মসিয়েঁ ভের্দু-র শুটিং-এর সময় একটা বেড়াল চার্লি চ্যাপলিনের হাতে আঁচড়ে দেয়। চ্যাপলিন অনায়াসে বেড়ালটাকে বদলে নিতে পারতেন, কিন্তু কন্টিনিউইটি ব্যাহত হতে পারে, তাই পরের দিনের শুটিং-এ দেখা যায়, তিনি বেড়ালটাকে খুন করে, স্টাফ করে নিয়েছেন। এই সীমাহীন (ও অহেতুক) নিষ্ঠুরতার কথা জানার পর (এবং এ কথা মনে রেখে: বেড়ালটা সেধে সিনেমা করতে আসেনি, তাকে ধরেবেঁধে মানুষের শিল্পে জুতে দেওয়া গোড়া থেকেই একটা অপরাধ), কী করে চ্যাপলিন-কাণ্ড দেখে হো-হো হেসে গড়াব, কেউ এই প্রশ্ন ওষ্ঠে আমাদের দিকে খর তাকাতেই পারে। জিজ্ঞেস করতেই পারে, মসিয়েঁ ভের্দু-কে এরপর কেবল অভিনয়, সংলাপ, ক্যামেরাকোণ ও সম্পাদনা-কৌশলের সম্মিলন হিসেবে দেখা কি ঠিক হবে? আবার, সত্যি সত্যি এই ছবিটা দেখে উঠে, যখন জটলায় মতামত পিং-পং করছি, কেউ যদি চিল্লায়: ছবিটা আলোচনার অযোগ্য শুধুমাত্র শুটিং-কালীন নিরীহ প্রাণী হত্যার জন্য, আমরা কি আপত্তিটাকে উদ্ভট ও অপ্রাসঙ্গিক, স্রেফ ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে আকাশ-থেকে-পেড়ে-আনা মনে করব না?
সব ক্ষেত্রের মতোই, এখানেও, শিবির দুখানা। এক শিবির বলে, একটা লোক তো একই লোক, তাহলে তাকে সোমবার ঘৃণা মঙ্গলবার শ্রদ্ধা করছি কী করে? অন্য শিবির বলে, একটা লোক আসলে অনেকগুলো লোক, তার এক-একটা দিকের কাছে এগোনোর সময় যথাযথ মনোভঙ্গি ঠিক করে নিতে হবে। বিল ক্লিন্টনকে রাজনীতির নিরিখে আলাদা করে বিচার করব, মোনিকা লিউইনস্কির সঙ্গে তাঁর ব্যবহারের নিরিখে অন্যভাবে দেখব। এই দলের দিকে উদাহরণের ঝুড়ি, প্রায় প্রত্যেক বড় মানুষের মধ্যে ডক্টর জেকিল, মিস্টার হাইড, জক্টর ডেকিল, প্রোক্টর স্নাইড, ভুল প্রেজুডিস, উদ্ভট প্রাইড— সাতাত্তর স্তরে লেবড়েজুড়ে একশা । অনুরাগী বা আর্ট-পিপাসুরা এক প্রকার মন-মীমাংসা করেই এঁদের শিল্পসান্নিধ্যে আসেন, উডি অ্যালেন বা রোমান পোলানস্কি-র (দুজনেই অপ্রাপ্তবয়স্কাকে যৌন নিগ্রহের অপরাধে অভিযুক্ত) ছবিকে বহু ভক্ত আষ্টেপৃষ্ঠে ভালবাসেন, শুধু এঁদের ব্যক্তিজীবনের কথা উঠলে একটু বিষণ্ণ হয়ে মাথা নাড়তে থাকেন। প্রতিভা ও প্রকৃতিকে গুলিয়ে ফেললে (বা গুলে নেওয়া উচিত বললে) গল্প ও সেমিনার জমে বটে, কিন্তু শিল্পের প্রতি শ্রদ্ধা ও শিল্পীর প্রতি একরকম ঔদাসীন্য (বা শ্রয়ডিংগারের মস্তিষ্কের প্রতি অপার সম্ভ্রম কিন্তু তাঁর বউ ও প্রেমিকাকে নিয়ে একই বাড়িতে থাকার অভ্যাসের প্রতি ঘোর অপছন্দ) যুগপৎ পুষে চলার ক্ষমতা মানুষের আপনিই গজায়। সে মনে মনে বলে, আরে, যে যেটায় চ্যাম্পিয়ন, সেটার জন্য তাকে কুর্নিশ তো করতেই হবে। একজন ক্রিকেটার বাড়িতে বউ পেটায়, আর মাঠে বিপক্ষের বোলার পেটায়। তাকে কি জাতীয় দলে নেওয়া বন্ধ করে দেব? যাঁরা এই খোপ-বাজিতে বিশ্বাস করেন না, মনে করেন এক ব্যক্তির সব প্রকাশ একই উৎস থেকে প্রবাহিত, তা ধরেই অপরাধীর বিচার করতে হবে, তাতে যদি ভাল কাজকম্ম উপেক্ষিত (বা সে-কাজ চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কর্তিত) হয় তো নিয্যস হোক, অমন সুকর্মের মুখে ঝ্যাঁটা, তাঁরা তোড়ে রইরই: অতিলৌকিক প্রতিভাও কক্ষনও অপরাধের সাফাই হতে পারে না, একজন একটা ব্যাপারে সুপার-দক্ষ বলে তাঁর অন্যকে অবমাননার অনায়াস অধিকার জন্মায় না, এই অসাম্যের ও নিজশ্রেষ্ঠতার ধারণাকে থেঁতলানো উচিত। এই যুক্তিতেই হার্দিক পান্ডিয়া এবং কে এল রাহুল টিভি টক শো-য় নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের জন্য ক্রিকেট-দল থেকে বহিষ্কৃত হন। লেনি রিফেনস্টাল ছিলেন অসামান্য প্রতিভাময়ী জার্মান ছবি-পরিচালক, তাঁর তৈরি নাৎসিদের প্রচার-চিত্র প্রোপাগান্ডা-ফিল্মের শীর্ষবিন্দু ছুঁয়েছে, আবার অলিম্পিককে তিনি যেভাবে দেখিয়েছেন, তা ক্রীড়া-ফোটোগ্রাফির নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। কিন্তু তাঁকে যুদ্ধের পর থেকে ছবিই করতে দেওয়া হয়নি, কারণ তিনি নাৎসিবাদ-সমর্থক ও উদাত্ত হিটলার-পূজক। অনেকের মতেই, তা অত্যন্ত উচিত-শাস্তি। কিন্তু জাঁ ককতো মনে করতেন লেনিকে ছবি করতে দেওয়া উচিত (তিনি নিজে লেনির একটা ছবিতে অভিনয় করবেন, এমনটাও ঠিক হয়েছিল)। জাঁ পল সার্ত্র বলবেন, আরে আরে, জাঁ জেনে-র মতো লেখককে দশখানা অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিচ্ছ কী হে, ছেড়ে দাও, ও যা লেখে, ও তো সন্ত জেনে! আর এখনকার এক লোক ভেবেচিন্তে বলতে পারে, সার্ত্র ও-কথা ঠিক বলেননি, আইনের চোখে জেনে ও না-জেনে একই, শাস্তি মাস্ট। কিন্তু তা বলে দোকান থেকে জেনে-র বইগুলো লোপাট করে দিলে চলবে না, তাঁর ছিনতাইবাজ সত্তা, আর চিন্তাবাজ সত্তা, দুই-ই নিজ নিজ মূল্য পেতে থাক।
তবে কিনা, এ দ্বিভাঁজ বিশ্লেষণ বিশেষ সুবিধেজনক— দূরের লোক, বা মরে যাওয়া লোকের ক্ষেত্রে। কিন্তু লোকটা চক্ষু-পরিধিতে প্রায়ই ঘুরে বেড়ালে, মনে মনে তার কিছু দিককে বাদ দিয়ে অন্য দিকের ওপর আলাদা ফোকাস করা, প্রায় নাক বাদ দিয়ে মুখ দেখার মতো রামচক্কর। ধরা যাক, একটা লোক পকেটমারি করে। আবার দুর্ধর্ষ বক্তৃতাও দেয়। সে যদি ‘চুরি করা নিঘিন্নে অপরাধ’ বিষয়ে বক্তৃতা দিতে আসে, তা অতি শ্রুতিসুখকর হবে এবং মোক্ষম যুক্তিরাশি বগবগ করবে– এই গ্যারান্টি সত্ত্বেও, শোনার রুচি হবে কি? সম্প্রতি কলকাতার এক নাট্য-পরিচালক তাঁর নাটকের অভিনেতাকে বাদ দিয়ে দিলেন, কারণ অভিনেতা বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। কিছু বাঙালি শিল্পী বলেছেন, বেশ হয়েছে, বিজেপি-র একটা লোক আখলাক নামে এক চরিত্রে অভিনয় করবে: প্রলয়ঙ্কর প্যারাডক্স! চরিত্রটি তৈরিই তো করা হয়েছে বিজেপির ভাবনা ও আদর্শের বিরুদ্ধে। আবার এক বড় পরিচালক আপত্তি জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, অভিনেতার রাজনৈতিক চিন্তা ও অভিনয়-প্রতিভাকে আলাদা করে দেখতে হবে। সত্যিই, বাংলার কোনও ফিল্ম-পরিচালক যদি এখন তাঁর ছবিতে বামপন্থী ভাবাদর্শ বুনে দিতে চান, তিনি তো তাহলে আর অভিনেতাই খুঁজে পাবেন না, কারণ তারা হয় তৃণমূলে নয় বিজেপিতে। এও ঠিক, আদ্ধেক লোকের সঙ্গে কাজ করার সময় আমরা জানি অবধি না, সে চোরা-সাম্প্রদায়িক কি না, দৈনিক দাঙ্গা করতে মনে মনে ফুঁসছে কি না। বিজেপির লোক, যদি দুরন্ত অভিনেতা হয়, তুখড় দক্ষতায় অ-বিজেপি, এমনকী অ্যান্টি-বিজেপি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু পরিচালকও বলতে পারেন, আমি জেনেশুনে ভাবশত্রুর সঙ্গে কাজ করব কেন? তাছাড়া, এ তো একটা ক্যানভাস নয় যে ছবিটা জাস্ট এনে হল-এ টাঙিয়ে দিলাম, বা পদ্যের বই নয়, চোখ বুজে ছাপিয়ে দিলাম, এ তো নাটক, যে-শিল্প দাঁড়িয়েই আছে যৌথতার ওপর। এখানে পরিচালক ও অভিনেতাকে মিলেমিশে একটা চরিত্র, একটা দৃশ্য গড়ে তুলতে হয়, তার খুঁটিনাটি নির্ধারণ করতে হয়, ক্রমাগত সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হয়। যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধা না থাকে, এবং ভালবাসা না হোক, একটা পছন্দের আবহও না থাকে, তাহলে কাজ করা কি নিতান্ত তিতকুটে হয়ে দাঁড়ায় না? যদিও এমন উদাহরণও টেনে আনা যায় যেখানে দুজন বিদ্বিষ্ট মানুষ মিলে দুরন্ত সিনেমা (বা গান, বা নাটক) তৈরি হয়েছে, কিন্তু তা তো সুবিধের পরিস্থিতি নয়। পরিচালক প্রতিদিন নিজের নাটক দেখবেন এই নৈতিক-খচখচ নিয়ে, তাঁর নাটকের আত্মা ও প্রতিপাদ্যের সম্পূর্ণ উল্টো মেরুতে দাঁড়ানো একজন লোক, শুধু মুখের পেশি আর ল্যারিংক্সের কাঁপুনির নৈপুণ্য অবলম্বন করে জরুরি কথাগুলো আউড়ে চলেছে। মনে মনে সে হয়তো বলছে মুসলিমটা নিপাত যাক, আর সংলাপে বলছে, আমি মুসলিম, শুধু এই মোর অপরাধ! এ কি সহ্য করা সহজ?
নিজের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা এই জলদি-ক্ষমা (বা অন্তত, উদার প্রশ্রয়) দিব্যি আয়ত্ত করে ফেলেছি। আমি চোদ্দো বছর বয়সে একটা কুকুরবাচ্চাকে জলে ডুবিয়ে মেরেছিলাম, বাইশ বছর বয়সে একটা মেয়েকে প্রেমের কথা দিয়ে তার বোনের সঙ্গে সেক্স করেছিলাম, বত্রিশ বছর বয়সে একটা ছেলেকে কুৎসিত দেখতে বলে একঘর লোকের সামনে এমন ধারাবাহিক টিটকিরি মেরেছিলাম যে সে কাঁদতে কাঁদতে পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যায়, চুয়াল্লিশ বছর বয়সে একটা রাস্তার পাগলকে গাছের চোখা ডাল দিয়ে মারতে মারতে কালশিটে ফেলে দিয়েছিলাম সারা পিঠে। এজন্য অবশ্যই প্রায়ই ছুঁচলো আত্মঘৃণা, আত্মলাথি, আত্মখিস্তি, আত্মচাবুক বহাল। কিন্তু যখন নিজের দিকে তাকাই, এগুলোকেই সর্বমোট পরিচিতি মনে করি না। নিজেকে বিচার করি আমার সদিচ্ছাগুলোর ওজনেও, শুভচিন্তাগুলোর মাপেও, ঘেয়ো কুকুরছানা তুলে আনার দুধ-দরদের গজকাঠিতেও, পথিকের চোখ থেকে বহুক্ষণ ফুঁ দিয়ে কাঁকর সরানোর শট ব্লো-আপ করেও। প্রায় ওই সমীকরণই মেনে, সব ক্ষেত্রে না হলেও, বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের এই মেনে ও মানিয়ে নেওয়ার প্রলম্বিত আঙুল (বা বলা যাক, জীবনের কুঠুরিকে চটের পর্দা টাঙিয়ে ভাগ-ভাগ করে নেওয়ার অনুশীলন) উপচে খ্যাতনামাদের স্পর্শ করেছে। আমরা জানি না কালিদাস কেমন লোক ছিলেন, তাঁর উপমার স্বাদ নেওয়ার কালে সে-কথা মাথাতেই আনি না। আমরা শুনেছি রবীন্দ্রনাথ মেয়ের বিয়েতে পণ দিয়েছিলেন, তাতে তাঁর পণবিরোধী ছোটগল্প ‘দেনা-পাওনা’কে ভণ্ডামি বলে সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার দাবি (এখনও) তুলিনি। যে-বাঙালি মনে করে স্ত্রীকে ছেড়ে বহু নারীসান্নিধ্য করা খুব বেহায়া বদমাইশি, সে-ও রবিশঙ্করের সেতার শোনার সময় তাঁর কেচ্ছার বাইরে ধৌত সুরের প্রান্তর খুঁজে নেয়। সমসাময়িকদের বেলায় এই ‘ব্যক্তিটি খ, শিল্পীটি ক’ মার্কা উদারতা একটু মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় বটে, তাঁদের মুখে অপকম্মের সিন চলমান রস-তিলকের মতো গড়াতে থাকে, কিন্তু সেখানেও ‘করতালি দেব কিন্তু করমর্দন করব না’ টাইপ একটা দু’নৌকো ব্যালান্স করে আমরা ম্যানেজ মেরে যাই (ইমরান খান বর্ডারে ঝামেলা করলে তেড়ে নিন্দিত হলেও, ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর প্রতি গড় ভারতীয়ের সমীহ টোল খায় না)। তবে কি তৈমুর লং, চেঙ্গিস খাঁ, ইদি আমিন একযোগে পিয়ানো বাজালেও আমরা শুদ্ধ বাজনাকুশলতার কারণে উচ্চ সাধুবাদ মচাব? ধর্ষক-কৃত ন্যুড স্টাডি দেখে রেখাপটুত্বে হুররে দেব? কারণ আমাদের সূত্রটা হল— অপরাধী হিসেবে লোকটাকে ঘেন্না করো, আবার তার ট্যালেন্টের ফসলটাকে খোলা মনে আস্বাদন করো? এর উত্তর দ্বিধাহীন দাপটে দেওয়া না-মুমকিন। তবু, হ্যাঁ-এর দিকে তা ঈষৎ হেলে থাকার সম্ভাবনা। কারণ মানুষের বহুমাত্রিকতার দিকে সধৈর্য তাকিয়ে থাকা একজন পরিণত জীবনগ্রাহকের কাজ। একপিঠে তৃষ্ণা একপিঠে বিতৃষ্ণা রেখে নাগাড়ে কয়েন টস-এর ক্ষমতা কি এই প্রজাতিকে অনন্য করেনি?