১
পাড়ার নাম দাসপাড়া। নামের বানানভেদ নিয়ে বিতর্ক আছে। কেউ বলে এটা আসলে বদ্যিপাড়া, বানান হওয়া উচিত দাশপাড়া। জীবনানন্দ দাশের দাশ। দাশগুপ্ত-র দাশ। কিন্তু আজকাল ছেলেমেয়েরা সেলফোনে চোখ রেখে, হোঁচট না খেয়ে, পাড়া দিয়ে দিব্যি হেঁটে চলে যায়। কেউ এসব নিয়ে ভাবিত নয়। কী যায় আসে? ইংরাজিতেই তো সব জায়গাতে লিখতে হয়, Daspara। তাই বাংলাতে স্লেভ না বদ্যি তাই নিয়ে আলোচনা বাড়িয়ে লাভ নেই।
দাসপাড়াতে গোলাপি রঙের কুয়াশা ভেসে বেড়ায়। অলিগলি দিয়ে মা হারা বাছুরের মতো কেঁদে বেড়ায়। বছর কুড়ি আগে এখানে প্রচুর পুকুর ছিল। সেই পুকুরে ভেসে থাকত কচুরিপানা। তাতে বেগুনি রঙের ফুল হত। সেগুলো বুজিয়ে ফেলে তৈরি হয়েছে মানুষের বাসস্থান, কুৎসিত দেখতে ফ্ল্যাটবাড়ি। তারপর থেকে বিকেল থাকতেই কুয়াশা। দুপুর তিনটের সময় কুয়াশা। গরমকালেও কুয়াশা! আর সেই কুয়াশার ভেতর লুকিয়ে এক অদ্ভুত কান্না। একটা গোলাপি রঙের বিষণ্ণতা যেন জাঁকিয়ে বসেছে দাসপাড়ায়। পাড়ার বুড়োবুড়ি-রা এই কান্না শুনতে পায়। কচিরা পরোয়া করে না। বলে “শালা, বুড়ো ভাম! ভীমরতি হয়েছে। ভুলভাল বকছে!”। পাড়ার রকে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া লেগেই থাকে। পাড়ার রক বলতে কয়েকটা বাঁশের উপর একটা চ্যালা কাঠ। ঠেসেঠুসে চারজন বসতে পারে। এই রকের বয়স কুড়ি বছর। মেয়েরা সেই সময় এই রক এড়িয়ে চলত, এখনো তাই করে। তখন পেরেক বেরিয়ে থাকত। সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েদের দিকে তাকালে, বসে থাকা স্থানীয় যুবকদের কখনো কখনো, থাই কেটে রক্ত ঝরত। যন্ত্রণা হত না। সেই রক্ত মাটিতে চুয়ে চুয়ে পড়ত। পাড়ার নেড়িগুলো চেটে চেটে সাফ করে দিত। এখন সেই পেরেকগুলো মিলিয়ে গিয়েছে। সেই যুবকরাও এখন মাঝবয়সী। অনেকেরই প্রথাগত সংসার। তাদের স্ত্রী-রা তাদের থাই-এ সেই কাটা দাগ দেখে ভয় পেয়ে যায়। জিজ্ঞেস করলে প্রত্যেকেই তারা নিজের মতো করে মিথ্যা কথা বলে। মানুষ কেন যে অকারণে কিছু কথা লুকোতে চায় বোঝা যায় না।
এই রকে, আজকাল সন্ধেবেলা আড্ডা মারতে বসে নতুন একদল যুবক। এরা বিকেলবেলা গলিতে আন্ডারহ্যান্ড ক্রিকেট খেলে। থান ইট দিয়ে উইকেট। কুড়ি বছর আগে মাঠে খেলা হত। সেই মাঠ এখন বিক্রি হয়ে ফ্ল্যাটবাড়ি হয়ে গেছে। সেখানে প্রতিটি তলায় দুটি করে রান্নাঘর। কখনো দোতলার পেঁয়াজ ভাজার গন্ধে তিনতলা ঘুমিয়ে পড়ছে আবার কখনো চারতলার মাছ ভাজার গন্ধ ভেসে এসে নিচে বসে বসে ঝিমোতে থাকা সিকিউরিটি গার্ডের ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছে। এখন কারও মনে নেই সেখানে মাঠ ছিল। কিছু বুড়োবুড়িদের মাঝেমাঝে মনে পড়ে। তখন কুয়াশা আরও ঘন হয়। নতুনরা বুঝতে পারে না। যাইহোক, এখন গলিতেই খেলা হয়। গালিগালাজে মুখরিত হয় দাসপাড়া। গলির বাড়িগুলোর কাচের জানলা মাঝেমাঝেই ভাঙে। বল ঢুকে যায় বেডরুমে। সেই বল ফেরত দেওয়ার নিয়ম নেই। তা নিয়ে যুবক-রা প্রতিবাদ করে না। চাঁদা তুলে নতুন বল কিনে আনে। আবার খেলা শুরু হয়। এই খেলায় প্রতিদিন আম্পায়ারিং করতে আসে খোঁড়া ক্যাপ্টেন। ক্যাপ্টেন সরকার। খোঁচা খোঁচা পাকা দাড়ি। গাল দুটো তুবড়ানো। বছরের প্রতিদিনই হাফ শার্ট আর লুঙ্গি। একসময় আর্মিতে ছিল। সবাই জানে কারগিল যুদ্ধের সময় দেশের হয়ে বর্ডারে ফাইট করতে গেছিল। সেই যুদ্ধে তার এক পা কাটা পড়ে। এখন ক্রাচ নিয়ে হাঁটে।
২
চারটে গলি নিয়ে তৈরি দাসপাড়া। এক সময় তৃতীয় গলির শেষ বাড়িটি ছিল ক্যাপ্টেনের। এখন আর সেটাকে শেষ বলা চলে না। তার পেছনের ডোবা, বাঁশবন সব কেটে সাফ করতে করতে এখন আরও এলাকা দাসপাড়ার গ্রাসে। তৈরি হয়েছে গুচ্ছের ঘুপচি ঘুপচি বাড়ি। সেগুলোর তিন ফুট বাই তিন ফুট বারান্দা থেকে ঝুলে থাকে দুঃখী জামা, প্যান্ট, নাইটি, সায়া। পাড়ার অনেক বাড়ি সময়ের সঙ্গে উচ্চতায় বেড়েছে। বাড়েনি ক্যাপ্টনের বাড়ি। অনেকেই বলে ক্যাপ্টেন পেনশান পায় না। মেরামত করালেও তো পারে। ক্যাপ্টেন এসব নিয়ে পরোয়া করে না। বিড়ি মুখে, উঁচু মেজাজে প্রতি বিকেলে তাকে দেখা যায়। দেখা যায় গোলাপি কুয়াশা সরাতে সরাতে ক্রাচে ভর দিয়ে লুঙ্গি পরা ক্যাপ্টেন চলেছে ওই রকের দিকে। খেলাতে ক্যাপ্টেন মাঝেমাঝেই ভুলভাল এল বি ডব্লিউ দেয়। ছোকরাগুলো তেড়ে আসে – “নিজের শালা ঠ্যাং নেই তাই আমাদের পায়ের দিকে নজর, তাই না?”। ক্যাপ্টেন সরকার পরোয়া করে না। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। নিঃশব্দে বিড়ি ধরায়। বিড়বিড় করে বলে – “আম্পায়ার ডিসিশান, ফাইনাল ডিসিশান”।
টিউশান ক্লাস, হোমওয়ার্ক এসব নিয়ে যারা চিন্তিত, সন্ধে নামলে সেই ছেলেগুলো ছুটে বাড়ি পালায়। পড়ে থাকে ক্যাপ্টেন সরকার আর কয়েকজন। খেলার উত্তেজনা নিভিয়ে ওরাই ক্যাপ্টেনকে রকে বসতে সাহায্য করে। ক্যাপ্টেন-কে ঘিরে আসর বসে।
“ও ক্যাপ্টেন, একটা যুদ্ধের গল্প বল না!”
মানুষ জীবনে যত বছর-ই এই পৃথিবীতে কাটাক, প্রিয় স্মৃতি কিন্তু অল্প কিছু সময় ঘিরেই তৈরি হয়। কেউ ফিরে যেতে চায় হোস্টেল জীবনে, কেউ স্কুলের সময়, কেউ মা হওয়ার আগের তিন মাসে, কেউ বা রাঁচিতে পোস্টিং-এর দিনগুলিতে। সবার একটা ফিরে যাওয়ার জায়গা রয়েছে। ক্যাপ্টেন সরকারের ছিল ১৯৯৯, কারগিল যুদ্ধে। সবাই সেটা জানত আর প্রায় তার কাছে সেই গল্প শুনতে চাইত। ক্যাপ্টেনও নিরাশ করত না। কিছু না কিছু একটা গল্প তাদের শোনাত।
“তোদের বুঝতে হবে, সেই সময় কিন্তু দু দিন পেটে কোনো খাবার নেই। নেই মানে কিন্তু একদম কিছু নেই। এমন নয় যে মোণ্ডলের দোকানের দুটো লেড়ে বিস্কুট পেটে পড়েছে। তেষ্টা মেটানোর এক ফোঁটা জল নেই। লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা তো সামনে থেকে লড়ছি … এবার শত্রুর ক্যাম্প দেখতে পাচ্ছি … একবার অর্ডার এসে গেলে তখন খিদে ফিদে কিস্সু না রে … তখন তুই ইন্ডিয়া। বন্দে মাতারম! … ঢুকে গেলাম এনেমি ক্যাম্পে। বিশাল ফায়ারিং। কানের পাশ দিয়ে বুলেট বেরিয়ে যাচ্ছে … হিন্দি সিনেমার স্টান্ট নয় রে বোকা, একদম রিয়াল লাইফ … ওখানেই তো ব্লাস্টে আমার রাইট লেগটা …”
পিঙ্কু বলে ওঠে – “এই ক্যাপ্টেনকে একটা সিগারেট দে!”
ক্যাপ্টেন একটা সিগারেট পায়। কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে নাচায় ওটাকে। তারপর আয়েস করে ধরায়। একটা লম্বা টান দেয়। ধোঁয়ার সঙ্গে কিছু গোলাপি কুয়াশা ফুসফুসে ঢুকে যায়। একটু যেন দুঃখ হয়। তারপর আবার ফিরে আসে গল্পে।
“জম্মু কাশ্মীর একটা অদ্ভুত জায়গা রে! উফ কতদিন পাহাড় দেখিনি। এই দাসপাড়াতেই লেংড়ে লেংড়ে কেটে যাবে মনে হয় বাকি জীবনটা …”
ভাইয়া জিজ্ঞেস করে – “আর মেডেল টা কবে দিল?”
“হুঁ হুঁ, অপারেশান ভিজায়! আমাকে তো ওরা দিল্লিতে আনে তারপর। দেশের টপ টপ ডাক্তাররা দেখল। একটা ছয় ঘন্টার অপারেশান হল। ব্রিগেডিয়ার দেখতে এসেছিল। বলল, সরকার তুমি যা করেছ … থাক … আর কতবার এক গল্প করব?”
পিঙ্কু – “প্রাইম মিনিস্টারও তো এসেছিল, তাই না?”
ক্যাপ্টেন একটা লাজুক হাসি হাসে। সিগারেটে টান দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। “প্রেসিডেন্ট, মেডেলটা তো উনিই দিয়েছিলেন!”
পিঙ্কু – “গুরু একদিন তোমার বাড়ি আসি, মেডেলটা দেখিও!”
ক্যাপ্টেন হেসে বলে – “তোরা কী ভাবছিস? ওই সোনার জিনিস কেউ বাড়িতে রাখে, লকারে রাখা আছে।”
একটা হাততালি পড়ে দাসপাড়ার রকে।
ক্যাপ্টেন – “ধুস, আমি এসব মেডেল-ফেডেল নিয়ে ভাবি না। শুধু মনে হয় মা দেখে যেতে পারল না কিছুই!”
তাপস – “তোমার দাদুও আর্মিতে ছিল, তাই না?”
ক্যাপ্টেন মাথা নাড়ে, “বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে দাদু-কে হারাই।”
ভাইয়া – “ভাই, আমাদের পাড়াতে একটাই রিয়েল সোলজার আছে কিন্তু! ক্যাপ্টেন সরকার জিন্দাবাদ! ক্যাপ্টেন সরকার জিন্দাবাদ!”
৩
এইসব নিয়ে ভালোই কেটে যাচ্ছিল দিন সবার। ঝামেলা পাকাল আনোয়ার আলি এসে। দাসপাড়ায় বেশ কিছু ঘর ক্রিশ্চান আছে কিন্তু মুসলমান আগে ছিল না। আনোয়ার আলি মুসলমান বলে অনেক পাড়াতে নাকি বাড়ি ভাড়াও পাচ্ছিল না। অনেক ঘুরে দাসপাড়াতে কিছু একটা করে প্রথম গলির একদম শেষের বাড়িটা পায়। আনোয়ার আলির বউয়ের আপত্তি ছিল কারণ বাড়ির পেছনেই শুয়োরের খোঁয়াড়। আনোয়ার আলি গত কিছু মাস বাড়ি খুঁজে খুঁজে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল যে তখন সে শুয়োরের খোঁয়াড়েও থাকতে বললে রাজি হয়ে যেত।
আনোয়ার আলি পাড়ায় আসার পর থেকে ক্যাপ্টেন সরকারের মন মেজাজ ভালো থাকে না। সেদিন খেলাতে পরপর তিনটে ভুল এল বি ডব্লিউ দেয়। পাড়ার ছেলেগুলো রাগারাগি করে। ক্যাপ্টেনও রেগে মেগে এক পায়ে বাড়ি চলে যায় গোলাপি কুয়াশা তছনছ করে। পাড়ার রকে আলোচনা হয়। সবাই বুঝতে পারে এই আনোয়ার আলির জন্যই যা কিছু ঘটছে। ক্যাপ্টেনকে একদিন বলতে শোনা যায় যে সে পাড়া ছেড়েই চলে যাবে। কিন্তু কেন? আনোয়ার আলি মুসলমান বলে? যতই মুখে সেকুলার বলুক তলায় তলায় বেশিরভাগ হিন্দুই মুসলমানদের অপছন্দ করে তা সবাই জানে। কিন্তু ক্যাপ্টেন কি সেরকম?
ভাইয়া বলে – “ভাই, পাকিস্তানের সঙ্গে লড়েছে। এক পা উড়ে গেছে। রাগ থাকা তো স্বাভাবিক তাই না?”
তাপস – “আরে আনোয়ার আলি কি পাকিস্তানি নাকি?”
বাপ্পা – “ওই এক-ই হল! মুসলমান, গরু ফরু খায় তো।”
পিঙ্কু – “ভাগ শালা! আনোয়ার আলি-কে দেখেছিস? মিনমিনে একটা পেটরোগা বাঙালির মতো মুখ। গরু খেলে হেগে মরে যাবে মনে হয়।”
ভাইয়া – “ভাই, সেদিন তাপস আর আমি নিজামের বিফ রোল খেলাম। সলিড খেতে!”
বাপ্পা – “তুই বিফ খাস?”
তাপস – “সব খাই! যা ভালো খেতে সব খাই … শুয়োর, গরু, পাঁঠা …”
বলতে বলতে থেমে যায়। আনোয়ার আলি ওদের দিকেই আসছে।
আনোয়ার আলির কথা বলার মধ্যে একটা মিনমিনে ব্যাপার আছে – “দাদা, এই পাড়াতে ওষুধের দোকান …”
ভাইয়া – “ওই তো মনোজদের …”
আনোয়ার আলি – “ওটা বন্ধ। বাজারের দিকে গেলে কি …”
তাপস – “হ্যাঁ, ওখানে সুজন ফার্মাসি আছে, আজকে খোলা থাকবে।”
আনোয়ার আলি মৃদু হেসে, ধন্যবাদ জানিয়ে, দ্রুত শট থেকে বেরিয়ে যায়। রকে বসা চার মক্কেল তাকিয়ে থাকে। গোলাপি কুয়াশা ওদের জড়িয়ে ধরে। ওরা টের পায়না।
“দেখে বোঝা যায় না কিন্তু মালটা মুসলমান!”
৪
ক্যাপ্টেন সরকারের দিন এতদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কেটে যাচ্ছিল। আনোয়ার আলি এসে তার অন্য পা-টাও যেন ভেঙে দিল। আনোয়ার আলি পাড়াতে আসায় অনেকেরই বিরক্ত লেগেছিল। এ পাড়ায় কোনদিন মুসলমান ছিল না। এরা কিন্তু সংখ্যায় বিশাল ভাবে বাড়ছে। আজকে একজন ঢুকল, তারপর একে একে আমাদের সবাইকে বের করে ছাড়বে পাড়া থেকে। এগুলো আড়ালে আলোচনা হলেও সামনে কিন্তু সবাই সেকুলার। হঠাৎ একদিন দাসপাড়া জানতে পারে যে এই আনোয়ার আলি এক সময় আর্মিতে চাকরি করত। তাজ্জব ব্যাপার। মুসলমান হয়ে ইন্ডিয়ান আর্মিতে! মুসলমান বলতে সবাই ভাবে টেররিস্ট, বোমা ফোমা বানায়, আল্লা হু আকবর বলে ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং মানুষ মারে। এই আনোয়ার আলি তো আজব মুসলামান। ইন্ডিয়ার হয়ে লড়ে!
এক সন্ধেতে ক্রিকেট খেলা সেরে ছেলেগুলো রকে বসে গুলতানি মারছিল আর বিড়ি টানছিল। ক্যাপ্টেন নেই। যুদ্ধের গল্পও নেই। আনোয়ার আলি কোথা থেকে ফিরছিল।
তাপস – “ও আনোয়ার দা, কোথা থেকে?”
আনোয়ার মিনমিন করে – “এই তো অফিস থেকে …”
তাপস – “তুমি যেন কোন অফিসে? ট্যাক্সের কাজ-ফাজ দেখো, তাই না?”
আনোয়ার – “হ্যাঁ আমার আঙ্কেলের অফিসে, ট্যাক্স, জি এস টি এসবের কাজ …”
বাপ্পা – “তুমি আগে আর্মি-তে ছিলে?”
আনোয়ার – “হ্যাঁ ছিলাম।”
ভাইয়া – “আইব্বাস! যুদ্ধ করেছ? মানে বন্দুক, ফন্দুক, গুলি, ঢিচক্যাও …”
আনোয়ার লাজুক ভাবে হাসে, মাথা নাড়ে – “কারগিলে ছিলাম।”
পিঙ্কু – “তাহলে তো ক্যাপ্টেন সরকার কে চিনবে!”
আনোয়ার – “সরকার দা-কে তো অনেকদিন চিনি। আমাদের ট্রেনিং তো এক সাথেই …”
বাপ্পা – “তুমি ছিলে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে? কাশ্মীরে?”
আনোয়ার – “কিন্তু সরকারদা তো যুদ্ধে যেতে পারেনি। ব্যাডলাক খুব!”
পিঙ্কু – “মানে?”
আনোয়ার – “সরকার দা তো সেই হাওড়া-তে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে … একটা পা কাটা পড়ে … এখানেই হাসপাতালে … আমরাই নিয়ে যাই … যুদ্ধেই তো যেতে পারল না।”
আর কেউ কোনো কথা বলেনি। যে যার মতো বাড়ি চলে যায়। আনোয়ার আলি-ও নিজের খেয়ালে শুয়োরের খোঁয়াড়ের দিকে টিমটিম করে হাঁটতে থাকে।
সেই রাতে ক্যাপ্টেনের ঘরে কিছুটা গোলাপি কুয়াশা ঢুকে পড়ে। তার মধ্যেই ক্যাপ্টেন একা শুয়ে থাকে বিছানায় সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রাচ-টা উসখুস করতে থাকে। এখুনি সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে চায়। ভারতের উত্তর সীমান্তে পাহাড় তাকে ডাকছে। একটা অসমাপ্ত অ্যাডভেঞ্চার তাকে ডাকছে।