৭ মে, মঙ্গলবার, রবীন্দ্রজয়ন্তীর আগের দিন সকালে প্রয়াত হলেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের কো-চেয়ারপার্সন, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির গভর্নিং বডির সদস্য, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর, আজকাল ডট ইন পোর্টালের প্রধান সম্পাদক মৌ রায়চৌধুরী। বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শুধু গভীর অনুরাগীই নয়, তিনি নিজেও ছিলেন একজন সাহিত্যিক। মৌ রায়চৌধুরীর অকালপ্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর চলে যাওয়া এখনও মেনে নিতে পারছেন না কেউ-কেউ। ‘আজকাল’ পত্রিকার সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত লিখেছেন, ‘এই উটকো সাংবাদিকের মতো অতিরিক্ত সময় বেঁচে থাকলে, ঘনিষ্ঠ জনদের হারানোর শোক বহন করতে হয়। তাই বলে ৫৩? মৌ? ভাল গাইত। ভালবাসত শিল্পীদের, যাঁদের জন্য ছিল অবারিত দ্বার, ভালবাসা। এত নরম মন। সে নরম মেয়েটা আমাদের গভীর কষ্ট দিয়ে চলে গেল…।’ একই রকম অবিশ্বাসের সুর লেখক-সাংবাদিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাতেও, ‘সত্যি কোনও দিন ভাবতে পারিনি আমি তিরাশি বছর বেঁচে থাকব, পৌঁছোব ৭ মে ২০২৪-এ, যেদিন সকালবেলা আমি পাব আমার আদ্দেক বয়সের মৌ রায়চৌধুরীর মৃত্যুসংবাদ এবং যেদিন সেই মেয়ের আদেশ, ‘আমি মরে গেলে তুমি কিন্তু কিছু লিখবে রঞ্জনদা’ আমার ওপর সত্যিই নেমে আসবে গ্রিক ট্র্যাজেডির নিয়তি নির্ধারিত অরেকল্ বা দৈবাদেশের অনিবার্যতায়। এবং ধারণ করবে সেই অরেকল্ গ্রিক ট্র্যাজেডির আয়রনি, বা অব্যর্থ ব্যাজোক্তি! কে জানত আমার লেখা মৌয়ের ‘অবিচুয়ারি’ প্রকাশিত হবে ২৫ বৈশাখ, মৌয়ের সবথেকে ভালবাসার মানুষ, তার পুরুষোত্তমের জন্মদিনে!’
যে-আত্মীয়তার বন্ধনে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন শিল্প-সাহিত্য জগতের নানা গুণিজনকে, তা হারিয়ে ফেলায় শোকের ছায়া সেই মহলেও। অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরির কথায়, ‘অনেক ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছি।… মৌ রায়চৌধুরী আমার কাছে সেই হারিয়ে ফেলা মা। কোনও দিন আমার জন্মদিন ভোলেননি। এখন মনে হচ্ছে, এতটা না জড়ালে বোধ হয় ভাল ছিল। তা হলে নতুন করে আজ আবার মাতৃহারা হতাম না।’ এছাড়া শোকপ্রকাশ করেছেন চিত্র-পরিচালক সন্দীপ রায়, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কবি সুবোধ সরকার, গায়ক বাবুল সুপ্রিয়-সহ বঙ্গসংস্কৃতির একাধিক বিশিষ্টজন।
মঙ্গলবার সল্টলেকে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের সদর দপ্তর, আজকাল ভবন ও নিউটাউনে সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটিতে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান কর্মী, শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা। বিকেলে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।