বালিকাবয়সে গোলাপকে তাচ্ছিল্য করার মধ্যে একটা প্লেজার ছিল। ল্যুভ-এ গিয়েও মোনালিসা না দেখে ফিরে আসার মতো। তখন সমস্ত চেতনার রং জুড়ে আছে সাদা সুগন্ধি ফুল। যারা গোপন চরণ ফেলে আসে, ‘নিশার মতো নীরব’ হয়ে, ‘সবার দিঠি এড়ায়ে’। অঝোর বৃষ্টিরাতে আধফোটা গন্ধরাজের সুবাসে আচ্ছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ার মধ্যে তখন এক অশ্রুতপূর্ব রোমাঞ্চের মৌতাত। কিশোরীমনের গহনে সেইসব শ্রাবণঘন রাত কোন অরূপের কল্পনায় আকুল। কোনও দৃষ্টিনন্দন সেখানে গ্রাহ্য নয়। কাজেই গোলাপকে খারিজ করার যে-শ্লাঘা, তার সবটাই ঠিক সচেতন নির্মাণ ছিল না।
গোলাপ এর প্রতিশোধ নিল ঠিকই। আচম্বিত আঘাতের মতো বিনা ঘোষণায়, এক মামুলি সন্ধ্যায়, মখমলি গালিচায় বসে থাকা পাটরানিটির মতো অহংকারে ফুটে উঠল, সমস্ত দল মেলে। সেই মেদুর কিন্তু তীব্র, মদির কিন্তু অভিজাত সৌরভে যৌবন চোখ মেলল।
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে সবচেয়ে সুন্দর করুণ: সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে থাকে মধুকূপি ঘাসে অবিরল… “শাদা ভাটপুষ্পের তোড়া/আলোকলতার পাশে দ্রোণফুল গন্ধ ঢালে বাসকের গায়’। ‘সেখানে লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকারে ঘাসের ভেতর’ ‘নীল আকাশে খইক্ষেতের সোনালি ফুলের মতো অজস্র তারা’। সে-মনোভূমির মেঠোপথে আলগোছে বেড়ে ওঠে আশ শ্যাওড়া, ঘেঁটু, বনকলমির ফুল। অজস্র গ্রীষ্মের ছুটির দুপুর সে-কথা জানে। ‘পুঁইমাচা’ পড়তে-পড়তে কান্নায় বুজে আসা দলাপাকানো ব্যথার মধ্যে কোথায় ছিল গোলাপের স্থান? তবু সে একদিন ফুটল।
পৃথিবীতে এই এত-এত ফুল। তবু যত প্রিয়তা, যত উদযাপন শুধু তাকে ঘিরে। সে মহার্ঘ্য নয়। অর্কিডের মতো দামি, দুষ্প্রাপ্য নয়। সর্বত্র জন্মায়। সারা বছর বাঁচে। সহজেই বেড়ে ওঠে, ঝরে যায়। তবু এত আকাঙ্ক্ষা, এত রহস্য, এত মুগ্ধতা তাকে ঘিরে! বিবাহ, প্রার্থনা, শোক— প্রেম, ঈশ্বর, মৃত্যু, সবের মধ্যমণি সে। বতসোয়ানা থেকে বুলগেরিয়া, ইরান থেকে রোমানিয়া, দামাস্কাস থেকে কোরিয়া— সারা পৃথিবী জুড়ে তার শাসন। সাদা, হলুদ, গোলাপি, কালো, বেগুনি… কত তার রং! তবু সব রং ছাপিয়ে লাল গোলাপ মানুষের সভ্যতার ইতিহাসে একটিমাত্র ফুল হয়ে ফুটে আছে, হাজার-হাজার বছর ধরে। ৩৫০ লক্ষ বছরের পুরনো এক উদ্ভিদ, এক কাষ্ঠল গুল্ম, যার ফসিল পাওয়া গিয়েছে পৃথিবীর পেটের ভিতর।
‘লু মা রোজ’— গিয়োম আপোলিনেয়ারের এই আশ্চর্য কবিতায় একদিন তাকে আবিষ্কার করি। আর টের পাই, প্রেম নয় যৌনতা, ঈশ্বর নয় ঈপ্সা, মৃত্যু নয় নির্বাণ: লাল গোলাপ এসবেরই অমোঘ মোটিফ। ঠিক যেমন স্যাম মেন্ডেস এর ‘আমেরিকান বিউটি’ (১৯৯৯) ছবিতে অন্তঃসারশূন্য মধ্যবিত্ত বেঁচে থাকা, নারী-শরীরের আনাচকানাচ ঘিরে ফুটে ওঠা নিষিদ্ধ ফ্যান্টাসি, সাদা টাইলস-এ ছিটকে লাগা রক্তের দাগ… সমস্ত বয়ানের মধ্যে জেগে থাকে লাল গোলাপ। ছবির অন্যতম নারী চরিত্র এঞ্জেলা একটি স্বপ্নদৃশ্যে তার ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত করে। অসংখ্য লাল পাপড়ি দমকা হাওয়ায় ভেসে আসে ক্যামেরার দিকে। আর এক দৃশ্যে গোলাপে ভর্তি বাথটাবে শুয়ে থাকে এঞ্জেলা আর তার বন্ধুর বাবা, সমস্ত ফ্যান্টাসি-দৃশ্য আসলে যাঁর চোখ দিয়েই দেখা, তাঁর একটি হাত এগিয়ে আসে বাথটাবের দিকে। পাপড়ি সরিয়ে হাতটি ঢুকে পড়তে চায় বিপজ্জনকভাবে। প্রবল অস্বস্তি আর উৎকণ্ঠার মধ্যে গোটা ছবি জুড়ে গোলাপ হয়ে উঠতে থাকে এক-এক চরিত্র। বন্যতা, অমিতব্যয়িতা, লালসা, রিরংসা, ভালোবাসা, মুগ্ধতা, সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে।
‘লু তু এ মা রোজ
তোঁ দেরিয়ের মেরভেইয়ো নেস পা লা প্লু বেল রোজ
তে সাঁ তে সাঁ শেরি ন্য সোঁ-স পা দে রোজ
লু তুমি আমার গোলাপ
তোমার আশ্চর্য পেছনটা কি সবচেয়ে সুন্দর গোলাপ নয়
তোমার স্তন তোমার আদরের স্তনদুটি কি গোলাপ নয়…’
আপোলিনেয়ারের ঠিক বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে হুয়ান রেমন হিমেনেথ। ‘তোমার নম্র চোখদুটো প্লাতেরো, যা তুমি নিজে কখনও দেখতে পাও না, যখন আকাশের দিকে মেলে দাও, মনে হয় ঠিক যেন আশ্চর্য সুন্দর দুটো রক্তগোলাপ।’
কেন রক্তগোলাপ? কেন সাদা নয়, হলুদ নয়, কেন লাল? উত্তর মেলে গ্রিক পুরাণে। প্রেম আর সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি একদিন অহংকার করে বলেছিলেন এই চরাচরের যে-কোনও পুরুষকেই তিনি তাঁর প্রেমে বশ করতে পারেন। দেবতাদের পিতা, আকাশ ও বজ্রের দেবতা জিউসের কানে কথাটা গেল। তিনি ঠিক করলেন আফ্রোদিতির এই গুমোর ভাঙতে হবে। তাঁকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যে জিউস আফ্রোদিতির জীবনে আনলেন এক অনিন্দ্যকান্তি রূপবান পুরুষ, তার নাম অ্যাডোনিস। দেবী আফ্রোদিতি যখন মানুষ অ্যাডোনিসের প্রেমে পাগল, ঠিক সেই সময়ে একদিন আচমকাই মরতে হল অ্যাডোনিসকে। তার আত্মা যখন স্বর্গের দিকে যাচ্ছে, আকুল হয়ে আফ্রোদিতি তাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে, একটি সাদা গোলাপের কাঁটায় আমূল বিঁধে গেল তাঁর পা। আফ্রোদিতির পা থেকে রক্ত চুঁইয়ে শ্বেতগোলাপটি হয়ে উঠল রক্তবর্ণ।
যে-ফুলের অনুষঙ্গে স্বয়ং প্রেমের দেবীর শরীরের রক্ত লেগে আছে, সেই ফুল যে প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠবে সে আর আশ্চর্যের কী! কিন্তু গ্রিক আর রোমান সভ্যতাও একদিন মিশে গেল ধুলোয়। প্রবল পরাক্রমশালী রোম নুয়ে পড়ল খ্রিস্টীয় ধর্মাচারে। গোলাপ হয়ে উঠল ভার্জিন মেরি-র প্রতীক। ধর্ম এসে মানুষের মনের কামনা-বাসনা-প্রেম-যৌনতা সবের পায়ে বেড়ি পড়াতে চাইল। রক্তগোলাপের জীবনবিলাসিতাকে খর্ব করতে সাদা গোলাপকে করে তোলা হলো জপ-তপ-ভক্তি-শুদ্ধাচারের প্রতীক। ক্যাথলিক বিয়ের অনুষ্ঠানে সাদা গোলাপ মান্যতা পেল। আর একইসঙ্গে লাল গোলাপ হয়ে উঠল গোপনীয়তা ও রহস্যের দূত। যিশুর শিষ্যা ও স্ত্রী মেরি মাগদালেনকে তুলনা করা হতে থাকল লাল গোলাপের সঙ্গে। ভয় পেল পোপতন্ত্র। তারা যিশুকে বিবাহিত ও সংসারী হিসেবে দেখাতে চায় না। তাই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার প্রবল চেষ্টা করা হল মেরি মাগদালেনের নাম। যিশু ও মেরির সন্তান ও বংশরেখাকে ‘হোলি গ্রেইল’ হিসেবে সাংকেতিক বর্ণনা করার প্রথা শুরু হল খ্রিস্টীয় গুপ্ত সমিতিতে, যে-গুপ্ত সমিতির সদস্যদের নাম স্যার আইজাক নিউটন কিংবা লিওনার্দো দা ভিঞ্চি । সমস্ত সংরাগ, আসক্তি, প্রণয় রূপ পেল গোলাপের লালের ভিতর।
‘এভরিথিং ইজ অ্যাবাউট সেক্স এক্সেপ্ট সেক্স, সেক্স ইজ অ্যাবাউট পাওয়ার’, বলেছিলেন অস্কার ওয়াইল্ড। রক্তগোলাপও ক্রমে হয়ে দাঁড়াল ক্ষমতার প্রতীক। ইংল্যান্ডের অজস্র রাজবংশের নিশান হল সে। ইতিহাসের পাতায় ‘গোলাপের যুদ্ধ’ নামে এক অধ্যায় রচনা হল এইসব রাজবংশের যুদ্ধ নিয়ে। রাজছত্র ভেঙে পড়ে। কিন্তু শিল্প-সাহিত্য-চিত্রকলা থেকে যায় শাশ্বত হয়ে। টিউডর, ইয়র্ক বা ল্যাংকাস্টার রাজবংশের গোলাপ তার অর্থ হারিয়েছে। কিন্তু মোনে, সেজান, রেনোয়া-র আঁকা ইম্প্রেশনিস্ট গোলাপ আজও রয়ে গেছে। রয়ে গেছে লুক্সেমবুর্গ-এর বেলজিয়ান শিল্পী ও বটানিস্ট পিয়ের জোসেফ রদুতে-র জলরঙে আঁকা গোলাপগুলো। আর এক শিল্পী অঁরি ফাঁতাঁ-লাতুরের বিখ্যাত স্টিল লাইফ থেকে গোলাপের এক প্রজাতির নামই হয়ে গিয়েছে ফাঁতাঁ-লাতুর।
১৯৮০ সালে উম্বের্তো একো-র প্রথম উপন্যাস ‘দ্য নেম অফ দ্য রোজ’ সাড়া জাগিয়েছিল সারা পৃথিবীর পাঠক ও সাহিত্যমহলে। ৫০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হওয়া এই উত্তর-আধুনিক উপন্যাসের নামকরণ সম্পর্কে একো যদিও বলেছেন খুব তাড়াহুড়ো করে দেওয়া দশটা ‘সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ’ নামের মধ্যে একটি মাত্র। তবে সেমিওটিক্স বা চিহ্নতত্ত্ব নিয়ে কাজ করা একো গোলাপকে বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন হিসেবে ভাবেননি, এ-কথা ভাবা অসম্ভব। এই উপন্যাসের পোস্ট স্ক্রিপ্ট-এ একো নিজেই উল্লেখ করেছেন সপ্তদশ শতকের মিস্টিক কবি হুয়ানা ইনেস দে লা ক্রুজ-এর একটি কবিতা, যার ছত্রে-ছত্রে গোলাপের উপস্থিতি।
‘তৃণভূমিতে ফুটে থাকা লাল গোলাপ
বড়ো স্পর্ধায় তুমি আরক্ত কর নিজেকে
সমৃদ্ধি আর বিস্তারের এই প্রদর্শন
কিন্তু না; যতই সুন্দর হও
তুমিও অসুখী হবে।’
নশ্বরতা আর অনিত্যতার প্রতীকও তাই গোলাপ। যে-মখমল, মসৃণ পাপড়ির ক্রমাগত ঝরে যাওয়া জীবনেরই ছন্দ। যে-ছন্দে সুফি নাচের অবিরাম ঘুরে চলা… যে-দুর্নিবার ঘূর্ণনের মধ্যে রয়েছে গোলাপের মতো পরতে-পরতে খুলে যাওয়া। প্রিয়তম, ঈশ্বরের সঙ্গে হৃদয়ে-হৃদয়ে আধো পরিচয়ের আড়ালটুকু টান মেরে এক হতে চাওয়ার আকুল উপাসনা। সে-গতি ধরা পড়ে সুফি দরবেশের পোশাকের ঘুর্ণির মধ্যে দিয়ে। আল্লাহ্র ধ্যানে মগ্ন হয়ে নিজের নফস, অহংকার এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে ত্যাগ করার জিকির সেই সেমাজেন নৃত্য, যা এক উচ্ছ্বসিত সমাধির রূপ নেয়। ‘আমার বন্ধু যখন রাত্রিশেষে পরশ তারে করবে এসে/ফুরিয়ে গিয়ে দলগুলি সব চরণে তার লুটবে’। সুফি ঐতিহ্যে গোলাপ তাই শুধু যে-কোনও ফুল নয়। ঐশ্বরিক আর জাগতিক রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু।
‘এভরিথিং ইজ অ্যাবাউট সেক্স এক্সেপ্ট সেক্স, সেক্স ইজ অ্যাবাউট পাওয়ার’, বলেছিলেন অস্কার ওয়াইল্ড। রক্তগোলাপও ক্রমে হয়ে দাঁড়াল ক্ষমতার প্রতীক। ইংল্যান্ডের অজস্র রাজবংশের নিশান হল সে। ইতিহাসের পাতায় ‘গোলাপের যুদ্ধ’ নামে এক অধ্যায় রচনা হল এইসব রাজবংশের যুদ্ধ নিয়ে। রাজছত্র ভেঙে পড়ে। কিন্তু শিল্প-সাহিত্য-চিত্রকলা থেকে যায় শাশ্বত হয়ে।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া, চীন বা ইউরোপের মতো ভারতে গোলাপের জনপ্রিয়তা এত পুরনো নয়। তার একটা বড় কারণ ভারতে গোলাপ এসেছে অনেক পরে, মুঘলদের হাত ধরে। বাবর প্রথম দামাস্কাস থেকে গোলাপ আনেন এদেশে। নাম ছিল বসরা, যার থেকে বসরাই গোলাপ। আরও একটা বড় কারণ হিন্দুধর্মে যেভাবে পদ্ম, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা, শিউলি, গাঁদা বা রক্তজবার কথা রয়েছে গোলাপের কথা নেই। কারণ গোলাপ এদেশে এসেছে শাস্ত্র লেখার অনেক পরে। পারস্যদেশীয় গোলাপের নামের মধ্যেও আছে ফারসি অনুষঙ্গ। ‘গুল’ অর্থাৎ ফুল, আর ‘অব’ অর্থাৎ জল। গুলাব, আক্ষরিক অর্থেই ফুল থেকে তৈরি জল। যে-জলের জাদুস্পর্শে রোগ নিরাময় হয়, রান্না হয় স্বাদু আর মানুষ সুন্দর হয়ে ওঠে।
কিন্তু বাঙালি ভোলেনি গোলাপজলে। ঘরের পাশের রঙ্গন, দোপাটি, সন্ধ্যামণি বা কাগজি ফুলের মতো অজস্র লাল ফুলের মধ্যেও বাঙালি মনের ভেতর যে-ফুলটি চিরন্তন হয়ে আছে, তা গোলাপ নয়, রক্তকরবী। বাঙালি নারী যদিও নন্দিনীর মতো হাতে গলায় রক্তকরবীর মালা পরেনি, কিন্তু নন্দিনীর উত্তরসূরি হিসেবে থেকে গিয়েছে সত্যবতী, সুবর্ণলতা, বকুল, মাধবীলতা। রক্তকরবীর লাল বাঙালির বিদ্রোহ, বিপ্লব, প্রেম ও যৌবনের প্রতীক। বাংলার বসন্ত জুড়ে থাকা পলাশও গোলাপের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। নীল দিগন্তে যে ফুলের আগুন লাগল, তা কি গোলাপের? শাক্ত উপাসক বাঙালির প্রতিদিনের সাধনায় যে আছে, সেও কি গোলাপ?
গোলাপ আসলে বাঙালির প্রতিদিনের জীবনে নেই। সে আনুষ্ঠানিক। তার উৎসব, জাঁকজমক, জৌলুসের প্রয়োজন হয়। ‘হায় গোলাপের মতো বিস্মৃত ফুল আর নাই সমস্ত মুহূর্ত যার অনিত্যতা; প্রথমে শুকায় ধীরে ঝরিয়া চুপ, ক্ষণেকেই কোথাও ফুটিয়া উঠে, সমক্ষে থাকিয়াও চির-বিস্মৃত।’ ‘গোলাপসুন্দরী’ উপন্যাসে লিখেছিলেন কমলকুমার। ভুবনায়ন-উত্তর বাঙালি নিজের ঐতিহ্য বিস্মৃত বলেই হয়তো আজ গোলাপ স্থান পেয়েছে তার যাপনে। তার রক্তিম গেলাসে গোলাপ নয়, ছিল তরমুজ মদ। যে লাল রংকে মাতাদোরের মতো তাড়িয়ে বেড়িয়েছে, সে গোটা সত্তরের দশক। খ্যাপা ষাঁড়ের শিং ধরে ঝুলে থাকা সেই আগুনপথ গোলাপে আকীর্ণ ছিল না যে!