ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • নীলা-নীলাব্জ:পর্ব ৫


    অনুপম রায় (August 9, 2024)
     

    প্রেম

    চুল কেটে বেরোচ্ছিল নীলা। বেরিয়েই দেখে একটা ঝাঁ-চকচকে দামি গাড়ি। গাড়ির কালো কাচে একবার নিজেকে কেমন লাগছে দেখার লোভ সামলাতে পারল না। ডানদিক-বাঁদিক মুখ বেঁকিয়ে একটু দেখছে নিজেকে,হঠাৎ কাচটা নামতে থাকে। কিছুটা লজ্জায় পড়ে যায় নীলা। মুখ ঘুরিয়ে হাঁটতে শুরু করবে, এমন সময়ে ভেতর থেকে, ‘কী ম্যাডাম?দারুণ হয়েছে চুল কাটা!’

    নীলা থামে, ‘এ কী নীলাব্জ, তুমি? এটা আবার কার গাড়ি?’

    নীলাব্জ : আমার এক বন্ধুর। নতুন নিয়েছে, আমি নিয়ে বেরিয়েছি এমনিই জাস্ট।

    নীলা : আমাকে ফলো করছ নাকি? মেয়েদের পার্লারের বাইরে দাঁড়িয়ে এভাবে?

    নীলাব্জ : আরে এত কথা বাইরে দাঁড়িয়ে বলবে নাকি? এসো ভেতরে এসো, তোমাকে ড্রপ করে দিই।

    নীলা (কথা বাড়ায় না, গাড়িতে ওঠে) :বাপরে! ভেতরটা তো পুরো আইসল্যান্ড বানিয়ে রেখেছ!

    নীলাব্জ :হ্যাঁ, মারাত্মক ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে একটুতেই। জল খাবে? এই জলের বোতল কিনতেই দাঁড়িয়েছিলাম। বিউটি পার্লারটা লক্ষ করিনি।

    নীলা :কে জানে না বাবা! যেখানে-সেখানে উদয় হচ্ছ!

    নীলাব্জ : চলো, তোমাকে একটু লং ড্রাইভে নিয়ে যাই।

    নীলা : না, না! আমার একদম টাইম নেই।

    নীলাব্জ : তুমি সারাক্ষণ এরকম খিটখিটে মেজাজে কেন থাকো বলো তো?

    নীলা : থাকি না এরকম। তোমার এই বিন্দাসপনা দেখলে আমার রাগ হয়। সকাল-সকাল কার-না-কার দামি গাড়িতে চড়ে এখন আমাকে লং ড্রাইভ দেখাচ্ছ!

    নীলাব্জ : তুমি একটা প্রেম করো নীলা। ভাল দেখে একটা ছেলে দেখে জমিয়ে প্রেম করো।

    নীলা : এই থামাও তো, আমি নেমে যাব।

    নীলাব্জ : আরে, আরে, করো কী? চলন্ত গাড়িতে দরজা খুলে দিচ্ছ! প্রেম শুনলে এরকম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছ! কবে একটা ওয়ার্থলেস লোক তোমাকে লেঙ্গি মেরেছে, সেই ধরে বসে থাকলে হবে?

    নীলা : ক্ষতটা তো তোমার নয় নীলাব্জ। তুমি কী করে বুঝবে? এ-দাগ কোনওদিন মোছার নয়।

    নীলাব্জ : হ্যাঁ আমি বুঝতে পারব না ঠিকই কিন্তু জীবন তো অনেক বড়, নীলা। এভাবে নষ্ট কোরো না।

    কিছুক্ষণ কেউ কোনও কথা বলে না। গাড়ি দ্বিতীয় হুগলি সেতুর দিকে চলেছে।

    নীলা : কে বলেছে আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে? দিব্যি চাকরি করছি, ফ্ল্যাট বুক করছি, মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছি, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাচ্ছি— ইন ফ্যাক্ট,অচেনা গাড়ির কাচের সামনে আমার নতুন হেয়ার কাট দেখছি! আমার ব্যাংসগুলো কেমন হয়েছে?

    নীলাব্জ : ব্যাংস মানে?

    নীলা : আরে! বোঝা যাচ্ছে না, নাকি তুমি বোঝো না? (বলেই আয়নাতে নিজেকে দেখতে থাকে) এই যে কপালের উপর চুলটা এসে পড়ছে, এইটা!

    নীলাব্জ : ওহ্‌! নাইস, ভেরি নাইস।

    নীলা (হেসে ফেলে) : খুব বেশি কিছু বোঝো না কিন্তু সারাক্ষণ একটা সবজান্তা হাবভাব।

    নীলাব্জ : আরে আমি কোথায় বললাম যে আমি সব জানি?

    নীলা : বলতে হয় না, হাবভাবে বোঝা যায়। জীবনের সব প্রবলেমের সমাধান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ তো! প্রেমে বাধা, পাইলস, স্বপ্নদোষ, চাকরির সমস্যা, সম্পত্তি নিয়ে মামলা— সব সমাধানের একটাই ঠিকানা, নীলাব্জ!

    নীলাব্জ : আরে তুমি বড্ড রেগে যাচ্ছ। যাব কত দূর বলো, কোলাঘাট, দীঘা না শান্তিনিকেতনের দিকে?

    নীলা : তুমি কি উন্মাদ? আর আধঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরব।

    নীলাব্জ : আধঘণ্টায় হবে না, এই সিঙ্গুরের তিন ফসলা জমি দেখে ফিরে যাব।

    নীলা : তিন ফসলা না হাতি! ফ্যাক্টরি তো হল না, আলু চাষ হয় কি? কলমির শাক?

    নীলাব্জ (হা হা করে হেসে ওঠে) : ভাল কথা বলছি, একটা প্রেম করো।

    নীলা : আবার সেই এক কথা! প্রেম করে কী হবে আমার নীলাব্জ?

    নীলাব্জ : এক, মনটা ভাল থাকবে। জীবনে একটা উদ্যম পাবে। দুই, একজন সঙ্গী পাবে। একসঙ্গে অনেক কিছু করতে পারবে। একা লাগবে না। তিন, তোমার শরীর খারাপ হলে, মন খারাপ হলে পাশে একজন ধ্রুবতারার মতো। চার…

    নীলা : থাক, এক্স এল এস করে, ইমেল করে দিয়ো আমাকে। পড়ে নেব।

    নীলাব্জ : আচ্ছা, প্রেম মানে কী তোমার কাছে?

    নীলা : দ্যাখো প্রেম-ভালবাসা এগুলো খুবই সিরিয়াস ব্যাপার। একটা প্রেম করো না, এত ক্যাসুয়াল ভাবে আমি দেখতে পারি না। ভালবাসা মানে বিশ্বাস, ভালবাসা মানে দায়িত্ব, ভালবাসা মানে সম্মান, ভালবাসা মানে একাগ্রতা, অনেক কিছু মিশে ভালবাসা হয়।

    নীলাব্জ : আরে তুমি তো স্কুলের প্রিন্সিপালের মতো কথা বলতে শুরু করলে। ভালবাসা একটা আকর্ষণ, সেটাই বললে না? কারোর জন্য উন্মাদ হয়ে যাওয়া। সবাই হয়তো বারণ করছে, করিস না,করিস না বোকা কিন্তু তবু বারবার তার কাছেই ছুটে যাওয়া। একটা অদৃশ্য টান। একটা মায়া। এটা ভালবাসা নয়?

    নীলা : এটা ভালবাসা নয়, এটা চোখে ঠুলি পরে থাকা। এটা গাধামো!

    নীলাব্জ : কী বলছ? লায়লা-মজনুর গল্প পড়োনি? মার্কেজের ‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা’? ‘রোমিও-জুলিয়েট’?

    নীলা : এগুলো সব গল্প নীলাব্জ। ফিকশন! আরে এগুলো সব অবসেশনের গল্প। অন্ধের মতো ছুটে চলার গল্প। আমি একবার এটা করেছি। ঈশ্বর মনে করেছি আমার প্রেমকে। কী পেয়েছি? দিনের শেষে সেই তো ঠকলাম!

    আরে এগুলো সব অবসেশনের গল্প। অন্ধের মতো ছুটে চলার গল্প। আমি একবার এটা করেছি।

    নীলাব্জ : আহ্‌! তোমার একটা আঘাত তোমাকে অ্যান্টি ভালবাসা করে দিয়েছে!

    নীলা : না, অ্যান্টি ভালবাসা নয়। অ্যান্টি অবসেশন করে দিয়েছে। এরকম অন্ধের মতো ছুটে চলা, জীবন তুমহারে নাম, স্থাবর-অস্থাবর সব তোমার এইসব কিছুর বিপক্ষে।

    নীলাব্জ : কিন্তু ভালবাসা মানেই তো অবসেশন! তুমি কাউকে নিজের আগেই যদি না রাখতে পারো, তাহলে কীসের ভালবাসা?

    নীলা : নিজের চেয়ে আগে রাখা হবে তাকে কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়। কখনও আমি আগে থাকব, কখনও সে। এরকম এক তরফা বোকামিতে আমি আর রাজি নই। একটা ব্যালেন্স বলে তো ব্যাপার আছে। তাহলে কীসের দুজনের সম্পর্ক? এখানে তো স্বৈরাচার চলছে! তুমি তো নিজে স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে বলেই জানতাম।

    নীলাব্জ : তুমি ভালবাসার একদম চচ্চড়ি বানিয়ে ফেলছ। এত জটিল ভাবে কেন দেখছ? নিজেকে উজাড় করে দেওয়া ছাড়া ভালবাসায় তো আর কিছু নেই। আর সেটা তুমি স্বেচ্ছায় করবে। তোমার কষ্ট হবে না। আনন্দ হবে।

    নীলা : নিজেকে উজাড় করে দেওয়া আমাকে তুমি শেখাতে এসো না নীলাব্জ। আমার এটাতে ডক্টরেট আছে। কেউ দেয় না এসবের দাম! সম্পর্কেও একটা রাজনীতি থাকে। একজন শাসক, একজন শাসিত।

    নীলাব্জ : সেই বারবার নিজের একটা ঘটনা দিয়ে তুমি ভালবাসার ধারণাকে আঘাত করছ। তুমি প্রেমকে অস্বীকার করছ।

    নীলা : না, করছি না। তোমার-আমার প্রেমের সংজ্ঞাটা আলাদা। আমি ভালবাসা থেকে চাইছি মহাগঠবন্ধন। একটা কোয়ালিশন। একটা জোট। দুজনে পাশাপাশি। তোমাকে আমার জীবনের প্রধান মন্ত্রী করে দিলাম, তারপর তুমিই আমার সব বেচে দিয়ে চলে গেলে, এটা কী ধরনের প্রেম?

    নীলাব্জ : প্রেম তো একটা জুয়া! কখনও হারবে, কখনও জিতবে। হারলে তুমি খেলার নিয়মই বদলে দিতে চাইছ। প্রেম তো একটা দমকা হাওয়া। হঠাৎ খুঁজে পাওয়া পুরনো চিঠি। এক টুকরো কবিতা। অনেক ভিড়ের মাঝে কাউকে দেখে মনটা কেমন করে ওঠা।

    নীলা : আমার কাউকে দেখে মনটা কেমন করে ওঠে না।

    নীলাব্জ : আরে তুমি উঠতে দাও না বলে। সারাক্ষণ টাইট হয়ে থাকো। প্রেমে পড়লে মানুষ ভীষণ সুন্দর। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার দিকে একটা চমৎকার ছেলে ধীর পায়ে হেঁটে-হেঁটে আসছে।

    নীলা : এই চলো তো, এবার অনেক হয়েছে। গাড়ি ঘোরাও। সিঙ্গুরের আগাছা-ঢাকা জমি দেখে আর কাজ নেই। তোমার যেতে হলে যাও, আমাকে নামিয়ে দাও। বাজে বকে-বকে…

    নীলাব্জ : আচ্ছা! আচ্ছা! বেশ! বেশ!

    নীলাব্জ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। ওরা আবার কলকাতার দিকে ফিরতে থাকে।

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook