ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • কুয়াশায় ঢাকা কান্নাগুলো


    সারস্বত সেন (August 4, 2023)
     

    সমালোচনা ওয়েব সিরিজ, ‘কোহ্‌রা’
    মুখ্য চরিত্র— সুভিন্দর ভিকি, বরুণ সোবতি, একাবল্লী খান্না প্রমুখ
    পরিচালনা— রণদীপ ঝা

    ১: ‘আমাদের সবাই যোদ্ধা-জাতি বলে জানে, কিন্তু আমার ছেলেকে দেখে কেউ বুঝবে সেটা? ও তো পুরুষই হয়ে উঠতে পারেনি এখনও’— আক্ষেপ পল ধিলোঁর বাবার। একটু আগেই স্কুল-পড়ুয়া ছেলে পলকে বেধড়ক মেরেছেন, বন্ধু লিয়ামের পাল্লায় পড়ে ‘দস্তার’ (পাগড়ি) খুলে সে মাথার চুল কেটে ফেলেছে বলে। যতই এনআরআই হোন, ভাই-বেরাদরদের সামনে মুখ দেখাবেন কী করে, যদি চাউর হয়ে যায় তাঁর ছেলের আসল রূপ!  দৃশ্য ২: পলের বাগদত্তার প্রাক্তন প্রেমিক সাকার (সৌরভ খুরানা) যখন জানতে পারে যে তাঁর প্রেমিকা অতীত ভুলে সাগরপাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায়, তখন গড়পড়তা ভারতীয় পুরুষদের মতোই হয় তাঁর প্রতিক্রিয়া। না, সে কোনও ভিডিও ভাইরাল করে না; সে শিল্পী, অতএব প্রাক্তন প্রেমিকাকে নিয়ে সে গান ফাঁদে। সেই গান ব্যথাতুর হৃদয়ের নয়, গনগনে চাপা রাগের, যেখানে এককালের মনের মানুষকে সে দুনিয়ার সামনে ‘গোল্ড-ডিগার বিচ’ বলে গাল পাড়ে— প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা মাচিস্‌মোর এরকম অনেক মুহূর্ত ‘কোহ্‌রা’র ছ’টি পর্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও কোথাও অবশ্য তার উদ্‌যাপন নেই। বহিরঙ্গে পুলিশ প্রসিডিউরাল থ্রিলার হলেও ‘কোহ্‌রা’ টপকে যায় প্রথাগত জঁরের গণ্ডিগুলো। তার একই অঙ্গে অনেক রূপ।

    কোহ্‌রা শব্দের অর্থ কুয়াশা। গল্প শুরুও হয় কুয়াশাচ্ছন্ন এক সকালে যখন ধানখেতে দুই কিশোর-কিশোরী আবিষ্কার করে একটা মৃতদেহ— আর কিছুদিন পরেই বিয়ে হতে চলা পলকে কেউ বা কারা খুন করে ধানখেতে ফেলে দিয়ে গেছে। তার উপর মৃতের বন্ধু লিয়ামের কোনও খোঁজ নেই। যথারীতি পুলিশ আসার আগেই স্থানীয় মিডিয়া অকুস্থলে গিয়ে ড্রাগ-সমস্যায় ধুঁকতে থাকা রাজ্যে উচ্চবিত্তরাও যে আর সুরক্ষিত নয় সেই নিয়ে ব্রেকিং নিউজ করতে থাকে। আর এই অপরাধের তদন্তভার পড়ে সাব-ইন্সপেক্টর বলবীর সিং (সুভিন্দর ভিকি) ও তাঁর জুনিয়র গারুন্ডির (বরুণ সোবতি) উপর। তাঁদের তদন্তের গতিপথের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চরিত্রগুলোর ব্যক্তিগত অতীতের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামনে ফুটে উঠতে থাকে পচে যাওয়া উদাসীন সমাজে কিছু গুমরোতে থাকা অসহায় মানুষের চাওয়া আর না-পাওয়ার আখ্যান। পটভূমিকা পঞ্জাব হলেও এটা হতেই পারত দেশের যে কোনও প্রান্তের গল্প; বিষয়বস্তু এই মাটির শিকড়ে থাকলেও, মেজাজে ও ট্রিটমেন্টে ‘কোহ্‌রা’ বিশ্বজনীন। 


    তাঁদের তদন্তের গতিপথের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চরিত্রগুলোর ব্যক্তিগত অতীতের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামনে ফুটে উঠতে থাকে পচে যাওয়া উদাসীন সমাজে কিছু গুমরোতে থাকা অসহায় মানুষের চাওয়া আর না-পাওয়ার আখ্যান। পটভূমিকা পঞ্জাব হলেও এটা হতেই পারত দেশের যে কোনও প্রান্তের গল্প; বিষয়বস্তু এই মাটির শিকড়ে থাকলেও, মেজাজে ও ট্রিটমেন্টে ‘কোহ্‌রা’ বিশ্বজনীন। 

    ভালবাসার যুক্তি কখনও যুক্তির ধার ধারে না। এখানে সব চরিত্রই ভালবাসার ভিন্ন ভিন্ন রূপের কাঙাল। বলবীর সিংয়ের মেয়ে নিম্রত (হরলিন শেঠী) স্বামীকে ছেড়ে সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকে। চাপিয়ে দেওয়া অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ-এ যেমন সে আর মানিয়ে নিতে চায় না, তেমন তাঁর বাবাও মেনে নিতে চায় না যে প্রথম বিয়েকে টা-টা জানিয়ে সে দ্বিতীয়বার পিঁড়িতে বসার জন্য তৈরি। মেনে নিতে পারে না সাকারও; তাঁর প্রাক্তন তাঁকে হেলায় পাশ কাটিয়ে অন্য পুরুষের হাত ধরে কেটে পড়বে বিদেশে, সেই আক্রোশে সে নেয় একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত। প্রত্যাখ্যানও যে হাসিমুখে মেনে নিতে হয়, এই বোধোদয় তাঁর হয় অনেক পরে। হাইওয়ের পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা রুপ দেহোপজীবিনী তো কী? একটা মন তো তাঁরও আছে, যতই তা আমাদের কাছে বিস্ময়ের বিষয় হোক। তাঁর খাঁ খাঁ জীবনে এক চিলতে ভালবাসাও যখন হাতছাড়া হয়ে যায়, তখন সে আর কীই বা করতে পারে— কান্নাটুকু গিলে ফেলা ছাড়া!

    আশেপাশের বা আমাদের মতোই এখানে কোনও চরিত্রেরই নীতিবোধ টনটনে নয়, বরং দোষে-গুণে ভরা রক্ত-মাংসের। যেমন গারুন্ডি— নিজের বৌদির সঙ্গে সম্পর্কের চাহিদা ফুরোলে অবলীলায় অন্য মেয়ের চোখে নতুন স্বপ্ন দেখতে উদ্‌গ্রীব হয়; আবার মানবাধিকারকে ফুৎকারে উড়িয়ে সে লকআপে সন্দেহভাজনদের উত্তমমধ্যম দিয়ে এসে নির্বিকার মুখে সিঙাড়ায় কামড় বসায়। বরুণ সোবতি চরিত্রটি এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে এক এক সময় মনে হয় তাঁর চরিত্রটি বোধহয় আমাদের সামনে উপস্থিত নেই। এই যে নিজেকে প্রায় অদৃশ্য করে তোলা, এই অভিনয় ক্ষমতা বিরল। তবে সবাইকে পিছনে ফেলেছেন মুখ্যচরিত্রে পঞ্জাবি অভিনেতা সুভিন্দর ভিকি। নিজের মেয়ের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের দৃশ্য হোক কী ভিক্টিমের পরিবারের সামনে তাঁর অসহায়তা— এক গোটা জীবনের হর্ষ-বিষাদ খুব সহজেই ফুটে ওঠে তাঁর অভিব্যক্তিতে। পরিচালক রণদীপ ঝা কেরিয়ারের শুরুতে অনুরাগ কাশ্যপ ও দিবাকর ব্যানার্জির সহকারী-পরিচালক রূপে কাজ করেছেন। সেই সাধুসঙ্গ বৃথা যায়নি। এর আগে ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’-এ নজর কেড়েছিলেন। এখানেও তাঁর পরিমিতিবোধের ছাপ স্পষ্ট।

    আর যেটা না বললেই নয়, তা হল সিরিজের ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডস্কেপ যা ক্রমাগত পারিপার্শ্বিক শব্দের মধ্যে দিয়ে সিরিজটিকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে। কেবল ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর নয়, এই সাউন্ডস্কেপ নিজগুণে এই সিরিজের একটি অন্যতম চরিত্র হয়ে উঠেছে।

    ‘কোহ্‌রা’ কিন্তু শুধুই ঝাপসা হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর কান্না দেখায় না— সুযোগ এনে দেয় উপলব্ধির আর প্রায়শ্চিত্তেরও। শেষ পর্বে যখন সিনিয়র ধিলোঁ মৃত ছেলের বিয়ের পোশাক হাতে নিয়ে কেঁদে ফেলেন, বোধহয় বুঝতে পারেন এই মর্মান্তিক পরিণতির জন্য তিনিও তো অনেকটা দায়ী— কিন্তু বড্ড দেরিতে বোঝেন। বলবীর অবশ্য উপলব্ধিতেই থেমে থাকেন না— সময় থাকতে মেনে নেন নিজের মেয়ের জেদ আর মানিয়ে নেন নিজের মনকেও— একটা নতুন শুরুর জন্য। আর বিচারব্যবস্থার নামে যে নিষ্ঠুর প্রহসন এখানে গা-সওয়া, তা হুবহু ফুটে ওঠে যখন পুলিশ-লকআপে এক সন্দেহভাজনকে থার্ড-ডিগ্রি দেওয়ার পর গারুন্ডি নিজের ভুল বুঝতে পারে— কিছুটা অনুতপ্ত হয়ে সে তখন মন থেকেই সেই বন্দির কাছে ক্ষমা চায়— বলে ‘সরি ইয়ার!’ ব্যস এটুকুই। যে-পৃথিবীতে বিচারাধীন বন্দিদের মানবাধিকার মিডিয়ার কাছে ফুটনোট আর কাস্টডিয়াল-ডেথ রোজকার সমাচার, সেখানে এটুকু প্রাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাই দস্তুর।

    গোটা সিরিজটি জুড়ে রয়েছে এক আশ্চর্য শূন্যতা— চরিত্রগুলির মধ্যে, দৃশ্যপটের মধ্যে, গল্পের বাঁধুনির মধ্যে। চরিত্ররা নিজেরাও হয়তো জানে না, তারা এক দিশাহীন শূন্যতার ঘূর্ণির মধ্যেই নিত্যকার জীবন কাটাচ্ছে, আর ভাবছে এটাই তো জীবনযাপনের তারিকা। এবং এখানেই চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকের মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে। কোথাও সিরিজটি উচ্চকিত নয়, অথচ কোন এক গভীরে এমন ধাক্কা মারে যে সংবেদনশীল দর্শকেরও নিজের দিনগত পাপক্ষয় সম্পর্কে প্রশ্ন জাগবে।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook