ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • তেতো চকোলেট


    মধুশ্রী ঘোষ (December 30, 2023)
     

    সমালোচনা: ফিল্ম, ‘ওয়াংকা’ (২০২৩)
    মুখ্য চরিত্রে: টিমোথি শালামে, অলিভিয়া কোলম্যান, হিউ গ্রান্ট, রোয়ান অ্যাটকিনসন প্রমুখ

    পরিচালনা: পল কিং  

    আশি-নব্বইয়ের দশকে জন্মানো (যাদেরকে আমরা কায়দা করে এখন 80s-90s কিড বা মিলেনিয়াল বলি), যে জেনারেশনকে প্রায়ই তাদের বেড়ে ওঠার সময়ের পপ-কালচার নিয়ে হাহুতাশ করতে শোনা যায় ‘আমাদের সময়ের সিনেমা অন্যরকম ছিল, টিভি শো-এর মজাই আলাদা ছিল, সোশ্যাল মিডিয়া না থাকায় আমাদের সময়ে স্টারডম জলজ্যান্ত ছিল’। তাই ২০০৫-এ যখন ‘চার্লি অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি’ মুক্তি পেল, মনে রাখতে হবে ফেসবুক তখনও সদ্যোজাত, এবং যখন পরিচালক টিম বার্টন-এর ম্যাড-সায়েন্টিস্ট এনার্জির সঙ্গে অভিনেতা জনি ডেপ-এর প্রতিভা মিলেমিশে একাকার হয়ে বড়পর্দায় এক মিষ্টি-জাদু তৈরি হল, তখন সেখানে চার্লির সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও মনে হতে লাগল গোল্ডেন টিকিট পেয়ে সেই জাদুর জগতে যদি আমরা যেতে পারতাম তাহলে কী ভালই না হত!    

    ‘ওয়াংকা’ সিনেমাটি সাহিত্যিক রোল্ড ডাল সৃষ্ট অমর চরিত্র উইলি ওয়াংকা-র অরিজিন স্টোরি। যে আশ্চর্য জাদুর জগতে চার্লি প্রবেশ করতে পেরেছিল সেই জাদুর জগৎ ওয়াংকা কীভাবে তৈরি করলেন, এই সিনেমাটি সেই গল্পই বলে। সেই জাদুর জগৎ তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা কিছু ক্ষেত্রে সফল; কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দর্শককে পর্দায় চকোলেটের থেকে নিজেদের পপকর্নে বেশি মগ্ন থাকতে দেখা গেছে।   

    উইলি ওয়াংকা চরিত্রে এখনকার হলিউডের হার্টথ্রব টিমোথি শালামে একজন তরুণ chocolatier (চকোলেট প্রস্তুতকারী শেফ)। তার পকেট ফাঁকা কিন্তু স্বপ্নের ঝুড়ি পরিপূর্ণ। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য শহরের সবচেয়ে অভিজাত তিন chocolatier-এর আধিপত্য শেষ করে তাদের জায়গাটি নেওয়া— অনেক বাধা-বিপত্তি ঠেলে, অনেক দুষ্টু লোককে শায়েস্তা করে, তার সেই স্বপ্ন সফল করার গল্প নিয়েই এই ছবি।

    কিন্তু এই গলি-থেকে-রাজপথের আশ্চর্য গল্প বলার জার্নিতে-ই ছবিটা আমাদের হতাশ করে— সবকিছুই কেমন যেন ছকে বাঁধা। এটি একটি মিউজিকাল— উইলি গান গেয়ে জার্নি শুরু করে, বিপদে পড়লে গান গায়, আবার খুশি হলেও। সব গানের সুর একটা সময়ের পর একই রকম শুনতে লাগে। উইলি-র হাতে জাদু আছে; সে একের পর এক মায়াবী চকোলেট বানায়, মানুষের মন জিতে নেয়, কিন্তু দুষ্টু চকোলেট কার্টেল-এর পাল্লায় পড়ে সবই হারিয়ে ফেলে। আবার সে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, বন্ধুদের সাহায্যে সব ফিরেও পায়। এ পুরো সময়টিতে সেই চকোলেটের ম্যাজিকাল দুনিয়ায় যেতে আমাদের মন একবারও আকুলি-বিকুলি করে না, যেমন ‘চার্লি অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি’ দেখে করেছিল। একবারও মনে হয় না— ইস্‌, এই চকলেটের নদীতে ঝাঁপ দিলেই স্বর্গ হাতে পাওয়া যাবে!  

    টিমোথি শালামে তরুণ ওয়াংকা-র রোলে পারফেক্ট কাস্টিং। তাঁর সারল্য এবং অভিনয় প্রতিভা গল্পটির জন্য যথাযথ, কিন্তু পরিচালক যেহেতু গল্পটিকে শুধুই ভাল বনাম খারাপ-এর সরল ছকে ঢেলে দিয়েছেন, টিমোথি’র  অভিনয় প্রতিভার যথাযোগ্য ব্যবহার হয়নি।

    লিগাসির সমস্যা এখানেই যে, কোনও বিখ্যাত সিনেমার প্রিক্যুয়েল বা সিক্যুয়েল বানানো হলে, নতুন সিনেমাটি যেমন হাতেনাতে তৈরি একটি দর্শককুল পায়, তেমনই পূর্ব সিনেমাটি দেখে দর্শকদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেই ভারও তাদেরকে বহন করতে হয়। ‘চার্লি অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি’(২০০৫) সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন টিম বার্টন, যাঁর শৈলী এবং জাদু-বাস্তব তৈরি করার ক্ষমতা অতুলনীয়। ‘ওয়াংকা’-র পরিচালক ‘প্যাডিংটন’ ফিল্ম সিরিজ খ্যাত পল কিং। সেই লিগাসির গুরুদায়িত্ব বহন করার চেষ্টা করেছেন, ছবিটির কাস্টিং সেই চেষ্টার-ই ফল। বিশেষ করে ভিলেনদের ক্ষেত্রে অলিভিয়া কোলম্যান অভিনীত ইনকিপার মিসেস স্ক্রাবিট, কিগান-মাইকেল কিই অভিনীত দুর্নীতিগ্রস্ত চিফ অফ পুলিশ (যার আবার চিনিতে নেশা) এবং শেষমেষ রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত আরেক দুর্নীতিগ্রস্ত চকোলেট-অ্যাডিক্ট পাদ্রি মনে থেকে যায়।      

    টিমোথি শালামে তরুণ ওয়াংকা-র রোলে পারফেক্ট কাস্টিং। তাঁর সারল্য এবং অভিনয় প্রতিভা গল্পটির জন্য যথাযথ, কিন্তু পরিচালক যেহেতু গল্পটিকে শুধুই ভাল বনাম খারাপ-এর সরল ছকে ঢেলে দিয়েছেন, তাই টিমোথি’র অভিনয় প্রতিভার যথাযোগ্য ব্যবহার হয়নি। তবে কায়লা লেন, যিনি সিনেমাটিতে একজন অনাথ মেয়ে নুডল-এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তাঁর উপস্থিতি এক কথায় অসাধারণ। নুডল আর উইলির রসায়ন ছবিটির অন্যতম সম্পদ।   

    তবে শেষে সিনেমাটি সবচেয়ে বিতর্কিত প্রসঙ্গ না তুললেই নয়। উম্পা-লুম্পাদের মনে আছে? সেই যে বামনাকৃতি কমলা-রঙের শরীর এবং সবুজ-রঙের চুলওয়ালা চকোলেট কারখানার শ্রমিক? বিগত কিছু দশক ধরেই দর্শক ও সমালোচক নির্বিশেষে এই উম্পা-লুম্পাদের চরিত্রায়নে ক্রীতদাস প্রথা ও বর্ণবিদ্বেষের প্রকট ছায়া পেয়ে এসেছেন। এত দিনের প্রচলিত বিতর্কের সঙ্গে পল কিং আরেকটি বিতর্ক জুড়ে দিয়েছেন— এই ছবিতে সেই উম্পা-লুম্পাদের একটি চরিত্রে কাস্ট করেছেন হলিউডের এককালের চকোলেট বয় হিউ গ্রান্ট-কে। আমরা যারা সেই 80s কিড, তারা চিরকাল হিউ গ্রান্টকে রোমান্টিক নায়ক হিসেবেই দেখে বড় হয়েছি। তাদের কাছে এই কাস্টিং খুবই দুঃখজনক ও অপ্রয়োজনীয়।    

    বড়দিনের সময় রূপকথার গল্প দেখতে মানুষের হয়তো খারাপ লাগবে না। ‘ওয়াংকা’ সিনেমাটির কাছে সবকিছুই ছিল— ভাল অভিনেতা, তৈরি গল্প, তৈরি দর্শক, চকোলেট এবং ম্যাজিক। কিন্তু কোনও কিছুরই পূর্ণ ব্যবহার পরিচালক করতে পারলেন না। এই চকোলেট ফ্যাক্টরিতে চার্লি মনে হয় না আর যেতে চাইবে!  

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook