ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • আমার দেখা শ্যাম বেনেগাল

    শান্তনু মৈত্র (December 26, 2024)
     

    সত্যি কথা বলতে কী, শ্যাম বেনেগাল যেদিন আমায় বললেন যে, “তোমার মিউজিক আমার খুব ভাল লাগে। তোমার সঙ্গে আমার কাজ করার ইচ্ছে আছে”, কথাটা শুনে আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। ভারতীয় সিনেমার লেজেন্ডরা, যাঁদের ছবি দেখে অন্যরকম সিনেমায় দীক্ষিত হয়েছি, শ্যাম বেনেগাল তাঁদের মধ্যে কেবল অন্যতমই নন, বরং প্রধান। বড় হওয়ার সময় দূরদর্শনের দৌলতে আমরা অনেকেই অন্যধারার সিনেমার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। আর সেই সিলেবাস যে ‘নিশান্ত’, ‘ভূমিকা’, ‘অঙ্কুর’, ‘আরোহন’ ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না, একথা নিশ্চয়ই সব্বাই জানে।

    আমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর একদিন বললেন, “শান্তনু, আমি একটা কমেডি ছবি বানাচ্ছি, যে ধারাটা আমার জীবনেও নতুন। আমি চাই আমরা একটা ফ্রেশ স্টার্ট করি।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘কেমন ধরনের মিউডিক আপনি চাইছেন?’ উনি আমায় বললেন, ‘আমি কিছু চাইছি না। আমি চাইছি চরিত্রটা এরকম হোক, এবার তোমার কাজ হচ্ছে মিউজিকের মধ্যে দিয়ে সেই চরিত্রটা এস্টাবলিশ করা।’

    An Obituary of Shyam Benegal by Shantanu Moitra
    ‘ওয়েল ডান আব্বা’-তে সংগীত করেছিলেন শান্তনু মৈত্র

    আমি তো শুনে অবাক! বলিউডে তো পরিচালক যা চায়, সেরকমই মিউজিক করতে হয়। এমনকী, একটা সময়ের পর পরিচালকরা সংগীত পরিচালক হয়ে ওঠে। তখন মানিয়েগুছিয়ে কাজ করা বেশ ঝক্কির কাজ হয়ে ওঠে। কিন্তু এক্ষেত্রে উল্টো ব্যাপার। উনি আমায় সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বললেন, মিউজিকের মধ্য দিয়ে তুমি তৈরি করো চরিত্র, তুমি তৈরি করো মুড। এতে স্বাধীনতা পাওয়া গেল বটে, কিন্তু দায়িত্ব ও চাপ- দুটোই বেড়ে গেল। আর এ-কথা বলছে কে! যিনি ভারতীয় মার্গসংগীত আর ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল– দুইই গুলে খেয়েছেন।

    মিউজিক সম্পর্কে ওঁর জ্ঞান দেখে তো আমি স্তম্ভিত। তবে ওঁর বক্তব্য ছিল, আমি গল্পটা তোমায় দিয়ে দিচ্ছি, তুমি গল্পটা পড়ো, চরিত্রগুলোকে বোঝার চেষ্টা করো এবং এই চরিত্রের সঙ্গে মানানসই কেমন মিউজিক হতে পারে সেটা ভাবো। উনি কিন্তু একবারও বলেননি যে, মিউজিকটা এই রকম হবে, এখানে পিয়ানো চাই, এখানো বাঁশি চাই। এরকম সব ব্রিফ পাওয়ার পর আমি বললাম, আমি একটা কিছু বানিয়ে আপনাকে শোনচ্ছি, দেখুন আপনার ভাল লাগে কি না! উনি খুব স্পষ্টভাবে বললেন, “আমি কোনও মিউজিক পিস শুনতে চাই না। তুমি আমায় পুরো গান দেবে। আমি শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নেব কেমন ভাবে ব্যবহার করব।”  মিউজিক সম্পর্কে এত গভীর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও উনি কখনও কিছু চাপিয়ে দেননি। এতটা খোলা মনের মানুষ ছিলেন বলেই বোধহয় এত ভাবনা সহজে ওঁর কাছে ধরা দিত।

    বছরতিনেক আগে যখন উনি মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি ছবি বানালেন, তখনকার একটা ঘটনা আমার মনে খুব দাগ কেটে গেছে। একদিন কথায় কথায় শ্যামবাবু বলেন, ‘আমার লোকসংগীত খুবই প্রিয়। কিন্তু এই ছবিতে কীভাবে ব্যবহার করব বুঝতে পারছি না। কারণ সেরকম কোনও জায়গা নেই গান ঢোকানোর।’ তখন আমি বললাম যে, আমি একটা গান বানাচ্ছি, আপনি দেখুন এটা আপনার ছবির মুডের সঙ্গে কোথাও যায় কি না। আপনাকে হয়তো সাহায্য করবে ছবির মুডটাকে সেট করতে। এরপর আমি শোনালাম ‘অচিন মাঝি’ গানটা। ওঁর এত পছন্দ হল, উনি বললেন, “শান্তনু, খুব ভাল হয় আমরা যদি গানটা টাইটেল সিকোয়েন্সে ব্যবহার করি, যখন মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখছেন, নিজের মাটি ছুঁচ্ছেন।” ফলে এই গানটা একেবারেই ডিরেক্টরস কাট। এবং এত বড় ফিল্মমেকার, এতদিন পর নিজের দ্বন্দ্বকে আমার সামনে অনায়াসে বলতে একটুও দ্বিধা বোধ করেননি।

    ‘মুজিব’ ছবির পোস্টার

    আর একটা দারুণ ব্যাপার ছিল ওঁর মধ্যে। উনি হঠাৎ করেই  বড় বড় মানুষের বাড়িতে, তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চলে যেতেন। উনি যখন কিউবা গিয়েছিলেন, তখন ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন। কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা করার কথাই ছিল না। গিয়েছিলেন অন্য কাজে, কিন্তু হঠাৎ ওঁর মনে হয় যে, এই লোকটা পৃথিবীর ইতিহাসে এতটা বিখ্যাত, তাই শ্যামবাবু ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা করে এলেন শুধুমাত্র মানুষটাকে জানার জন্য। সাউথ আফ্রিকা গিয়েছিলেন ডেপুটেশনে। সেখানে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করে, নানা রকম আলোচনা করে এসেছিলেন। এরকম আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেখা করেছেন, তাঁদের জানবেন বলে, নির্দিষ্ট কোনও কাজ বা উদ্দেশ্য ছাড়াই।

    কেবল যে উনি সর্বক্ষণ বই পড়তেন (মানে যতক্ষণ জেগে থাকতেন ততক্ষণ পড়তেন। দুটো শটের মাঝেও পড়তেন। এবং সিনেমার বই পড়তেন এমন নয়, তাঁর বিষয়ের পরিধি ছিল বিশাল স্পেস-রিসার্চ থেকে সাহিত্যে ছিল অবাধ গতায়াত) মানুষকে জানার কিউরিওসিটি ছিল প্রচণ্ড। আর সেই জন্যই বোধহয় উনি শ্যাম বেনেগাল হতে পেরেছিলেন। আমার মনে হয়, শ্যামবাবু ছিলেন শেষ সত্যিকারের শিক্ষিত ফিল্মমেকারদের একজন, যাঁর ব্রেনের ঝিলমিল থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম এবং হতেই থাকব। 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook