ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • না-ফেরার দেশ

    অর্পণ গুপ্ত (March 17, 2025)
     

    কল্পনা চাওলা ফিরে আসতে পারলেন না। কেপ কানাভেরাল থেকে উৎক্ষেপণের দেড় মিনিটের মাথায় গণ্ডগোল; মহাকাশযানের সমস্ত সেন্সর অকেজো হয়ে পড়ছিল, মরিয়া চেষ্টা করেও কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না কম্যান্ডার। এদিকে হাইড্রলিক ট্যাঙ্কে লিক হয়ে যাওয়ার ফলে বাইরে বেরিয়ে আসছিল দাহ্য গ্যাস, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশমাত্রই ঘর্ষণের ফলে আগুন ধরে গেল। কয়েক মুহূর্তে সব শেষ। চিরতরে হারিয়ে গেলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা। মেঘের মধ্যেই সমাধি নির্মাণ হয়ে গেল কল্পনা চাওলার— খুব ছোটবেলা থেকে তাঁর ইচ্ছে ছিল মহাকাশে হারিয়ে যাওয়ার।

    বছর বাইশ আগে, এমন মনখারাপি দিনে, যখন সদ্য টেলিভিশন নিউজে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা আমরা দেখছিলাম কল্পনার হারিয়ে যাওয়ার খবর, আমরা যারা সে-সময়ে কৈশোর ডিঙোচ্ছি বারবার মনে পড়ছিল সদ্য শেষ করে ওঠা চাঁদের পাহাড়ের কথা। অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় আলভারেজের সমাধি যখন শঙ্কর গড়ে দিল আফ্রিকার ঘন অরণ্যে তখন বিভূতিভূষণ লিখছেন, ‘দুঃসাহসী ভবঘুরের উপযুক্ত সমাধি বটে। অরণ্যের বনস্পতিদল ছায়া দেবে সমাধির ওপর। সিংহ, গরিলা, হায়না সজাগ রাত্রি যাপন করবে, আর সবারই ওপরে, সবাইকে ছাপিয়ে বিশাল রিখটারসভেল্ড পর্বতমালা অদূরে দাঁড়িয়ে মেঘলোকে মাথা তুলে খাড়া পাহাড়া রাখবে চিরযুগ…’— কল্পনার সমাধিও এমনই; আর সেই ট্র্যাজেডিই জন্ম দিয়েছিল হাজার হাজার কল্পনাকে। ভারতে মহাকাশ গবেষণারা যে বিশাল দিগন্ত খুলে গিয়েছিল এই শতকের প্রথম দশকে, পিছনে কল্পনা চাওলা ট্র্যাজেডির ভূমিকা অপরিসীম। আর বর্তমানে ন’মাস ধরে স্পেস স্টেশনে আটকে থাকা আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস ফের উসকে দিচ্ছেন বাইশ বছর আগে নাসার কলম্বিয়া মহাকাশযান উড়ানের স্মৃতি।

    তবে, এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মহাকাশ থেকে কল্পনা ফিরে এসে কোন পৃথিবীকে দেখতেন? সে পৃথিবী কতখানি সুখকর কল্পনার জন্য?

    আরও পড়ুন : মহাকাশ থেকে ইউরি গ্যাগারিন এসে নেমেছিলেন এক যৌথখামারে! লিখছেন সোহম দাস…

    খুব সম্ভবত সুনীতা উইলিয়ামস ফিরে আসবেন কয়েকদিনের মধ্যে, নাসার প্রাণান্তকর চেষ্টা সফল হোক সেই প্রার্থনাই করছেন বিশ্ববাসী, কিন্তু মজার বিষয় হল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুনীতা উইলিয়ামস প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনটি বক্তব্য রাখলেন, যার একটিও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, লৌকিকতা, প্রাসঙ্গিকতার সূচকে কোনও রাষ্ট্রনায়কের কাছে অভিপ্রেত নয়। কী বললেন ট্রাম্প? তাঁর বক্তব্য, জো বাইডেন সুনীতাদের স্পেসে পাঠিয়ে চলে গেছে। স্পেস সেন্টারে আটকে পড়ার পিছনে যে কোনও রাষ্ট্রনায়কের হাত থাকতে পারে, এমন অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ব্যতীত হওয়া সম্ভব না। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর বারংবার বিভিন্ন ইস্যুতে বাইডেনকে আক্রমণ করেছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যাবিনেটের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে ক্ষণে ক্ষণে কুকীর্তি ঢাকতে দোষারোপ করেন জওহরলাল নেহরুকে, এও তার ব্যতিক্রম না।

    কলম্বিয়া ফ্লাইট এসটিএস-১০৭-এর বাকি সহযাত্রীদের সঙ্গে কল্পনা চাওলা…

    দ্বিতীয়ত, স্পেস স্টেশনে থাকা সুনীতা অভিকর্ষ বলহীন আবহে ভেসে থাকায় তাঁর চুল অবিন্যস্ত অবস্থায় আছে, নানা ছবিতে তা বারংবার দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে মশকরা করে, ‘বন্য’ বা ‘ওয়াইল্ড’ শব্দটি ব্যবহার করে বসলেন। স্পেস স্টেশনে ন’মাস বন্দি থাকা মানুষের শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার বদলে একজন হোয়াইট হাউসের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন মশকরা করার কথা ভাবছেন। কল্পনা চাওলা-সহ সাতজন মহাকাশচারীকে নিয়ে কলম্বিয়া স্পেস শাটল ভেঙে পড়ার দিন হোয়াইট হাউসের তৎপরতা ছিল দেখার মতো, সেই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু বুশ নাসার সঙ্গে কার্যত হাতে হাত মিলিয়ে কলম্বিয়া স্পেস মিশন ডিজাস্টারের কারণ অনুসন্ধানে ‘কলম্বিয়া অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন বোর্ড’ গঠন করেন। নাসার কনফার্মেশনের পর তৎক্ষণাৎ বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় এবং কল্পনা-সহ সাত জনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও নস্যাৎ করে দেয়া হয়।

    ভারতে মহাকাশ গবেষণারা যে বিশাল দিগন্ত খুলে গিয়েছিল এই শতকের প্রথম দশকে, পিছনে কল্পনা চাওলা ট্র্যাজেডির ভূমিকা অপরিসীম। আর বর্তমানে ন’মাস ধরে স্পেস স্টেশনে আটকে থাকা আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস ফের উসকে দিচ্ছেন বাইশ বছর আগে নাসার কলম্বিয়া মহাকাশযান উড়ানের স্মৃতি।

    সুনীতা উইলিয়ামসের পৃথিবীতে ফিরে আসার ক্ষেত্রে নাসা অতিরিক্ত সাবধানী, কলম্বিয়া ডিজাস্টারের পর তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সুনীতাদের ফেরানোর ক্ষেত্রে। যে-কারণে এতদিনের অপেক্ষা।

    কিন্তু প্রশ্ন হল, কল্পনার মহাকাশে বিলীন হয়ে যাওয়ার বাইশ বছর পর বিশ্বের এই যে বদলে যাওয়া, যেখানে রাষ্ট্রনেতা থেকে গড়জনতা— সকলেরই মানবিকতার বিপুল অবক্ষয়, মহাকাশ থেকে এই নীলগ্রহীর বদলে যাওয়া দেখে কি অগোচরে কষ্টই পাচ্ছেন কল্পনা? কিংবা সুনীতা উইলিয়ামস ফিরে আসছেন যে পৃথিবীতে, সে পৃথিবীর বুকেই কি নতুন স্বপন বুনে দিতে নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন কল্পনা চাওলা? গুগল জানাচ্ছে, বেঁচে থাকলে আজ ৬৪ বছর বয়স পূর্ণ করে ফেলতেন কল্পনা চাওলা। হয়তো করেছেন, অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে— তাঁরই উত্তরসূরি সুনীতার স্পেস স্টেশনের ছবি ভিডিও নিয়ে যেখানে রাষ্ট্রনেতারা পারস্পরিক খেউড়ে মত্ত, যেখানে মজা-মশকরা হয় তাঁদের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে, সেই পৃথিবী থেকেই তো পালাতে চেয়ে মহাকাশে ভেসে বেড়াতে চাইতেন কল্পনা।

    এই পৃথিবীতে ফেরার স্বপ্ন কি দেথতেন কল্পনা চাওলা?

    মহাকাশ তাঁকে অপহরণ করে নিয়েছে চিরতরে, নীল গোলকে পড়ে আছে শুধু পারস্পরিক ঘৃণা-ঈর্ষা ও দেখনদারি। যে কারণে মিডিয়ার সামনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে হয়, ‘আমি ইলন মাস্ককে বলেছি ওদের ফিরিয়ে আনতে।’ নরেন্দ্র মোদী যেমন দেশের যাবতীয় সাফল্যের আলো এনে ফেলেন মুকেশ আম্বানির মুখে, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা-ই ইলন মাস্কের মতো ধনকুবের। সুনীতাদের ফিরে আসা হবে ট্রাম্পের পরবর্তী তাস।

    সুনীতারা ফিরে আসার আগে শেষবার মহাকাশ থেকে এই নীল গোলককে প্রাণভরে দেখে নিন, যেমনটা দেখেছিলেন আপনার পূর্বসূরি। কারণ ফিরে আসার পর এতটা সুন্দর আর বোধহয় লাগবে না আজকের অসহিষ্ণু পৃথিবীকে।       

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook