ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ছায়াবাজি : পর্ব ২৩


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (March 4, 2024)
     

    মজাভর্তি ম্যাজিক

    অনেক লোক আশ্চর্য ছবি করেন মাঝে মাঝে, কিন্তু কিছু লোক আশ্চর্য থিম ছাড়া সিনেমায় হাতই দেন না। গ্রিক পরিচালক ইয়র্গস ল্যানথিমস তাঁর সাম্প্রতিক ইংরেজি ছবি ‘পুওর থিংস’-এ (চিত্রনাট্য: টনি ম্যাকনামারা, ২০২৩) ফের একবার, তাঁর স্বভাব অনুযায়ী, উদ্ভট ও চমকপ্রদ গল্প বললেন। মূল গল্পটা অবশ্য লিখেছেন অ্যালাসডেয়ার গ্রে, যিনি প্রায়ই এরকম লেখা লিখতেন। ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে, বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল রাখার চেষ্টাই করা হয়নি, এটা একটা রূপক, এখানকার জাহাজও অন্যরকম, শহরও অন্যরকম, দুর্গও অন্যরকম, এমন জন্তুও আছে যার অর্ধেকটা মুরগি অর্ধেকটা শুয়োর। এটা একটা রূপকথা বা উপকথা। যে-মেয়েটিকে নিয়ে এই ছবি, সে জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তার মৃতদেহ নিয়ে এসে এক বৈজ্ঞানিক দেখেন, সে গর্ভিণী। এবার, এই মেয়েটিকে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বৈজ্ঞানিক ভাবেন, কিন্তু মনে হয় যে-জীবন আত্মনাশে গিয়ে শেষ হয়, সেই জীবন ও স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়ে লাভ কী? তাই তিনি, গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কটা নারীর মস্তিষ্কের জায়গায় বসিয়ে দেন। তার মানে এই নতুন প্রাণীটি হল রূপসি ও পূর্ণযৌবনা এক নারী, যার মগজটা শিশুর মতো। আমরা কথায় বলি, ইস, যদি জীবনটা নতুন করে শুরু করা যেত। এই নারী আক্ষরিক অর্থে তা-ই করে। সে ভাষা শিখতে শুরু করে, হাঁটা শিখতে শুরু করে, গোটা জগৎটাকে ছুঁয়ে-ছেনে আবিষ্কার করে। তবে তার শিখে ফেলার হার খুব দ্রুত। ফলে সে শিগগিরি হয়ে ওঠে এক এমন প্রাণী, যে শরীরের দিক থেকে সমর্থ ও যৌনতা-সক্ষম, আর যার মনটা শিশুর মতো বিস্ময়, কৌতূহল, প্রসন্নতা ও সর্বোপরি পাপবোধ-হীনতায় রঞ্জিত। যাকে বলা যায় আদর্শ সমন্বয়। তার শরীর তাকে দেয় সব অভিজ্ঞতা লাভের ছাড়পত্র, এদিকে তার মন সাধারণ বড়দের মতো অবসন্ন ও দড়কচা-মারা নয়। সে যখন যৌন আনন্দ আবিষ্কার করে, একেবারে আত্মহারা হয়ে যায়। এক উকিল তাকে নিয়ে পালাবার প্রস্তাব দেয়। সে তার বৈজ্ঞানিক-বাবাকে গিয়ে জানায়, সে যদিও বাবার এক সহকারীরই বাগদত্তা, তবু এই লোকটির সঙ্গে গিয়ে দেখবে, কী হয়। তার অভিজ্ঞতা চাই, সে বদ্ধ থাকবে না। বাবা ও হবু-স্বামী বাধা দিলেও সে মানে না, পালায়। তারা যায় লিসবন-এ, যা পর্তুগালের এক শহর। সেখানে হোটেলে উকিল-প্রেমিকটির সঙ্গে সঙ্গম করে নারী এত আনন্দ পায়, জিজ্ঞেস করে, মানুষ সারাদিন শুধু এই কাজটাই করে না কেন। উকিল যখন জানায় যে পুরুষের অন্তত কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, এবং সারাদিন উক্ত কাণ্ডটি করার ইচ্ছে থাকলেও ক্ষমতা নেই, সে লিসবন ঘুরতে ও দেখতে বেরিয়ে পড়ে। এই উকিলটি এর মধ্যে তার শরীরের শুধু নয়, তার স্বভাবেরও প্রেমে পড়ে গেছে, এবং বহুক্ষণ কোথাও মেয়েটি উধাও হয়ে গেলে সে কৈফিয়ত চায়। কখনও দুঃখ পায়। মেয়েটি বুঝতে পারে না, এত আফশোস ও হম্বিতম্বির হয়েছেটা কী। এক সময়ে মেয়েটি যখন প্রেমিককে জানায়, অমুক লোকের সঙ্গে তার যৌনতা হয়েছে, তাতে পুরুষটি এত উতলা হয়ে পড়ে যে নারী জিজ্ঞেস করে, এই কাজটা তো সে তার সঙ্গেও করে, তাহলে আনন্দ পাওয়ার জন্য অন্যের সঙ্গে করতে পারবে না কেন। অর্থাৎ প্রেমের সঙ্গে অধিকারবোধের যে-যোগ আমরা স্বতঃই করে ফেলি, তার কোনও যাথার্থ্য এই নতুন-মানুষটি বুঝে উঠতে পারে না। ‘আমি তোমাকে চাই’, এর মানেই যদি হয় ‘আমি অন্য কাউকে চাই না’, তাহলে তো আমি নিজেকে সীমাবদ্ধ করে ফেললাম, শৃঙ্খলিত করে ফেললাম। তা হঠাৎ করতে যাব কেন? প্রেমিক আর না পেরে তাকে বাক্সবন্দি করে একটা জাহাজে গিয়ে ওঠে। জাহাজে নারী অনেক বই পড়ে, হয়ে ওঠে আরও যুক্তিবাদী, মানবতাবাদীও বটে। সেখানে একজনের সঙ্গে আলাপ হতে সেই লোকটা বলে, পৃথিবী এতই দুর্দশা ও অন্যায়ে পরিপূর্ণ, ঠিক করে খতিয়ে দেখলে মানুষ কখনওই মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারে না। সে মেয়েটিকে নিয়ে যায় এক জায়গায়, যেখানে এক দুর্গের নীচে অজস্র মানুষ কাতরাচ্ছে, মারা যাচ্ছে, রোগে-দারিদ্রে কষ্ট পাচ্ছে। মেয়েটি ফিরে এসে, উকিলের জুয়ায় জেতা সব টাকা গরিবের কল্যাণার্থে বিলিয়ে দেয়। উকিল ভয়াবহ হাহাকার করছে দেখে সে অবাক হয়ে যায়, আরে, কেন আমি সম্পদ দিয়ে অভাবী মানুষকে সাহায্য করব না? মানে, সে একেবারে মূল ধরে প্রশ্ন করে, এবং জীবন-ঘাগু লোকদের কাছে তার কোনও উত্তর পায় না। কারণ সভ্যতা যেগুলোকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে, মানুষ ইচ্ছে হলেও বৈধ দোসর ছাড়া অন্যের সঙ্গে যৌনতা করবে না, বা কিছু মানুষ খেতে পাবে এবং মোটেই না-খেতে-পাওয়া মানুষদের সাহায্য করবে না— সেগুলোকে তার উদ্ভট মনে হয়। আর সভ্য মানুষদের উদ্ভট মনে হয় এই নারীটিকে। তারপর কপর্দকশূন্য অবস্থায় যখন মেয়েটিকে ও উকিলকে প্যারিসে নামিয়ে দেওয়া হয়, নারী এক বেশ্যাবাড়ির মাসির কাছ থেকে প্রস্তাব পায়। মেয়ে তো প্রথমে অবাক, ছেলেরা তার সঙ্গে যৌনতা করে তাকে যৌন আনন্দ দেবে, আবার পয়সাও দেবে? পরে সে অবশ্য মাসিকে বলে, ছেলেরা কেন শুধু মেয়ে পছন্দ করছে, মেয়েরাই বা কেন পুরুষ-মক্কেলকে দেখে পছন্দ করছে না? সহকর্মীকে সে বলে, কিছু ক্ষেত্রে তার খারাপ লাগলেও, নতুন শরীরী অভিজ্ঞতায় সে নিজের শরীরকে বহুভাবে চিনতেও পারছে। এক সময়ে, তার বৈজ্ঞানিক-বাবা মৃত্যুশয্যায় শুনে, সে ফিরে আসে।

    যে-ব্যাপারগুলোকে স্বতঃসিদ্ধ বলে আমরা মনে করি, সেগুলোকে যে প্রশ্ন করা উচিত, এবং করলেই যে দেখা যাবে আমরা কিছু উৎকট ধারণাকে সত্য বলে জেনে তার ন্যাজ ধরে ঝুলছি— এই উন্মোচন ছবিটার অন্যতম উদ্দেশ্য। এই তত্ত্বটা নতুন কিছু নয়, কিন্তু যে-গল্প ধরে এগোনো, এবং যে-ভঙ্গিতে এগোনো, তা চমৎকার। পুরো ছবিটাকেই একটা কমেডির রূপ দেওয়া হয়েছে, আর ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ থেকে ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’— অনেক ধাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে।

    বোঝাই যাচ্ছে, গল্পটাকে এই অ-বাস্তব ছাঁচে ফেলা হয়েছে, যাতে আমরা নতুন অথচ প্রাপ্তবয়স্ক একজোড়া চোখ দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখতে পারি। যে-ব্যাপারগুলোকে স্বতঃসিদ্ধ বলে আমরা মনে করি, সেগুলোকে যে প্রশ্ন করা উচিত, এবং করলেই যে দেখা যাবে আমরা কিছু উৎকট ধারণাকে সত্য বলে জেনে তার ন্যাজ ধরে ঝুলছি— এই উন্মোচন ছবিটার অন্যতম উদ্দেশ্য। এই তত্ত্বটা নতুন কিছু নয়, কিন্তু যে-গল্প ধরে এগোনো, এবং যে-ভঙ্গিতে এগোনো, তা চমৎকার। পুরো ছবিটাকেই একটা কমেডির রূপ দেওয়া হয়েছে, আর ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ থেকে ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’— অনেক ধাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে। একটা মৃতদেহ প্রাণ পায়, আবার সে সঙ্গী খোঁজে, এ যদি ফ্রাংকেনস্টাইনের গল্প হয়, একটা মেয়ে একদম নতুন পৃথিবীতে গিয়ে আনকোরা কৌতূহলে সব কিছু আস্বাদন করতে চাইছে এবং প্রশ্ন করছে— এ হল অ্যালিসের গোলকধাঁধার গল্প। কারও আবার ‘কাঁদিদ’-এর কথাও মনে পড়ে যেতে পারে, যেখানে একটা দল ঘুরছে আর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়ছে, আর তদ্দ্বারা মানুষের স্ব-ভাব বুঝে ফেলার চেষ্টা করছে। ছবিটা দেখতে-দেখতে মনে হয়, বহুবার বহু লেখক বা দার্শনিক যে-গল্প শুনিয়েছেন, এ যেন প্রায় সেই মহাকাব্যিক গল্প, অথচ এর চলনটা একদম ব্ল্যাক কমেডির মতো, যার সঙ্গে অনেকটা ফ্যান্টাসি বুনে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটি বৈজ্ঞানিককে ডাকে ‘গড’ বলে (তাঁর নাম গডউইন ব্যাক্সটার), এবং তিনি যখন মৃত্যুশয্যায় শুয়ে, আর তাঁর একপাশে মেয়েটি, আরেক পাশে মেয়েটির হবু স্বামী (বৈজ্ঞানিকেরই সহকারী), তখন মনে হয় স্বর্গোদ্যানে ঈশ্বরের পাশে আদম ও ইভ শুয়ে আছে। বৈজ্ঞানিকের চরিত্র গোড়ায় নিষ্ঠুর মনে হয়, পরে দেখা যায় নিজের মৃত্যু নিয়েও তাঁর কোনও আবেগ-প্যানপ্যান নেই, পুরো জীবনটাকেই তিনি একেবারে যুক্তির নিক্তিতে মেপে চলেন। আশ্চর্য সব জীব বানিয়ে দেখেন, আবার একটি জীব যখন স্বাধীনতা চায়, তখন তার ইচ্ছেমতো চলার সিদ্ধান্তকেও সমীহ করেন। তিনি দেখতে বিকট-বীভৎস, তাঁকে দেখে কেউ ভয় পায় কেউ বিদ্রুপ করে, তিনি সেই মনখারাপ মেনে নিয়েই নিজের কাজে অবিচল থাকেন। আর বৈজ্ঞানিকের সহকারী যখন মেয়েটিকে পুনর্বার বিবাহেচ্ছু হিসেবে পায়, তখন সে বলে, মেয়েটির শরীরের অধিকার মেয়েটিরই, তা নিয়ে তার বলার কিছু নেই। ফলে এই লোকটি অধিকারবোধ ত্যাগ করার শিক্ষাকে নিজের মধ্যে বেড়ে উঠতে দিয়েছে, মেয়েটির স্বাধীনতাকে পূর্ণ সম্মান জানাচ্ছে— এক নতুন আদম, যে পিতৃতন্ত্রের শেকল খুলে ফেলেছে। ছবি জুড়ে— পরিচালকের মতে— মেয়েটি যতই নিজের স্বর নিজের ভাবনা খুঁজে পায়, তার সঙ্গী পুরুষেরা ততই আফশোসে চুল ছিঁড়তে থাকে, কারণ তারা আসলে চায় সেই ‘পবিত্র’ মেয়েটিকে, যার স্বতন্ত্র চিন্তাধারা নেই ও যে অনুক্ষণ নিজেকে ব্যবহৃত হতে দেয়। কিন্তু ছবিটা সম্পর্কে অনেকে উল্টো কথাও বলছেন: এক নারী যখন সর্বক্ষণ যৌনতা চায় আর সকলের সঙ্গে যৌনতায় সম্মত থাকে, বেশ্যাবৃত্তিকেও দিব্যি কাম্য মনে করে, তার হাত বেঁধে মুখ বেঁধে সঙ্গম করলেও তা নিয়ে খুব হইচই করে না এবং সমাজতন্ত্রের ধারণাকে স্বপক্ষে দাঁড় করায় (প্রেমিকের ‘তুই তো বেশ্যা’ মার্কা তীব্র গঞ্জনার উত্তরে বলে, ‘We are our own means of production’, এবং তখন সে আর তার সহকর্মী যাচ্ছে সোশ্যালিস্টদের এক মিটিং-এ), তখন এ নারীবাদী নয়, এক নারীবিদ্বেষী ছবি হয়েছে। পুরুষরা কি চিরকাল সর্বোচ্চ কল্পনায় চেয়ে আসেনি এক সুন্দরীকে, যার মধ্যে রয়েছে শুধু বেশরম ভোগেচ্ছা? কিন্তু এই ছবি কোন মতকে সমর্থন করে তার চেয়ে বড় কথা, এই ছবি এমন এক মানুষকে দেখায়, যে সমাজকে কণামাত্র পাত্তা না দিয়ে জীবনযাপন করতে ইচ্ছুক। সমাজ তার কাছ থেকে কী ব্যবহার প্রত্যাশা করে— তার ন্যূনতম পরোয়া যে করে না। সমাজ তাকে কী শাস্তি দেবে, সে-বিষয়ে এতটুকু ভয় যার নেই। যার লজ্জার বোধ নেই, কোনও কিছুকে যে পাপ মনে করে না। যে বই পড়েছে, কিন্তু নিজের জীবন নিয়ে নিরীক্ষা করার ক্ষেত্রে শিশুর মতো সাহসী। যে বাজনা শুনে নাচতে আরম্ভ করে, এবং সেই নাচ হয়ে ওঠে যেমন খুশি, এতোলবেতোল, তা অন্যের মতো হচ্ছে কি না, তাতে লালিত্য আছে কি না, তা নিয়ে কোনও দুর্ভাবনাতেই সে পড়ে না। এই শিশু, এই পাগল, এই চির-দলছুট, এই ছকের অস্তিত্বই না স্বীকার করা একটা লোক, একটা অনায়াস কালাপাহাড়, একটা অপরাধবোধের অস্তিত্বহীন নায়িকা যে সিনেমায় এল এবং তার জীবনে যেখানে আনন্দ দেখল তা লুটেপুটে নিল, তা আমাদের নিজের জীবনটার দিকে একটু টেরিয়ে তাকাতে বাধ্য করে।

    ছবিটা শুধু তার বিষয়ে আলাদা নয়, নায়িকা যে পোশাক পরে, তাও আশ্চর্য, সিনেমায় আকাশের রংও আলাদা, আবার এমন সব লেন্স ব্যবহার করে ছবি তোলা হয় যে মাঝে মাঝে ছবিটার ধারগুলো পুরোপুরি বেঁকে যায়, কখনও শুধু একটা ছোট্ট গোল্লা দিয়ে দেখা যায়, ছবিটা গোড়াটা সাদা-কালো, কিন্তু নায়িকার অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে ওঠে রঙিন, আবার ছবির আবহসঙ্গীতও কখনও একেবারে সুরহীন, গৎ-ভাঙা। ছবির অর্থ কী, আর কী-ই বা হওয়া উচিত ছিল, সে-আলোচনার চেয়ে বড় হল, এই নয়া রূপকথা আপাদমস্তক আনন্দময় এক অভিযান, যা আমরা টানটান হয়ে দেখি এবং এর সরসতা উপভোগ করি। এবং মুহুর্মুহু বিস্মিত হই। নায়িকা যেমন সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের মতো হয়ে উঠতে থাকে, তার পূর্বজীবনের স্বামীর কাছে ফিরে গিয়ে যখন দ্যাখে সেই স্বামী নিষ্ঠুর ও প্রভুত্বকামী (এতদূর যে ডাক্তারকে বলে মেয়েটির যৌনাঙ্গ কেটে বাদ দিয়ে দিতে, যাতে তার যৌন চাহিদা চিরলুপ্ত হয়ে যায়), তখন সেই লোকটির মাথায় ছাগলের মস্তিষ্ক ভরে তাকে অজ-মানুষে পরিণত করে, এই ছবির পরিচালকও তেমনই, ছবি কীরকম হয় বা হওয়া উচিত বা হলে লোকে ভাল বলে, সেই সমস্ত অনুশাসনকে বৃহৎ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে তিনি এক সর্ব-বেতোয়াক্কা সিনেমা করেন, একটা অনন্ত মজাময় ম্যাজিক গড়েন। এবং আমরা কি সিনেমার কাছে এই উন্নত ইন্দ্রজালের জন্যও যাই না?

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook