ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ‘শ্রী দোদুল্যমান’


    রঞ্জন বন্দোপাধ্যায় (January 6, 2025)
     

    দিলীপকুমার রায়ের (১৮৯৭ – ১৯৮০) সঙ্গে জানুয়ারি মাসের সর্ম্পক জীবন-মৃত্যুর। তিনি জন্মেছিলেন, ২২ জানুয়ারি। তাঁর মৃত্যু, ৬ জানুয়ারি। ঠিকই ধরেছেন, আমি সেই দিলীপকুমার রায়ের কথা বলছি, যিনি নাট্যকার, কবি, গায়ক, সুরকার এবং রসিক, অতি-বিখ্যাত বাঙালি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র। তবে আপনি যদি একেবারে একালের বাঙালি হন, মানে আপনার বয়স যদি বিশ-বাইশের বেশি না হয়, তাহলে আপনি দিলীপকুমার রায়কে না-ও চিনতে পারেন। এমনকী, তাঁর বিখ্যাত বাবাকেও কাঁধের ঝাকুনি দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারেন। তাতে আপনার লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। লজ্জা পাওয়ার কথা আমারই, আমার এই বেমক্কা সেকালমুখিতার জন্য। তবে যেহেতু ইন্টেলেকচুয়াল ব্রিলিয়ান্স, বুদ্ধিমত্তার দ্যুতির কোনও কাল-অকাল নেই, দিলীপকুমারের বোধবুদ্ধির আলো দিয়েই শুরু করা যাক। তাতে হয়তো অতি আধুনিক বঙ্গসন্তানদের আমি বলতে সাহস পাব— দাঁড়াও পথিকবর জন্ম যদি তব বঙ্গে…

    দিলীপকুমার চোদ্দ-পনেরো বছর বয়সে মূল সংস্কৃতে বেদ ও উপনিষদ পড়ে ফেললেন। এবং আবৃত্তি করতে পারতেন উপনিষদ এবং সংস্কৃত কাব্য। এরপর তিনি ভারতের এবং বিদেশের গণিতে প্রবেশ করলেন। এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হলেন অঙ্কশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণির অনার্স নিয়ে। এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দিলীপ। তিনি দু-বছরের মধ্যে সেখানে অঙ্কশাস্ত্রে ট্রাইপস! এরপর আর গণিতে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতে চাইলেন না দিলীপ। তাঁকে ছেলেবেলা থেকেই টানে সাহিত্য ও সংগীত। সেই সময় তাঁর প্রয়াত পিতা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডে। ইতিমধ্যে শরৎচন্দ্র , যাকে দিলীপ শরৎদা বলে ডাকেন, আলাপ করিয়ে দিয়েছেন দিলীপকে কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। আলাপ হতেই, রবীন্দ্রনাথ দিলীপকে বলেছেন, ‘শরতের কাছে শুনেছি, তুমি ভারি সুন্দর গান করো। আমাকে শোনাও।’ দিলীপ শুনিয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে, তাঁর বাবার লেখা প্রেমের গান। এবং স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ প্রেমে পড়েছেন দিলীপের কণ্ঠ-মধুরিমার।

    আরও পড়ুন : বারীন ঘোষকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ…

    ইংল্যান্ডে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেই আচমকা একটি বোমা ফাটালেন দিলীপ। বললেন, ‘কেমব্রিজে ট্রাইপস করার পর ভাবছি এবার এখানে চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পড়ব।’ রবীন্দ্রনাথ একইসঙ্গে বিস্মিত ও স্তম্ভিত। তাঁর মুখে কথা বন্ধ। তারপর বললেন, ‘ইউ আর দ্য লিমিট! তুমি কেমব্রিজে ট্রাইপস করে এবার পরের অর্থের হিসেব করবে! তুমি এখনই জার্মানি চলে যাও। সেখানে ওয়েস্টার্ন মিউজিকে তালিম নাও। দু-বছরের আগে দেশে ফিরো না।’ দিলীপ জানতেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর মনের কথাটাই বলবেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের অনুমতি ও আদেশ পেয়ে দিলীপ জার্মানি গিয়ে ডুব দিলেন পাশ্চাত্য সংগীতের গহনে।

    শুধু জার্মান নয়, ইতালিয়ান সংগীত ইতালিতে গিয়ে চর্চা করলেন দিলীপ। এরপর দেশে ফিরে দিলীপ ঝাঁপ দিলেন ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের সমুদ্রে। ফয়েজ খাঁ, আবদুল করিম, পণ্ডিত ভাতখন্ডে, কার কাছে না উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নিয়েছেন দিলীপ। কিন্তু সবসময় মনে রেখেছেন রবীন্দ্রনাথের উপদেশ: ‘হিন্দুস্থানী সংগীত আমরা শিখব পাওয়ার জন্যে, ওস্তাদি করার জন্যে নয়।’

    এই যুগের ক’জন বাঙালি জার্মানি যান, তারপর ঘুরে বেড়ান ইউরোপের দেশে দেশে ইউরোপীয় সংগীতের আত্মার সন্ধানে? দিলীপকুমার সেই সেকেলে বাঙালি যিনি এই দুরূহ কাজটি করেছিলেন। এবং রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন, দিলীপই পারবেন এই কাজটি করতে, কারণ তাঁর রক্তে সংগীত।

    তরুণ দিলীপকুমার রায়

    দিলীপের ঠাকুরদা দেওয়ান কর্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন এক অতীব সুগায়ক। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শিবনাথ শাস্ত্রী, রামতনু লাহিড়ী, রাজনারায়ণ বসু— সবাই মুগ্ধ ছিলেন তাঁর গানে। দিলীপ রায় লিখেছেন, ‘আমার পিতৃদেব দ্বিজেন্দ্রলাল কতবার বলেছেন আমাকে, আমার গান শুনে তোরা মিষ্টি বলিস তো? তোর ঠাকুরদার গলা যদি একবার শোনবার সৌভাগ্য তোর হত রে… তাহলে আমার গলা শুনে বলতিস, ছি ছি।’ দিলীপ আরও লিখেছেন রসিয়ে: “ঠাকুরদার ‘আত্মজীবনচরিত’ পড়ে জানতে পারি, তাঁর মিষ্ট কণ্ঠ শুনে কত মেয়েরা তাঁর প্রেমে পড়ত। একদিন এক কিশোরী সুন্দরী বাইজি কাতর স্বরে ঠাকুরদাকে বলেছিল, আপনার মতো মধুর গীত আর কারও কণ্ঠে শুনিনি। আপনি বলুন আমাকে ভালবাসেন কি না।”

    দিলীপ জন্মেইছিলেন তাঁর রক্তে সুর ও সংগীত নিয়ে। তিনি নিজে জানিয়েছেন তাঁর ‘স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থে, হিন্দুস্থানী গানে তাঁর প্রথম অনুরাগ হয় সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের অপরূপ খেয়াল শুনে। সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন দিলীপের পিতৃবন্ধু। তবে দিলীপ একথাও বলেছেন, বাঙালি ছেলেমেয়ে সবাই চায়, ভাবের সঙ্গে সুরের মিলন। রবীন্দ্রনাথ এই কথাটাই বলেছেন অন্যভাবে: বাংলাদেশে সংগীতের প্রকৃতিগত বিশেষত্ব হচ্ছে বাণী ও সুরের অর্ধনারীশ্বর রূপ। প্রসঙ্গত, উল্লেখ করছি দিলীপকে রবীন্দ্রনাথের চিঠি: ‘তুমি ভারতবর্ষের সংগীতলোকে বিচরণ করতে বেরিয়েছে, নিজে সুধা পান করে আসবে আর আমাদের জন্যেও সুধাপাত্র পূর্ণ করে আনতে পারবে।’

    রবীন্দ্রনাথের দিলীপকুমারকে লেখা চিঠি

    শুধু জার্মান নয়, ইতালিয়ান সংগীত ইতালিতে গিয়ে চর্চা করলেন দিলীপ। এরপর দেশে ফিরে দিলীপ ঝাঁপ দিলেন ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের সমুদ্রে। ফয়েজ খাঁ, আবদুল করিম, পণ্ডিত ভাতখন্ডে, কার কাছে না উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নিয়েছেন দিলীপ। কিন্তু সবসময় মনে রেখেছেন রবীন্দ্রনাথের উপদেশ: ‘হিন্দুস্থানী সংগীত আমরা শিখব পাওয়ার জন্যে, ওস্তাদি করার জন্যে নয়।’

    কিছুদিনের মধ্যেই দিলীপ ফিরে গেলেন ইউরোপ। সংগীত সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে। তারপর হঠাৎ ১৯২৮ থেকে ১৯৫০— দিলীপ পন্ডিচেরিতে, অরবিন্দ আশ্রমে। আধ্যাত্মিক চর্চায়।

    ‘মাদার’-এর সঙ্গে দিলীপকুমার রায়, অরবিন্দ আশ্রমে

    আমরা বরং ফিরে যাই দিলীপের ইউরোপ-চর্চায়। এবং সংগীত ও দর্শনে তাঁর নিবিড় গভীরতায়। দিলীপ লিখেছেন, ইউরোপের প্রভাবে কীভাবে বৈরাগ্যের বাণী তাঁর জীবনের একটি পর্যায়ে অন্তর থেকে একটু একটু করে দূরে সরে গিয়েছিল। শুধু যে ইউরোপের প্রভাবে এটা ঘটেছিল, তা নয়। দিলীপকে বুঝতে তাঁর ওপর প্রেসিডেন্সি কলেজে সহপাঠী সুভাষের (সুভাষচন্দ্র বসু) প্রভাবও বুঝতে হবে। জানতে হবে, সুভাষের প্রতি দিলীপের গভীর ভালবাসার কথা। অনুভব করতে হবে সুভাষকে নিয়ে দিলীপের অকৃত্রিম মুগ্ধতা। দিলীপ ব্যাখ্যা করে লিখছেন, বন্ধু সুভাষকে নিয়ে কিছু কথা, যা সুভাষ সম্পর্কে আমরা এখন আর মনে রাখি না বা জানি না: ‘সুভাষ বরণ করে নিয়েছিল ইউরোপের দুর্জয় প্রাণশক্তির স্পন্দন। আমার মধ্যে দ্বিধা ছিল। তাই আমি ইউরোপের গতিসর্বস্ব ইহলৌকিকতাকে বরণ করতে ইচ্ছে হলেও ভয় পেতাম, পাছে ভারতের স্থিতপ্রজ্ঞ পারমার্থিক দর্শনকে হারিয়ে ফেলি। আমার মন তাকেই বলত মানুষের পরম বুদ্ধি, যা ইহলোক-পরলোক উভয়কেই করায়ত্ত করতে পারে।’

    কিন্তু ইহসর্বস্ব জীবনের একটা মাদকতা আছে, যা ইউরোপে থাকাকালীন ধীরে ধীরে দিলীপের মনকে মায়াবিষ্ট করে। তিনি মেনে নিয়েছেন, জীবনের একটা পর্যায়ে, তিনি পড়ে গিয়েছিলেন দোটানে। তাঁর মন এতদিন বলত, যা দু-দিনের, তাকে নিয়ে এত মাতামাতি কেন? মনে পড়ত, শ্রীরামকৃষ্ণের কথা, সংসার আমড়া, শুধু আঁটি আর চামড়া। ভোগ করার কিছু নেই।

    অন্য রবীন্দ্রনাথকে চিনিয়েছিলেন দিলীপকুমার রায়

    দিলীপ একটা দারুণ কথা জানিয়েছেন এইখানে। লিখেছেন, ‘সুভাষ আমার এই দোটানের জন্যে আমার নাম রাখলো, শ্রী দোদুল্যমান!’

    এইবার দিলীপের বিলেতি স্বীকারোক্তি: ‘১৯১৯ থেকে ১৯২১-এর জুন অবধি ইংল্যান্ডে ছিলাম এত আনন্দে কী বলব। ইংল্যান্ডের নানা স্থানে ঘুরেছি। বহু লোকের সংস্পর্শে এসেছি। অগুনতি গান গেয়েছি। বিস্তর বই পড়েছি। শিখেছি ফরাসি। জীবনে আমি সবচেয়ে লাভ করেছি সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষা থেকে। তারপর বাংলা ও সবশেষে ফরাসি ও জার্মান ভাষা থেকে। ইতালিয়ান ভাষাও একটু শিখেছিলাম।’

    তবে ফরাসি শেখার গল্পটা জমিয়ে বলেছেন দিলীপ। আমাদের যৌবনে এই গল্প সবাই জানতাম। একালের ছেলেমেয়েরা কেউ জানেন না। সত্যি, বাঙালির সংস্কৃতি কত পাল্টেছে। গল্পটা একবার বলতে ইচ্ছে করছে। এই গল্প থেকে আন্দাজ করা যায়, কেমন ছিল নবজাগৃতির বাঙালি।

    দিলীপ জানাচ্ছেন, ‘ফরাসি ভাষায় কথা বলার উৎসাহ আমার মনে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে, রোমা রোলার সঙ্গে দেখা হবার পর। তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯২০ সালের জুলাই মাসে। কেমব্রিজে গণিত ট্রাইপস-এর প্রথম পার্ট পাশ করে চলে যাই সুইজারল্যান্ডের শুনেক গ্রামে। ছবির মতো গ্রাম। কিন্তু রোলার সঙ্গে দেখা হতেই বুঝতে পারলাম, যে ফরাসি আমি জানি সেটা পথেঘাটে কাজ চালাবার ভাষা। বিদগ্ধ সাহিত্য দর্শন আলোচনার ফরাসি আমি জানিনা। সুতরাং আমি কথা বললাম ইংরেজিতে। আমার ইংরেজি ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করতে লাগলেন রোলার বিদুষী সহোদরা মাদলিন। মনে ভারি দুঃখ হলো। কেনো ফরাসি ভাষা একটু মন দিয়ে শিখিনি? সুভাষ ঠিকই বলে, কোটি বাজে লোকের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করেছি। যদি ফরাসি ভাষাটা নিয়ে উঠে পড়ে লাগতাম।’

    দিলীপের ফরাসি শেখার গল্পটা মনে রাখার মতো। আট বছরের ফরাসি বালিকা জান-এর কাছে ফরাসি শিখেছিলেন দিলীপ। তিনি জানাচ্ছেন, ‘আট বছরের মেয়ে হলে কী হয়, সে আমার কোলে বসে মুখ ছোটায় একতরফা। বলে চলে তাঁর সুখ-দুঃখের কাহিনি। প্রতিদিন। ফলে একমাসের মধ্যে আমার এত ফরাসি ভাষা শোনা হল যে, দেখি কি কানও তৈরি হয়ে গেছে। আর বলাও রপ্ত হয়ে গেছে। এই সূত্রে আমার সবথেকে বড় লাভ, ১৯২২ সালে রোলার সঙ্গে সামনাসামনি কথাবার্তা চালাতে পারা। আর সমস্ত বুঝতে পেরে সমস্ত টুকে রাখা।’ যার সবটুকু আছে দিলীপকুমার রায়ের ‘তীর্থঙ্কর’ বইয়ে। তবে সেই অসামান্য বই আজকের বাঙালি কি পড়েন?

    কেমব্রিজে ক্ষীতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুভাষচন্দ্র বসু (দাঁড়িয়ে) ও সি সি দেশাইয়ের (বসে) সঙ্গে দিলীপকুমার রায়

    ‘আমার ইউরোপের সবচেয়ে ভালো লেগেছিল এই মহামতিকে।’ এই মহামতিটি বার্ট্রান্ড রাসেল। লিখছেন দিলীপ, ‘আমার রাসেল ভক্তির দরুণ আমাকে অনেকেই ভুল বুঝেছিলেন। আপনি আস্তিক গুরুর শিষ্য হয়ে নাস্তিক রাসেলকে কী করে এত ভালোবাসতে পারলেন? মুখে মুখে ঘুরছিল এই প্রশ্ন। আমার উত্তর’, লিখছেন দিলীপ, ‘আমি সত্যি তাঁকে ভালো বেসেছিলাম তাঁর বুদ্ধি ও হৃদয়ের জন্যে। রাসেলের লেখা যেদিন কেমব্রিজে প্রথম পড়ি, Principles of Social Reconstruction,  সেদিনই তাঁকে ভালোবেসে ফেলি।’

    এইবার শেষ করছি এই লেখা, এক হিরের টুকরো দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ লন্ডনে। তিনি বসে আছেন সন্ধ্যায়, তাঁর কেনসিংটনের অ্যাপার্টমেন্ট-এ। আমি সেদিন তাঁর ওখানে। কয়েকটি ভারতীয় ছেলে এল দরবার করতে। কী? না, জালিয়ানওয়ালাবাগে ১০০০-১২০০ নিরস্ত্র নরনারী পশুর মতো জেনারেল ডায়ারের গুলিতে মরেছে হামাগুড়ি দিয়ে অনেকে প্রাণ বাঁচাতে মরেছে। রবীন্দ্রনাথের কাছে তাঁদের আবেদন, প্রতিবাদ সভায় তাঁকে সভাপতি হতে হবে। কথাটা শোনামাত্র, রবীন্দ্রনাথের গৌর আনন লাল হয়ে উঠল। তিনি উদ্দীপ্ত কণ্ঠে বললেন, ‘তোমাদের কি লজ্জা করে না একটুও? আমরা পশুর মত মার খেয়েছি। হামাগুড়ি দিয়ে পালাতে চেয়েছি। এই কথা এখানে হাটে-বাজারে প্রচার করতে চাও? আমাদের চরম অপমানের কথা প্রচার করব বড় গলা করে? এরা শুনে বলবে যারা এইরকম পাশবিক অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে, তারা অমানুষ, তাদের জন্তুর মতন গুলি করে ঠিকই হয়েছে।’

    এই রবীন্দ্রনাথের দেখা আমরা পেয়েছি কেবল দিলীপকুমার রায়ের বইতেই।

    এ একটা বড় প্রাপ্তি!

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook