দ্বিতীয় গ্রন্থের উৎসর্গপত্র
একটি পংক্তি তার ভাইরাল মুখে, ফেসবুকে
অন্যগুলি হন্যে হয়ে সাফল্যের গন্ধ শুঁকে শুঁকে
অকালে হেদিয়ে গেছে, শুয়ে আছে অন্যমনা জলে
এখানে সমগ্র এই— বাকি পদ্য মূর্ছার অতলে।
মনের ফুল- ২
এমনিতেও ক্ষতি নেই কোনও। যদি স্বপ্নে পরপুরুষ গোনো আর বরপুরুষ মিষ্টি করে পাশটি ফিরে ঘুমে অচেতন। তোমার করুণ মন হালকা নীল হালকা সাদা ভিখারি পাখির মতো গাছ থেকে গাছে ঘুরে ঘুরে— নামতা পড়ে, গান গায়, ধুকপুক আটকে থাকা বুকে। তোমার নরম পাকা চোখে মুখে লেগে যায় জঙ্গলের আলো। যত ইচ্ছে সারাদিন রাঁধোবাড়ো, খেতে দাও, রান্নাঘরে করো হিন্দি গান; অলোকসামান্য তেজে ফিরে আসিতেছে প্রেম— আকাঙ্ক্ষায় রোমাঞ্চিত হয় না কি মহাশূন্যস্থান?
মরে যাওয়া মুখের কবিতা
ঠিক শিল্প হয়ে উঠবে যে কাহিনি তার
অতীতে ও বর্তমানে প্রসঙ্গ তোমার—
অথবা তোমার সঙ্গ পাপে ও বাঁশিতে
প্রেম কিংবা পাকস্থলি চেপে ধরা শীতে,
জানালার বরফের নোংরা সাদা আলো
তৃষ্ণা ও ত্রাণ নিয়ে আমাকে জাপটাল।
পড়ে যেতে যেতে তার গভীর কৌতুকে
কাঁচা খিস্তি এল মরে যেতে চাওয়া মুখে।
তোমায় আমি পাইতে পারি, বাজি?
হাসিটিও ম্রিয়মাণ, শীতে যেন চাদর জড়ানো
ময়লা, মলিন গন্ধ, খুঁজে দেখলে দু’একখানা ফুটো
পাওয়া যাবে ঠিকই, আর পুষ্টির অভাবে তার গানও
রহি রহি ভেসে গেল, যেন বা বাতাসে খড়কুটো।
স্বর্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, ন্যুব্জমতো চায়ের দোকানে
ডিমভাজা খাব বলে দুজনেই ওঁত পেতে আছি,
দাড়িভাঙা হাসিমুখে ফুটো চাদরের মত্তগানে,
গর্ত জলে ভরে উঠল, ডিম ফুটে বেরুল ব্যাঙাচি।
ভৌ?
কার কুচকাওয়াজ, কার বিবাহের সরঞ্জাম এল?
কল্পনায় প্রশ্নটির আঁচলে জড়িয়ে দিই মাটি,
সকল আকাঙ্ক্ষাফুল যার দৃষ্টিপাতে এলোমেলো
তাকে খুলে দেখব বলে প্রত্যাবর্তনের পথে হাঁটি।
যে সমস্ত পাড়া দিয়ে ফিরে যাচ্ছি দরজা বন্ধ দেখে—
সেখানে জৌলুসে লেখা মার্কসবাদ সর্বশক্তিমান,
শশ্রুগুম্ফসংবলিত ছবি ঝুলছে ঘরের পেরেকে
পার্শ্ববর্তী মেস থেকে দৌড়ে এল কিশোরের গান।
ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল পৌরুষের নর্দমার পাশে,
তিরতিরে স্রোত তাহে নিড়বিড়ে আঁকাবাঁকা চাঁদ
হিংসেকাটা ছুরি দিয়ে ফালাফালা তরল আকাশে
গরলসমৃদ্ধ গ্লাসে যৌবনের প্রথম প্রমাদ।
সংসারের জড়িবুটি সাজিয়ে বসেছি সন্ধ্যেবেলা
হুঁকোমুখো মাস্টারের পরিহাসে শতচ্ছিন্ন মন,
ভাঙা মাদুরের কোণে পাঠ্য বিষয়ক অবহেলা
ব্যর্থ বাঁদরের দোষে— পণ্ডিতের অরণ্যে রোদন।
এখনও সে কেঁদে যাচ্ছে, এখনও সে হেঁটে যাচ্ছে দূরে
গাছতলার রাজকন্যা, অসংখ্য রাক্ষসের ভিড়ে একা
প্রণয়ের সংবিধান লিখে দিচ্ছে প্রাকৃত দুপুরে
রাক্ষসীবেলায় তার প্রতিটি জন্মের সঙ্গে দেখা।
আরেকবার দেখব বলে প্রত্যাবর্তনের কথা ভাবি
আসঙ্গের কুলে কুলে প্রাসঙ্গিক আদরের পুঁজি
বাতিঘর হয়ে থাকবে, পথ পাবে বিভ্রান্ত নাবিক—
আবার হবে তো দেখা এ দেখাই শেষ দেখা বুঝি?
অপ্রাসঙ্গিক কবিতা
অপূর্ব হয়েছে সূর্য, কিন্তু সেটা প্রাসঙ্গিক নয়—
বিকেলের রাজকীয় আবির্ভাবে দাম বাড়বে ওর,
পীত ওষ্ঠ, স্ফীত কোষ্ঠ, ভিক্ষুকেরও এসেছে প্রণয়
রাস্তাঘাটে নোংরা ঘেঁটে মুঠোভর্তি বেলা দ্বিপ্রহর।
প্রেম আর সন্দেহের মধ্যিখানে একপ্রস্থ আলো
প্রণয়প্রত্যাশী নেত্রে ফুটে ওঠে দ্বিধান্বিত স্নেহে
এখানে বিরতি হলে করতালি দিও বাচ্চালোগ
দ্বিতীয়ার্ধে হাত পড়বে বিধর্মীর ব্যর্থ মৃতদেহে।
পন্টিয়াস নই তাই অবান্তর হস্ত প্রক্ষালন,
দস্তানায় ভিজে লাল অন্য কোনও প্রচলিত দাগে,
প্রারম্ভিক ব্যাভিচারে প্রয়োজন দ্রুত নিষ্ক্রমণ
এখন অভ্যস্ত হাতে নিয়মিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা জাগে।
উৎপটাং
সেই একটা আলো বেয়ে উঠে যাচ্ছে মানুষের পোকা
ল্যাঙচাতে ল্যাঙচাতে যাচ্ছে কাছাখোলা সুন্দরী মানুষ,
হলুদ স্বপ্নের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে মেমেদের খোকা
উঠোনের মধ্যিখানে সর্দি টানছে ক্ষুদ্র অলম্বুষ।
এই একটা কালো মেয়ে উঠে যাচ্ছে তাস-টাস ফেলে—
খেলা ভেঙে যাচ্ছে বলে অপরাহ্ন কেঁদে পড়ছে পায়,
অফিস বাড়িতে ফিরল, বারান্দায় ভিজে গামছা মেলে—
শোপিস-টি অন্ধরাগে বন্ধ ঘরে সোফা কামড়ায়।
বাস রে
বার বার ডুবে গেছ? পেটে ব্যথা! চরণে শামুক!
পোকা চেটে গেছে বলে লাল হল জড়ুলের দাগ,
কামনা বন্ধক রেখে ফিরিয়েছ অপ্রসন্ন মুখ
তথাপি এ যজ্ঞস্থলে ফুটে উঠছে ভুতপূর্বরাগ!
রাগও রক্তিম হয় ঝিম ঝিম কাঁচালতাগুলি
কেলোকৃতি সৃষ্টি করে অন্তরালে দেহবল্লরীতে
প্রীতি ও প্রণয়স্মৃতি নিয়ে যাচ্ছে বর্ণাঢ্য গোধুলি
কারুকার্যময় সভা কেঁপে উঠছে অনিবার্য শীতে।
কাকপক্ষী জানে
প্রেম ও অন্যান্য বিদ্যা, গুপ্ত যারা, রসাতলনাশী,
সব হেফাজতে নিয়ে, বসেছিলে গুণবতী বামা,
হেলাভরে মুখে নিলে, আগুনের তাতে পোড়া বাঁশি
সংক্ষিপ্ত চটুল সুরে পুড়ে গেল বৈধব্য আমার।
দুর্ঘটনা, পোড়া গন্ধ, ঘোরা পথ, সুপ্ত চোরাবালি
অঘোর মৃত্যুর মধ্যে প্রেম থেকে ঝরে পড়া আলো
তার সাদা রং দেখে একটিবার তাকিয়েছি খালি
অম্নি একা নোংরা কাক পাখনা তুলে পেছন দেখাল।