কয়েকটি কবিতা
আপনাকে
একসন্ধে শাখাময় আলোবিদ্ধ প্ররোচনা
আপনাকে জানানো হয়নি, জানাব যা দেখা হলে।
প্রসিদ্ধ মিনার থেকে নেমে আসছে দেখাশোনা
ভেনিসে বিখ্যাত যেন মাতা মেরি। যিশু কোলে।
আপনিও তো সেরকমই। চৌখস আর উদাসীনও।
তাকাচ্ছেন অথচ যেন তাকাচ্ছেন না, এইরকমই।
দূরত্ব রুমাল থেকে এক দুঃখ, চার তৃণ…
ফুটেছে সুতোর কান্না, কী বিরুদ্ধ ঘাসজমি
আমাদেরও এ-শহরে বহুরাত্রি গেল কেটে।
চাকরি খুঁজে, জুয়া খেলে, আপনার অপেক্ষা ক’রে।
আসবেন কি আসবেন না, বাজি ধরল দু’প্রফেটে।
শুনেছি সমস্ত যুদ্ধ থেমে যাচ্ছে কাল ভোরে?
শিশুদের মুঠো থেকে মুক্ত হবে জরিমানা
টাঙাব সেদিকে সূর্য, যেদিকে সে দরজা খোলে।
একসন্ধে আলোময় শাখাবিদ্ধ শামিয়ানা…
আপনাকে জানানো হয়নি, জানাব যা দেখা হলে।
নীল কাব্য
এখানে অলীক উড়ছে। ডানা ডানা মুগ্ধরাশি।
তোমার ওই ভুল সন্ধে সারা হলে দেখে নিয়ো…
পোড়াচ্ছে গাছের ছায়া কারা যেন অপ্রবাসী
পত্রদ্বারা নিমন্ত্রণ ত্রুটি, তবু মার্জনীয়।
সহজে তুরুপ ভাঙছে টেক্কা দুরি দেহখেলা
হাত থেকে হাতে ভাসাচ্ছে এ-তাসজন্ম কী তরণি!
ভাড়াটে বকেয়া রাখলে রেলিঙে বিরক্তি মেলা
খোঁজে আমিও নিইনি ঠিকই, তুমিও খবর করোনি।
এখন এ-কান্তারে কারা আসে, কারা খেলা করে
কাদের কান্নার ধ্বনি আলো হয়ে ফোটে রোজই
সেসব আর জানতে চাই না। বন্ধ হলে একা ঘরে
সমস্ত বাসনা জেনো দিনশেষে তৃণভোজী।
এখানে সময় ছুটছে। পা অদৃশ্য মতিভ্রমা।
তোমার ওই নীল কাব্য লেখা হলে পড়তে দিয়ো।
আমার এ-জীবন গেল পত্রিকা অফিসে জমা…
পত্রদ্বারা নিমন্ত্রণ ত্রুটি, তবু মার্জনীয়।
অধ্যাপনা
বিদগ্ধ শ্রোতাকে বেঁধে পায়রা বুঝিয়েছ তুমি।
অথচ বোঝেনি ওড়া, সে কেমন পড়াশোনা?
ডানাশব্দে বিশারদ কবি তব মনোভূমি
আমি কিন্তু ভুল হলে দ্বিতীয়বার বোঝাব না।
এখানে টিনের তোরঙ্গ। তলোয়ার বিলাসিতা।
সেখানে কেন যে তুমি, অধ্যাপক, পড়াতে এলে…
বিনিময় ভুলে গেছে কে দাতা ও কে গ্রহীতা
মধ্যিখানে সেতু, তাতে ফুঁ বিক্রি করে যে-ছেলে,
তার কাছে বাঁশিটি নিয়ো। শ্রোতামুক্ত পায়রাদেরও
চাকরি হবে দূরে-কাছে। জুটবে দু’বেলা দু’মুঠো।
তুমিও চশমাটি সেঁটে ক্লাস পড়িয়ে বাড়ি ফেরো…
ফরাসি সাহিত্য থেকে উড়ে আসে খড়কুটো।
বইয়ের পাতার ফাঁকে এ-মন চালান করো।
এ-দেহে সুঘ্রাণ দাও প্রবন্ধ ও পদ্য লিখে।
হে প্রেম, হে অধ্যাপনা, তুমিই উন্নততর
সন্ধে হলে ভালবাসা বুঝিও সে-ছাত্রীটিকে।
ইতিহাস
তরঙ্গ তরঙ্গ খেলছে। ঢেউ বলছে মিথ্যে কথা।
সমুদ্রে যাবে না কিন্তু স্নান করবে, এ-বিপ্লবে
আমি যদি সঙ্গ দিই, সেনা তবে নীরবতা।
এবং বালির গায়ে ইতিহাস লেখা হবে।
তুমি থাকবে কাছে-দূরে। থাকবে না হয়তো কখনও।
হোটেলের জানলা থেকে চাঁদ যেমন, সেরকমই।
অন্তরাকে মনে আছে? গানে ছিল। ছোট বোনও।
অতীত তাদের নামে লিখে দিয়ে গেছে জমি।
স্মৃতিবাড়ি। ধুলোবালি। মৃত খেলনা। ঝুলনেরই।
এখন ট্যুরিস্ট সিজন-এ ঘুরেফিরে লোকে দ্যাখে।
স্নানের বিরাট ঢেউ আসতে দেরি, যেতে দেরি…
তোমারও পোশাক, মন, খোলা হবে একে-একে।
তরঙ্গ তরঙ্গ ডাকছে। মন দিচ্ছে মিথ্যে সাড়া।
সামনেই সমুদ্র আছে, রণক্লান্ত কলরবে…
আমি যাব নিরুদ্দেশে, তুমি ফিরবে চেনা পাড়া
এবং বালির গায়ে ইতিহাস লেখা হবে।