ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • শুধু কবিতার জন্য : পর্ব ৩২

    শ্রীজাত (December 11, 2023)
     

    ১.

    যাদের খুন করতে চেয়েছিলাম বহুবার
    তাদের সঙ্গে হেসে ছবি তুলছি এখন, পার্টিতে, পানশালায়।
    যাদের ভালবেসেছিলাম, তাদের কী যেন অসুখ করেছে। খবর রাখি না।
    এরই মাঝখান দিয়ে একটা রাস্তা গেছে দূরে।
    ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে তার দু’ধারে,
    এক বালক কুড়িয়ে নিচ্ছে অন্য গ্রহের খবরের কাগজ
    এক কিশোরী পশমের দোকানের পাশে উদাসীন বসে।
    এরই মাঝে গান গাইছেন এক অপটু ভিখারি
    ও বাসন ধুয়ে রাখছেন নামী ভবিষ্যৎ-বক্তা।
    আমি পানশালা থেকে বেরিয়ে, হাসপাতাল থেকে মুখ ঘুরিয়ে
    কী এক অলীক কৌশলে নেমে পড়ছি সেখানে
    আর ভুলে যাচ্ছি,
    বিস্মৃতি ও ছলনা ছাড়া নতুন সভ্যতা হয় না।

    ২.

    এখন যে বৈরাগ্য এসেছে,
    সে একদিন ছিল হোটেলের বেয়ারা।
    বাবু-বিবিদের পাতে রগরগে মেরুন মাংস বেড়ে দেবার সময়
    তার জিভ সে লুকিয়ে রাখত হিপপকেটে।
    এখন যে উদাসীনতা বিদ্যমান,
    সে আদতে চামড়ার কারখানার কেরানি।
    মাইনে বাড়েনি সাত বছর, পোলাওয়ের সুগন্ধ তার সহ্য হয় না।
    এখন যে তাচ্ছিল্য ছায়াসঙ্গী,
    সে আসলে নকল ডাক্তার।
    হাড় খুলে ভিতরের অলিগলি দেখার অভিসন্ধি নিয়ে
    সে খুলে বসেছিল চেম্বার, অন্ধকার ঝোপের ধারে।
    শান্তি প্রস্তাব বুকে সেঁটে ঘোরা তুমি, হে পথিক,
    অতএব বহু যুদ্ধ ও পাপ পেরিয়ে এই সরাইখানায় এসেছ।
    এখানে সবাই সাধু।
    ঠিক তোমারই মতো।

    ৩.

    তুমি এক ভারী নোনতা সমুদ্র থেকে কোনও দিন তুলে আনবে তাকে।
    সে এক প্রাচীন জেলে, উপকথা যার ছোট ভাই,
    মাছ ধরতে গিয়ে হারিয়ে গেছিল সেই কবে।
    ভিড় জমল প্রথমে, সমুদ্রের ধারে ধারে,
    তারপর রুপোলি বালিতে জাঁকিয়ে বসল বাণিজ্য।
    নিরুদ্দিষ্টের ছবির সামনে জেগে উঠল আইসক্রিম পার্লার
    আর অব্যর্থ হাত-দেখিয়ের তাঁবু
    তার ছেড়ে যাওয়া জুতোজোড়ার পাশে বসল টিকিটঘর
    ঘণ্টায় কুড়ি-তিরিশ হাঁক পাড়ল ব্যবসাদারেরা
    কবিতায়, গানে, সিনেমায় তার গল্প উঠে এল কত
    শুধু সে উঠে এল না।
    তুমি, যে শুয়ে আছ কবরখানায়, রোদ পোহাচ্ছ অথচ মারা যাওনি
    সে একদিন তুলে আনবে
    গায়ে শ্যাওলার আস্তরণ পড়া সেই প্রাচীন জেলেকে।
    ব্যবসা বন্ধ হবে সেদিন। রূপকথা শুরু হবে।

    ৪.

    এই কবিতার কাছে এসেছিল এক শামিয়ানা-বিক্রেতা।
    সে টাঙাতে চায় সাদা ফিনফিনে কাপড়ের চাঁদোয়া
    যার সঙ্গে শ্রদ্ধা বিনামূল্যে, সমীহ নিলে দাম কিছু বেশি।
    গ্রামীণ বাতাস সে সঙ্গে করেই এনেছে
    যাতে মাঝেমধ্যে দুলে উঠতে পারে শামিয়ানা আর
    দূরাগত পর্যটকেরা ভাবেন,
    ওহ, কবিতার প্রাণ আছে।
    এই নিয়ে যখন দরদাম চলছে,
    তখন, শরীর থেকে উঠে গিয়ে, আস্ত কবিতা
    বাজারে খুঁজছে এক পাত্র মদ, দুটো মোমবাতি ও রাতে থাকার সস্তা জায়গা।
    তাকে আমি একটু আগে দেখেছি পাশের গলিতে
    সামান্য অবিন্যস্ত অবস্থায় এক বালকের সামনে নতজানু হতে।
    সে শ্রদ্ধা চায় না। সমীহ চায় না। বন্ধু চায়।

    ৫.

    শত্রুদের সুরারোপিত এই বাজারে স্বাগত জানাই
    গনগন করে বাজতে থাকা গরম গানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাবার আনন্দে
    টিমটিম করে জ্বলতে থাকা সুরধুনির আঁচ নেবার শিহরণে
    ডাক পড়ল যে,
    তাতে ভারী পিঠ-ব্যথা-করা আনন্দ প্রকাশ করলাম।
    এই ব্যুরোক্র্যাট রঙের মিঠে সন্ধেয় আমি যোগেশ মাইম সেজেছি।
    যে-দেয়াল নেই তাকে ঠেলে সরানোর চেষ্টায় এই বাজার আমি জিতে নেব
    যে-বাক্য উচ্চারিত নয় তাকে বলতে গিয়ে চোখে জল এনে ফেলে সে কী একশা
    আর তুমি, দীনহীন সাকরেদ আমার,
    টুপি খুলে বাড়ি বাড়ি ও তাবৎ পথচারী গুনে নেবে
    মনে রেখো, স্বরলিপি তোমাকে খেতে দেয় না।
    অভিনয় দেয়।

    ৬.

    অ্যালেক্সা এখনও ভিখিরিদের গান বাজাতে পারে না।
    আমি ট্রেনের দুলুনি কল্পনা করে শুতে যাব বলে তাকে হুকুম লাগাই
    খোনা গলার চড়া সুরের গান সব
    সঙ্গে লাঠির ঠুকঠুক আর এনামেলের গ্লাসে খুচরোর খঞ্জনি
    সে নিয়ে আসে অন্য গান, অন্য কারও গাওয়া।
    আমার বারান্দা থেকে বহুদূরে যে-ট্রেন
    অন্ধকারের মধ্যে আলোর জানলা সেলাই করে দিয়ে পালায়
    তাকে আমি হিংসা করি
    হিংসাও এক ধরনের শান্তি, অ্যালেক্সা আমাকে শিখিয়েছে।
    প্রযুক্তি হেরে গেছে দারিদ্র্যের কাছে।
    আমার ঘুম শুধু জানে সে-কথা।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook