ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • মেগা ম্যাগাজিন : পর্ব ৯


    সুস্নাত চৌধুরী (August 3, 2024)
     

    ফোর্বস

    আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় যেসব পত্রপত্রিকা দীর্ঘ সময় টিকে থেকেছে, বড় পরিসরে কাজ করেছে, গড়ে তুলেছে বৃহৎ পুঁজি— তাদের চলমানতার পথে মালিকানার হাতবদল বিশেষ ব্যতিক্রমী ব্যাপার নয়। কালের ধারায় প্রকাশক বা পরিচালনকারী সংস্থার পরিবর্তন বহু ক্ষেত্রে পত্রিকার সামগ্রিক আবেদনেও প্রভাব ফেলেছে। ঝটিতি বাঁক নিয়েছে বিষয়বস্তু, আঙ্গিক— দৃষ্টিভঙ্গি তো বটেই। আবার এর উলটো নিদর্শনও আছে। পরিবারতন্ত্রের প্রতীক হয়ে শতাধিক বছর ব্যাবসা চালিয়ে গিয়েছে কেউ। এক প্রজন্ম আরেক প্রজন্মের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাটন। কালি বদলেছে, কলম থেকেছে সেই একই।  

    কাহিনির শুরু স্কটল্যান্ডে। নিতান্ত সাধারণ এক দর্জির দশ ছেলের মধ্যে ষষ্ঠ জনের জীবনের লক্ষ্য শুরু থেকেই ছিল ভিন্ন তারে বাঁধা। পারিবারিক প্রয়োজনে অল্পবয়সেই নানা ছোটখাটো কাজে হাত দেওয়া— মুদিখানার কর্মী থেকে ছাপাখানার খুদে শ্রমিক। সঙ্গে চলে পড়াশোনা। ১৮৯৭ সালে, সতেরো বছর বয়সে তিনি যোগ দেন স্থানীয় এক সংবাদপত্রে। বছর কয়েকের মধ্যে সেসব ছেড়ে পাড়ি জমান দক্ষিণ আফ্রিকায়। জোহানেসবার্গের The Rand Daily Mail কাগজে যোগদান করেন। বেশি দিন সেখানেও থাকেন না। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ততদিনে ব্যাবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিত লেখালিখি করা। নানা জায়গা ঘুরে শেষমেশ চলে আসেন নিউ ইয়র্ক। কিন্তু মার্কিন মুলুকে মনোমতো কাজ পাওয়া সহজ হয় না। অগত্যা তিনি স্থির করেন যে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে, কোনও পত্রিকা দফতরে কয়েক সপ্তাহ বিনা পারিশ্রমিকেই কাজ করবেন। কপাল খোলে। ব্যাবসা সংক্রান্ত লেখাপত্রের কাজ নিয়েই যোগ দেন চাকরিতে। কাজে খুশি হয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যথাযথ বেতন তাঁর হাতে তুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাজের খিদে কি আর অত সহজে মেটে! নাম ভাঁড়িয়ে আরও একটি প্রকাশনায় একইসঙ্গে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানেও ওই ব্যাবসা নিয়েই লেখা। কথিত আছে, ওই দুই সংস্থার সম্পাদকের মধ্যে একবার নাকি জোর বচসা বাধে; বচসার বিষয়— কাদের বিজনেস রিপোর্টারটি সেরা! তাঁরা কি আর জানতেন যে বচসার কেন্দ্রে রয়েছেন আসলে একটিই মানুষ!

    Forbes পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা বার্টি চার্লস ফোর্বস

    বছর কয়েকের মধ্যে বিজনেস রিপোর্টার হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তামাম মার্কিন মুলুকে। অরসন ওয়েলস-এর ‘সিটিজেন কেন’ (১৯৪১) ছবিটি যে-ব্যক্তির আদলে নির্মিত বলে অনেকে মনে করেন, সেই উইলিয়াম হার্স্ট-এর মতো মিডিয়া ব্যক্তিত্বের সংবাদপত্রে বিশেষ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দিন যায়, অবশেষে ঘনিয়ে আসে সেই সময় যখন মনে হয়, অন্যের হয়ে কাজ আর নয়! নিজের পত্রিকা প্রকাশ করার চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছোন তিনি। ঠিক করা ছিল, সে-কাগজ হবে ব্যাবসাবাণিজ্য বিষয়কই। নাম— Doers and Doings। শেষবেলায় সিদ্ধান্ত বদলায়। নিজের পদবিটিই তুলে আনেন পত্রিকার মাস্টহেডে। যাত্রা শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়ের। প্রকাশ পায় Forbes

    প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯১৭

    বার্টি চার্লস ফোর্বস। দীর্ঘদিন ধরে লালিত নিজের আগ্রহকেই তিনি পত্রিকার রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় পাক্ষিক Forbes পত্রিকার প্রথম সংখ্যা। এর কেন্দ্রে ছিল এক হাজার ডলার পুরস্কারমূল্যের একটি প্রতিযোগিতা। ‘আমেরিকার শ্রেষ্ঠ নিয়োগকর্তা কে?’— এই বিষয়ে আহ্বান করা হয় প্রতিবেদন। সুবিশাল এক জিজ্ঞাসাচিহ্ন-সহ প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদেই লেখা হয়— ‘$1000 for the best answers’। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের একমাত্র শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়— ‘the only condition being that he or she must write about his or her own employer and tell why the employer is liked by his workers—everything he has done for them, how he shows consideration for them, the little and big things he does and says which win him the esteem of those he employs.’

    বি সি ফোর্বস শুরু থেকেই চেয়েছিলেন উচ্চ ও নিম্নবিত্তের মধ্যে বোঝাপড়ার সেতু নির্মাণ করতে। পারস্পরিক সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে। ব্যাবসার উদ্দেশ্য যে স্রেফ লাভের কড়ি তোলা নয়, তা সোচ্চারে বলতে তিনি দ্বিধা করেননি। Forbes পত্রিকার প্রারম্ভিক সংখ্যাগুলিতেও তাঁর এই ভাবনা নানাভাবে প্রতিফলিত হয়। ‘Fact and Comment’ শীর্ষক প্রথম লেখাটি শুরুই হচ্ছে এইভাবে— ‘Business was originated to produce happiness, not to pile up millions.’ আরও বিস্তারে গিয়ে বলা হচ্ছে সেই লেখায়— ‘Success is, or should be, the ambition of each one of us. But success need not necessarily be measured by dollars. To the painter, success is to be acclaimed justly as a great artist. To the author, success is to be recognized as a great writer, a truthful interpreter of human nature. To the business man, success heretofore too often has been merely to become rich. That is not a high standard. It is a standard, happily, that is passing.’ তাঁর এই প্রবণতার নেপথ্যে হয়তো কাজ করেছিল নিজের অতীত। সাধারণ পরিবেশ থেকে বহু ঘাম ঝরিয়ে উঠে আসা। নিজের সেই পরিচিতিও প্রথম সংখ্যার পৃষ্ঠে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। সে-লেখার শেষ পঙ্‌ক্তির দৃপ্ত ভঙ্গিটিও উল্লেখযোগ্য— ‘His style is A B C, but his thinking is B. C. F.’

    তৃতীয় সংখ্যার প্রচ্ছদে ব্যবহৃত কার্টুন, ১৩ অক্টোবর ১৯১৭

    Forbes প্রথম সংখ্যা বেরোনোর সন্ধিক্ষণটিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখনও চলছে। সেখানে আমেরিকার অবস্থান, মিত্রশক্তিতে যোগদান, কমিউনিজম আর পুঁজিবাদের সম্পর্ক— এ-সবই হয়তো প্রভাব ফেলেছিল পত্রিকার সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে। শুধু ব্যাবসায়িক প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণ নয়, কবিতা, ফিকশন, কার্টুন ইত্যাদিও উঠে আসত এই ম্যাগাজিনে। সেসবের কেন্দ্রীয় ভাবনাটি বিন্যস্ত হত পত্রিকার মূল বিষয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই। বস্তুত বি সি ফোর্বস-এর ভাবনাচিন্তার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রোথিত ছিল মানবদরদি এক বীজ। পত্রিকায় পাতা ফাঁকা থাকলে সেখানে উদ্ধৃতির মতো দু-এক পঙ্‌ক্তি লিখে শূন্যস্থান পূরণ করতেন তিনি। জীবন ও ব্যাবসার আন্তঃসম্পর্কের সেই খতিয়ান পরে Forbes Epigrams নামে গ্রন্থাকারেও প্রকাশ পায়। কোথাও তিনি লিখেছেন— ‘No man is really big who has a small heart.’ আবার কোথাও— ‘The man who has done his level best, and who is conscious that he has done his best, is a success, even though the world may write him down a failure.’

    নিজের সংগ্রহের বাইকে ম্যালকম স্টিভেনসন ফোর্বস (১৯১৯-১৯৯০)

    প্রথম এক দশকে Forbes পত্রিকার সাফল্য এমন উচ্চতায় পৌঁছোয় যে উইলিয়াম হার্স্ট-এর মতো পুঁজিপতি তা কিনে নিতে চান। সবিনয়ে সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন ফোর্বস। নিজের সাধের পত্রিকা থেকে আমৃত্যু বিচ্ছিন্ন হননি তিনি। তিনের দশকে তীব্র মন্দার মুখে পড়তে হয় Forbes-কে। সদ্যপ্রকাশিত Business Week ও Fortune পত্রিকা বিক্রিতে টেক্কা দিয়ে যায়। কার্যত দেউলিয়া হওয়ার অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। নিজের ফ্রিলান্স রোজগার বাড়িয়ে, পত্রিকার অন্যান্য খরচ কাটছাঁট করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। চারের দশকে বি সি ফোর্বস-এর দুই পুত্র ব্রুস ও ম্যালকম পত্রিকার কাজে যোগদান করেন। মুখ্যত ম্যালকম স্টিভেনসন ফোর্বস-এর কৌশলেই ঘুরে দাঁড়ায় এই পত্রিকা।

    প্রকাশিত হল চারশো সর্বাধিক ধনী আমেরিকানের নাম, ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮২

    ১৯৫৪ সালে বার্টি ও ১৯৬৪ সালে ব্রুস-এর মৃত্যুর পর ম্যালকম-ই হয়ে ওঠেন Forbes-এর সর্বেসর্বা। বাবার থেকে অনেকটা ভিন্ন ঘরানার ছিলেন এই বর্ণময় চরিত্র। নানাবিধ বিচিত্র জিনিস সংগ্রহের শখ কিংবা বিবিধ আমোদের অভ্যাস যেমন ছিল, তেমনই পত্রিকার ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অতিদক্ষ। নতুনতর পরিকল্পনা কিংবা বিজ্ঞাপন সংগ্রহের অভিনব পদ্ধতিতে তিনি বাজারের অন্যান্য প্রতিযোগীদের অতিক্রম করে যান। তাঁর হাতে এই পত্রিকা হয়ে ওঠে ‘Capitalist Tool’। ১৯৮২ সালে সবচেয়ে বড় চমকটি দেন ম্যালকম। Forbes প্রকাশ করে চারশো সর্বাধিক ধনী আমেরিকানের নাম। তারপর থেকে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজরকাড়া Forbes 400 তালিকাটি বেরোতে থাকে।

    ম্যালকম-এর পর পত্রিকার ব্যাটন উঠে আসে তাঁর পুত্র স্টিভ-এর হাতে। এখনও তিনি Forbes-এর এডিটর-ইন-চিফ। পূর্বজদের স্বর্ণযুগ ধরে রাখতে না পারলেও নানা খাতে পত্রিকার গতিপথ বইয়েছেন। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বদের তালিকা কিংবা ত্রিশ-অনূর্ধ্ব ত্রিশজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকা Forbes 30 Under 30 প্রকাশ শুরু হয়েছে তাঁর জমানাতেই। ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, এশিয়ার বহু দেশে পৃথক সংস্করণ প্রকাশ করেছে Forbes। যেমন, ২০০৮ সাল থেকে বেরোচ্ছে ভারতীয় সংস্করণ।

    ভারতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদে অনুরাগ কাশ্যপ, ৩০ আগস্ট ২০১৯

    তবে স্টিভ-এর সময়কালে বিবিধ বিতর্কের জন্মও হয়েছে। হাল আমলে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে Forbes-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। আবার কখনও রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর অবস্থান তুলে দিয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। আগ্নেয়াস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ কিংবা সমলিঙ্গ বিবাহের মতো বিষয়ে তাঁর বিরোধিতা অনেকের কাছেই আপত্তিকর ঠেকেছে। খুব প্রতিষ্ঠিত ও প্রচারিত বয়ান না হলেও, মনে করা হয় যে স্বয়ং ম্যালকম ফোর্বস ছিলেন সমকামী। তাঁর ছেলে হয়েও স্টিভ-এর এই ভূমিকা স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি নজর কেড়েছে। সর্বোপরি নতুন শতকে এসে Forbes-এর সার্বিক অবস্থার পতনও ঘটেছে। টান পড়েছে বিজ্ঞাপনে, হাতছাড়া করতে হয়েছে সংস্থার মালিকানা। শতাধিক বছর আগে পত্রিকার মাস্টহেডের নীচে সাবটাইটেলে লেখা থাকত কর্মযোগের কথা— ‘Devoted to Doers and Doings’। ব্যাবসার সঙ্গে মানবসম্পদের সম্পর্ককে তুলে ধরাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। Forbes বলতে চাইত এক উন্নততর পৃথিবীর কথা। স্রেফ ‘বৃদ্ধি’ নয়, যেখানে ‘উন্নয়ন’ ছিল লক্ষ্য। আজ কালের নিয়মে ব্যাবসার ধ্যান-ধারণা যেমন বদলেছে, আবিশ্ব পুঁজিবাদের চারিত্র্যও হয়েছে স্পষ্ট। এই বদলাতে থাকা সময় হয়তো বদলে দিয়েছে Forbes-কেও। দু-দশক হল স্টিভ-এর কন্যা ময়রা চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে পত্রিকার কাজে শামিল হয়েছেন। সংস্থার প্রশাসনিক পদ ছাড়াও মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ForbesWomen-এর প্রকাশকের গুরুদায়িত্ব বর্তেছে তাঁর কাঁধে। বদলাতে থাকা সময় ঢের কিছু বদলে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই স্কট-মার্কিন পরিবারের ট্র্যাডিশনকে আজও পুরোপুরি বদলাতে পারেনি।

    ছবি সৌজন্যে : লেখক

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook