ফুলের নেশা
ফুল ফুটেছিল গাছে
আমি তার পাশে এসে হাত রেখেছিলাম পাতায় পাতায়
হাতের টাচে পাতাগুলি নীচু হয়েছিল কিছু
হাওয়ার ছোট্ট এক তরঙ্গ, দেখা যায় না, উঠেছিল
অনুভব যদিও আছে তার
আমার ত্বকের রোমগুলি দাঁড়িয়ে পড়েছিল এইবার
চোখ বুজে এসেছিল আরামে আরামে আমার
সেই নরম, আহা কী নরম নরম…
তার ভিতর
এক নেশা হয়ে গিয়ে জেগে রয়েছি তো এই…
এই নায়কের দেশে, সানগ্লাস পরে, স্নানও না করে
দিনের পর দিন, আঁসালো বছর…
টুং
সারা আকাশ ছড়ানো আলো,
আলো এসে মাটির উপর ঝাঁপ কাটল—
এত তার সেঁধানো-শক্তি যে…
মাটি ভেদ করে
নীচে… বহু নীচে, খাটাপায়খানার বটম পেরিয়ে…
যেখানে আমার বেডরুম
সেইখানে, যেখানে আমি ন্যাংটো হয়ে বসে-বসে চুমুক দিয়ে-দিয়ে
কোল্ড ড্রিঙ্ক খাচ্ছি… উহ্! সেইখানে…
মদ আমার সহ্য হয় না ভাই, আইবিএস,
কোল্ড ড্রিঙ্কও বারণ— তবুও
ঠান্ডা কিছু তো খেতে হবে নাকি…
এত গরম, এই এসিতেও, গরমের গালুগাবানোর ভিতর বসে…
বসে…
আলো এসে পড়েছে আমার টুংয়ের উপর…
তাকে নাড়াচ্ছে… তাকে চাড়াচ্ছে…
প্রথমে আলগা আলগা,
পরে জোরে
আরও পরে ঈশ্বরের কাতুকুতুর বেগ সে করেছে জেনারেট
কিন্তু আমার কিচ্ছু হচ্ছে না… হবেও না— তা
আমি হাসিতেছি— হা-হা-হা… আও… আরও আলো…
আরও আলো, আও…
হাল ছেড়ে নিভে গেছে আলো পুট করে… টুংয়ের উপর
‘ইতি তাফালিং, আমারে ভুল বুঝো নাকো, প্লিজ’
লিখেছে যাওয়ার আগে চুলের কাঁটা দিয়ে সে
গলে যাওয়ার ফলে
বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে সারা দিন সারা রাত ধরে
মাটি গলে যাচ্ছে, গলে যাচ্ছে পাথর
গলে যাচ্ছে বাড়ি ও গাছ, পাখির বাসা আর পাখির ডিমগুলি একে একে…
ডিমের কুসুমের রং বদল হয়ে যাচ্ছে
গলে যাওয়ার টিক-টিক আগে
গলে যাওয়ার যে ভাব, যে চিন্তা তাতেই রঙের বদল
হয়ে যাচ্ছে
কুসুম কুসুম…
গলে যাচ্ছে জিভ, দাঁত, গলে যাচ্ছে গাদা গাদা কালো ও গেরুয়া
চুল, গলে যাচ্ছে
বাবার সংবিধান, আকাদেমি অভিধান, শ্রাবণের ধারার মতো ধারাগুলি গলে যাওয়ার আগে কেলিয়ে নিচ্ছে দুধে কামড় বসানো দাঁত
বহু কিছু গলে যাওয়ার ফলে এক মণ্ড তৈরি হয়েছে— বিরাট মণ্ড সেটা,
আকাশের ধন ছুঁয়ে ফেলা,
আকাশের সুড়সুড়ি লাগছে তাতেই,
খুব সুড়সুড়ি, তখনই কেঁপে-কেঁপে
উঠে বৃষ্টি তার থেমে গেছে পুরো, একেবারে ধাঁ করে থামা…
মণ্ড থেকে কুসুমিত পাখি উড়ে বেরিয়ে
এইবার গিয়ে বসেছে সেই ধনে,
আর বলিতেছে, ‘রাজার ঘরে যে ধন আছে/ টুনির ঘরেও…!’
ফুঁ
সকাল থেকে আমরা দুজন মুখোমুখি বসে আছি
এই এত বড় বাড়ি,
ছড়ানো ছাদে
মুখোমুখি বসে
আমাদের একজনের চোখ আর একজনের উপর স্থির
হয়ে আছে
দুজনেই দুজনের জামার প্রথম বোতামের দিকে তাকিয়ে
রয়েছি হাঁ-করে—
বোতাম চকচক করিতেছে শুক্রাণু-সাদা বনজ্যোৎস্নায়…
আমাদের চোখে বড্ড আরাম দিচ্ছে সেই আলো—
ঘুম এসে যাচ্ছে, লতানে-পাতানে ঘুম…
আজানে-পাজানে ঘুম
দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ছি তো,
চোখদুটো বন্ধ করতে ভুলে গিয়ে… ঘুমিয়ে…
ঈশ্বর কিন্তু বিরক্ত এসবে
আমাদের নিদ্রাভঙ্গের জন্য গড়িয়াহাটের
ফুটপাতে বসা
দাপুটে সেলসম্যানের কাছ থেকে কেনা রেনকোটকে সে পাঠায়
আহা রেনকোট… ব্রাদার…
ঘুম ভাঙানোর জন্য আমাদের দুজনের চোখে
ফুঁ দিতে থাকে সে-ই তো, ‘টিপ টিপ বর্ষা পানি’ এ-গানের সুর বেজে
ওঠে ফুঁয়ের ভিতরে ভিতরে তার
ছোট বড়
তুমি আমার নখের যোগ্য যাতে না হতে পারো
আমি তাই নখ কাটি না
আমার নখ যত বেড়ে ওঠে, তুমি তত ছোট হয়ে যাও,
দেখি এইসব আর হাসি—
তুমি আমার নখর চেহারা দেখে মাঝে মাঝে
পেয়ে যাও ভয়
শিহরিত, খাটের নীচে ঢুকে লুকিয়ে নিজেকে ফ্যালো,
আর তখনই তোমার প্রেমিকের ফোন চলে আসে
খান খান করে দেয় রিং—
গান শুরু হয় এক প্রাচীন যুগের, … এসেছি গো কাছে ডেকে লও…
প্রতি বার ফোনের ভিতর থেকে সে বলে,
বেরিয়ে এসো খাটের তলা থেকে ওগো, নখ কেটে ফেলেছি গো
তুমি আর আমি এখন সমান সমান
বেরোতেই বুঝে যাই, মিথ্যে বানানো গল্প সে বলে,
তখন ড্যামেজ কন্ট্রোলে প্রেমিক
আরাম দিতে থাকে আমার অঙ্গে অঙ্গে…
কে বাজায় নখের আরাম…
আরাম খেতে খেতে দেখি ওইগুলি আগের চেয়ে অনেক
বড় হয়েছে, আর আমি আরও—
আরও হয়ে গেছি ছোট