দিন-দিন ভয়ে শরীর আমসত্ত্ব হয়ে যাচ্ছে। ভয়েরই ব্যাপার, একটু এদিক-ওদিক করেছ কী পেট ফুলে ঢাক-ঢাক। কিন্তু কথাগুলো বলব কার কাছে, ডাক্তারদের যা অবস্থা সেটা বলা মানেই মুখে ব্যথা, তা সে ব্যথা যেখানেই হোক। এখন আবার সব ডাক্তার বসছে না, বসলেও পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন সব ঢাকা পোশাক পরে থাকছে যে, রুগি দেখতে-দেখতেই ডাক্তারের জাঙিয়া ভিজে টসটস করে পড়ছে, অবশ্য এর মাঝে ডাক্তার প্যান্টে মুতে ফেললেও কিছু বলতে পারা যাবে না। শেষের কথাগুলোই এক্কেবারে খাঁটি, আপনি কিছু বলতে পারবেন না। যেমন ধরুন গত মাসেই তেনাদের কাছে যাওয়া হল, কত কিছু চিন্তাভাবনা সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম। কিন্তু ওখানে গিয়েই স্পিকটি নট। আসলে প্রতিবাদ করাটাও তো শিখতে হবে। আপনি একটা থিয়োরি পড়লেন, ‘ডায়ালেকটিক্যাল মেটেরিয়ালিজম’, কিন্তু কাজে লাগাতে না পারলেই গেল। মনে হচ্ছে সেই ঘোড়া হয়ে গেছি, ফাঁকা চেয়ারের সাথে বেঁধে মালিক ফুর্তি মারাচ্ছে, আমি গলাটাকে বাতাসে বেঁধে নিজের বাধা নিজেই তৈরি করে দাঁড়িয়ে আছি।
‘দাদা কিছু বললেন?’
আমার পাশের জন এবং আপনারাও। যারা থাকবে, কথা শুনবে, অন্তত এক কান দিয়ে হলেও, কিন্তু একবার বলুন, ‘চলুন, একবার সবাই মিলে বলে আসি’; অমনি দেখবেন সাড়ে সত্তরটা বাহানা। কিছু না পেলে, ‘না, দাদা আসলে পেটের অবস্থা ভাল নয়। কেমন যেন পায়খানা-পায়খানা মনে হচ্ছে।’ বাদ দিন, জবাব দিতে হবে না।
‘আমি? হ্যাঁ, সে তো অনেকক্ষণ ধরে বলে যাচ্ছি, অথবা অনেক মাস বা অনেকগুলো বছর ধরে। কিন্তু কেউ শুনছে না, অথবা আমি শোনার মতো বলছি না। অথচ ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।’
‘ভয়, কীসের ভয়?’
‘মানে তেনারা যদি ট্যাক্স বসান?’
‘সে তো বসাতেই পারে, আপনি নিজের কড়ি খরচ করে একটা কিছু কিনবেন, সেটাতেও, ব্যবহার করবেন সেটাতেও, এমনকী হাগা-মোতা, সবেই ট্যাক্স। এই যে বিভিন্ন জায়গায় শৌচালয় খুলেছে, আপনি যান, টাকা নেবে। অর্থাৎ আপনি একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে স্বাধীনভাবে হাগতে বা মুততে পারবেন না। ধরুন আপনার পাশের প্রতিবেশী আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে, আপনার ইচ্ছে হল ওর বাড়িতে গিয়ে হেগে দেবেন, পারবেন? অথবা কোনও নেতার বাড়িতে গিয়ে…। আবার থিয়োরি বলে, যে রাষ্ট্রের এই ট্যাক্স মানে করব্যবস্থা যত সুন্দর, সেই রাষ্ট্র তত ভাল, উন্নত।’
‘আমার ভয়টা অনেকটা সেখানেই।’
‘এক কাজ করুন, কুকুর হয়ে যান, নেড়ি। খুব নামিদামি হলে কিন্তু ঝামেলা।’ (মনে-মনে বললাম, ‘বুদ্ধাদ্বৈতসতত্ত্বস্য যথেষ্টাচরণং যদি।/ শুনাং তত্ত্বদৃশাং চৈব কো ভেদোহশুচিভক্ষণে।’ ভট্টাচার্য মহাশয় ‘লুব্ধক’ উপন্যাসে ব্যবহার করেছিলেন। আমার মনে পড়ল। আসলে মানুষ আর কুকুরে কী এমন প্রভেদ?)
‘কেন? আরে অনেক দেশে এইসব কুকুর পোষার জন্যে লাইসেন্স লাগে, জানেন? আপনি সকালে কুকুর নিয়ে মর্নিং ওয়াক করতে যাবেন, পকেটে একটা প্যাকেট নিয়ে যেতে হবে, কুকুর হাগলে সেটা ওই প্যাকেটে ভরে আপনার পকেটে করে বাড়ি আনতে হবে। না হলেই আপনার নামে জরিমানার নোটিস চলে যাবে। আমাদের দেশে অবশ্য এখনও অবধি এরকম কিছু হয়নি, কিন্তু হতে কতক্ষণ! তেনারা যখনই দেখবেন এখান থেকে কিছু পাব, অমনি আরম্ভ হয়ে যাবে ‘মনের ব্যথা’। ছারপোকার বাসা নিয়ে বলতে আরম্ভ করবে, ‘বান্ধবী ও তাদের বরেরা, আজ রাত এগারোটা উনষাট মিনিট থেকে কুকুর পুষলে টাকা দিতে হবে।’ জানোই তো যে, কোন তেনারা চলেন মধ্যবিত্তদের পোঙা মেরে, আর ‘কথা বলা মানেই কাজ করা’। আমি একটা বিষয় ভেবে কোনও উত্তর পাই না। মধ্যবিত্তদের পোঙাটা কি খুব নরম, নাকি ট্রাফিকটা খুব পিচ্ছিল। যারা বড়লোক তাদের তো কোনও চিন্তা নেই, আর কিছু মানুষ তো বেঁচেই থাকে হাত পাতার জন্যে। তুমি লঙ্গরখানায় খালি হাতে, খালি পেটে যেতে পারবে না। তুমি রাস্তায় বসে খিচুড়ি আর ল্যাবড়া সাঁটাতে পারবে না। তোমার একশো আটের মধ্যবিত্ত মানসিকতা তোমার পুলি জ্যাম করে দেবে।’
‘আমার তো এটাই ভয়, মানে তেনারা যদি ওখানে ট্যাক্স নিতে আরম্ভ করেন…।’
‘তুমি শালা একটি গোবরের তাল। আমি এতক্ষণ কী বললাম! মানুষ নয়, চলো কাল থেকে কুকুর হয়ে যাই।’
‘হয়েই তো গেছি।’
‘পুরোটা?’
‘কুকুররা কি…’
‘হ্যাঁ করে। কুকুররা খায়, হাগে, মোতে, সবার চোখের সামনে ফকাফক, আর সবথেকে বড় কথা হল, ওরা প্রতিবাদ করে। আপনি অন্য পাড়ায় যান তো দেখি।’
‘আপনি কিন্তু আপনি আর তুমিতে গুলিয়ে যাচ্ছেন।’
‘যখন যেটা মনে পড়ছে আর কি, তুইও বলতে পারি। এখন তো এটাও একটা ফ্যাশেন, মানে ফ্যাশন।’
‘মাথাটা কেমন যেন জটে জিলিপি হয়ে যাচ্ছে। আমি কি পাগল হয়ে গেছি, না যাচ্ছি?’
‘আপনার কী মনে হচ্ছে, আপনি কি মানুষ নামের অযোগ্য?’
‘আবার ঝাপলেন, মাঝের দুটো শব্দ বাদ দিলে কথাগুলো সার্ত্রের। জুন আরঁকে তার সমঝোতামুখিনতার উত্তরে বলেছিলেন। ‘কমিউনিস্টরা বিপ্লবকে ভয় পান।’ উনি এটাও বলেছিলেন।’
‘প্লিজ, প্লিজ, এবার ছাড়ান দিন, মোদ্দা কথাতে আসুন, কুকুরের প্রতিবাদের কথাটা শুনেই এক্ষুনি কুকুরটাকে কমিউনিস্ট বলে বসবেন না।’
‘আমার সমস্যাটা একটু ভাবুন, সমস্যাটা শুধু আমার নয়, সবার। সেখানে কে কম আর কে কাম সেটা বিচার করা যাবে না। আপনি কখনও ভেবেছেন আগামী দিনে সরকার যদি আইন করে বাতকর্ম নিষিদ্ধ করে দেয়…’
‘মানে পাদা বন্ধ?’
‘হ্যাঁ। এক্কেবারে ঠিক ধরেছেন।’
‘চিন্তায় ফেলে দিলেন তো, আমার চিন্তা এখন বৌদ্ধিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে, কিন্তু ইতিহাস তাকে অতিক্রম করে গেছে।’
‘আবার ঝাপলেন! যাই হোক, চিন্তাটা করুন, করতে শিখুন। সব দেশে ইউরিনাল আছে, মুতবেন, হাগার জায়গা আছে, থুতু ফেললে ফাইন আছে, স্মোকিং জোন আছে, কিন্তু ভেবে দেখুন তো পাদার জায়গা আছে? ভাবুন একটু।’
‘ঠিক বলেছেন, কোথাও তো নেই এমন জায়গা। কিন্তু আপনি কী রকম বলছেন, এইরকম কোনও জায়গা কি করা যায়?’
‘কেন যাবে না, যেদিন তেনাদের এখান থেকে টাকা মানে ট্যাক্স নেবার ইচ্ছে হবে, সেদিন এইরকম জায়গা করবার ব্যাপারে চিন্তা শুরু করবে। আরে মশাই, চাঁদের মাটিতে পিঁপড়ে চললে সে খবর পেয়ে যাচ্ছেন, আর এই বাতকর্মের খবর পাবেন না।’
‘সত্যি খুব চিন্তা হচ্ছে। এতদিন তো এরকম করে ভাবিনি।’
‘আরে সব ভাবনাই কোনও একটা জায়গা থেকে ধার করে আনা হয়, আপনি একা ভাববেন কী ভাবে?’
‘আমি, মানে আমরা তো আপনাকে এইরকম একটা ভাবনা এতদিন ভাবাইনি, এবার ভাবাচ্ছি। আপনি এবার থেকে ভাববেন।’
‘এবার রাগ হচ্ছে, তার মানে আপনি কি বলতে চান, এতদিন কেউ কিছু ভাবেনি, আপনি ভাবাতে আরম্ভ করলেন আর সবাই ভাবতে?’
‘অনেকটা ঠিক বলেছেন। সাধারণ মধ্যবিত্তকে যতক্ষণ না শক্ দিয়ে ভাবানো হচ্ছে, ততক্ষণ তো তারা ভাবতেই চান না। ধরুন আপনি একটা কোম্পানির সাবান কিনে আনতেন, বাড়ির সবাই মিলে মাখতেন, এবার আপনার বাড়ির মেয়েটিকে কেউ ভাবাল, সেই একই কোম্পানির মহিলাদের সাবান মাখলে আরও ফর্সা হওয়া যায়। ব্যাস আপনার বাজার যাওয়া দেখলেই শুনতে পাবেন, ‘এই সাবানটা আনবে তো, খুব বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে।’ মানে ভাবাচ্ছে। আপনি একই কোম্পানির দুটো আলাদা র্যাপারে প্রায় একই সাবান দুটো নিয়ে আসবেন। এই হল ভাবনা।’
‘সে নাহয় বুঝলাম, কিন্তু এই বাতকর্মের ব্যাপারে তেনাদের ভাবনা কী রকম হতে পারে সেটা কী একটু ভেবেছেন!’
‘আমার ভাবনা মাত্র, তেনারা অন্যরকম ভাবেই ভাবতে পারে। ধরুন, প্রতিটা সরকারি, বা বেসরকারি জায়গায়, বা রাস্তাঘাট সব জায়গায় একটা একটা সেন্সর লাগানো থাকবে। আপনি বাতকর্ম করলেই অমনি ধরা পড়ে গেলেন, তা সে শব্দ আসুক বা না আসুক, ধরা আপনি পড়বেনই।’
‘মানে গন্ধ এলেও বা না এলেও।’
‘গন্ধ এলে তো আর কথাই নেই, সরকার সব কাজ ছেড়ে এইদিকেই হামলে পড়বে। তখন দেখবেন চারদিকে বড়-বড় হোর্ডিং, সেখানে কখনও হাসিমুখ, (এটাই সব জায়গায় ভয়ের, তেনাদের হাসিমুখ মানেই সাধারণ মানুষের কান্নার কারণ) কখনও মুখোশ পরে ছবি, নীচে বিজ্ঞপ্তি, ‘আজ থেকে প্রকাশ্যে বাতকর্ম নিষিদ্ধ। না মানলে জরিমানা নেওয়া হবে।’’
‘শুনুন না, আমার এক আত্মীয় সরকারি অফিসার। তাকে সেই প্রকাশ্যে হাগা বন্ধের সময়ে বিভিন্ন জায়গায় টর্চ হাতে ঘুরে-ঘুরে খোলা হাগুরে খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে কী কাণ্ড, আমাদের বলতে-বলতে নিজেই হেসে অস্থির। একবার তো কোন গ্রামে বেঁধে রেখে দিয়েছিল। মানে ওর দায়িত্ব ছিল সকালের দিকে পুকুর সংলগ্ন মাঠে গিয়ে সবাইকে বোঝানো; আরে সেই মাঠে মহিলারা যেতেন, আর যায় কে! শেষে পুলিশ এসে সব কিছু সামাল দেয়। সেইরকম হলে কী হবে বুঝেছেন। তারপর একটা জোকস্ আছে না, একটা সিনেমাহলের পিছনে একটা বাড়ির দেওয়াল, সিনেমা দেখে সবাই ওই দেওয়ালে পেচ্ছাপ করে দিয়ে চলে যেত। বাড়ির মালিক এটা বোঝবার পরে একটা ব্যাগ আর একটা ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াত। ধরা পড়লে ফাইন নিত, কিন্তু সবার কাছে তো ফাইনের টাকা থাকত না। দেখবেন সরকার আবার এমনি কিছু একটা করবে।’
‘আর বিরোধীপক্ষ? তারা কিছু করবে না?’
‘আরে সরকার আর বিরোধীপক্ষ সবাই তো এক, আজ যিনি উত্তরে বসছেন, কাল তো দক্ষিণে বসবেন, তখন? সবার পিছনেই তো গু আছে। তবে কোনও-কোনও দেশ শুনছি সরকারটাকে আমৃত্যু করে দিয়েছে।’
‘আচ্ছা, যদি শব্দ না হয়, তা হলেও কি ধরা পড়বে?’
‘নিশ্চয়। যেটা শব্দ হয় না, সেটাই তো আরও বেশি ডেঞ্জারাস। ধরুন একটা মিটিং চলছে, খুব গুরুত্বপূর্ণ, সবাই মন দিয়ে শুনছেন, বলছেন একজন, আসলে এখন বেশিরভাগ মিটিংয়ে তো কেউ বলতে পারে না, শোনে এবং শুনতে হয়, না হলেই ঘ্যাচাং ফু! যাই হোক, এমনি একটা মিটিংয়ে একটা ছোট্ট করে, পাশের জন কিছু বলতে পারবেন না, শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন মাত্র, তারপর নাকে চাপা, একটা চাপা উত্তেজনা, ফুস থেকে ফিসফিস, আপনি কাউকে বলতে পারবেন? মনে-মনে গুনে নিলেন, ‘ইস বিশ ধানের শিস, তুই ব্যাটা…’ কিন্তু এই ‘তুই’ মানুষটির কাছে গিয়ে বলতে পারবেন? না, এদিকে তেনাদেরও বেশ মাথাব্যথা হয়ে যাবার জোগাড় হবে, তারা ভাববে, ‘এত জিনিসের দাম করলাম, তাও ব্যাটা মধ্যবিত্ত সব খেয়েই যাচ্ছে, এত খেলে তো হাগবেই, না হলে…’’
‘আচ্ছা, এই বাতকর্ম জিনিসটা ঠিক কী?’
‘এইসব কথা দয়া করে বলবেন না। সরকার থেকে যখন ওই খোলা জায়গায় পায়খানা না করবার জন্যে প্রচার করতে আরম্ভ করে, তখন ওই মলত্যাগ, ফলত্যাগ বা দলত্যাগ এইসব বলেনি, পাতি বাংলায় বলে দেয়, ‘হাগবে না’।’
‘তাই বাতকর্ম হটাও, খোলা জায়গায় পাদবে না।’
‘ঠিক আছে। এটা তো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অন্তত শিখতে হবে।’
‘কী করে শিখবে! শরীরে খাবার হজম করার সাথে যুক্ত বিভিন্ন অঙ্গে গ্যাস থাকে।’
‘তা হলে খাওয়া বন্ধ করতে হবে…’
‘না সোনা, আমরা সারা দিন ধরে শরীরে হাওয়া নিই, জমা হয়, বেরিয়ে তো আসবেই।’
‘তার মানে কি ট্যাক্স দিতেই হবে?’
‘তেনারা চালু করলেই দিতে হবে।’
‘আচ্ছা একটা কথা বলুন, এটা কি শুধু পুরুষদের…’
‘তা কেন! মহিলাদেরও ট্যাক্সের আওতায় আনা হবে, হয়তো কিছু ছাড় থাকবে, যেমন ট্যাক্সে বা অন্যান্য জায়গায় থাকে, না হলে আন্দোলন হতে পারে। যেমন ধরুন ঋতুচক্রের সময়ে বা সন্তান ধারণ করবার সময়ে যেসব পরিবর্তন হয়, তাতে শরীরে গ্যাস বেড়ে যায়, তখন…।’
‘এখানে অন্য কোনও ক্যাটাগরি, মানে জেনারেল…’
‘চুপ চুপ! এক্ষুনি সবাই বলবে আপনি সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, ধর্মীয় আর এইসব ব্যাপারে এক্বেবারে কথা বলবেন না, আপনি ভাতা নিয়ে বলুন, পাতা নিয়ে বলুন, পাতাখোরদের নিয়ে বলুন, কিন্তু এইসব নিয়ে নয়…। মাথাটা আবার কাজ করা বন্ধ করে দিল। কী অসম্ভব অবস্থা, সেই দিন হয়তো সত্যিই আর দেরি নেই। আজ থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, এমনিতেই জিনিসের দাম শুনে জাঙিয়া কিনতে গিয়ে টুপি কিনে ফেলছে, তার উপর… হয়তো সরকার আইন করবে, শব্দ হলে একরকম ট্যাক্স, গন্ধ হলে আলাদা, দুটো একসাথে আরও একটু বেশি…। সমস্যা হল, সেই মধ্যবিত্তদের। বড়লোকেরা বিদেশে পালিয়ে যাবে। মানে বাতকর্ম করতে বিদেশে চলে যাবে, নিম্নবিত্তরা ভোটের সময়ে মিছিলে পা মেলায়, ঝগড়া-মারামারি করে, তারা সংগঠিত, মধ্যবিত্ত মুখ লুকিয়ে বাঁচবে। পাশের বাড়ির কারোর কাছ থেকে বেশি ট্যাক্স নিলে বলে উঠবে, ‘আরে ঘুষের টাকা, বেশি খেয়েছে, বেশি পেদেছে, মিটে গেল, আমাদের অত খাওয়া নেই, ভয়ও নেই’।’ কিন্তু ভয় নেই এটাই ভয়ের কারণ, চুপ থেকে বশ্যতা স্বীকার করা আর ফাঁকা চেয়ারে বাঁধা ঘোড়া এক-ই। এতক্ষণ ধরে কে কথাগুলো বলল, কেই-বা শুনল। বাঁ কান আর ডান কানের ঝামেলা। দুটোই মধ্যবিত্ত, দুটোই…’
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র