ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • মনডে ব্লুজ : পর্ব ১


    প্রচেত গুপ্ত (January 13, 2025)
     

    রবিও নেই, সোমও নেই

    পেশায় এবং নেশায় আমার সপ্তাহ এমন সেজেছে, সেই তরুণ বয়স থেকেই, যেখানে রবি-সোমের হিসেবটাই দূরদ্বীপবাসী হয়ে উঠেছে। রবিবার যেন অধরা, রহস্যময়ী কেউ, তাই সোমবারেরও কোনও অস্তিত্ব নেই আমার কাছে। সংবাদপত্রের সঙ্গেই পেশাগতভাবে যুক্ত থাকার কারণে, রবিবার, অন্তত ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ছুটি হিসেবে আসেনি কখনও, ফলে সোমবারের কাজে ফেরার অনীহাও আমার ছিল না। রোববারের টানেই তো সোমবার আসে, যার রোববারই নেই, তার সোমবার আসবে কী করে? ফলে, ওই আলিস্যিও আমার নেই। আবার ‘মনডে ব্লুজ’ ব্যাপারটার তো একটা আনন্দও আছে। একটু পাশ ফিরলাম, একটু চিৎ হয়ে শুলাম, আড়মোড়া ভাঙলাম ছুটি কাটিয়ে উঠে— সেই আনন্দও আমি পাইনি কোনওদিন।

    আমার পেশা না-হয় সাংবাদিকতা, কিন্তু নেশা হয়ে উঠল লেখালিখি। পেশা কিছুটা নেশার মধ্যে সেঁধিয়ে গেল, নেশা কিছুটা পেশায় অনুপ্রবেশ করল ধীরে ধীরে। কিন্তু সেই নেশায়, লেখালিখিতেও, রোববার বলে কিছু নেই। রোববার গল্প লিখব না, ফলে সোমবার সকালে গল্প লিখতে আর ভাল লাগছে না— এমনটা মনে হওয়ার কোনও অবকাশই রইল না। এর দরুন, আমার রোববারটা গেল হারিয়ে, কোথায় যে সে চলে গেল, কে জানে! সোমসকালের ওই কীরম কীরম ভাব, সপ্তাহশেষের ছুটির মেজাজ কাটিয়ে, আবার কাজে ফেরার দুঃখটিও আমার নেই।

    কিন্তু যত বয়স বেড়েছে, প্রায় বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছব-পৌঁছব করছি, তখন সার বুঝেছি, সপ্তাহের প্রতিটি দিনই আমার কাছে মনডে ব্লুজ। সোমবারও মনে হয়, আবার লিখতে বসতে হবে! মঙ্গলবারও এসে আমাকে চেপে ধরে, বুধবারও মনে হয়, কেন যে আবার লিখতে বসতে হচ্ছে! ফলে সারা সপ্তাহটা জুড়েই, আমার নেশা নিয়েও এই আলস্য আমাকে ইদানীং পেয়ে বসছে। পেশাটির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা প্রায় এক। এই রে আজও কাজ করতে হবে— এমন ভাবনা তো প্রায় রোজকার।

    আরও পড়ুন : তুই তো আধুনিক কবিতা লিখিস, কবিতার খাতা দেখে বলেছিলেন আত্মীয়…

    ফলত, আর পাঁচজনের যেমন শনিবার বিকেল থেকে ছুটির মেজাজ, সোমবারের মনখারাপ— আমার তা নেই। কিন্তু তা বলে কি আমার ছুটি নেই? আমার কি কোনও কর্মহীন অবস্থা থাকতে নেই? আমার পেশার সকলের ক্ষেত্রেই, আমি নিশ্চিত নই, আদৌ কোনও ছুটির আমেজ আছে কি না! ধরা যাক, বুধবার আমার ছুটির দিন, বৃহস্পতিবার তো হিসেবমাফিক আমার মনডে ব্লুজ হওয়ার কথা। কিন্তু সেদিন সকালে যদি কোনও রোমহর্ষক খবর পেয়ে যাই, তখন কি আর আমার মনখারাপ হবে? হয়তো সে খবর লিখে ফেলতে পারলেই আমি দোর্দণ্ডপ্রতাপ, চাই কী, হয়তো খোদ ম্যাগসাইসাইও পেয়ে যেতে পারি! তখন তো বরং উৎসাহ-উদ্দীপনাই বেশি। তখন বরং মনে হবে, ছুটির দিন নিপাত যাক! বা ধরা যাক, সুর নিয়ে কারও কারবার! তার মাথায়, ছুটি-অছুটি— যাই হোক— কোনও সুর এলে কি সে গিটার ফেলে রেখে চলে যাবে?

    এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, মনডে ব্লুজ কি শখের? তা কি শখ করে খুঁজে পাওয়া যায়?

    কার্টুন চরিত্র গারফিল্ড পছন্দ করত না সোমবার

    আমি বলতে পারি, সেই তরুণ বয়স থেকে, যেহেতু কর্মে ও অ-কর্মে আমি ঢুকে পড়েছিলাম, ফলে এখন আমি নিজেই আমার নিজের মনডে ব্লুজ তৈরি করেছি, সেই বিষাদ, সেই আলিস্যির সোমবার আদতে আমার প্রতিদিন। সেই মনডে ব্লুজ মঙ্গলবার বিকেলেও আসতে পারে, বুধবার সন্ধেতেও আসতে পারে, আবার রোববারও আসতে পারে। যে-কোনও সময় সে আমাকে ঘায়েল করতে পারে! কারও যদি মনডে ব্লুজ না-ই থাকে, যদি কঠোর কর্মজীবনেই কেউ সন্তুষ্ট হয়ে পড়ে, তাহলেও তো তার বাঁচার রসটুকু হারিয়ে যাবে।

    আমাকে অনেকে বলে, তুমি ভাই ছুটিছাটা নিয়ে কোথাও চলে গিয়ে লেখো। আমি ভাবি, ছুটির মধ্যেও লেখালিখি সত্যিই যদি ঢুকে বসে থাকে, তাহলে আর তা ছুটি কীসের! বড় বড় লেখকদের থেকেও আমার তাই জানতে ইচ্ছে করে, ছুটিই যদি নিলেন, তবে আপনি লিখলেন কেমন করে?

    ছুটির দিন যাকে ভাবি, সেসব দিনে আমার পেশা ও নেশা সবসময়ই আমাকে কড়া চোখে ধমক দিয়েছে! শুধু আমাকে বোধহয় নয়, এই আমার মতো যারা যারা বাধ্যতামূলক ও অ-বাধ্যতামূলক বিড়ম্বনার মধ্যে থাকে— তাদের সকলেরই বোধহয় এমনটা ঘটে। সকলকেই বুঝি এমন অনুভবের মুখোমুখি হতে হয়। আমার এখন প্রায়ই মনে হয়, আগের দু’দিন বুঝি আমার ছুটি ছিল। আগের দিনের কাজ ভুলে যাই, আপিস হোক, লেখালিখি হোক। মনে হয়, আজকের দিনটাও বোধহয় ছুটি থাকলে ভালই হত। যে ছুটির অস্তিত্ব নেই, যে ছুটি ছিল না, সেই ছুটির যে কী আশ্চর্য হ্যাংওভার!

    আমাকে অনেকে বলে, তুমি ভাই ছুটিছাটা নিয়ে কোথাও চলে গিয়ে লেখো। আমি ভাবি, ছুটির মধ্যেও লেখালিখি সত্যিই যদি ঢুকে বসে থাকে, তাহলে আর তা ছুটি কীসের! বড় বড় লেখকদের থেকেও আমার তাই জানতে ইচ্ছে করে, ছুটিই যদি নিলেন, তবে আপনি লিখলেন কেমন করে?

    আমি যেমন ছুটিকেও হিংসে করি, শনি-রবিকেও হিংসে করি, তেমনই সোমবারের ভাল না-লাগা, সোমবার আবার কাজে যাওয়ার এই মনকেমনকেও হিংসে করি।

    যে বেচারি কবি শনিবার আপিস করে এসে কবিতা লিখতে বসেছে, তার শনিবার রাত গেল, ছন্দ মিলল না, শেষ রাতে হয়তো কিছুটা মিলল। রবিবার লিখতে বসে, সারাদিন কাটিয়ে, চুল ছিঁড়ে ছন্দ একটু এল বটে, সেও ভাবল, যাক, হল কিছু! কিন্তু সোমবার সকালে যদি তার মনে হয়, কবিতাটাই তো লেখা হল না, তখন তো আবার তাকে কলম বাগিয়ে বসতে হবে। ফলে, লেখালিখির ব্যাপারটা, প্রায় একশো দিনের কাজের মতো।

    তাই, পেশা আর নেশা মিলিয়ে, ইদানীংকালে বুঝি, ‘আমাদের যে রোববার গেছে, একেবারেই কি গেছে’ বলে বিষাদ করে লাভ নেই। বরং, আদতে আমরা, বা আমি নিজে, হারিয়েছি এই সোমবারটাকেই। সোমবারের কাজে যাওয়া নিয়ে, অসুখের আড়ালে এই যে সুখানুভূতি, এই যে শখ-আহ্লাদটুকু, তা আর পাওয়া হল না এ-জীবনে।

    শেষে একটা ঘটনা বলি। একবার এক সাহিত্য সম্মেলনে গিয়ে দুপুরবেলা মাছ-ভাত খেয়েছি আয়েস করে। অমন সুস্বাদু মধ্যাহ্নভোজ সেরে, একটু না ঘুমলে কি পূর্ণস্বাদটা পাওয়া যায়? কিন্তু সেই আধিকারিকরা এমন তাড়া দিতে শুরু করল সন্ধের অনুষ্ঠানের জন্য, সেই ঘুম আর হয়েই উঠল না।

    মাছভাতের ব্লুজ-ও পাই না। মনডে ব্লুজ-ও পাই ন। অপরাধটা কী করেছি, লিখেছি দু-লাইন!

     
      পূর্ববর্তী লেখা
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook