ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ছায়াবাজি : পর্ব ২০


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (December 9, 2023)
     

    আনন্দধাম কোথায়

    একটা ছবি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিখ্যাত হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। যদি কোনও পাঁড়-রক্ষণশীল ও দমনবাদী রাষ্ট্রে কেউ এমন ছবি বানায়, যা মুক্তচিন্তার, ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা বলে, প্রান্তিকের নিগ্রহের কথা বলে, তখন তাকে ফেস্টিভ্যালে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়। পাকিস্তানের ‘জয়ল্যান্ড’ (চিত্রনাট্য: সইম সাদিক, ম্যাগি ব্রিকস, পরিচালনা: সইম সাদিক, ২০২২) সেই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, কিন্তু ছবিটা নিজমূল্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। ছবির নায়ক হায়দার, একটা পরিবারের ছোটছেলে। গড় পাকিস্তানি পরিবারে ‘পুরুষ’ বলতে যা বোঝায়, হায়দার তা নয়। সে পাঁঠা কাটতে পারে না, ছুরি দিয়ে জন্তুটার গলা চিরতে তার হাত কাঁপে। সে খুব ভাল ডাল রাঁধতে পারে। যখন সে বাবার পিঠে তেল মালিশ করে দিচ্ছে, বাবা জিজ্ঞেস করেন, ‘তোদের বাচ্চা হচ্ছে না কেন?’ হায়দার জানায়, বউ এখন বাচ্চা চায় না। বাবা বলেন, ‘বউ চায় না, নাকি তোর দ্বারা কিছু হয় না?’ হায়দার মিনমিনে, কারও মুখের ওপর কথা বলতে পারে না, যে ধমক দেয় তার চোখের দিকে তাকাতে পারে না, সকলের কাছে একটু নিচু হয়েই থাকে। পরিবারে দোর্দণ্ডপ্রতাপ বুড়ো বাবা হুইলচেয়ারে বসে বসেই হুকুম জারি করেন। তাঁর বড়ছেলে রোজগার করে, সেই ছেলের বউ সংসার সামলায়। হায়দার চাকরি-বাকরি করে না, কিন্তু বউদিকে সারাক্ষণ ঘরের কাজে এবং বাচ্চা সামলাতে সাহায্য করে। হায়দারের বউ মুমতাজ একটা বিউটি পার্লারে কাজ করে। হায়দার পুরুষ হয়েও বউয়ের পয়সায় খায় এবং বাড়িতে রান্নাবান্না করে বলে একটা আফসোস ও অবজ্ঞা বাবা ও বড়দার তরফে আছে, কিন্তু মুমতাজ তা নিয়ে ভাবিত নয়। সে চাকরি করে আনন্দ পায়, আর কথাবার্তা ব্যবহারে বোঝা যায়, হায়দারের সে বন্ধু।  

    হায়দার চাকরি পায় একটা নাচের দলের ব্যাকগ্রাউন্ড নাচিয়ে হিসেবে। প্রথমেই সে এটা খারিজ করে দেয়, কিন্তু বন্ধু বোঝায়, ‘শোন, সংসার টাকাটা দেখবে, কাজটা নয়।’ কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, প্রধান নাচিয়ে বিবা-কে দেখে হায়দার মুগ্ধ হয়ে যায়। বিবা যদিও মেয়ে নয়, রূপান্তরকামী একজন ছেলে। হায়দার তার প্রতি প্রবল আকর্ষণ বোধ করে, এবং ক্রমে ওরা ঘনিষ্ঠ হয়। বাড়িতে অধিকাংশ দিনই হায়দার ও তার বউয়ের যৌনতা হয় না, কারণ বড়বৌদি তার চার বাচ্চার বড়টিকে এনে ওদের বিছানায় চালান করে দেয় (বেবিটাকে বড্ড লাথি মারছে), তখন ওদের আকাঙ্ক্ষা চেপে শুয়ে থাকতে হয়। কিন্তু মাঝরাত্রে উঠে হায়দার বাইক নিয়ে বিবার কাছে চলে যায় ও চুমু খায়। হায়দার চাকরি পাওয়ামাত্র (বাড়িতে সে বলে, থিয়েটার ম্যানেজারের চাকরি পেয়েছে) বুড়োবাবা নিদান দেন, তার বউকে চাকরি ছাড়তে হবে। বড়ভাইও বলে, পয়সা যদি আসে, আর মুমতাজের চাকরি করার কী দরকার? মুমতাজ প্রতিবাদ করে, ‘আমি চাকরি করি আমার ভাল লাগে বলে।’ বাবা বলেন, ‘সংসারে একটা ছোট-হায়দার আনা হচ্ছে এখন তোমার প্রধান কাজ।’ তাকে চাকরি ছেড়ে বসে যেতে হয়।

    ‘জয়ল্যান্ড’ হল একটা মেলার মাঠ মতো জায়গা, যেখানে একদিন মুমতাজ ও তার বড়-জা গিয়ে নাগরদোলায় চাপে ও সেই বাঁধনছেঁড়া গতিতে অনাবিল আনন্দ পায়। গোটা ছবিটাই বহু চরিত্রের জয়ল্যান্ড খোঁজার ছবি। বড়বউ সংসার সামলে জেরবার, তাকে কখনও নিষ্ঠুরও মনে হয় (সে জোর দিয়ে বলেছিল, হায়দার চাকরি করলে সে একা কী করে সংসার সামলাবে, মানে মুমতাজ চাকরি ছাড়ুক), কিন্তু অবসরে সে যখন ছাদে বা গলিতে সিগারেট খায়, তার হাঁফ ছাড়ার প্রয়োজনটাও নজরে পড়ে। তাকে আলট্রাসাউন্ডের লোক বলেছিল এবার ছেলে হবে কিন্তু এই নিয়ে চতুর্থ মেয়ে হয়, বোঝা যায় সংসারের প্রত্যাশা পূরণ না করার দীর্ঘশ্বাস তাকে বইতে হচ্ছে। এও জানা যায়, সে ছিল ইন্টিরিয়র ডেকরেটর। কিন্তু বিয়ের পর স্বামী বলেছে, ‘কী দরকার অন্যের বাড়ি সাজিয়ে, তার চেয়ে নিজের বাড়ি সাজাও।’ আবার বুড়োবাবার সঙ্গে কথা বলতে প্রায়ই আসেন পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধা, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি নিঃসঙ্গ, একরাতে তিনি বাড়ি ফিরতে পারেন না, কারণ এ বাড়ির সকলেই সেদিন খুব দেরি করে ফেরে। পরের দিন তাঁর ছেলে এ বাড়ি এসে অশান্তি করে, মা যদি অন্যের বাড়িতে রাত কাটায় তবে লোকে কী বলবে। মা মৃদুস্বরেই জিজ্ঞেস করেন, ‘কাল রাতে খোঁজ করিসনি কেন? নিতে আসিসনি কেন? তোর মা সারারাত বাড়ি ফিরছে না, সেটা খেয়ালই করিসনি কেন? আসলে, তুই জানতিসই না, মা বাড়িতে নেই।’ নিজেকে তিন অপ্রয়োজনীয় ও ‘ভূত’ বলেও উল্লেখ করেন। যখন তিনি বুড়োবাবাকে বলেন, ‘আমি এ বাড়িতেই থেকে যেতে পারি, লোকে কী বলবে কেয়ার করি না’, বাবা বলেন, ‘আপনাকে হায়দার আপনার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।’ তাঁরও যে এই মহিলার সান্নিধ্য অপছন্দ তা নয়, কিন্তু তিনি সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করার সাহস ধরেন না। পিতৃতন্ত্র শুধু মেয়েদের দমবন্ধ করে মারে তা-ই নয়, যে লোকটা পিতৃতন্ত্রের বড় প্রয়োগকারী, তাকেও ইচ্ছা-দমনের খাঁচায় ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। জয়ল্যান্ড কেউ পায় না, সবাই নিজেকে ও অন্যকে চোখ মটকে বাঁচে।

    বরং রূপান্তরকামী বিবা, যে প্রায় সর্বত্র বাঁকাচোখ আর টিটকিরির শিকার, সে উদ্ধত ঘাড় বেঁকিয়ে, পা দাপিয়ে নিজের রক্ষণ তৈরি করে। যখন তার দলের লোকেরা ব্যঙ্গ করে হায়দারকে বলছিল, ‘কী রে, ম্যাডামের পায়ের ফাঁকে কী আছে’, বিবা আচমকা তা শুনে সরে তো যায়ই না, উল্টে এই বিদ্রুপের মূল পাণ্ডাকে দেওয়ালে ঠেসে ধরে, তাকে বলে ‘চল প্যান্ট খুলে দেখি কার পায়ের ফাঁকে কত বড় কী আছে’, এবং তার মুখে থুতু দেয়। মেট্রোয় যখন তার পাশে বসা বৃদ্ধা মহিলা বলে, ‘তুমি এখানে বসতে পারবে না, ছেলেদের সিটে যাও’, সে জোর করে বসে থাকে, সকলে তার দিকে তাকিয়ে আছে জেনেও। তার সাহস আর সৌন্দর্যের মিশ্রণ দেখেই হায়দার প্রেমে পড়ে। সেই হায়দারকেও ঘর থেকে (এবং চাকরি থেকে) বের করে দেয় বিবা, যখন দ্যাখে হায়দার যৌনতার সময়ে বিবাকে মেয়ে হিসেবে দেখছে না, ছেলে হিসেবেই চাইছে। হায়দার আগে যখন বলেছিল, ‘অপারেশন করাবার কী দরকার, তুমি এরকম থাকলে ক্ষতি কী’, বিবা বলেছিল, ‘আমি অন্য কারও সুখের জন্য নয়, নিজের আনন্দের জন্যই মেয়ে হতে চাই।’  

    চেনা লোকের দিকে তাকায় না, কখনও তার আর্তনাদ বুঝতে পেরেও কান ঢাকা দিয়ে থাকে। গোটা সমাজটাই ধাষ্টামি আর প্রথাবদ্ধতার ওপর ভর করে আছে।মুমতাজের দেহ কবরস্থ করার দিন বড়দা গজরাতে থাকে এই থিমে: মরেছে বেশ হয়েছে, কিন্তু বাচ্চাটাকে নিয়ে মরে গেল, আরেকটু দেরি করতে পারল না?

    পাকিস্তানে দাঁড়িয়ে এমন ছবি করা হচ্ছে যেখানে ছেলে ছেলেকে চুমু খাচ্ছে, রূপান্তরকামীর অধিকারকে সমর্থন জানানো হচ্ছে, এমনকী বাড়ির বউয়ের যৌনতেষ্টার কথাও বলা হচ্ছে— শুধু এই সাহসের জন্য নয়, ছবিটা বিশিষ্ট কারণ এতে আছে দরদ। হুইলচেয়ারে কী একটা ঝামেলা হওয়ার পরে বুড়োবাবা যখন কিছুতেই বাথরুম যেতে পারেন না এবং ওখানেই পেচ্ছাপ করে ফেলেন, তাঁর অসহায় মুখ, এবং প্রবীণা প্রতিবেশী যখন ‘তাতে কী হয়েছে’ মর্মে তাঁর হাতে হাত রাখেন তখন বুড়োর আশ্রয়-তৃষ্ণা ফুটিয়ে তোলায় সেই দরদ বোঝা যায়। হায়দার বিবার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বলে তাকে যখন সহকর্মীরা ব়্যাগিং করে, জোর করে মেয়ের পরচুলা পরিয়ে দেয় ও মোবাইলে ছবি তোলে, তাকে অপমানিত লাগে কিন্তু সে প্রতিবাদ করে উঠতে পারে না। বিবা এসে দাঁড়াবার পর হায়দারের মুখটা একটা আকুল বাচ্চার মতো হয়ে যায়, যে বহু চেষ্টা করেও কিছুতেই পরীক্ষা পাশ করতে পারছে না। মুমতাজ যখন বাথরুমে ঢুকেছে আর আন্দাজ করছে সে বোধহয় মা হতে চলেছে, দরজায় দুমদুম ধাক্কা মারতে থাকে তার জায়ের বাচ্চারা, তখন তাকে চির-প্রাইভেসি-হীন একটা বে-ঘর লোক মনে হয়। আবার সে যখন বাথরুম থেকে বেরিয়ে প্রচণ্ড বকুনি দেয় বাচ্চাগুলোকে, তখন তাদের মনে হয় অসহায়। ছবিটার দুটো ব্যাপার আশ্চর্য করে। সব চরিত্রকেই ঘিরে ঘিরে চললেও, আমরা গোড়া থেকে ভাবি বিবা ও হায়দারের সম্পর্কই ছবির মূল ঘটনা-তরঙ্গ। কিন্তু শেষদিকে আচমকা মুমতাজ নায়িকা হয়ে ওঠে। সে গর্ভিণী, নিশ্চিতভাবে জানামাত্র তার মুখ ভয়ে আকুল হয়ে ওঠে। জা-কে সে বলে, তার পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। এক সময় পালিয়ে সে যায়ও, কিন্তু স্টেশন অবধি গিয়ে ফিরে আসে। সেই রাত্রে সে কাঁদার আগেই অবশ্য হায়দার তার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদে, কিছুতেই বলতে পারে না, বিবা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে; সবচেয়ে বড় কথা, বলতে পারে না, তার অনেক বেশি আনন্দ সমকামে। সেও সমাজ-নির্দিষ্ট বিষমকামের খোপে বন্দি। মুমতাজদের গলিতে গভীর রাতে একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে কাকে যেন ফোন করে ও স্বমেহন করে। মুমতাজ তাকে জানলায় দাঁড়িয়ে একটা দূরবিন দিয়ে প্রায়ই দ্যাখে। একদিন দাঁড়িয়ে সে পুরুষটির হস্তমৈথুনের তালে তালে নড়তে থাকে, যেন এভাবে তার সঙ্গম-খিদে মিটিয়ে নিচ্ছে। তাকে দেখতে পেয়ে যায় তার ভাসুর। মুমতাজ দূরবিন ফেলে দিয়ে নতমুখে দাঁড়িয়ে থাকে। সে নিরুদ্ধকামের খোপেও ছটফটায়, তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে চাকরির মুক্তির উঠোনে বেরনোও বন্ধ করে দিয়েছে, আর এবার মা হয়ে গেলে তার আর স্বাধীনতার কোনও প্রশ্নই থাকবে না। সে তাই পালাবার জন্য আত্মহত্যা করে। ছবির দ্বিতীয় আশ্চর্য হল এই আত্মহত্যার দৃশ্যটা।

    মুমতাজ বাথরুমে ঢুকে, কমোডে বসে, একটা অ্যাসিড বা ফিনাইল গোছের কিছুর শিশি বের করে। সেটা থেকে কিছুটা খায়। তখন হায়দার বাথরুমের দরজা খটখটায়, বলে, ‘দেরি হবে?’ মুমতাজ দরজা খুলে দেয়। হায়দার আসে, প্রথমে জিজ্ঞেস করে, ‘ঠিক আছ?’ মুমতাজ বলে, ‘হ্যাঁ’। হায়দার মুমতাজের দিকে পিছন ফিরে ব্রাশ করে, মুমতাজের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে। মুমতাজ উত্তর দেয়। ক্যামেরা পিছিয়ে এসে দেখায়, গোটা সময়টা মুমতাজের হাতে শিশিটা ধরা। তারপর হায়দার মুমতাজের দিকে ফেরে, বেশ কিছুক্ষণ তাকে কিছুটা জড়িয়ে থাকে, মাথায় মুখটা রেখে। দর্শক প্রায় হিচককীয় সাসপেন্সে ককিয়ে ওঠে, কখন হায়দার মুমতাজের হাতে-ধরা শিশিটা দেখতে পাবে। কারণ সেটা না দেখতে পাওয়াই তখন শক্ত। কিন্তু হায়দার খেয়াল করে না। সে বেরিয়ে যায়। দৃশ্যটায় বোঝা যায়, মানুষের প্রতি মানুষের উদাসীনতা একটু কম হলে হয়তো বহু লোকের হাত থেকেই বিষের পাত্র সরিয়ে নেওয়া যেত। হয়তো মুমতাজ নিজেও চাইছিল তার স্বামী শিশিটা দেখতে পাক। কিন্তু মুশকিল হল মানুষ পরে ভুল বুঝতে পেরে দৃশ্যের দিকে বারবার ফিরে তাকালেও, তখন নিজের মনে হাবিজাবি ভেবে চলে। চেনা লোকের দিকে তাকায় না, কখনও তার আর্তনাদ বুঝতে পেরেও কান ঢাকা দিয়ে থাকে। গোটা সমাজটাই ধাষ্টামি আর প্রথাবদ্ধতার ওপর ভর করে আছে।

    মুমতাজের দেহ কবরস্থ করার দিন বড়দা গজরাতে থাকে এই থিমে: মরেছে বেশ হয়েছে, কিন্তু বাচ্চাটাকে নিয়ে মরে গেল, আরেকটু দেরি করতে পারল না? মানে, মানুষটা চলে গেছে তাতে তার কোনও অসুবিধে নেই (সে তো ছিল ঘরের চেয়ে বাইরে যেতে উৎসাহী স্ত্রীলোক, যৌন লিপ্সাময় স্ত্রীলোক, ফলে তার না-থাকাই সুবিধেজনক), বংশধর চলে গেল বলে অসুবিধে। এই প্রথমবার হায়দার রেগে উঠে প্রত্যুত্তর দেয়, দাদাকে জিনিস ছু়ড়ে মারে, বলে, ‘ওর নামে কিছু বলবে না!’ আর বড়দার বউও বড়দার ওপর রেগে ওঠে, বলে, ‘আমরা সবাই ওকে খুন করেছি।’ সত্যিই, সংসারের চাহিদার চাকায় ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা পিষে দেওয়ার যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, তাকেই আমরা সাধারণত ঐতিহ্য বলে থাকি। শেষদৃশ্যে হায়দার সমুদ্রে যায়, যা সে আগে কখনও দেখেনি (বিবা আর মুমতাজের কাছে সমুদ্রের কথা শুনেছে শুধু)। হয়তো বেদনার ধাক্কা, একজনের মরে গিয়ে পালিয়ে যাওয়ার উদাহরণ, হায়দারকে গণ্ডির বাইরে গিয়ে বিশাল সম্ভাবনার একটা আন্দাজ পেতে প্রণোদিত করে। তা তাকে শান্তি দেবে কি না, বলা যায় না। কিন্তু বাবার, সমাজের, পিতৃতন্ত্রের, মানুষকে-খোপে-বন্দি-করা চোখরাঙানির আওতা থেকে বেরিয়ে জয়ল্যান্ড-এর দিকে রওনা হওয়ার কিছুটা রসদ জোগাবে নিশ্চিত।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook