ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • আনন্দধারা

    দেবদীপ মুখোপাধ্যায় (March 22, 2025)
     

    কাআ তরুবর পঞ্চবী ডাল

    ও রজনীগন্ধা

    তোমার গন্ধসুধা ঢালো

    একজন সাইকেল চেপে, হাতে একটা লাঠি নিয়ে; জ্বালাতে বেরিয়েছে প্রতিটা পাড়ার আলো। দিন ও রাতের সন্ধিকালে যে যার বাড়িতে উলুধুনি, শঙ্খধ্বনি ও ধূপ। ধূপের আগায় লাল একবিন্দু আগুন। গোড়ায় একটি হলুদ কাঠি আর ধূপের চেহারা আমার মতো— রোগা আর কালো। প্রথমত, ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড, ডিভাইডেড উই ফল। যে ফল কোনও পুজোতেই কাজে লাগে না। সবক’টা ধূপকাঠি একসঙ্গে থাকলে, ওদের আমার থেকে নিজের থেকে বেশি স্বাস্থ্যবান মনে হয়,  তার ওপর কী সুন্দর গন্ধ, বিভিন্ন ডিজাইনে ব্যালেরিনার মতো ধোঁয়া নেচে ওঠে। আমি ওসব পারিও না, তাই যত কেরামতি, লক্ষ করেছি দূর থেকে, আর খালি ছোট করেছি নিজেকে। ধূপের মতো স্বাস্থ্য আমার বা সুগন্ধ আমার নেই। আমি একটু খাটাখাটনি করলেই গা থেকে বোঁটকা ঘেমো গন্ধ বেরোয়। তাই ঝপঝপ স্নান করে গায়ে একটু কিছু গলিয়ে, ফুলবাবুটি হয়ে বেরিয়ে পড়ি। রোজ যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে, তা-ও নয়। একটু বাজার দেখতে বেরোই, নিছক আনন্দের জন্য।

    গিয়ে দেখি, কেস তো পুরো উল্টো ঘটে চলেছে! দেখি একজন বিরাট খেলোয়াড় সেই বাজারে  পারফিউম বিক্রি করছে, একজন বিখ্যাত অভিনেতা বাড়ি বানানোর রড বিক্রি করছে। সব তালগোল পেকে আমার অবাক হওয়ার শেষ নেই! এঁরা কত পরিশ্রম করেন। নিজেদের কাজ মন দিয়ে করেও কী সুন্দর রাজমিস্ত্রির ইট, বালি, সিমেন্ট, গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া, সরষের তেল— হাতের কাছে যা পাচ্ছে, বেচে দিচ্ছে। লোকে কিনছেও। নিছক আনন্দের জন্য লোকেও তো কিছু করবে নাকি! আমার মতো ফুলবাবুটি সেজে ফুরফুরে হাওয়ায় না বেরলে, সবার গা থেকেই ঘেমো বোঁটকা গন্ধ বেরবে।

    আরও পড়ুন : লীলা মজুমদারের পেরিস্তানে এখন কি চাইলেই যাওয়া যাবে? লিখছেন সৌকর্য ঘোষাল…

    একটা জিনিস লক্ষ করবেন, ঈশ্বর বিশেষ নড়াচড়া করেন না! আরে অন্য কোথাও যেতে হবে না। যে যার বাড়িতে ঘুণধরা দেবদেবীদের ফ্রেমগুলো দেখবেন। আমি না-হয় সামান্য মানুষ, মশা কামড়ালেই, এক চড়ে ব্যাটাকে পঞ্চভূতে বিলীন করে দিচ্ছি। আর ঈশ্বর হয়ে, ঘেমে গেলে গন্ধ বেরবে বলে তুমি নাকি চুপচাপ বসে থাকো ঘুণধরা ফ্রেমে! এ কেমন টক্সিক ব্যবহার! একটু হেঁটে বড়দাদুর বড় ফ্রেমটায় ঢুকে পড়লেই আরামসে ইটারনিটি কেটে যাবে! ঈশ্বর হয়ে এত কিছু পারো, আর নিজের নিছক আনন্দের জন্য একটু সরে বসতে পারো না, যাতে আর-এক ঘেমো বন্ধু তোমার পাশে এসে একটু বসতে পারে, নিছক আনন্দের জন্য।

    ‘লাঞ্চিয়ন অন দ্য বোট পার্টি’। জঁ অগুস্তো রেনোয়ার

    আমাকে লোকে ইদানীং জিজ্ঞেস করে, কী গো, নিজের শরীরের দিকে একটু খেয়াল করলেও তো পারো! তারা আমাকে বলে, আমি উদাসীন। আমার তখন হাসি পায়, আমি কিছু প্রকাশ করি না। তারা কোনও মানানসই উত্তর না-পেয়ে আবার বলে, তোমার শরীর একদম ভেঙে গেছে। আমার শরীর আমার চোখে পড়ে না। আমি সামনের মানুষের ভেঙে পড়া শব্দটুকু কুড়িয়ে ভাবতে থাকি, কবে কবে, কোথায় কোথায়, কী কী ভেঙে পড়েছে! অস্ট্রেলিয়াতে এক উপজাতি গাছকে গালাগালি দেয় বলে গাছ ভেঙে পড়ে। মাটির নিচে হিরে খুঁজতে গিয়ে খনি শ্রমিকদের মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়ে। বঁটিতে রোজ মুরগির গলা ভেঙে পড়ে। ওসামা অ্যাটাক করলে টুইন টাওয়ার ভেঙে পড়ে। মায়ের শরীর খারাপ হলে, আমাদের সংসার ভেঙে পড়ে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য আইসবার্গ ভেঙে পড়ে। ভাস্করের হাতুড়ি-ছেনির আঘাতে পাথর ভেঙে পড়ে। মাধ্যাকর্ষণের ফলে নিউটনের মাথায় আপেল ভেঙে পড়ে। কালের স্রোতে হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো ও পিরামিডের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। অইশভিৎসের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মানুষ ভেঙে পড়ে। পরপর দু’টি অ্যাটম বম্বের জন্য জাপান ভেঙে পড়ে। রাশিয়া খুব কেলিয়েছিল বলে হিটলার ও জার্মানি দু’জনেই ভেঙে পড়ে। ধর্মান্ধতায় ও উগ্রতায় ধর্ম ভেঙে পড়ে। একজন মহিলা ডাক্তার তার কাজের ক্ষেত্রে ধর্ষিতা ও নির্মম ও নৃশংসভাবে খুন হলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় হাসপাতালের একটি দেওয়াল ভেঙে পড়ে। মানুষ একত্রে রাস্তায় নামলে রাষ্ট্রব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে।

    একটা জিনিস লক্ষ করবেন, ঈশ্বর বিশেষ নড়াচড়া করেন না! আরে অন্য কোথাও যেতে হবে না। যে যার বাড়িতে ঘুণধরা দেবদেবীদের ফ্রেমগুলো দেখবেন। আমি না-হয় সামান্য মানুষ, মশা কামড়ালেই, এক চড়ে ব্যাটাকে পঞ্চভূতে বিলীন করে দিচ্ছি। আর ঈশ্বর হয়ে, ঘেমে গেলে গন্ধ বেরবে বলে তুমি নাকি চুপচাপ বসে থাকো ঘুণধরা ফ্রেমে!

    ভেঙে গেছে যখন, আরও ভেঙে ভেঙে দেখি, কী আছে। তার মধ্যে বেরিয়ে পড়ে অণু-পরমাণু। তার মধ্যে নাকি দু’টি সুতোর মতো ক্রোমোজোম লাফালাফি করছে। আমি স্ট্রিং থিওরিতে হোঁচট খেয়ে কোয়ান্টামের ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়লাম।

    আবার নতুন করে সবটা শুরু হয়। তদন্ত শুরু হয়। কায়রোকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ম্যাপ আঁকা শুরু হয়। জলাশয়ের ধারে একটা প্রজাতির বেঁচেবর্তে থাকা-খাওয়া শুরু হয়। মিকেলেঞ্জেলোর সেস্টাইন চ্যাপেলে ছবি আঁকা শুরু হয়। ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা শুরু হয়। আর তার সঙ্গে শুরু হয় নবারুণ ভট্টাচার্যর খিস্তি। পিথাগোরাস আমাকে হাতে ত্রিভূজটি তুলে দিয়ে বলে, এ এক আশ্চর্য জিনিস, তুমি সাবধানে রেখো। আমি বললাম, স্যর আমি মেয়েটাকে খুব ভালবাসি, কিন্তু মেয়েটা অন্য আরেকজনকে ভালবাসে। আমার রাতে ঘুম হয় না। সে বলেছিল বলেই, আমি ডারউইন, ফ্রয়েড— সবার সঙ্গে দেখা করলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলুম না। এটুকু বুঝলুম, মানুষ পৃথিবীকে নতুন নতুন ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে চলেছে প্রতিদিন। এবার আমি যে তা দিয়ে নতুন কি তৈরি করব, ভেবে পাচ্ছি না।

    এরকম সময় থেকেই বোধহয় উদাসীনতম একটি পাখি, নিছক আনন্দের জন্যই, হয়তো একই সুর করে ডাকতে থাকে। কৃষ্ণের বাণীর মতো শোনা যায়, পরিবর্তন সংসারে নিয়ম। আমি অত বুঝি না বাবা, আমার নিছক আনন্দ হলেই হয়ে যাবে।

    কারণ, নিছক আনন্দের জন্য আমি কোনও কিছুই ধ্বংস করি না, বা সৃষ্টি করি না।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook