ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • প্রশ্নাতীত জননায়ক?

    সৌমিত্র দস্তিদার (March 17, 2025)
     

    শেখ মুজিবুর রহমানের সবথেকে বড় দুর্ভাগ্য বোধহয়, তাঁর কোনও নির্মোহ জীবনী না থাকা। যত বিতর্কই থাক, উপমহাদেশের রাজনীতিতে কোনওভাবেই তাঁকে অস্বীকার করা যায় না। নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন অসম্ভব ভাল সংগঠক, বাগ্মী, সাহসী, সব মিলিয়ে ক্যারিশম্যাটিক ব্যাক্তিত্ব। কথায় কথায় একবার ১৯৬৯ সালে, তৎকালীন পূর্ব বাংলার বাম ছাত্র নেতা মুস্তাফা জামাল হায়দরকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, শেখ সাহেব সম্পর্কে আপনার মুল্যায়ন কী! আপনি বিরোধী দলের হলেও কাছ থেকে তো দেখেছেন, কেমন ছিলেন তিনি! তিনি গম্ভীর লোক। প্রথম তিনি হেসে জবাব দিলেন, ‘মুজিব ভাইয়ের বাসা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ফরিদপুর জেলাতে। আমরা বরিশালের। কিন্তু নদীপথে আমাদের বাসা ছিল খুব কাছাকাছি। ছোটবেলায় নৌকো নিয়ে চলে যেতাম মুজিব ভাইয়ের বাসায়। ভাই বাসায় না থাকলেও ও-বাড়িতে ছিল আমাদের অবারিত দ্বার। পরবর্তীতে আমি মৌলানা ভাসানীর অনুসারী হওয়ার পরেও, মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়লেও, ব্যক্তিসম্পর্ক পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি। মুজিব ভাইয়ের মধ্যে একধরনের উদারতা ছিল। তবে তা শাসক হওয়ার আগে পর্যন্ত। লীগের ছেলেদের হাতে আমরা আহত হয়ে হসপিটালে ভর্তি হলে, খোঁজ নিতেন আঘাত কত গভীর, চিকিৎসা করার মতো টাকাপয়সা আছে কি না! মুজিব ভাইয়ের হো হো করা দরাজ হাসি এখনও কানে বাজে, তবে তিনি খুব চাটুকার-পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে ভালবাসতেন। সেটাই তাঁর কাল হল। স্বাধীন বাংলাদেশে শাসক হিসেবে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন প্রথম থেকেই।’

    শেখ মুজিব নিয়ে লেখাপত্তর যথেষ্ট। কিন্তু আগেই বলেছি, কোনওটাতেই তাঁর সঠিক মুল্যায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগের আমলে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তাকে অযথা প্রায় যেভাবে পয়গম্বর করে তোলা হয়েছিল, তার কোনও প্রয়োজন ছিল না। মনে আছে, মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ দূতাবাসে এক অনুষ্ঠানে ওই দেশের এক প্রভাবশালী কর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, কত বই বেরিয়েছে এ-বছর, শেখ সাহেবকে নিয়ে! তিনি বললেন, ‘তিন হাজারের কিছু বেশি!’ তিন হাজার! আমার বিস্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি মৃদু হাসলেন। জানতে চাইলাম— সবথেকে অথেন্টিক কোন-কোনটি! তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘চেয়ারে বসে দেশের ডিপ্লোম্যাট হিসেবে বলব, না আপনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে উত্তর দেব!’ আমি বললাম, ‘দুটোই।’ তিনি বললেন, ‘চেয়ারে বসে বলব, সবক’টিই পড়া দরকার, প্রত্যেকটিই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর যথার্থ গবেষণা গ্রন্থ। আপনার ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে বলব, একটিও পড়বেন না। সবক’টিই মুজিবকে তৈলমর্দন করে শেখ হাসিনাকে তুষ্ট করে নিজের নিজের কাজ গুছিয়ে নেওয়ার মতলবে লেখা। স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান এসব পড়লে ভিরমি খেতেন নিশ্চিত।’

    আরও পড়ুন : বাকশালের ইতিহাস এখনও দগদগে বাংলাদেশের জনমনে!
    লিখছেন অর্ক ভাদুড়ী…

    শেখ মুজিবকে দু’ভাবে দেখা উচিত। এক, মুজিব ভাই, আর দ্বিতীয়টি ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির পিতা’, ‘বাংলাদেশের রূপকার’ ইত্যাদি ইত্যাদি। মুজিব ভাই নিঃসন্দেহে দোষেগুণে অসম্ভব বড় একজন নেতা। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন মৌলানা ভাসানীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন শেখ মুজিব ছিলেন দলের যুগ্ম সম্পাদক। পুরনো ঢাকার ১৫০ মোগলটুলির যে বাসায় আওয়ামী মুসলিম লীগ যেদিন তৈরি হল, সেদিন মুজিব মিটিংয়ে ছিলেন না। বোধহয় কোনও কাজে ফরিদপুরের গাঁয়ের বাসায় ছিলেন। অপর যুগ্ম সম্পাদক খোন্দকার মোস্তাক আপত্তি জানিয়ে মওলানা ভাসানী-কে মুজিবুর রহমানকে দলের উঁচু পদে বসাতে মানা করলেন। যুক্তি ছিল, যে মিটিংয়েই নেই, সে কী করে অত গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবে! ভাসানী ধমকে খোন্দকার মোস্তাককে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি মুজিবকে চেনেন, ফলে ওর মতো দক্ষ সংগঠককে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠেই না। তাকে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েই দলে রাখতে হবে।

    শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদ

    ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস যে, সেই খোন্দকার মোস্তাকই ষড়যন্ত্র করে শেখ মুজিব কে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবার হত্যা করলেন। অথচ তার আগের দিন অবধি শেখ পরিবারের সঙ্গে তার ছিল গভীর সখ্য। সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মোস্তাক ক্ষমতা দখল করলেন কিন্তু আওয়ামী লীগার হিসেবেই। বৃদ্ধ, নিঃসঙ্গ মওলানা ভাসানী তখন ক্ষমতার অলিন্দ থেকে অনেক দূরে। তাঁর প্রিয় মুজিবুর তাঁকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন ১৯৭৪ সালেই। দেশের একমাত্র সতত সোচ্চার বিদ্রোহী কণ্ঠ হওয়ার অপরাধে। শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ শিরোপা তাঁর দলের ছাত্র নেতা তোফায়েল আহমেদের দেওয়া। ‘জাতির পিতা’, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’— এসব ন্যারেটিভ   দীর্ঘ সময় ধরে নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশ তো বটেই, এপার বাংলায় জনমনে তা চারিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, ইতিহাস কোথাও, কোনওদিনই নিছক আবেগ দিয়ে চলে না। যে কোনও মহানায়কের সাদা, কালো দু’টি দিক থাকে। নেতি বাদ দিয়ে শুধুই ইতিবাচক দিক নিয়ে চর্চা করলে, তা ইতিহাস অবমাননা। আওয়ামী লীগ সেই ভুল বা অন্যায়টিই করে চলেছে বছরের পর বছর। একজনকে মহান বানাতে অন্যান্য সব চরিত্রকে লীগ ন্যারেটিভ থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।

    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিত গড়ে উঠেছিল, মুলত ১৯৫২ সালে, বাংলা ভাষা আন্দোলনের দৌলতে। সেই আন্দোলনে তরুণ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না। তিনি তখন সরকারি কর্মচারীদের হয়ে আন্দোলনে শামিল হয়ে জেলে ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন কমিউনিস্ট ছাত্রদের তরুণ অংশ। অলি আহাদ, আব্দুল মতিন মহম্মদ তোহা প্রমুখের। এই তরুণদের প্রতি সমর্থন ছিল মওলানা ভাসানীর। আইনসভায় বাংলা ভাষার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, তর্কবাগীশ সাহেবেরা। ভাষা আন্দোলন-পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। এর মাঝামাঝি অনেক ঘটনা, অনেক সংঘর্ষের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগকে মুছে দিয়ে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দি, ভাসানীর যুক্তফ্রন্টের ক্ষমতা দখল। পাকিস্তানের শাসকদের সঙ্গে ধীরে ধীরে বাঙালি জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্বে সামনে আসতে লাগল। শেখ সাহেব ভাষা আন্দোলনের মধ্যমণি ছিলেন না, এটা চেষ্টা করলে যে কেউই দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে জেনে নিতে পারেন। কিন্তু পরবর্তীতে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার আমলে মুজিব ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রধান নেতা— এই ধারণা নির্মাণের জন্য আওয়ামী বুদ্ধিজীবী এবং প্রাক্তন বামদের একাংশ উঠে পড়ে লাগে। যেন ভাষা আন্দোলনে শেখ সাহেবের অবদান তত গুরুত্বপূর্ণ না হলে তা জাতির লজ্জা। লড়াইয়ে যে কালেক্টিভনেস দরকার, এটি স্বীকার না করার এই আওয়ামী প্রবণতায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে খোদ শেখ মুজিবুর রহমানের।

    শেখ মওলানা ভাসানী

    পূর্ব বাংলার গণসংগ্রামের মুল কারিগর সন্দেহাতীতভাবে মওলানা ভাসানী। তিনি ছিলেন মজলুম জননেতা। ১৯৫৭ সালে সন্তোষের কাগমারী সম্মেলনেই তিনি পাকিস্তান শাসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ছিলেন আলাদা হওয়ার। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাসানীর বিরোধ বাধে মুলত স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নেই। সোহরাওয়ার্দী তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বললেন, পূর্ববঙ্গে আটানব্বই শতাংশ স্বায়ত্তশাসন হয়ে গেছে। এছাড়াও লীগের সঙ্গে ভাসানীর মতপার্থক্য ছিল আমেরিকার প্রশ্নেও। সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবরা ছিলেন বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে আমেরিকার দিকে। ভাসানী ও তাঁকে ঘিরে থাকা সমগ্র পাকিস্তানের কমিউনিস্ট ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির দাবি ছিল, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা চলবে না। এই প্রশ্নদু’টিতেই আওয়ামী লীগ ভেঙে জন্ম নিল ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ, সংক্ষেপে ন্যাপ। ন্যাপে যোগ দিলেন সারা দেশের কমিউনিস্ট, প্রগতিশীল অংশ। তার মধ্যে ছিলেন সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুর গফুর খান-সহ পশ্চিম পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের সবাই, শেখ মুজিব কখনও দেশে বাম রাজনীতির উত্থান মেনে নিতে পারেননি।

    জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান বিশ শতকের ছয়ের দশকের মাঝামাঝি। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের আকস্মিক মৃত্যুর পর। ওই সময় বিশ্বরাজনীতিতে যেমন কমিউনিস্ট প্রভাব ক্রমবর্ধমান, ঠিক তেমনই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিংশতিতম কংগ্রেসে শান্তিপূর্ণ পথে সমাজতন্ত্র-নীতি নিয়ে চীন-সোভিয়েত বিরোধে দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর বিরোধের হাওয়া এসে লাগল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেও। ন্যাপ টুকরো টুকরো হয়ে গেল। মুজিবুর রহমানের ছ’দফা তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। নব্য উত্থিত বাঙালি শিল্প গোষ্ঠী পাশে এসে দাঁড়ালেন ছ’দফায়। মধ্যবিত্ত জনমনে শেখ মুজিব তখন অবিসংবাদিত নেতা। ঢাকার রাস্তা উত্তাল হল— বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, পূর্ব বাংলা স্বাধীন করো স্লোগানে। অন্যদিকে ভাসানীর নেতৃত্বে বামপন্থীরা আওয়াজ তুললেন, শ্রমিক-কৃষক অস্ত্র ধরো, সমাজতন্ত্র কায়েম করো।

    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিত গড়ে উঠেছিল, মুলত ১৯৫২ সালে, বাংলা ভাষা আন্দোলনের দৌলতে। সেই আন্দোলনে তরুণ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না। তিনি তখন সরকারি কর্মচারীদের হয়ে আন্দোলনে শামিল হয়ে জেলে ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন কমিউনিস্ট ছাত্রদের
    তরুণ অংশ।

    ১৯৭০-এর নির্বাচনে স্নেহের মুজিবুরের স্বার্থেই বোধহয় ন্যাপ ভোট থেকে সরে দাঁড়াল। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানের শাসকেরা শেখ মুজিবকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি না দিতে ২৫ মার্চ মিলিটারি ক্র্যাকডাউন করল। প্রশ্ন হচ্ছে, ৭ মার্চ যদি স্বাধীনতার ডাক দিতেন, তবে দীর্ঘ সময় তিনি টালবাহানা করতেন না ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোর সঙ্গে মিটিং করে। পাকিস্তান যে সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে পাঠাচ্ছে, সেই পাকা খবর কিন্তু আগেই শেখ মুজিব পেয়েছিলেন। তাঁকে বারবার বাঙালি রেজিমেন্টের লোকজন সতর্ক করেছিলেন। শেখ সাহেবের এই সিদ্ধান্তহীনতা নেতা হিসেবে সমর্থনযোগ্য নয়। ২৫ মার্চ রাতেও আওয়ামী লীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড তাজউদ্দীন আহমদ স্বয়ং ছুটে গিয়েছিলেন শেখ সাহেবেকে বলতে যে, পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনার হাইডআউটে যাবার কথা। মুজিব অস্বীকার করে সারেন্ডার করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তাজউদ্দীন আহমদ শেষ চেষ্টা করলেন, তাঁর মুজিব ভাইকে ছোট্ট টেপরেকর্ডার এগিয়ে দিয়ে অনুরোধ করলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে। শেখ সাহেব আঁতকে উঠলেন, তুমি কি চাও, পাকিস্তান আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলুক!

    আসলে মুজিবুর রহমান সম্ভবত নিশ্চিত ছিলেন না, দেশ স্বাধীন হবেই। তার পরের ইতিহাস তো মোটামুটি জানা। যুদ্ধের নায়ক নিঃসন্দেহে তাজউদ্দীন আহমদ।

    বাংলাদেশ স্বাধীন হল। বিপুল জনপ্রিয় মুজিবুর রহমান স্বদেশে ফিরতে না-ফিরতেই তাজউদ্দীনকে বললেন, প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আমি হব। দেশশাসক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের মোটেও সুনাম ছিল না। শুরুতেই তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে মতান্তর ঘটল শেখ মুজিবের। দু’জনের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। মুজিব আন্তর্জাতিক ইসলামী কনফারেন্স গেলেন দলের নেতাদের পরামর্শ না নিয়ে। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের, এমনকী, রাও ফরমান আলীর মতো কুখ্যাত অপরাধীকেও মার্জনা করলেন। তৈরি করলেন, রক্ষী বাহিনী। সেই রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে তুলনীয় বর্গি আক্রমণের ইতিহাস। হাজার হাজার বাম কর্মী-সমর্থক রক্ষীবাহিনীর হাতে নিহত হলেন। গণতান্ত্রিক সব পদ্ধতি নিষিদ্ধ করে গড়ে তোলা হল বাকশাল।

    দুর্ভাগ্য, শেখ মুজিবের বন্দনা করতে গিয়ে তাঁর স্বৈরাচারী শাসনের চেহারার কথা কখনও বলি না। এ মোটেও ইতিহাসের সঠিক নির্মাণ নয়।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook