ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শব্দ ব্রহ্ম দ্রুম : পর্ব ১৮


    রূপম ইসলাম (May 6, 2023)
     

    পর্ব ১৭

    বিলি গিলচার হন্তদন্ত হয়ে স্যর ক্যাভির দিকে এগোতে গিয়েও থেমেই গেলেন শেষমেষ, কারণ এগিয়ে আর কোনও লাভ নেই। স্যর ক্যাভি ইতিমধ্যেই মাটিতে পড়ে যাওয়া ‘ডিসকভার’ ম্যাগাজ়িনটা হাতে তুলে নিয়েছেন। বেশ খানিকটা অবাক হয়েই যেন ছাব্বিশ নম্বর পাতাটা খুললেন ক্যাভি। খুলে দেখলেন তাতে ছাপা হয়েছে এক এশিয়ান ব্যক্তির সহাস্য ইন্টারভিউ। বড় বড় হরফের শিরোনামে ব্যক্তিটি ঘোষণা করেছেন—  ‘নিরস্ত্রীকরণ আসলে মহাযুদ্ধের পথই মসৃণ করে।’ সাবহেডিং এ নিবন্ধকার জানিয়েছেন— আন্দামানের প্রকৃতির মধ্যেই অনুপ্রেরণা খুঁজে পান যিনি, সেই শিল্পপতি আকুসি আত্মপ্রত্যয়ী, খুব তাড়াতাড়িই তাঁরা ঘোষণা করবেন নতুন পরমাণু যুগ, যুগান্তকারী এনার্জি বম্বের উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়ে।

    ব্রহ্ম ঠাকুর বলে উঠলেন— সাক্ষাৎকারের শিরোনামটি পড়লেন স্যর ক্যাভি? নিন, এবার পরিচিত হোন মুখটার সঙ্গে। এই লোকটি, যার নাম আকুসি, এ হ’ল সেই বিখ্যাত ধনাঢ্য পরিবার আকুজিদেরই একজন, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে অবারিত ব্যবসার সুযোগ একদা যাদের ‘প্রতীচ্যের ওনাসিস’ বানিয়ে দিয়েছিল। এবার খেয়াল করে দেখুন তো, আমাদের প্রিয়জন উইলিয়াম গিলচারের ব্যবহার করা হেলিকপ্টারের গায়ে ওটা কার ছবি বড় করে আঁকা? অথবা আপনি কি বোল্ড হরফে লেখা ‘আকুসি ফ্লাইং করপোরেশন’ —এই কথাগুলো পড়ে উঠতে পারছেন স্যর ক্যাভি? এটা কিন্তু পাবলিক ট্রানসপোর্ট নয়, এটা একান্তই ব্যক্তিগত সুবিধাভোগ। এমন যোগাযোগকে কি এর পরেও আপনার আদৌ কাকতালীয় বলে মনে হবে? নাকি শেষমেষ এতক্ষণে বুঝতে পারছেন— আপনি যে মহান প্রোজেক্টে এতদিন ধরে মেধা ও শ্রমদান করলেন, তা আপনি এর অংশ হওয়ার আগেই আসলে কিনে নিয়েছিলেন ধন্যম্মন্য শ্রীযুক্ত শ্রীমান আকুসি— লোকসমাজে যিনি পরিচিত জাহাজ এবং চার্টার প্লেন নির্মাতা এবং পেট্রোকেমিক্যাল ও মাইনিং ব্যবসায়ী হিসেব, তবে মুখোশের আড়ালে যাঁর আসল ভূমিকা একজন পারমাণবিক অস্ত্রকুবেরের? আর কে করল বলুন তো এই ষড়যন্ত্র, এই বিক্কিরি? —ওমা, এ আমি কাকে দেখছি? বিক্রেতার ভূমিকায়, নাকি মিডলম্যান বা দালাল বলব, আজ কী দারুণ মানিয়েছে আমাদের পরম আপন মি. উইলিয়াম গিলচারকে! ঠিক যেন ‘সন্টু সোনা নন্টু মন্টু ওলে বাবা লে’! ওর কোঁকড়া চুল আর ফোলা ফোলা গাল দেখলেই ওকে আমার ভীষণ আদর করে গাট্টা মারতে মারতে ভ্যাবলা-ক্যাবলা (nitwit dimwit) বলে ডাকতে ইচ্ছে করে। আপনার করে না স্যর ক্যাভি?

    বিলি গিলচার রাগে উন্মত্ত হয়ে জ্বলন্ত চুরুটটা দূরে ছুড়ে ফেলে দিলেন। চিৎকার করে বললেন— খবরদার টেগোর। nitwit-dimwit কাকে বলছ শুনি? আর গাট্টা মারবে আমায়— এতো বড় কথা বলবার সাহস তোমার হয় কী করে? তুমি রেখে দাও তোমার বস্তাপচা থিয়োরি ওই নোংরা আলখাল্লাটার পকেটে। সবই তো তোমার উর্বর মস্তিষ্কের অনবদ্য কল্পনা! কী প্রমাণ? কী প্রমাণ আছে? কীভাবে প্রমাণ করবে যে তুমি যা বলছ তা সত্যি? একটা অভিযোগেরও প্রমাণ দিতে পারবে তুমি?

    — নাহ। কিচ্ছু প্রমাণ করতে পারব না বিলি। এই জায়গাটায় তুমি জিতে যাবে নিঃসন্দেহে। ধরে নাও এই জায়গাটায় ভ্যাবলা-ক্যাবলা বিলি, তোমারই জিত, ব্রহ্মাণ্ড ঠাকুরের হার। তবে হেরে যেতে যেতেও কয়েকটা কথা তোমাদের বলে রাখা দরকার…

    তুমি চেয়েছিলে আমি ‘ব্যালেন্স’-এর হাতে ধরা পড়ি, কারণ তুমি আমায় পছন্দ করো না, যবে থেকে হকিং সাহেব তোমাকে এই প্রোজেক্টে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তুমি চেয়েছ যাতে আমায় বিদেয় করতে পারো—

    — না না না! একেবারেই উলটো ব্যাপার। আমার তোমায় পছন্দ করা না করা তো অনেক পরের ব্যাপার। আমার নাম স্টিফেন হকিং প্রস্তাব করবার পরই হকিং-এর কাছে একটা ব্যক্তিগত ইমেইল পৌঁছেছিল। সেটা পরে ফাঁশ হয়ে যায়—

    — আমার সেই ইমেইল লেখবার উপযুক্ত কারণ ছিল ভ্যাবলা-ক্যাবলা-বিলি…

    — তাহলে তোমাকে অপছন্দ করবারও নৈতিক জায়গা আমার আছে টেগোর… অ্যান্ড স্টপ দিস ‘nitwit dimwit’ ননসেন্স…

    — আমার ভাই প্রোফেসর অম্বরীশের হত্যাকাণ্ড তোমারই অদূরদর্শিতার জন্য ঘটেছে বিলি। সেটার প্রতিশোধ নিতে একটি ঘুষিও এখনও অবধি তোমায় মারিনি, খালি ‘ভ্যাবলা-ক্যাবলা’ বলেছি। ভুল করেছি? এইটুকুও তোমার পোষাচ্ছে না? আর কীসের নৈতিকতার কথা শোনাচ্ছ তুমি ভ্যাবলা? আদৌ তেমনকিছু থাকলে— ঠিক হ্যায়! করো তা হলে আমায় অপছন্দ। নাও, অল সেইড অ্যান্ড ডান, লেটস অ্যগ্রি টু ডিসঅ্যগ্রি মাই ডিয়ারেস্ট এসট্রেঞ্জড ফ্রেন্ড। তোমাকে খালি একটা ছবির কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। সেই ‘নাপাম বালিকা’র ফটোগ্রাফের কথা মনে পড়ে তোমার বিলি? এক নগ্ন বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে আসছে ক্যামেরার লেন্সের দিকে। তার চারপাশটা, অতীত এবং বর্তমানটা, পুড়ে গেছে ভিয়েতনামে আমেরিকার ফেলা নাপাম বোমায়। ১৯৭১-এর পুলিৎজ়ার পুরস্কার পাওয়া সেই ছবিটার কথা মনে পড়ে বন্ধু? মনে পড়লে তো তোমার ভেতরটাও ঝলসে যাওয়া উচিত! তুমিও তো হাত পোড়াচ্ছ বোমা বানিয়ে আর বেচে। আমাদের যে এবার ভিন্ন পথ নেওয়ারই পালা। তবে তুমি যে বোমার ব্যবসা করতে চলেছ, সেকথা প্রমাণ না করতে পারলেও একটি গান আমি আমার মত প্রকাশের স্বাধীন আনন্দে এক্ষুনি গাইতে চাই। আশা করি গানটা গাইবার অনুমতি আমি পাব! আর না পেলেই বা কী! এ গান গাওয়া থেকে কে আটকাবে এখন আমায়?

    একথাটা বলেই উপস্থিত সব্বাইকে চমকে দিয়ে একছুটে গির্জার সেই মার্কামারা হলঘরটায় গিয়ে ঢুকলেন ব্রহ্ম ঠাকুর। তারপর চিৎকার করে বললেন— এসো যত পরমাণু বিজ্ঞানী আর যুদ্ধ ব্যবসায়ীরা, এসো যত ভ্যাবলা-ক্যাবলা সেজে বসে থাকা পলিটিক্যালি কারেক্ট কিন্তু আসলে ইনকারেক্ট ভণ্ডেরা, এসো বিক্রি হয়ে যাওয়া মিডিয়াসর্বস্ব ব্যুরোক্র্যাটের দস্যুদল, প্রাণ ভরে শুনে যাও আজ মানুষের স্বাধীনতার আহ্বান। শুনে নাও শৃঙ্খলহীন আদিম মানুষের শেষ বয়ান। শুনে নাও আমার পরমপ্রিয় গুরুদেবের গান।

    বিলি গিলচার নিজের কোটের পকেটে আস্ত সিরিঞ্জ, অ্যাম্পিউল আর ওষুধের শিশিগুলো ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর হাঁক দিয়ে স্যাম নামের একজনকে ডাকলেন। বললেন— স্যাম, তৈরি হও। আমাদের যেতে হবে এক জায়গায়। আর এই বুড়োটাকে কপ্টারে তুলতে হবে। তিন-চারজনকে চটপট এদিকে আসতে বলো! তুমি কিন্তু পিস্তলটা সঙ্গে নিতে ভুলো না। বুড়োটা সাংঘাতিক!  আর এর এই ট্রানসমিটারটার সদগতি করে দাও যত্ন করে…

    ব্রহ্ম ঠাকুর গলা খুলে দু’হাত তুলে গান ধরলেন চার্চের ওই ভয়ানক ঘরটার মাঝখানে দাঁড়িয়ে। গান গাইতে গাইতেই তিনি চোখ বুলিয়ে নিতে থাকলেন ঘরটায় জড়ো করে রাখা আণবিক সংশ্লেষণে ব্যবহার করবার উপকরণসামগ্রীর উপর। একটা বিশেষ কন্টেনারের দিকে চোখ পড়ায় একনিমেষ অবাকও হলেন তিনি। তবে তাঁর গানে সেই অবাক হওয়া কোনও প্রভাব ফেলল না।

    ব্রহ্ম গাইতে থাকলেন—

    হারে রে রে রে রে
    আমায় রাখবে ধ’রে কে রে
    দাবানলের নাচন যেমন
    সকল কানন ঘেরে
    বজ্র যেমন বেগে  
    গর্জে ঝড়ের মেঘে
    অট্টহাস্যে সকল বিঘ্ন
    -বাধার বক্ষ চেরে…

    ব্রহ্ম গানটা মাঝখান থেকে গাইছিলেন। ওই অংশটা প্রাসঙ্গিক, তাঁর মনে হল— গুরুদেব সবই তো লিখে দিয়েছেন! ভেবেছিলেন শেষ লাইনটা গাইবার পর শুরুর লাইনে যাবেন। কিন্তু তাঁর আর অতটা গাওয়া হল না। একটা তুলকালাম কাণ্ড যেন শুরু হয়ে গেল তাঁকে ঘিরে। প্রথমত বিলির চ্যালাচামুণ্ডা-গুন্ডারা হা রে রে রে করে ছুটে এল। তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেই গান গেয়ে যাচ্ছিলেন তিনি, এমন সময় ঘরটার মধ্যে রাখা কয়েকটা ড্রোন আরশোলার মতো ফরফর শব্দে উড়তে শুরু করল। এতে ছন্দপতন হল। ব্রহ্ম বুঝলেন ঘরটার তাপমাত্রাও বদলে যাচ্ছে। এবারে গান থামিয়ে দিলেন তিনি। তবে গান থামিয়েও শুনতে পেলেন, গান থামেনি। গির্জার প্রতিটি দেওয়াল থেকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে গানটা শব্দের নানা পারমুটেশন-কম্বিনেশনে ফিরে ফিরে আসছে। বিশালকায় পুরো ঘরটাই যেন এতদিনের নিঃস্তব্ধতার প্রতিবাদে হা রে রে রে, হা রে রে রে করে উঠেছে। ব্রহ্মের ত্বকের মধ্যেও শুরু হয়েছে একটা জ্বলুনি। গির্জার কয়েকটা ইঁটও ভেঙে পড়ল এদিকে ওদিকে। এমন সময় তাঁকে বাধা দেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টায় তাঁর গায়ের উপর হামলে এসে পড়লেন বিলি গিলচার। তিনি চিৎকার করে বললেন— না না! এভাবে আমার সব পরিকল্পনা তোমায় ধূলিসাৎ করে দিতে দেব না টেগোর—

    বিলি গিলচার ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এসে তাঁকে ধরবার আগেই অবশ্য ঘরের মধ্যেকার হঠাৎ তাণ্ডবে ব্রহ্ম ঠাকুর সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন। হয়তো কোনও টুকরো ইঁটের আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। এতটা অকস্মাৎ শব্দপ্রবাহের জন্য তৈরি ছিল না নিউক্লিয়র গবেষণাগারে পরিণত হওয়া হলঘরটি। শব্দের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছিল, বাড়ছিল তাপও। কয়েকটি ড্রোনের সঙ্গে দেওয়াল ভেঙে পড়া ইঁটের সংঘাতে এদিক সেদিকে ছিটকে যাচ্ছিল ইঁটের টুকরো। এমন অশান্ত পরিবেশে বিলি গিলচার জাপটে ধরেছিলেন ব্রহ্মকে। তাঁকে টেনে বের করতে চাইছিলেন ঘরটা থেকে। চেঁচিয়ে বলছিলেন— স্যর ক্যাভি, তাড়াতাড়ি শব্দ-ভ্যাকুয়াম যন্ত্র চালু করবার ব্যবস্থা করুন। নইলে এই ঘরটাকে আর বাঁচানো যাবে না…

    দু’জন গুন্ডামার্কা সহকারীর সাহায্য নিয়ে যখন শেষমেষ ঘরটার বাইরে ব্রহ্মকে টেনে এনে চাতালটায় ফেললেন বিলি গিলচার, তখন একটা জিনিস লক্ষ করে শিউরে উঠলেন। তাঁর নিজের বাঁ হাত রক্তে ভেসে যাচ্ছে। কী করে এটা হল? বুঝলেন ব্রহ্মকে যখন জাপটে ধরেছিলেন, ওঁর আলখাল্লার পকেটে রাখা কাঁচের কিছু জিনিস ভেঙে তাঁর হাতে ফুটে গেছে।

    ‘স্কাউন্ড্রেল! তুমি আমায় গাট্টা মারবে, ঘুষি মারবে বলেছিলে না? তবে এই নাও’—প্রচণ্ড আক্রোশে কথাটা উচ্চারণ করেই ডানহাত দিয়ে ব্রহ্ম ঠাকুরের গালে একটা মোক্ষম চড় কষালেন বিলি গিলচার। চড় খেয়েও বৃদ্ধ অবশ্য রা কাড়লেন না। বোঝা গেল, বেশ কিছুক্ষণ আগেই ব্রহ্ম অজ্ঞান হয়ে গেছেন। বিরক্তির সঙ্গে ‘ওয়াট দ্য হেল!’ কথাটা উচ্চারণ করে বিলি ব্রহ্মের পকেটগুলো সার্চ করে দেখতে শুরু করলেন, কাঁচের কী বস্তু ছিল ওখানে।

    পকেট থেকে বেরল একটা ট্রানসমিটার, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, একটা ভেঙে যাওয়া অ্যাম্পিউল, একটা আস্ত অ্যাম্পিউল, কিছু ভাঙা ওষুধের শিশি, কিছু আবার আস্ত। একটু খতিয়ে দেখেই ওষুধগুলো চিনতে পারা গেল। বিলি ভাবলেন, এসব আবার ব্রহ্মের পকেটে কেন? একটু ভাবতেই অবশ্য কারণটা বুঝতে পারলেন। ব্রহ্ম একধাপ এগিয়ে ভেবেছেন। তাই এইসব সঙ্গে রেখেছেন। বিলি গিলচার মনেমনে বললেন— বেকার এসব ভেবেছিলে বুদ্ধিমান বন্ধু। তোমায় বিদেয় করবার এরকম সাংঘাতিক পরিকল্পনা কিন্তু আমার ছিল না। তোমাকে উধাও করতে হলে তার যোগ্য জায়গা আমার ভালই জানা আছে, তুলনামূলকভাবে অনেক ভদ্রসভ্য আরামদায়ক জায়গা সেটি। কিন্তু তোমার ভাবনাকে আমি সম্মান তো জানাতেই পারি! তুমি যা ভেবেছিলে তাই না হয় ঘটুক। পার্থক্য একটাই, গোপনে পকেটে রাখা অ্যাম্পিউল তো ভেঙে গেছে। আর যেটা আস্ত আছে, সেটা আমিই না হয় এখন বাজেয়াপ্ত করলাম! এবার? কী করে বাঁচবে টেগোর? তোমার কপালে এবার মৃত্যুই নাচছে। মেনে নাও বাচাল বুড়ো, মেনে নাও…

    বিলি গিলচার নিজের কোটের পকেটে আস্ত সিরিঞ্জ, অ্যাম্পিউল আর ওষুধের শিশিগুলো ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর হাঁক দিয়ে স্যাম নামের একজনকে ডাকলেন। বললেন— স্যাম, তৈরি হও। আমাদের যেতে হবে এক জায়গায়। আর এই বুড়োটাকে কপ্টারে তুলতে হবে। তিন-চারজনকে চটপট এদিকে আসতে বলো! তুমি কিন্তু পিস্তলটা সঙ্গে নিতে ভুলো না। বুড়োটা সাংঘাতিক!  আর এর এই ট্রানসমিটারটার সদগতি করে দাও যত্ন করে…

    ২৪।

    অদ্ভুত এক হঠাৎ আতঙ্কে আশ্চর্যের সারা শরীর টলমল করে উঠেছিল। অবশ হয়ে গেছিল তার হাত পা। তার এই অবস্থাটা আবছায়ায় দাঁড়ানো রহস্যময় মূর্তির চোখ এড়াল না। পরিস্থিতিটা সামলাতে সে বলে উঠল—

    না আশ্চর্য। ভয় পেয়ো না। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ ঘটেনি এখনও। আমি মানুষ নই। অপদেবতাও নই। আসলে আমি নিতান্তই একটা প্রোজেকশন। তোমার চেনা ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের আমি অবয়বমাত্র। আমায় পাঠানো হয়েছে তোমাদের সমান্তরাল একটি বিশ্বের ভবিষ্যৎকাল থেকে। এগজ়্যাক্টলি কোন বছর থেকে আসছি, তা বলা যাবে না, কারণ তোমার সময়ের পারস্পেকটিভের সঙ্গে আমাদের পারস্পেকটিভ মিলবে না। শোনো, সময় সরণীতে দু’রকমের যাতায়াত সম্ভব। একটা লম্বালম্বি, একটা আড়াআড়ি। লম্বালম্বি যেটা, অর্থাৎ ভবিষ্যৎ থেকে অতীত বা তার উলটোটা, সেটায় আমরা এখন চাইলে সশরীরে যেতে পারি, তবে তার জন্য অনেক পরিকল্পনা এবং অঙ্ক লাগে। আর আড়াআড়ি যেটা, এক ইউনিভার্স থেকে অন্য ইউনিভার্স, একই সময়ে চলতে থাকা সমান্তরাল বিশ্ব, তাতে প্রোজেকশন পাঠানো যেতে পারে, তবে সাবধানে। একই চরিত্র ভিন্নরূপে পাশাপাশি হাঁটলে, চললে, কথা বললে ঝামেলা বেঁধে যাবে তো, তাই না? ওসব সিনেমা বা কমিকস-এ ভাল লাগে, এমনিতে গণ্ডগোলের। এক্ষেত্রে ব্রহ্ম ভবিষ্যৎ থেকে সশরীরে এলেন না কারণ ড: ব্রহ্ম ঠাকুর আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে এবং সময়ে আর বেঁচেই নেই। আজ থেকে বহুদিন আগে ঘটা এই আন্দামান অভিযানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তোমাদের পারস্পেকটিভে এবং সময়ে এখন যে অভিযান চলছে…

    (ক্রমশ)

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook