ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং: পর্ব ৪৩


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (May 27, 2023)
     

    পুচ্ছটি তোর

    আইপিএল মানে কি সন্ধে-ভরণী, না রিংকু-সিং-তরণী, না ক্রিকেটের কপিবুক পড়োনি? যতক্ষণ প্রথম ব্যাপারটা জাঁকিয়ে ও জমজমিয়ে গ্যাঁট, কিছু এসে যায় কি? এই প্রকাণ্ড বোরডম-ভোম্বল কালে, যখন লোকে দৈনন্দিন টিভি-বিতর্ক আর ওয়েব-সিরিজ ছেনে-ছুমড়ে হা-ক্লান্ত তিতিবিরক্ত, তখন এই একটি খেলার আসর এসে আমাদের ট্র্যাফিক পুলিশের প্রায় অভয়হস্ত দেখিয়ে বলে, এক-দেড় মাস কুচ্ছু দুশ্চিন্তা নেহি, সন্ধে হলেই টিভি খুলে দেখতে পাবি এমন মজাদার খেল, যাতে তৃণমূল বিজেপি নেই, থ্রিলারের নতুনত্বের তাড়নায় আচাভুয়া এন্ডিং নেই, শাশুড়ি-ননদের রিগ্রেসিভ আকচাআকচি নেই, এমনকি প্রতিযোগীর গান শোনার পর বিচারকের কান্নাকাটির (কারণ প্রতিযোগী গরিব এবং বাপ-মরা) মেকি যাত্রাপালাও নেই, অথচ হইহই আনন্দ আছে, সঙ্গে সিরিয়াল-সিরিজের দেড়া নাটকীয়তা, উত্তেজনা, উত্থান-পতন। ইচ্ছে করলে টিভি খুলতেও পারো, না-ও পারো, কিন্তু খুললেই, সে যেখান থেকেই দ্যাখো, পয়লা ওভার বা চোদ্দোতম, খেলুক রাজস্থান বা গুজরাট, আমোদে অ্যাত্তটুক কমতি পড়বে না। সদা-প্রস্তুত এক মজা-মেশিন, যা তোমার নিমিত্ত এনেছে ক্রিকেট খেলার বেধড়ক সাসপেন্সের নির্যাসটুকু, যাতে খানদানি ক্রিকেটীয় শটও আছে, আবার চামচের মতো বল তুলে উইকেট-কিপারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কাও আছে। যাকে বলে মিক্সড চাট, এবং তার সোয়াদের জাল থেকে অতি গোঁড়ারও মুক্তি নেই, আজ নয় কাল ভুবনজোড়া ফাঁদে সে স্বেচ্ছায় চটি গলাবেই।

    এ জিনিস টেস্ট ম্যাচে চারিয়ে গিয়ে অনেককেই বেশিক্ষণ ক্রিজে দাঁড়াতে দিচ্ছে না, কারণ ‘ওগো কখন চৌকা, কবে ছক্কা’ রবে বেমক্কা হৃদয় চুলবুল করছে এবং ম্যাচ শেষ হয়ে যাচ্ছে আড়াই দিনে, এমনকি ৫০ ওভারের খেলাতেও ধৈর্যের অভাব এসে উইকেট নিয়ে চলে যাচ্ছে ছোঁ-মারা চিলের মতো, কিন্তু এই পরিবর্তিত অ্যাটিটুডের ফলে আয়ত্ত নির্ভীকতাকে কেউ যদি একটু বুদ্ধি ও বোধের সঙ্গে ঠিকঠাক ককটেলায়িত করতে পারে, তার সিদ্ধি উঠবে তুরীয় স্তরে।

    অনেকেই আইপিএলের প্রথম দিকটায় বলেছিলেন, ধুস এ আর যা-ই হোক ক্রিকেট নয়, কিন্তু কিছুকাল পরে ক্রিকেট-টাই বদলে গেল এই ডোন্ট-পরোয়া অর্বাচীনের প্রভাবে। আশ্চর্য সব স্ট্রোকের আমদানি তো হলই, পাড়ার তাড়ু শট ঢুকে পড়ল অনায়াসে অভিধানে বা অন্তত ভিডিও ফুটেজে, কিন্তু সর্বোচ্চ প্রাপ্তি হল— প্রায় অবাস্তব সাহস। ব্যাটসম্যানরা আর কক্ষনও ভয় পায় না। যে কোনও পরিস্থিতি, যা কিছুকাল আগেও মনে করা হত অনতিক্রম্য, তার সামনাসামনি দাবড়ে ব্যাট হাঁকড়াতে চল্লিশ লক্ষ সৈন্য রেডি। ছোট ছোট ছেলে বিশ্বখ্যাত বোলারকে এমন অনায়াস দাপটে ছক্কা হাঁকড়াচ্ছে, দেখে মনে হয় এরা জানেও না সামনে কে আর তার রেকর্ড কী। খেলতে নেমে প্রথম বলটাতেই আশি মাইল ছক্কা মারা আগে ছিল পাপ। এখন অনেকেই তা করছে। সেট হওয়ার জন্য নিজেকে সময় দেওয়া আবার কী? বল পড়েছে, ব্যাট তৈরি, কোটি কোটি চোখ আমার দিকে তাকিয়ে। মারো শালা। এরা জানে, মারো, মারো, মেরে পাট করে দাও। এরা জানে, সব কিছুকেই বাউন্ডারির ওপারে ফেলা যায়, যদি প্রয়োজন হয়। দু’বলে ১২ দরকার হলে আগে লোকে ম্লান হেসে ওয়াক-ওভার দিত। এদের হাঁটু কাঁপে না। সত্যি সত্যি দুটো ছক্কা মেরে, নিজের বুকে ঘুঁসি মেরে বোঝায়, এই শর্মা এসে গেছে. মাভৈঃ। এ জিনিস টেস্ট ম্যাচে চারিয়ে গিয়ে অনেককেই বেশিক্ষণ ক্রিজে দাঁড়াতে দিচ্ছে না, কারণ ‘ওগো কখন চৌকা, কবে ছক্কা’ রবে বেমক্কা হৃদয় চুলবুল করছে এবং ম্যাচ শেষ হয়ে যাচ্ছে আড়াই দিনে, এমনকি ৫০ ওভারের খেলাতেও ধৈর্যের অভাব এসে উইকেট নিয়ে চলে যাচ্ছে ছোঁ-মারা চিলের মতো, কিন্তু এই পরিবর্তিত অ্যাটিটুডের ফলে আয়ত্ত নির্ভীকতাকে কেউ যদি একটু বুদ্ধি ও বোধের সঙ্গে ঠিকঠাক ককটেলায়িত করতে পারে, তার সিদ্ধি উঠবে তুরীয় স্তরে। আইপিএলের টাকা ও প্রচার, রাতারাতি নায়ক বানিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা এবং অন্য অনেকের সঙ্গে বেধড়ক প্রতিযোগিতার আবহ এসে, প্রত্যেকটা লোককে বলেছে, ভাল হলে হবে না বস, ভাল যথেষ্ট নয়, অ্যাক্কেরে মহতোমহীয়ান হতে হবে, কমিকসের সুপারহিরোর কেরদানি দর্শাও। এবং লোকে সে চ্যালেঞ্জ দেখে পালানো দূরে থাক, দৌড়ে আলিঙ্গন করছে। প্রতিটি আইপিএল ম্যাচে এমন অন্তত একটি শট, একটি বল, বা একটি ফিল্ডিং কেরামতি দেখা যাবেই, যা মিরাকল-এর আখ্যা পেতে পারে। আর মাঝে মাঝে সেই অবিশ্বাস্য কাণ্ড দীর্ঘায়িত হয়ে চোখে ও মনে লাগাতার ঝিলমিল। কেউ হয়তো শেষ ওভারে পর পর পাঁচটা ছয় মেরে দলকে জিতিয়ে দেবে। কোনও দল হয়তো ২০ ওভারে তুলবে ২৫৭, যা এক সময়ে ৫০ ওভারেও অনেকে তুলতে পারত না। কেউ হয়তো এমন একটা ক্যাচ ধরবে, যা জীবনবিজ্ঞান-বিরোধী। সে এক হাত বাড়িয়ে উড়ে যাবে, কিংবা চিতাবাঘের মতো ঝাঁপাবে, যা মনুষ্যপ্রজাতির সদস্যের মস্তিষ্কে পরিকল্পনার স্তরেই গজাতে পারে না। কোনও ফিল্ডার বাউন্ডারির বাইরে শরীর চলে যাচ্ছিল বলে, বলটাকে থাবড়ে উঁচুতে তুলে দেবে, এবং নিজে ফের বাউন্ডারির দড়ি পেরিয়ে মাঠে ঢুকে ক্যাচ তালুবন্দি করবে। কোনও বোলার এই ধুমাধাড় আতশবাজির দৃশ্যে ঢুকেও এমন সাংঘাতিক অনবদ্য ইয়র্কার ফেলবে নিখুঁত ব্লকহোলে পর পর পাঁচটা, শেষ ওভারে ছয় দরকার থাকলেও সেরা ব্যাটসম্যান তা তুলতে পারবে না। এই যে গোটা খেলাটাকে কে যেন স্টেরয়েড খাইয়ে দিয়েছে, কে যেন বলেছে ক্লাইম্যাক্সের পর ক্লাইম্যাক্স চললেও নাটক হড়কায় না, কে বলেছে সঅঅব সম্ভব, সমস্তই, জুতোর দোকানের স্লোগান ছাড়াও, বাস্তবেই, ইমপসিবল ইজ নাথিং, প্রকৃত

    মাঠে ও ঘাসে হুবহু বুক-ক্রিকেট নেমে আসতে পারে, কেউ প্রচার করেছে  ‘অলৌকিক’ বা ‘আশ্চর্য’ তার সংজ্ঞা বদলে ফেলেছে এবং তা আদৌ ‘বিরল’ নহে,  বরং দৈনিক হারে ঘটমান একটি নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টে— এই এক সত্যিকারের নতুন। কেউ চাইলে জীবনেও এর প্রেরণা কুড়োতে পারে, আস্কিং রেট ২১ হলেও যদি একটা লোক না ঘাবড়ায়, তাহলে হয়তো ৫৩ বছর বয়সে চাকরি চলে গেলেও মরণান্তিক ভয় পাওয়ার সময় হয়নি, কিন্তু ভাবনাবিশ্বে বিপ্লব হোক না হোক, ক্রিকেটের ভাবনায় ও সন্ধেবেলা সময় কাটানোর দৈব আমলকি বিতরণে এ জিনিসের নোবেল-মার্কা অবদান।

    আইপিএল-এর আত্মায় এই অদ্ভুত হাঁসজারুত্ব মুহুর্মুহু ঝলকাচ্ছে, এখানে অনায়াসে রিভার্স সুইপে ছয় মারা যায়, আর তার পরের বলেই এমন কভার ড্রাইভ মারা যায় যা কপি-পেস্ট করে বসালে উইজডেনের বই গৌরবান্বিত হবে।

    সূর্যকুমার যাদব অফের বাইরের বলকে তুলে নিজের বাঁ-কানের পাশ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাচ্ছেন, দেখে গাভাসকারের নির্ঘাত হৃৎপিন্ড আঁতকে ড্রপড্রপায় এবং পন্টিং-এরও চোয়াল অবচেতনে ঝুলে পড়ে, কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেন ও মানেন, তাঁদের কালের ব্যাকরণ এখন ধুম জ্বর নিয়ে কোঁকাতে কোঁকাতে দেশে গেছে এবং সম্ভবত আর ফিরবে না। এই যে চোখের সামনে কপিবুক ধ্বংস হল, এবং সেই ধ্বংসের পিছনে প্রতিভা ও দুঃসাহসের স্বীকৃতি প্রাচীন নায়কেরা দিলেন (সে অকুণ্ঠভাবেই হোক বা  মনে গজগজ চেপে), এ ব্যাপার সাধারণত দেখা যায় না। যখনই নতুন এসে পৌঁছয়, তখনই পুরাতনের গাত্রদাহ এবং টিটকিরি শুরু হয়। সাহিত্যে বা চিত্রকলায়, নৃত্যে বা সংগীতে, বহু সময় নতুন তার স্বীকৃতি পেতে পেতে পুরনো হয়ে যায়। যে লোক কবিতায় অভিনবত্বের চাষ করেছিল ২৬ বছর বয়সে, সে পুরস্কার জেতে ৭৬ বছরে গিয়ে। তখন তার ঘোর এবং জোর, দুইই ঘুমপাড়ানি মাসির আস্তানায়। কিন্তু এখানে যশস্বী জয়সওয়ালের তুলনাহীন মার কিংবা ফাফ দুপ্লেসির ডাকাতেপনা, শুভমান গিলের লীলা বা রশিদ খানের ঘূর্ণি, সব তক্ষুনি হাতে-গরম সার্টিফিকেট পাচ্ছে এবং নথিবদ্ধ হচ্ছে, লোকে ফিরে ফিরে দেখছে ও বিশ্লেষণ করছে, এবং যা আধুনিক তা আধুনিক কালেই বন্দিত নন্দিত হচ্ছে, এর মূল্য অসীম। এবং নতুনকে দেখে পুরনো কীভাবে নিজেকে বদলে ফেলছে, তা এবছর যাঁকে দেখে শেখার: আজিঙ্ক রাহানে। এর আগেও আমরা দেখেছি রবিন উথাপ্পা প্রায় বাতিলের খাতায় পড়েও কীভাবে নিজের খেলাকে দুরন্ত ঢেলে সাজিয়েছেন, দিনেশ কার্তিক মিনমিনে খেলোয়াড় থেকে সহসা হয়ে উঠেছেন দুর্দান্ত ফিনিশার, কিন্তু রাহানের আত্ম-আবিষ্কার, বা বলা ভাল পুনর্নির্মাণ, চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। তিনি খুব বড় খেলোয়াড় ছিলেন তবে প্রাচীনপন্থী গোছের, টি-টোয়েন্টিতে নেহাত অচল, আর আইপিএলে তাঁর কথা কেউ ভেবেও দেখত না। তাঁকে চেন্নাই সুপার কিংস নিয়েছে দেখে লোকে আন্তরিক অবাক হয়েছিল। কিন্তু খেলা দেখে এবার সকলে তাজ্জব। তিনি এখন মারকুটে ও সুযোগসন্ধানী, সাহসী ও ঝুঁকিপ্রবণ, তত্ত্বের কথা না ভেবে প্রয়োগে মনোযোগী, খুব ভাল ব্যাকরণ জানা ছাত্র থেকে ব্যাকরণ ভাঙতে আদৌ পিছপা নয় এমন বেপরোয়া থিসিস-রচয়িতা, তা বলে ব্যাকরণের মূল্য সম্বন্ধে অশ্রদ্ধাশীল নয় মোটেই। আইপিএল-এর আত্মায় এই অদ্ভুত হাঁসজারুত্ব মুহুর্মুহু ঝলকাচ্ছে, এখানে অনায়াসে রিভার্স সুইপে ছয় মারা যায়, আর তার পরের বলেই এমন কভার ড্রাইভ মারা যায় যা কপি-পেস্ট করে বসালে উইজডেনের বই গৌরবান্বিত হবে। রাহানে নিজেকে নতুন ছাঁচে ঢালার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় টেস্ট টিমে সুযোগ পেয়েছেন, যদিও নির্বাচকেরা বলেছেন তা ঘরোয়া ক্রিকেটের রেকর্ডের দিকেও লক্ষ রেখে, তবে সেকথা জজে মানবে না। আইপিএল থেকে এখন প্রতিভা-সংগ্রাহকরা নিয়মিত মণিরত্ন তুলছেন ও প্রবল মঞ্চে তাঁদের প্রকাশ প্রস্তুত করছেন, তা না করলেও এই বাৎসরিক পার্বণ এলেই অনেকের অনুরাগীরা নড়েচড়ে বসেন, রিংকু সিং কেউ-না থেকে এখন সকলের প্রশংসার পাত্র, রাহুল তেওয়াটিয়া বেশ কিছুদিন হল ধারাভাষ্যকারদের কুর্নিশ কুড়োচ্ছেন, অথচ একটি ম্যাচে তিনি তাঁদের কাছে বেশ গাল খাচ্ছিলেন (রান করতে পারছিলেন না কিছুতেই), যতক্ষণ না এক ওভারে পাঁচটা ছক্কা মেরে তিনি তাঁদের থোঁতা মুখকে আঁআঁক শেখান।

    অনেকে বলেছেন, ক্রিকেটারদের নিলামে চড়ালে তাঁদের মনুষ্যেতর প্রাণী মনে হয়। কিন্তু এও তো ঠিক, এর ফলেই যে ছেলেটা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে তিন বছর ছিল আর খোলা মাঠে প্রাকৃতিক কাজ সারত আর বেশি বৃষ্টি হলে দিন কাটাত কোমর-জলে সে হয় কোটি টাকার মালিক, সর্বোপরি পায় তার যোগ্যতার সমান হাততালি।

    কোনও সন্দেহই নেই, জাদুবাস্তব-মার্কা পয়সা আছে বলেই এই আসরের এমন রমরমা এবং সকলের প্রাণপাত শ্রম ও প্রতিভার বিরতিহীন ছলকানি। এবং হ্যাঁ, যদি ধারাভাষ্যকারদের বলতে হয় এটি অমুক ব্র্যান্ডের চার, এই ক্রিকেটারের স্টাইক-রেট দেখে মনে হচ্ছে তিনি অমুক ব্র্যান্ডের সুপার স্ট্রাইকার, যদি দুজন জুটি বেঁধে খুব ভাল খেললে বলতে হয় এঁদের পার্টনারশিপ যেন অমুক কার্ড ও ইউপিআই-এর যুগলবন্দির মতন মজবুত, আর মাঝে মাঝে একটি দেশে বেড়াতে যাওয়ার প্ররোচনা, একটি গাড়ির গুণকীর্তন ও তা কেনার সুবিধা বর্ণন করতে হয়, তবে তাঁদের কাজের কৌলীন্য অনেকটা হৃত হয়। অনেকে বলেছেন, ক্রিকেটারদের নিলামে চড়ালে তাঁদের মনুষ্যেতর প্রাণী মনে হয়। কিন্তু এও তো ঠিক, এর ফলেই যে ছেলেটা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে তিন বছর ছিল আর খোলা মাঠে প্রাকৃতিক কাজ সারত আর বেশি বৃষ্টি হলে দিন কাটাত কোমর-জলে সে হয় কোটি টাকার মালিক, সর্বোপরি পায় তার যোগ্যতার সমান হাততালি। টাকা আকর্ষণ করে সবচেয়ে উর্বর মস্তিষ্ক ও ক্ষমতাশালী কব্জিকে, অক্লান্তকর্মা যোদ্ধারা নিজের খ্যাতি ও অর্থের লোভেই তাঁদের তরবারিকে আরও সূক্ষ্ম করে তোলেন। এমন জমজমিয়ে বিজ্ঞাপন হয় বলেই ভারতীয় নারীরাও দর্শকের দলে কিছুমাত্র কম নেই, তাঁদের ক্রিকেটোৎসাহ কিছুদিন আগেও এই পর্যায়ে ছিল না। আইপিএলের ফলে কয়েকজন বাবা-মা অন্তত তাঁদের ছেলেকে পড়াশোনা ছেড়ে শুধু খেলায় (অর্থাৎ তার প্যাশনের ব্যাপারটিতে) মনোনিবেশ করার অনুমতি দিয়েছেন (টাকারই লোভে, যদি ডাক্তারির চেয়ে বেশি টাকা এই করে হয়… কিছুদিন পর হয়তো মেয়েদের আইপিএল সমান খ্যাত হলে তাদেরও ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে)। টাকা বহু ক্ষেত্রেই শুধু থোড়-বড়ি-খাড়া পুনরুৎপাদনের চল তৈরি করে, শুধু নিরাপদ ঘ্যানঘ্যানে রক্ষণশীল কাণ্ডাকাণ্ডের জন্ম দেয়। এখানে টাকা যে নিরন্তর সাহস আর নতুনত্বের বিস্ফোরক বীজ বুনেছে, খেলাটাকে বদলেছে খেলোয়াড়ের মনোভঙ্গি পাল্টেছে ও সেই বদলের অনুষ্ঠানে ডেকে এনেছে প্রাচীন নবীন প্রত্যেককে, সেই অঘটনকে সম্মান ও অভিবাদন জানিয়ে চিয়ারলিডারের মতো স্বল্প নেচে ওঠা উচিত।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook