ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শূন্য শুধু শূন্য নয়


    প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (May 24, 2023)
     

    পাঠক, গৌরমোহনকে মনে আছে আপনাদের? না গৌরমোহন ‘সেই সময়’-এর কালী সিঙ্গি, ‘কালবেলা’-র অনিমেষ বা এমনকী ‘পার্থিব’-র কৃষ্ণজীবনের মতন বিখ্যাত কোনো চরিত্র নন। কিন্তু হয়তো কোনো এক অলস দুপুরবেলা গৌরমোহনের অপার্থিব রোমান্সের সাক্ষী আপনিও হয়েছিলেন, কয়েক লাইনের ক্লু-তে মনে পড়লেও পড়তে পারে।

    তালা খুলিয়া ঘরে প্রবেশ করিয়া সে থমকিয়া দাঁড়াইয়া পড়িল ঘরটি পরিষ্কারভাবে ঝাঁট দেওয়া, কিন্তু জিনিসপত্র মোটঘাট একটিও সেখানে নাই

    গৌরমোহনের চক্ষুস্থির হইয়া গেল

    কেরাসিনের বোতল এবং কয়লা নামাইয়া রাখিয়া সে ছুটিয়া ভিতরে গেল তাহার শয়নের ঘরটিও পরিষ্কৃত হইয়াছে এবং তাহার ট্রাঙ্কটি ঘরের এক পাশে রাখা রহিয়াছে

    অতঃপর গৌরমোহন অন্য সব ঘরগুলিতে গিয়া দেখিল, তাহার কোনও জিনিস খোয়া যায় নাই যে বস্তুগুলি তোলা হয় নাই, সেগুলি অন্য একটি ঘরে রাখা হইয়াছে, ইকমিক কুকার স্টোভ ইত্যাদি যাবতীয় দ্রব্য রান্নাঘরে শোভা পাইতেছে যে দুটি পেয়ালায় সে চা ঢালিয়াছিল, সে দুটি ধোয়ামোছা অবস্থায় রান্নাঘরে রহিয়াছে প্লেট দুটিও তাই

    গৌরমোহন প্রকাণ্ড একটি হাঁফ ছাড়িয়া গদগদ কণ্ঠে বলিল, তোমাকে ধন্যবাদ আমার অনেক কাজ গুছিয়ে দিয়েছ

    গৌরমোহনকে এখনও না মনে পড়লে একবার শরদিন্দু অমনিবাস খুলে দেখতে পারেন। বাংলা সাহিত্যে ভাগ্যাহত চরিত্র কম নেই, কিন্তু শূন্য থেকে শুরু করে ক’জনই বা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে? গৌরমোহন যেন আরও এক ধাপ এগিয়ে— শূন্য তাঁর কাছে একটা আশার প্রতীক, চাওয়া আর পাওয়াকে মিলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিশেষ।  

    শূন্য যে নেহাতই ফক্কা নয়, তার সবথেকে বড় প্রমাণ শূন্যর মূর্ত অবয়বটি, অর্থাৎ 0। ঐতিহাসিকরা দাবি করেন শূন্যকে বৃত্ত দিয়ে চেনানোর কাজটি প্রথম শুরু হয় চিন দেশে। কিন্তু আরেকটু ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যাবে, সুমেরীয় হোক বা গ্রিক, প্রাচীনতম বহু সভ্যতার আধ্যাত্মিকবাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শূন্য। আর সে-আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন এক সরীসৃপের, যার মুখ্য পরিচয় শূন্য নয়, বরং অনাদি, অশেষ ইনফিনিটি। উরোবরোজ (Ouroboros) হল সেই সাপ, যার মুখের মধ্যে রয়েছে তার লেজ। আর সেই সূত্র ধরেই চিন হোক কি ভারত, শূন্য হল মহাজীবনের বৃত্তাকার আবর্তের প্রতীক। জন্ম-মৃত্যু-জন্ম, শীত-গ্রীষ্ম-শীত, রাত্রি-দিন-রাত্রি এমনকী রেড রাইডিং হুড গল্পের নেকড়ের পেটে বুড়ি দিদিমার যাওয়া ও বেরিয়ে আসা, বৃত্তাকার আবর্তের মূর্ত প্রতীক হিসাবে রয়ে গেছে অনেক কিছুই। ভারতবর্ষে ব্রহ্মগুপ্ত এবং অন্যান্য গণিতবিদরা শুরুতে একটি বিন্দু দিয়ে শূন্যকে বোঝাতেন বটে, কিন্তু সংস্কৃতে লেখা গণিতশাস্ত্রগুলিতে চোখ বোলালে দেখা যাবে শূন্যর আরও বহু সমার্থক শব্দের মধ্যে পড়ে অনন্ত, অন্তরীক্ষ, গগন, খ ইত্যাদি

    ব্রহ্মগুপ্তদের মতন অসাধারণ মানুষদের জগৎ থেকে বেরিয়ে এলেও কিন্তু বেশ বোঝা যায় শূন্য নেহাত শূন্য নয়। দেশকাল নির্বিশেষে বহু নাবালক-নাবালিকার শূন্য শব্দটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় গণিতের মাধ্যমে হলেও সে শব্দের মুখ্য দ্যোতনার সঙ্গে পরিচয় পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে। গণিত বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীব্যাপী ভীতির একটি বড় কারণ এটি এমন একটি বিষয়, যেখানে শূন্য পাওয়া কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয়। কিন্তু দেখুন, প্রতিটি শূন্য পাওয়া অঙ্কের খাতাই যে আদতে শূন্য তা তো নয়। আমার ধারণা সাদা খাতা জমা দিয়ে আজ অবধি যত পরীক্ষার্থী শূন্য পেয়েছেন, তার থেকে অনেক বেশি পরীক্ষার্থী শূন্য পেয়েছেন প্রতিটি অঙ্ক ধরে ধরে চেষ্টা করে। পরিশ্রম বা প্রয়াসের দিক থেকে বলা বাহুল্য যে তাঁদের খাতায় কোনো ব্ল্যাকহোল বিরাজ করে না। যে-কারণে বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে একাধিক দেশে পার্ট মার্কিং বা স্টেপ মার্কিং এর প্রচলন ঘটে। প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ল কলকাতার কোনো এক মেডিক্যাল কলেজের এক অতি প্রচলিত গল্প। ভাইভা অর্থাৎ মৌখিক পরীক্ষা চলছে, পরীক্ষক শুধোলেন প্রাণঘাতী, হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দেওয়া এক বিশেষে অসুখে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার নিদান হিসাবে এমন একটি ওষুধের নাম যা সিরিঞ্জে ভরে দিতে হবে। পরীক্ষার্থী কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে সঠিক উত্তরটিই দিল, কিন্তু পরীক্ষক নম্বর দিলেন নেহাতই গোল্লা। কারণ? ‘ওই যে কিছু সেকেন্ড ধরে তুমি তোতলালে, সেই কয়েক সেকন্ডেই মানুষটার প্রাণ কিন্তু চলে গেছে।’ পরীক্ষকের কথায় যুক্তি নিঃসন্দেহে আছে, কিন্তু একইসঙ্গে দেখতে পাচ্ছি শূন্য পাওয়া ব্যাপারটি অনেকাংশেই বিষয়কেন্দ্রিক, অর্থাৎ সাবজেকটিভ। কোনও কচিকাঁচাকে অঙ্কে কাঁচা যদি প্রতিপন্ন করতেই হয় তাহলে গোঁসাইবাগানের ভূতের মতন কানে কানে ‘বুরুন, তুমি অঙ্কে তেরো’ বললেই ল্যাঠা চুকে যায়। শূন্য না পেয়েও বুরুনের গণিতশাস্ত্রে দুর্বলতা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পাঠকদের মধ্যে সুবিদিত।

    শীর্ষেন্দুর ফ্যানরা আশির দশকেই যা বুঝতে পেরেছিলেন তা বছর তিরিশেক বাদে বুঝলেন ক্রিস্টোফার নোলানের ভক্তরা। ‘ইন্টারস্টেলার’ চলচ্চিত্রটি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা ইহজীবনে ব্ল্যাকহোলকে নেহাত শূন্য বলে আর ভাবতে পারবেন না। সে ছবির প্রোটাগনিস্ট মহাকাশযানে চেপে রওনা দেন গার্গানটুয়া নামক এক সুবিশাল ব্ল্যাকহোলের উদ্দেশ্যে। গার্গানটুয়ার ভর আমাদের সূর্যের তুলনায় ১০০ মিলিয়ন গুণ বেশি, এবং সে-ব্ল্যাকহোল ঘুরছে আলোর গতির ৯৯.৮% গতিবেগে! ব্ল্যাকহোল নিয়ে যাঁদের আইডিয়া ছোটবেলার কিশোরপাঠ্য বিজ্ঞান বইয়ে সীমাবদ্ধ তাঁরা নিশ্চয় অধীর উৎকণ্ঠা নিয়ে ভাবছিলেন কোন যাদুবলে নোলান তাঁর প্রোটাগনিস্টকে অসীম শূন্যের প্রবল টানে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাবেন! পর্দায় দেখা গেল ম্যাথু ম্যাককনাহে চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া দূরস্থান, উলটে গার্গানটুয়ার মধ্যে পঞ্চম মাত্রা (ফিফ্‌থ ডাইমেনসন) আবিষ্কার করে মানবজাতিকে আক্ষরিক অর্থেই উদ্ধার করলেন। গল্পের দিক থেকে দেখলে ম্যাথু ম্যাককনাহে হয়তো নোলানের গৌরমোহন, যিনি অসীম শূন্যের মধ্যেও শুরুর প্রতিশ্রুতি দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা হল, নোলান যেভাবে ব্ল্যাকহোলটিকে দেখিয়েছেন তা নেহাতই কাল্পনিক নয়, সে কম্পিউটারচিত্রণে বড় অবদান রয়েছে নোবেলজয়ী পদার্থবিদ কিপ থর্নের। কিশোরপাঠ্য বিজ্ঞান বইয়ের সেই কটকটে কালো শূন্যস্থানের বদলে দেখা গেল এক অতি উজ্জ্বল আলোর ঢেউ। এই ২০১৯-এ এসে নাসার বিজ্ঞানীরা দেখালেন কিপ থর্নের হিসাবের সঙ্গে তাঁদের হিসাবের কিছু পার্থক্য থাকলেও এমনকী তাঁরাও দেখতে পেয়েছেন ‘ফায়ার অফ হেল’– নরকের আগুনের মতন উজ্জ্বল এবং ভীতিপ্রদ আলোর ঢেউ ঘিরে রয়েছে M87 ব্ল্যাকহোলকে। ফিফ্‌থ ডাইমেনশনে যাওয়াটা এখনও কল্পবিজ্ঞানের স্তরেই রয়ে গেলেও এ-কথা অনস্বীকার্য যে, ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় এক নতুন জোয়ার এসেছে, এবং বিজ্ঞানীরা টের পাচ্ছেন সর্বগ্রাসী শূন্য ব্যাপারটি নেহাতই এক মিথ।  

    ২০১৯-এ এসে নাসার বিজ্ঞানীরা দেখালেন কিপ থর্নের হিসাবের সঙ্গে তাঁদের হিসাবের কিছু পার্থক্য থাকলেও এমনকী তাঁরাও দেখতে পেয়েছেন ‘ফায়ার অফ হেল’– নরকের আগুনের মতন উজ্জ্বল এবং ভীতিপ্রদ আলোর ঢেউ ঘিরে রয়েছে M87 ব্ল্যাকহোলকে। ফিফ্‌থ ডাইমেনশনে যাওয়াটা এখনও কল্পবিজ্ঞানের স্তরেই রয়ে গেলেও এ-কথা অনস্বীকার্য যে, ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণায় এক নতুন জোয়ার এসেছে, এবং বিজ্ঞানীরা টের পাচ্ছেন সর্বগ্রাসী শূন্য ব্যাপারটি নেহাতই এক মিথ।  

    বহু সমালোচিত কিন্তু ততোধিক বিখ্যাত ক্রিকেট লিখিয়ে নেভিল কার্ডাস বলেছিলেন, লোকে মোটেই স্কোর আর ফলাফল মনে রাখে না, মনে রাখে মানুষগুলোকে। কথাটা মোটের ওপর সত্যি। স্কটিশ বীর রবার্ট ব্রুসের মতন কিছু ব্যতিক্রম হয়তো আছে, ছোটবেলা থেকে তাঁর গল্পগাথা পড়তে পড়তে বাঙালি ছেলেমেয়েদেরও মুখস্থ হয়ে গেছে সতেরো বছর ধরে খান পাঁচেক যুদ্ধে হেরে ওই শূন্য থেকেই শুরু করতে হয়েছে রবার্টকে। যদিও নতুন ইতিহাসচর্চায় দেখা যাচ্ছে সত্যিকারের যুদ্ধ বোধহয় রবার্টের জীবদ্দশায় বার তিনেকই হয়েছিল। যাই হোক, রবার্ট ব্রুস নেহাতই ব্যতিক্রম। বরং জেফ বেজোসের মতন মানুষের সংখ্যাই বেশি। বেজোস আজ হয়তো মহাকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর শ’খানেক বিলিয়ন টাকার জোরে, কিন্তু তাঁর ভক্তকুলের (চমকাবেন না, বেজোসকে পুজো করেন এরকম লোকের সংখ্যাও কম নয়!) ক’জন খবর রাখেন অ্যামাজনের লাভের ঘরে প্রথম ছ’বছর ধরে ছিল শূন্য? এবং তার থেকেও বড় খবর হল দু’দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবসা চালানোর পরেও অ্যামাজনের লাভের অঙ্ক খুব কমবারই শূন্য থেকে সরেছে! অথচ অ্যামাজনের মার্কেট ভ্যালুয়েশন দেখুন বা শেয়ার দর, সেসব সংখ্যা দেখলে মনেই হবে না লাভের গুড় পিঁপড়ে এতবার খেয়ে গেছে। আসলে ক্রিস্টোফার নোলানের মতন জেফ বেজোসও স্বপ্নদর্শী মানুষ, এবং নেভিল কার্ডাসের কথা সত্যি প্রমাণিত করে বিনিয়োগকারীরা বেজোসের কল্পনার ওপর ক্রমাগত আস্থা রেখে গেছেন। সেই ২০১০-’১১ সাল থেকেই, যখন অ্যামাজন লাভের ঘরে কিছুই তুলতে পারছে না, জেফ বেজোস পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন ড্রোন মারফত ঘরে ঘরে অ্যামাজনের পার্সেল পৌঁছে দিতে। এক দশক কেটে গেছে, পরীক্ষানিরীক্ষা এখনও চলছে, ড্রোন এখনও আমাদের বাড়ির ছাদে উড়ে এসে বসছে না। কিন্তু অ্যামাজনের শেয়ারদর পড়ার কোনও লক্ষণ নেই। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই শূন্যও কি সত্যিই শূন্য? এদিকে মার্ক জুকেরবার্গ বেজোসের পথ অনুসরণ করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢালছেন মেটাভার্স তৈরি করার জন্য। নিন্দুকে বলছে কেউই ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না মেটাভার্স বস্তুটি কী, সবারই খাপছাড়া খাপছাড়া আইডিয়া, এ নেহাতই এক ব্ল্যাক হোল। কিন্তু মার্ক অ্যামাজনের গল্প জানেন, হয়তো ‘ইন্টারস্টেলার’ সিনেমাও দেখেছেন। তাই তিনি নাছোড়, বুঝিয়েই ছাড়বেন শূন্য শুধু শূন্য নয়।

    শূন্য আসলেই এক বিমূর্ত ধারণা, এবং সাবজেকটিভ। যে-সমাজ গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বিশ্বাস করে শূন্য মানেই শেষ নয়, তাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে অন্য আরেকটি সমাজ যেখানে শূন্য মানেই দ্য এন্ড, তারা নিজেদের আইডিয়াকে কিছুতেই মেলাতে পারবে না। একটা উদাহরণ দিই, এক হিসাবে আমেরিকার মতন কট্টর পুঁজিবাদী এবং মেধাবাদী দেশও আমাদের দেশের তুলনায় কিঞ্চিৎ বেশি ক্ষমাসুন্দর। আজ কোনও বাঙালি সন্তান ব্যবসা করতে নেমে সর্বস্বান্ত হলে তাঁর আর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ নেই। বাইরের বিনিয়োগকারীদের কথা বাদ দিলাম, ব্যবসা একবার ফেল করলে তাঁর বন্ধুবান্ধব কি আত্মীয়পরিজন, তথাকথিত নিজের লোকেরাই আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবেন না। ওদিকে বেজোসের মতন গল্প আমেরিকার শহরে শহরে। সবাই বিলিয়নেয়ার সে-কথা বলছি না, কিন্তু অসংখ্য উদ্যোগপতি আছেন যাঁদের সাফল্য এসেছে বহু বছর ও বহু ব্যবসার পর। সিরিয়াল অন্ত্রপ্রেনিওররা যে ব্যর্থ হবেন, বারে বারেই হবেন, এ-কথা মার্কিনি মজ্জায় গেঁথে আছে। আর আমাদের কাছে শূন্য মানেই ব্ল্যাক হোল, শূন্য মানেই ফিনিতো। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বুরুনরা কালেভদ্রে রণজিৎ গুহ হয়ে ওঠার সুযোগ পায়, অনার্স না পেয়েও যে তাবড় বিদ্বজন হয়ে ওঠা যায় এমন চিন্তা ফুটে ওঠার আগেই স্রেফ ভয় পেয়ে মরে যায়।

    উপনিষদের একটি অসামান্য শ্লোক খেয়াল পড়ছে,

    ‘ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদম পূর্ণাৎপূর্ণমুদচ্যতে,
    পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেভাবশিষ্যতে॥’

    ওখানে পূর্ণতা,এখানেও পূর্ণতা। পূর্ণতা থেকেই পূর্ণতার উৎপত্তি, পূর্ণতা থেকে পূর্ণতা নিয়ে নিলে পড়ে থাকে শুধুই পূর্ণতা।

    পূর্ণতার বদলে শূন্যতা বসিয়ে দেখুন, এ-শ্লোকের অর্থ বদলে হবে না। উপনিষদের দর্শন অনুযায়ী শূন্য আর ইনফিনিটিতে পার্থক্য নেই, যে-কারণে ব্রহ্মগুপ্তরা শূন্য বোঝাতে অনন্ত বা অন্তরীক্ষ-জাতীয় শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। ব্রহ্মগুপ্তদের কাল গেছে, আধুনিক গণিতশাস্ত্র বলছে ইনফিনিটিকে ইনফিনিটি দিয়ে ভাগ করলে থাকে ইনফিনিটি কিন্তু শূন্যকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে কী হয় কেউ জানে না।

    বুরুনদের মঙ্গলের জন্য বোধহয় শূন্য থেকে মুখ তুলে ইনফিনিটির দিকে তাকানোর সময় এসেছে। নেতির বদলে ইতি, আধখালি গেলাসের বদলে আধভরা গেলাস, 0 এর বদলে ∞।

    ১. https://www.sciencedirect.com/topics/mathematics/brahmagupta

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook